প্রশ্নোত্তর : আল্লামা মুফ্তী সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান

0

 মুহাম্মদ রায়হান উদ্দীন
অর্থনীতি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

 প্রশ্ন: আমাদের নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টির প্রথম হলে হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম এবং অন্যান্য নবীগণের পরে পাঠানো হলো কেন? রহস্যটা জানালে উপকৃত হব।

 উত্তর: আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন প্রিয়নবী আকা ও মাওলা সরকারে দু‘আলম হুযূর পুরনূর রাহমাতুল্লিল আলামীন সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে অসংখ্য-অগণিত সম্মান ও পবিত্র গুণাবলী দ্বারা সম্মানীত করেছেন। তন্মধ্যে তাঁর মহান একটি শান হল তিনি খাতামুন্নবীয়্যীন অর্থাৎ সর্বশেষ নবী যাঁর পরে কিয়ামতের পূর্ব মহূর্ত পর্যন্ত আর কোন নবী- নতুন কোন দ্বীন বা শরীয়ত নিয়ে আসবেন না। এ ব্যাপারে আবু দাউদ শরীফে উল্লেখ রয়েছে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
انا خَاتَمُ النبيين لا نبىَّ بعدى- (ابوداؤد شريف- كتاب الفتن)
অর্থাৎ আমি শেষ নবী, আমার পরে আর কোন নবী আসবেন না। [আবু দাউদ শরীফ, কিতাবুল ফেতান] সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত আছে তিনি বলেন, প্রিয়নবী হুযূর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
انا اول النبيين فى الخلقِ واخِرُهُمْ فى البعث-
আমি সৃষ্টির দিক থেকে সমস্ত নবীর মধ্যে প্রথম এবং পৃথিবীতে আগমনের দিক থেকে (তাঁদের মধ্যে) সর্বশেষ।
[কৃত : ইমাম জালাল উদ্দীন সূয়ুতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি (খাসায়েসে কুবরা ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা-৩] অপর এক হাদিসে রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
انا اخِرُ الاَنْبِيَاءِ واَنتُمْ اَخِرُ الاُمَمِ- (ابن ماجة)
অর্থাৎ আমি শেষ নবী এবং তোমরা (উম্মতে মুহাম্মদী) শেষ উম্মত। [ইবনে মাজাহ্ শরীফ] আলিমকুল শিরোমণি শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর বিখ্যাত ‘মাদারিজুন নবুয়্যত’ কিতাবের ভূমিকায় পবিত্র কুরআনের সূরা হাদীদ’র এই আয়াত উল্লেখ করেছেন-
هو الاولُ والاخرُ والظاهِرُ والباطنُ وهو بكل شئ عليم-
অর্থাৎ তিনিই প্রথম, তিনিই শেষ, তিনি প্রকাশ্য, তিনিই গোপন এবং তিনিই সব কিছু জানেন।
[সূরা হাদীদ: আয়াত -৩] এতে আল্লাহ্ রাব্বুল আলামিনের হামদ্ এবং সাথে সাথে মাহবুবে খোদা হুযূর পুরনুর মুহাম্মদ মুস্তাফা আহমদ মোজতবা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর না’ত বা প্রশংসা বিদ্যমান তথা এই পাঁচটি গুণ হুযূরের বেলায়ও প্রযোজ্য।
অর্থাৎ তিনি (রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম প্রথম সৃষ্টি আর পৃথিবীতে আগমনের দিক দিয়ে সর্বশেষ নবী। তাঁর অনেক মুজেজাত ও আল্লাহ্ প্রদত্ত অলৌকিক ক্ষমতা সমূহ সকলের সামনে প্রকাশ্য ও অনেক মুজেজাত ও শান-মান গোপনীয় এবং তিনি (আঁ হযরত দ.) আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতা বলে সৃষ্টির সব কিছু সম্পর্কে জ্ঞাত। আর মহান আল্লাহ্ এ সবগুণে গুণান্বীত নিজস্ব ও জাতী ক্ষমতা বলে।
উক্ত আয়াতে করীমা ও হাদিসে পাক হতে প্রতীয়মান যে প্রিয়নবী হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার সৃষ্টি সবার পূর্বে/প্রথম এবং দুুনিয়ায় আগমন সবার শেষে। তাই কিয়ামত পর্যন্ত একমাত্র আমাদের প্রিয়নবীর কলেমা, দ্বীন ও শরীয়ত বলবৎ থাকবে। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সর্বপ্রথম সৃষ্টি করে মহান রাব্বুল আলামীনের মর্জি মোতাবেক সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হিসেবে সকল নবীর পরে পৃথিবীতে প্রেরণ করেছেন। আর সকল নবী-রাসূল যুগে যুগে পৃথিবীবাসীর নিকট আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার আগমনী বার্তা এবং আমাদের নবীর শান-মান ও মহান মর্যাদা স্বীয় উম্মতের মাঝে প্রচার করেছেন। তদুপরি আমরা শেষ জমানার গুনাহগার
উম্মতের কিসমত/ভাগ্যকে বুলন্দ ও মূল্যবান করার জন্য এবং আমাদেরকে সর্বশ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে মর্যাদাবান করার জন্য আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা প্রিয়নবী আক্বা ও মাওলা হযরত মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সকল সৃষ্টির পূর্বে সৃষ্টি করে সমস্ত নবীর পরে প্রেরণ করেছেন।
এ বিষয়ে অনেক রহস্য রয়েছে- যা মাসিক তরজুমান ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তথা রবিউল আউয়ালের বিগত সংখ্যা সমূহে প্রশ্নোত্তর বিভাগ ও বিভিন্ন প্রবন্ধে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
[খাসায়েসে কুবরা ও খাসায়েসে সুগরা কৃত: ইমাম সূয়ুতী (রাহ.) ও শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রাহ.): কতৃক রচিত মাদারিজুন্নবুয়্যত ইত্যাদি]

 মুহাম্মদ মিযানুর রহমান ও মাহবুব এলাহী
হালিশহর, বন্দর, চট্টগ্রাম।

 প্রশ্ন: আমরা জানি, পঞ্জেগানা নামায ও রমজানের ফরয রোযা এমন ইবাদত যা প্রত্যেক বালেগ-বালেগা নারী-পুরুষের আদায় করা অপরিহার্য বিষয়। অনেক মুসলিম নর-নারী ফরয নামায-রোযা আদায় না করে মারা যায়। সুতরাং মুসলিম মৃত ব্যক্তির কাযা/অনাদায়ী ফরয নামাযের ও ফরয রোযার বিধান কি? জানালে উপকৃত হব।

 উত্তর: পঞ্জেগানা নামায ও রমজানের ফরয রোযা এমন ইবাদত যা প্রাপ্ত বয়স্ক সকল মুসলিম নর-নারীর উপর ফরয। যদি কারো জিম্মায় ফরয নামায ও ফরয রোযা অনাদায়ী থাকে এবং এমতাবস্থায় সে মৃত্যু বরণ করে, অসিয়ত করে থাকলে এবং সম্পদ রেখে গেলে পরিত্যক্ত সম্পদের এক তৃতীয়াংশ দ্বারা গরীব-মিসকিন, অসহায় ব্যক্তিকে বিতিরের নামায সহ দৈনিক ছয় ওয়াক্ত নামায হিসাব করে প্রতি ওয়াক্তের জন্য অর্ধ ‘সা’ তথা ২ কেজি ৫০ গ্রাম পরিমাণ গম বা তার মূল্য সদকা তথা নামাযের ফিদয়া বা কাফ্ফারা আদায় করতে হবে। প্রত্যেক ফরয রোযার ফিদয়া বা কাফফারাও প্রতি ওয়াক্ত নামাযের অনুরূপ। মৃত ব্যক্তির পরিত্যক্ত সম্পদের এক তৃতীয়াংশ যদি নামায রোযার ফিদয়ার জন্য যথেষ্ট না হয় বা ওয়ারিশগণের পক্ষে অসম্ভব হয় তবে কমপক্ষে এক ওয়াক্ত নামায বা একটি ফরয রোযার ফিদয়া অথবা যতটুকু সম্ভব তা নির্ধারণ ও হিসেব করে ফকির-মিসকিনকে মৃত ব্যক্তির পক্ষে প্রদান করবে এবং ফকির-মিসকিন তা গ্রহণ করে ফিদয়া/কাফ্ফারা দাতাকে হেবা করবে তারপর মিসকিনকে পুনরায় দেবে- ফকির/মিসকিন তা গ্রহণ পূর্বক পুনরায় ফিদয়া/কাফ্ফারা দাতাকে হেবা করবে। এভাবে একে অপরের মধ্যে আদান-প্রদান করতে থাকবে যতক্ষণ না সব কাফ্ফারা বা ফিদয়া আদায় হয়। যেমন হানাফী মাজহাবের বিখ্যাত ফিকহের কিতাব ‘দুররে মুখতারে’ উল্লেখ রয়েছে-

لومات وعليه صلواة فائتة واوصى بالكفارة يعطى لكل صلواة نصف صاع من بر كالفطرة كذا حكم الوترو الصوم وانما يعطى من ثلاث ماله ولو لم يترك مالا يستفرض وارثه نصف صاع مثلا ويدفعه للفقير ثم يدفعه الفقير للوارث ثم وثم حتى يتم- الخ-
অর্থাৎ আর মৃত ব্যক্তি যদি ধন-সম্পদ রেখে যায় এবং নামায ও রোযার কাফ্ফারা/ফিদয়া আদায়ের জন্য অসিয়ত করে তখন অলি ও ওয়ারিশের উপর একান্ত কর্তব্য মৃত ব্যক্তির সম্পদের এক তৃতীয়াংশ হতে তার অনাদায়ী ফরয নামায ও রোযা সমূহের হিসাব করে বিতরসহ প্রতি ওয়াক্ত নামায ও ফরয রোযার জন্য এক ফিতরা সমতুল্য গম বা গমের মূল্য ফিদয়া মিসকিনকে সদকা করবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কোন সম্পদ রেখে না যায় এবং অলি ওয়ারেছের সামর্থও না থাকে তখন এক ওয়াক্ত বা একটি রোযার ফিদয়া কর্জ নিয়ে ফকিরকে উপরে বর্ণিত নিয়ম অনুসারে আদান-প্রদান করবে যেন অনাদায়ী সব ফরয নামায ও রোযার ফিদয়া/কাফ্ফারা আদায় হয়ে যায়। এবং পরওয়ার দিগার আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে ঐ ব্যক্তির মাগফিরাত-এর জন্য দু‘আ-ফরিয়াদ করবে। এটা ইসলামী শরীয়তের বিধান মৃত ব্যক্তির অনাদায়ী ফরয নামায ও রোযার কাফ্ফারা আদায়ের। এভাবে আদায় করলে এবং মহান রাব্বুল আলামীনের দরবারে মৃত ব্যক্তির জন্য দু‘আ-ফরিয়াদ করলে আশা করি তার গুনাহ আল্লাহ্ তা‘আলা মাফ করে দেবেন। যেহেতু আল্লাহ্ পরম দয়াবান, ক্ষমাশীল এবং অতিব মেহেরবান। (এটাই শুদ্ধ নিয়ম।)
[আদ্ দুররে মুখতার ইমাম আলাউদ্দীন খাসকাপি হানাফী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ইত্যাদি]  মুহাম্মদ মিযানুর রহমান
ছাত্র- জামেযা আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম।

 প্রশ্ন: সন্তানকে তিনটি বিষয় শিক্ষা দেয়ার কথা শুনেছি, তবে কোন্ তিনটি বিষয়ের কথা নবীজি বলেছেন? হাদীসের উদ্ধৃত সহকারে জানালে কৃতজ্ঞ হব।

 উত্তর: প্রতিটি হাদিসের কিতাবে শিষ্ঠাচারের একটি অধ্যায় বিদ্যমান। প্রিয়নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর উম্মতের জীবন-যাপন, আখলাক ও চলা-ফেরা ইত্যাদি যাতে সুন্দর হয় সে লক্ষ্যে অসংখ্য শিষ্ঠাচার ও আদব কায়দা শিক্ষা দিয়েছেন। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বীয় উম্মতদেরকে নিজ নিজ সন্তানদের ব্যাপারে তালিম তথা শিক্ষা/শিষ্ঠাচার সংক্রান্ত বহু হাদিসে পাকে তিনটি বিষয়ে শিক্ষাদানের কথা উল্লেখ করেছেন। বিখ্যাত হাদিস গ্রন্থ দায়লামী শরীফে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন-
قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اُدِبُوا اولادكم على ثلاث خصال حب نبيكم وحب اهل بيته وعلى قراة القران اوكما قال عليه الصلوة والسلام-
অর্র্থাৎ প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে তিনটি বিষয়ে আদব শিক্ষা দাও। তোমাদের প্রিয় নবীর প্রতি ভালোবাসা, তাঁর (নবীজির) আহলে বায়ত তথা পরিবার ও বংশধরের প্রতি ভালোবাসা এবং ক্বোরআন মজীদ তেলাওয়াত শিক্ষা দাও।
[দায়লামী শরীফ] উপরোক্ত হাদিস প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ ইমাম জালাল উদ্দীন সূয়ুতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর রচিত ‘আল জামেঊস সগীরে’ও বর্ণনা করেছেন।

 মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়।

 প্রশ্ন: সুন্নী আক্বিদায় বিশ্বাসী পীরের হাতে বায়আত হয়ে অন্য পীরের বিভিন্ন কার্যক্রমে উপস্থিত হওয়া যাবে কিনা এবং ওই পীরের সবক আদায় করা যাবে কিনা- জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: সুন্নী আক্বিদায় বিশ্বাসী যোগ্য পীরের হাতে মুরীদ হয়ে স্বীয় পীরের প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধা ও অনুগত্য ঠিক রেখে অন্য সুন্নী পীরের সংস্পর্শে যাওয়া এবং ওই হক্কানী পীরের যে কোন ধর্মীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে অসুবিধা নেই। কিন্তু নিজ পীর-মুর্শিদ যোগ্য ও কামিল হওয়া সত্ত্বেও স্বীয় পীরের জীবদ্দশায় অন্য পীরের কাছে বায়আত হওয়া বা নিজ পীরের সবক বাদ দিয়ে অন্য পীরের সবক আদায় করা পীর বা তরীকা নিয়ে খেল-তামাশা করার নামান্তর। এতে তরীকতের প্রকৃত বরকত অর্জন করা সম্ভব হয় না। এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত হাদিস বিশারদ হযরত শাহ্ ওয়ালিউল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর ‘আল্ ক্বাওলুল জামীল’ গ্রন্থে লিখেন-
واما بلاعذر فانّه يشبه المتلاعب ويذهب بالبركة ويصرف قلوب الشيوخ عن تَعَهِده-
অর্থাৎ (শরীয়ত ও তরীকতের কোন যৌক্তিক) কারণ ব্যতীত নিজ পীর-মুর্শিদ ব্যতীত অন্য পীরের হাতে বায়আত হওয়া খেলা-তামাশার নামান্তর। এতে বায়আতের প্রকৃত বরকত লোপ পায় এবং স্বীয় পীর মুর্শিদের রূহানী শিক্ষা-দীক্ষা বা সুনজর মুরীদের উপর থাকে না। [আল্ ক্বাওলুল জমীল] হ্যাঁ যদি পীর বাতিল মতাদর্শী হয় বা পীর হওয়ার অযোগ্য এবং ইলম-আমলের দিক দিয়ে ভণ্ড হয় তখন অবগত হওয়ার পর এরকম ভণ্ড পীর তৎক্ষণাৎ বর্জন করে হক্কানী রব্বানী সুন্নী পীর মুর্শিদের হাতে বায়আত গ্রহণ করা বাঞ্ছনীয়। নতুবা ভণ্ড পীর মুরিদকেও জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাবে। আর স্বীয় সুন্নী হক্কানী পীরের ইন্তিকালের পরে বরকত লাভের আশায় অন্য হক্কানী মুর্শিদের নিকট বায়আত গ্রহণে অসুবিধা নেই।
[ক্বাওলুল জামীল কৃত: শাহ্ অলিউল্লাহ্ মুহাদ্দিস দেহলভী রাহ. ও ফতোয়ায়ে আফ্রিকা কৃত: ইমাম আলা হযরত শাহ্ আহমদ রেযা রাহ. পৃ. ৩১] সাবধান! বর্তমান ফিতনা ফ্যাসাদের যুগে ভণ্ডামী ও প্রতারণার শেষ নেই। শরীয়ত-তরীকত নিয়ে ফিতনা-ফ্যাসাদ আরো বেশী। প্রতারক ও ভণ্ডদের খপ্পর ও চক্রান্ত হতে রক্ষা পাওয়া বড়ই মুশকিল। বদ আক্বিদা মার্কা নামধারী পীর যারা নবী-অলির শান-মানে বেয়াদবী ও কটূক্তি করে এবং ফাসিক মার্কা নামধারী পীর যারা নামায-রোযার তোয়াক্কা করে না ও ইসলামী শরিয়তের বিধি-বিধান অনুসরণ করে না-তাদের হাতে মুরিদ হওয়ার অর্থ ইবলিস শয়তানের হাতে মুরিদ হওয়া।
আর কামিল পীরের বৈশিষ্ট্য হল আক্বিদাও সহীহ। আমল তথা নামায রোযা ও ইসলামী শরীয়তের বিধি বিধান পালনে নিজেও মজবুত স্বীয় মুরিদানের প্রতি ও এ বিষয়ে কড়া নির্দেশ প্রদান করেন আর স্বীয় তরীকতের সাজরা ও সিলসিলাও সহীহ। বাতিলপন্থি মাঝখানে কেউ নেই। এ ধরনের মজবুত কামিল সুন্নি পীরের হাতে মুরিদ হওয়া সুন্নাত ও নেজাতের উসিলা আর ভণ্ড পীরের হাতে মুরিদ হওয়া হারাম।

 মুহাম্মদ আবু তাহের
শিবের হাট, সন্দীপ

প্রশ্ন: যদি কোন ছেলে ও মেয়ে অভিভাবকের অনুমতি ছাড়া কোর্ট-এ গিয়ে রেজিস্ট্রির মাধ্যমে বিবাহ্ করে তখন এ বিবাহ শুদ্ধ হবে কিনা? এমতাবস্থায় উকিলগণ শুধু স্বাক্ষীর মাধ্যমে বিবাহ্ দিয়ে থাকেন। কোন মাওলানা/হুজুরকে আনা হয় না। তখন কি বিবাহ্ শুদ্ধ হবে? নাকি হুযূর এর মাধ্যমে পুনরায় বিবাহ্ দিতে হবে। বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

 উত্তর: ছেলে মেয়ে যদি বালেগ-বালেগা (প্রাপ্ত বয়স্ক) হয় তখন মা-বাবা অথবা অভিভাবকের অনুমতি ও সম্মতি ছাড়া উভয়ের সম্মতিতে কোর্ট-এ গিয়ে উকিল কর্তৃক রেজিষ্ট্রির মাধ্যমে আকদ/বিবাহের আয়োজন করে এবং সেখানে যদি কমপক্ষে দু’জন মুসলিম বালেগ ও সুস্থমস্তিস্কের অধিকারী পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দু’জন মুসলিম সুস্থ বালেগা মহিলা সাক্ষী হিসেবে উপস্থিত থাকে তখন ইজাব-কবুলের মাধ্যমে উভয়ের বিবাহ্/নেকাহ্ ইসলামী শরিয়ত অনুযায়ী শুদ্ধ/সহীহ হয়ে যাবে। তবে মা-বাবা ও অভিভাবকের অন্তরে কষ্ট দেয়া হারাম ও অশোভনীয়। সুতরাং তাদের সম্মতিতে বিবাহ্ করা অতীব উত্তম ও মঙ্গলময়। আক্বদ/বিবাহ্ েবুজর্গ আলেম ও হুযূরের উপস্থিতি অনেক উত্তম। যেহেতু অনেকেই বিবাহের খোতবা পাঠ, ইজাব-কবুলের শুদ্ধ নিয়ম ও দু‘আ মুনাজাত ভালোভাবে জানে না। তবে হুজুরের উপস্থিতি শর্ত নয়। অবশ্যই সাক্ষীদের উপস্থিতি বিবাহ্ শুদ্ধ হওয়ার জন্য শর্ত।
[শরহে বেকায়া ও হেদায়া-নেকাহ্/বিবাহ অধ্যায়]  মুহাম্মদ গোলাম মোস্তফা
রুয়া, কুমিল্লা।

 প্রশ্ন: স্বামী-স্ত্রীকে রাগ করে বা মাদক নেশা জাতীয় কোন দ্রব্য সেবন করে তালাক দিলে তালাক হবে কিনা? ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক উত্তর দানে বাধিত করার নিবেদন রইল।

উত্তর: স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে তর্কের এক পর্যায়ে স্বামী রাগান্বিত হয়ে রাগের প্রথম স্তরে এবং শরাব-মদ-নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন করে নেশার প্রাথমিক অবস্থায় যখন স্বামীর হুশ-বুদ্ধি ও আকল বিবেক সব ঠিক থাকে তখন স্ত্রীকে তালাক প্রদান করলে ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক তালাক কার্যকর হয়ে যাবে। শরহে বেকায়া ও আদ্দুররুল মোখতারসহ প্রায় ফিকহের কিতাবে তালাক অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে- طلق الغضبان يقع অর্থাৎ রাগান্বিত ব্যক্তির তালাক কার্যকর হয়ে যায়। আরো উল্লেখ করা হয়েছে- طلق السكران يقع অর্থাৎ নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির তালাক কার্যকর হয়ে যায়। তবে রাগান্বিত ব্যক্তির রাগ এবং নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির নেশা ও মাতলামী যদি চরম পর্যায়ে পৌঁছে যায় যখন হুশ বুদ্ধি স্থির থাকে না লোপ পায়, কি বলতে কি বলেছে? কিছুই জানে না এবং তাঁর থেকে অস্বাভাবিক অবস্থা পরিলক্ষিত হয় তখন ফোকাহায়ে কেরামের মতে উক্ত ব্যক্তির তালাক ও অন্যান্য লেনদেন ইসলামী শরীয়ত মোতাবেক গ্রহণযোগ্য হয় না। এটাই ইসলামী শরীয়তের ফতোয়া ও ফায়সালা। উল্লেখ্য, চরম রাগ ও শরাব-মদ-নেশা পান করা হারাম- বিধায় উক্ত স্বামীকে অবশ্যই খালেস নিয়তে আল্লাহর দরবারে তাওবা করতে হবে এসব গুনাহ হতে বিরত থাকতে হবে।
الله ورسوله اعلم بالصواب

 নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক
ফুলগাজী, ফেনী।

 প্রশ্ন: কিছুদিন পূর্বে আমাদের এলাকায় এক যুবক তার আপন চাচাতো ভাইয়ের বৌকে নিয়ে পালিয়ে যায় অতঃপর কাজি অফিসেব গিয়ে তারা বিবাহ্ করে। পূর্বের স্বামীর তালাক ব্যতীত তাদের এই বিবাহ কতটুকু শরীয়ত সম্মত? অতঃপর ওই যুবক ৪/৫ দিন থেকে আবার মেয়েটিকে ছেড়ে পালিয়ে যায়। ঐ মেয়েটিকে পূর্বের স্বামী পুনরায় গ্রহণ করতে চায়। এমতাবস্থায় শরীয়তের বিধি মোতাবেক তাদের করণীয় কি? আর উক্ত যুবক আর মেয়েটির এই অবৈধ মেলামেশার শাস্তি কি?

উত্তর: তাদের উক্ত বিবাহ্ শরীয়ত সম্মত নয়। তাদের কুকর্ম সম্পূর্ণ জেনা ও ব্যভিচার। হদ ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ হয়েছে বিধায় খালেস নিয়তে লজ্জিত হয়ে উভয়ে মহান আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে তাওবা করতে হবে। জেনা ও ব্যভিচারের শাস্তি কঠিন। অবিবাহিত পুরুষ হলে একশত বেত্রাঘাত করা আর বিবাহিত অবস্থায় কোন নারী-পুরুষ ব্যভিচারে লিপ্ত হলে এবং তা প্রমাণিত হলে রজম তথা পাথর মারা। তবে শরীয়তের এ শাস্ত শুধু আদালতই কার্যকর করার ক্ষমতা রাখে আর কেউ না। পূর্বের স্বামীর নিকট উক্ত মহিলা ফিরে যেতে পারবে যেহেতু পূর্বের স্বামীর বৈধ স্ত্রী হিসেবে উক্ত মহিলা বিদ্যমান আছে। তবে অবশ্যই উক্ত স্ত্রী স্বীয় স্বামীর নিকট ক্ষমা চাইবে এবং আল্লাহ্র দরবারে তাওবা করবে। আর উক্ত ছেলেকে সামাজিকভাবে শাস্তি দেবে এবং তাওবা করাবে।

 আহমদ রেযা
শীতল ঝর্ণা আবাসিক এলাকা, বায়েজিদ, চট্টগ্রাম।

 প্রশ্ন: বিধর্মীদের পূজা পর্বসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের জন্য চাঁদা দেয়া মুসলমানের জন্য জায়েয কিনা? আর বিধর্মীদের পূজা পরবে খানা-পিনা গ্রহণ করা মুসলমানদের জন্য বৈধ কিনা? জানালে উপকৃত হব।

 উত্তর: বিধর্মী (হিন্দু, বৌদ্ধ, ইহুদি ও খ্রিস্টান) ও বদ মাযহাবী (ওহাবী, মওদুদী, খারেজী, রাফেজী, শিয়া, কাদিয়ানী, লা-মাযহাবী) ইত্যাদি ব্যক্তিদেরকে তাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানের জন্য মুসলমানদের চাঁদা বা দান-অনুদান প্রদান করা হারাম ও নাজায়েয। তাদের ধর্মীয়
অনুষ্ঠানে চাঁদা দেয়া মানে তাদের কুফরী ও ভ্রান্ত মতবাদকে সমর্থন করা ও তাদের কুফরী ও ভ্রান্ত মতবাদ প্রচার-প্রসারে সহযোগিতা করা। মহান আল্লাহ্ ইরশাদ করেছেন-
تعاونوا على البر والتقوى ولاتعانوا على الاثم والعدوان-
অর্থাৎ তোমরা পরস্পর কল্যাণ ও তাক্বওয়ার কাজে সহযোগিতা কর এবং (আল্লাহর) নাফরমানী ও পাপ কাজে পরস্পর সাহায্য-সহযোগিতা করো না।
[আল ক্বোরআন] তদুপরি কুফরী প্রচার-প্রসারে সহযোগিতা করাও কুফরী। তদ্রুপ বিধর্মীদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে মুসলিম নর-নারীর আসা-যাওয়া, আর্থিক চাঁদা দেয়া সাহায্য ও সমর্থন করার নামান্তর, যা কোন মুসলমানের আদর্শ হতে পারে না। একান্ত বিশেষ প্রয়োজনে বা রাষ্ট্রীয় ও প্রশাসনের দায়িত্বের খাতিরে যদি নিরুপায় অবস্থায় বিধর্মীদের অনুষ্ঠানে যেতেই হয়, তারপরও পরওয়ার দিগারে আলম রাব্বুল আলামীনের দরবারে তাওবা ও ক্ষমা প্রার্থনা করবে। অথচ এসব বিষয়ে বর্তমানে অধিকাংশ মুসলমান বিশেষ করে উঠতি বয়সী মুসলিম যুবক-যুবতী ছেলে-মেয়ে ও তরুণ-তরুণীরা একেবারে গাফেল ও বেখবর।
তারা বিধর্মীদের পূজা পর্ব ও তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের ছেলে-মেয়েদের সাথে হৈ হুল্লা ও রং তামাশায় লিপ্ত হয়ে যায়। এটা অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। ঈমানী চেতনা ধ্বংস হয়ে যাওয়ার চিহ্ন। আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে অবশ্যই তাদেরকে খালিস নিয়তে তাওবা করতে হবে। উল্লেখ্য, তাদের পূজা পরবে তাদের জবাই কৃত মুরগী ছাগল ইত্যাদির রান্নাকৃত খানা/গোশত মুসলমানদের জন্য হারাম। আর ফল, বিস্কুট, চা-নাস্তা খেতে পারবে। তবে বিরত থাকা উত্তম ও তাক্বওয়া। আল্লাহ্ তা‘আলা মুসলিম যুবক-যুবতী ও ছেলে-মেয়েদেরকে ইসলামী মূল্যবোধ এবং তাহজীব-তামাদ্দুন বুঝার তাওফীক দান করুন।

দু’টির বেশি প্রশ্ন গৃহীত হবেনা  একটি কাগজের পূর্ণপৃষ্ঠায় প্রশ্ন লিখে নিচে প্রশ্নকারীর নাম, ঠিকানা লিখতে হবে  প্রশ্নের উত্তর প্রকাশের জন্য উত্তর দাতার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাঞ্ছনীয় নয়। প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা: প্রশ্নোত্তর বিভাগ, মাসিক তরজুমান, ৩২১, দিদার মার্কেট (৩য় তলা), দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম-৪০০০।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •