প্রশ্ন: আমরা জানি বর্তমানে যেভাবে আমাদের মাঝে কুরআন শরীফে বিদ্যমান সেভাবে একসাথে কুরআন শরীফ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর উপর নাযিল হয়নি বরং তা প্রয়োজনের ভিত্তিতে অল্প অল্প করে নাযিল হয়েছে। এখন আমার প্রশ্ন বর্তমানে আমাদের মাঝে এক সাথে ত্রিশ পারা বিদ্যমান কুরআন তা কিভাবে এবং কে প্রথম সম্মিলিতভাবে একত্রিত করেছিলেন।

0

 ছাদেকুন নেছা
পাঁচলাইশ এস.এম. নাসির উদ্দিন সি.ক. কলেজ
 প্রশ্ন: আমরা জানি বর্তমানে যেভাবে আমাদের মাঝে কুরআন শরীফে বিদ্যমান সেভাবে একসাথে কুরআন শরীফ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর উপর নাযিল হয়নি বরং তা প্রয়োজনের ভিত্তিতে অল্প অল্প করে নাযিল হয়েছে। এখন আমার প্রশ্ন বর্তমানে আমাদের মাঝে এক সাথে ত্রিশ পারা বিদ্যমান কুরআন তা কিভাবে এবং কে প্রথম সম্মিলিতভাবে একত্রিত করেছিলেন।
 উত্তর: পবিত্র কোরআন মজিদ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার জাহেরী হায়াতে অবস্থার প্রেক্ষীতে অল্প অল্প অবতীর্ণ হয়েছিল তবে কোরআন শরীফের আয়াত ও সূরাসমূহের ক্রমধারা ও তারতীব আল্লাহর নির্দেশে ও নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পরামর্শে সম্পাদিত ও সংরক্ষিত হয়েছিল। কিন্তু ওই সময় কোরআন মজিদের সূরা ও আয়াতসমূহ সাহাবায়ে কেরামের সীনায় বিভিন্ন কাগজে পাথরের বোর্ডে, চামড়া ও হাড়ে এবং বিভিন্ন পন্থায় লিখিত ছিল। এগার হিজরীতে হযরত আবু বকর সিদ্দীকের খেলাফতকালে ভণ্ড নবী মুসাইলামাতুল কায্যাবের বিরুদ্ধে ইয়ামামার যুদ্ধে শত শত হাফেজুল ক্বোরআন সাহাবী শাহাদত বরণ করাতে হযরত ফারুকে আজম ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হযরত সিদ্দিক্বে আকবরকে কুরআন মজিদের সব সূরা একত্রিত করে এক জিলদে সংরক্ষণ করার পরামর্শ দিলেন। সিদ্দিক আকবর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ফারুকে আযমের পরামর্শ মোতাবেক হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেতকে আহ্বায়ক করত একটি পরিষদ গঠন করলেন। এবং উক্ত পরিষদ কুরআন শরীফের সব খণ্ড খণ্ড অংশ একত্রিত করলেন এবং সুরাগুলো পৃথক পৃথক করে সন্নিবেশিত করত। হযরত আবু বকর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর হেফাযতে রাখা হল। তাঁর ইনতেকালের পর হযরত ফারুক আযমের নিকট তা সংরক্ষিত ছিল। হযরত ওমরের শাহাদত বরণের সময় তিনি তা আপন কন্যা ও নবী পতনী হযরত হাফছা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর নিকট সোপর্দ করে যান। হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু খলিফা নির্বাচিত হওয়ার পর হযরত আলী ও অন্যান্য গণ্যমান্য বুযুর্গ সাহাবায়ে কেরামের পরামর্শক্রমে হযরত হাফ্সার নিকট হতে উক্ত সন্নিবেশিত কুরআন করিমের কপিকে আনা হল। অতঃপর হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, হযরত যায়েদ ইবনে ছাবেত রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা ্নাহু, হযরত সা’দ ইবনে আছ ও হযরত আবদুর রহমান ইবনে হারেছ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম প্রমুখ সাহাবীগণের সমন্বয়ে একটি কমিটি গঠন করলেন এবং উক্ত কমিটি হযরত হাফ্সার নিকট সংরক্ষিত কুরআন করীমের মূলকপিকে বিভিন্ন কপি আকারে রূপান্তরিত করলেন এবং সমগ্র মুসলিম উম্মাহ্ একক কুরাইশী উচ্চারণে কুরআন তেলাওয়াতের ব্যবস্থাপনা হিসেবে উক্ত মূল কুরআনের একটি কপি বিভিন্ন প্রদেশে পাঠিয়ে দিলেন। এ কারণে হযরত ওসমানের উপাধি হল জামেউল কুরআন। অর্থাৎ কোরআন মজিদ এক জায়গায় জমাকারী।
উল্লেখ্য যে, মূলত জামেউল কুরআন হচ্ছেন স্বয়ং আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন- ان علينا جمعه وقرانه অর্থাৎ কুরআন মজিদকে একত্রিত করা এবং সহজপাঠ্য করার দায়িত্ব আমার।
বাহ্যিক দৃষ্টিতে জামেউল কুরআন হচ্ছেন প্রথমত হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এবং সর্বশেষ হযরত ওসমান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। তাঁর এ বিশেষ অবদানের কারণেই তাকে জামেউল কোরআন উপাধি দ্বারা ভূষিত করা হয়।
[ইরফানে শরীয়ত ও তারিখে ইসলাম ইত্যাদি]

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •