প্রশ্ন: আহলে হাদিস কারা, তাদের আক্বিদা কি? মাজহাব অমান্যকারীদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়সালা জানানোর অনুরোধ করছি।

0

 মুহাম্মদ আবদুল আজিজ রজভী
রাজারকুল, রামু,
কক্সবাজার।
 প্রশ্ন: আহলে হাদিস কারা, তাদের আক্বিদা কি? মাজহাব অমান্যকারীদের ব্যাপারে শরীয়তের ফায়সালা জানানোর অনুরোধ করছি।
 উত্তর: আহলে হাদিস ফেরকাটি বর্তমানে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন সালাফী, গাইরে মুকাল্লিদ, লা মাযহাবী ইত্যাদি। এটা মূলত ইলিয়াস মেওয়াতীর তবলীগ জামাতের ন্যায় ওহাবী মতবাদের একটি শাখা। ওহাবী মতবাদ হল ইসলামের সঠিক রূপরেখা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের পরিপন্থি একটি ভ্রান্ত পথভ্রষ্ট মতবাদ। তাদের আক্বিদা ও আদর্শ নবীবিদ্বেষী ও কুফরীতে ভরপুর। যেমন তাদের আকিদা হল নামাযের মধ্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের খেয়াল করা গরু গাধার খেয়াল থেকেও নিকৃষ্ট। (নাঊযুবিল্লাহ্) আল্লাহর রসূল মাটির সাথে মিষে গেছেন। (নাঊযুবিল্লাহ্), নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কোন কিছুর মালিক বা মুখতার নন, ইত্যাদি। উক্ত ওহাবী মতবাদ প্রথমত দুই ধারায় বিভক্ত। এক. মাযহাব চতুষ্টয়ের অনুসারী, দুই. মযহাব চতুষ্টয়কে অস্বীকারকারী। আর যারা চার মাযহাব মানাকে অস্বীকার করে তারাই আহলে হাদিস নামে খ্যাত। আহলে হাদিসের কিতাবসমূহ থেকে তাদের কিছু আক্বিদা বর্ণিত হলঃ
১. মহান আল্লাহর জন্য মিথ্যা বলা সম্ভব।
[সিয়ানাতুল ঈমান, কৃত. আহলে হাদিসের গুরু মওলভী শহিদুল হক] ২. নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম শেষ নবী নন।
[নসরুল মুমেনিন, কৃত. আহলে হাদীসের নেতা আখওয়ান্দ সিদ্দিক পেশোয়ারী] ৩. আম্বিয়ায়ে কেরাম ধর্মীয় আহকামে ভুল করেছেন।
[কিতাবে রদ্দে তকলিদ বকিতাবুল মযিদ, আহলে হাদিসের বিশেষ পুস্তক] ৪. মুযতাহিদদের কিয়াস গ্রহণযোগ্য নয়।
[কিতাবে মিয়ারোল হক ও ইতেসামূস সুন্নাত, আহলে হাদিসের আরেকটি বই] ৫. চার ইমামের অনুসারী এবং চার তরীকার অনুসারী হল কাফের ও মুশরিক।
[কিতাবু ইতেসামুস্ সুন্নাহ্] উল্লেখিত আকিদাসমূহ হল কুফরী আকিদা, এ রকম তাদের মধ্যে অনেক কুফরী আকিদা বিদ্যমান। উল্লেখ যে, চার মাযহাব থেকে কোন এক মাযহাবের অনুসরণ করা মুসলিম উম্মাহর জন্য ফরয হওয়ার উপর ইমামগণের ঐক্যমত প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সুতরাং যারা মাযহাব মানে এবং মুজতাহিদদের অনুসরণকে সমর্থন করে তারাই হল মুক্তিপ্রাপ্ত ও নাজাতপ্রাপ্ত দল। আর যারা মাযহাব মানে না এবং মুযতাহিদদের অনুসরণকে সমর্থন করে না তারা হল জাহান্নামী দলের অন্তর্ভূক্ত। যেমন দুররুল মুখতারের হাশিয়া আল্লামা আহমদ মিসরী তাহতাবী রহমতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেছেন
من شذ عن جمهور اهل الفقه والعلم والسواد الاعظم فقد شذ فيما يدخله فى النار فعليكم معاشر المؤمنين باتباع الفرقة الناجية المسماة باهل السنة والجماعة فان نصرة الله تعالى وحفظه وتوفيقه فى موافقتهم وخذ لانه وسخطه فى مخالفتهم وهذه الطائفة الناجية قد اجتمعت اليوم فى مذاهب اربعة وهم الحنفيون والمالكون والشافعيون والحنبليون رحمهم الله تعالى ـ من كان خارجا عن هذه الاربعة فى هذا الزمان فهو من اهل البدع والنار
অর্থাৎ যে ব্যক্তি অধিকাংশ আলিম, ফিকহবিদ ও সাওয়াদে আযম থেকে পৃথক হবে সে একাকী হবে, যা তাকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। অতঃপর হে মুমিন সম্প্রদায়! আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসরণ তোমাদের জন্য অপরিহার্য। আল্লাহ্ তাআলার সাহায্য, তার হিফাযত ও তাওফীক প্রদান আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসরণের উপর নির্ভরশীল। আল্লাহ্ তায়ালার নারাজী আহলে সুন্নাতের বিরোধী শক্তির উপর নির্ভরশীল এবং এই নাজাতপ্রাপ্ত দল বর্তমানে চার মাযহাবের অন্তর্ভূক্ত। এগুলো হল হানাফী, মালেকী, শাফেঈ ও হাম্বলী। আল্লাহ্ তায়ালা তাঁদের উপর রহমত বর্ষণ করুক। এ যুগে যারা এ চার মাযহাবের বাইরে তারা হল বেদআতী ও জাহান্নামী।
উক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল চার মাযহাবসমূহ থেকে কোন একটাকে অনুসরণ করাই হল জাহান্নাম থেকে মুক্তির একমাত্র গ্যারান্টি। অন্যথায় জাহান্নাম অনিবার্য।
মুযতাহেদীন ও হক্কানী ফোকহায়ে কেরামকে অনুসরণ করা কুরআন করিমের নির্দেশ। যেমন আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেন-
يا ايها الذين امنوا اطيعو الله واطيعوا الرسول واولى الامر منكم
অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ, আল্লাহ্ তায়ালাকে অনুসরণ কর, রসূলকে অনুসরণ কর এবং তোমাদের মধ্যে যোগ্যতাসম্পন্ন ও নেতৃত্বের জ্ঞান সম্পন্ন শীর্ষস্থানীয় ওলামায়ে কেরামকে অনুসরণ কর।
আল্লামা ফখরুদ্দীন রাযী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তফসীরে কবীরে اولى الامر এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, উক্ত আয়াতে اولى الامر এর উদ্দেশ্য হল দ্বীনের হক্কানী আলেমগণ ও ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ্গণ। উক্ত আয়াতে আল্লাহ্ তায়ালা হক্কানী ওলামায়ে কেরাম ও ও মুযতাহেদীনে এযামকে অনুসরণ করা ওয়াজিব করেছেন। তাফসীরে সাবীতে সুরা কাহাফের আয়াত اذكر ربك اذا نيست এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ আছে-
لايجوز تقليد ما عدا المذاهب الاربعة ولو وافق قول الصحابة والحديث الصحيح والاية اما الخارج عن المذاهب الاربعة فضال مضل وربّما ادّاه ذالك الكفر لانّ الاخذ بظواهر الكتاب والسنة من اصول الكفر
অর্থাৎ চার মাযহাব (হানাফী, শাফেয়ী, মালেকী, হাম্বলী) ছাড়া অন্য কোন মাযহাব অনুসরণ করা জায়েয নেই। যদিওবা তা প্রকাশ্যভাবে সাহাবায়ে কেরামের বাণী, বিশুদ্ধ হাদিস ও আয়াতে করীমা অনুযায়ী হয়। উল্লেখিত চার মাযহাবের বাইরে যারা আমল করবে তা ভ্রান্ত ও অপরকে বিভ্রান্তকারী। কেননা কোরআন ও হাদিসের শুধু বাহ্যিক অর্থ গ্রহণ করা কুফরীর মূল। (যেহেতু কুরআন-সুন্নাহর রহস্যাদি সম্পর্কে হক্কানী মুযতাহেদীনে হযরাতই জ্ঞাত)
সুতরাং বর্তমান সময়ের আহলে হাদিস সম্প্রদায় হল ইসলাম বহির্ভূত একটি ভ্রান্ত দলের নাম। তারা কোরআন, সুন্নাহ্, ইজমা ও কিয়াসের পরিপন্থী একটি বাতিল ও জঙ্গী সম্প্রদায় বিধায় শরীয়তের দৃষ্টিতে তারা জাহান্নামী। সুতরাং ঈমান ও আমল হেফাযতের লক্ষে তাদের থেকে দূরে থাকা অত্যন্ত জরুরী। বর্তমানে মিডিয়ার মাধ্যমে আহলে হাদিস বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। সুতরাং সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বান রইল। [তাফসীরে কবীর, হাশিয়ায়ে দুররুল মুখতার ও নুরুল আনোয়ার ইত্যাদি।]

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •