মুহাম্মদ রাইসুল ইসলাম রাব্বী
মনসা পটিয়া, চট্টগ্রাম
প্রশ্ন: একজন হক্কানী পীরের কাছ থেকে খেলাফত পাওয়ার জন্য কি কি যোগ্যতার প্রয়োজন এবং যে কোন মানুষ বায়াত হওয়ার জন্য পীরের কাছে কি কি যোগ্যতা শর্ত। কোন ব্যক্তি যদি শিক্ষাগত যোগ্যতায় ইঞ্জিনিয়ার, সাবেক স্কুল শিক্ষক এবং সে যদি কোন হক্কানী পীর বা আউলিয়া থেকে খেলাফত পেয়েছে বলে পীর বা খলিফা দাবী করে বায়াত করায় এবং কেউ যদি উক্ত পীরের হাতে ইচ্ছাকৃত বায়াত হয় তার কি অবস্থা হবে এবং অনিচ্ছায় বায়াত হয় তাকে কি করতে হবে ক্বোরআন-হাদিসের আলোকে উত্তর দানে আমাকে ধন্য করবেন।
উত্তর: সত্যিকার অর্থে পীর বা মুর্শিদ হওয়ার পর বা খেলাফত পাওয়ার যোগ্য হওয়ার জন্য কতিপয় গুণাবলী ও শর্তাবলী রয়েছে সেগুলো বিদ্যমান থাকলে সে পীর হওয়ার বা খেলাফত পাওয়ার যোগ্য হবে এবং এ রকম পীরের কাছে মুরীদ হওয়াও বৈধ হবে। আর শর্তাবলী থেকে কোন একটি শর্ত পাওয়া না গেলে তাকে সত্যিকার অর্থে পীর মুর্শিদ বলা যাবে না এবং তার কাছে মুরীদ হওয়া শরীয়ত সম্মত হবে না। উক্ত গুণাবলী ও শর্তাবলীর মধ্যে-
১. আক্বিদা বিশুদ্ধ হওয়া অর্থাৎ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের আক্বিদায় বিশ্বাসী হওয়া। ওহাবী, খারেজী, রাফেজী, কাদিয়ানী, জামাআতী, শিয়া, আহলে হাদিস ইত্যাদি ভ্রান্ত মতবাদের অনুসারী না হওয়া।
২. প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান থাকা। তা হচ্ছে নিজে নিজে হক-বাতিল, হারাম-হালাল, পাক-নাপাক ইত্যাদি জরুরী মাসআলা-মাসাইল নির্ভরযোগ্য কিতাব থেকে জেনে নিতে সক্ষম হওয়া।
৩. পীরের শাজরায় কোন স্থানে বাতিল আক্বিদায় বিশ্বাসী কোন পীর অন্তর্ভুক্ত না থাকা।
৪. দ্বীনের প্রয়োজনীয় বিষয়সমূহ সম্পর্কে আলেম ও জ্ঞাত হওয়া।
৫. শরীয়তের হুকুমসমূহ আদায়ে অলস না হওয়া, অর্থাৎ ফরয, ওয়াজিব, সুন্নাত, নফল মুস্তাহাব ইত্যাদি বিধি-বিধান পালনে যথাসাধ্য সচেষ্ট থাকা এবং যাবতীয় নিষিদ্ধ বিষয় থেকে বিরত থাকা।
৬. দুনিয়ার লোভ লালসা এবং ভোগের ইচ্ছাসমূহ থেকে মুক্ত থাকা, মাখলুক ও কোন মানুষকে নিজমুখী করার মনোভাব সম্পন্ন না হওয়া বরং আল্লাহ্ ও তাঁর হাবীব মুখী করার মনোভাব সম্পন্ন হওয়া।
৭. সম্পদের সঞ্চয়কারী না হয়ে অকাতরে আল্লাহর রাস্তায় সম্পদ ব্যয়কারী হওয়া।
৮. নিজেকে উত্তম না ভাবা বরং বিনয়ী ও অধম মনে করা।
৯. কেউ স্বেচ্ছায় মুরিদ হওয়ার আকাংখা পোষণ করলে তাকে মুরীদ করা।
১০. বুযুর্গী প্রকাশে মত্ত না হয়ে নবীজির সুন্নাতের উপর অবিচল থাকা।
১১. ভাল স্বভাব, মার্জিত আচার-আচরণ সম্পন্ন এবং সৃষ্টির মঙ্গল কামনাকারী হওয়া।
সুতরাং সাধারণ শিক্ষায় শিক্ষিত ইঞ্জিনিয়ার বা স্কুল কলেজের শিক্ষক যদি ইলমে দ্বীনের জরুরী বিষয়সমূহ আয়ত্ত করেন এবং উপরোক্ত গুণাবলী ও যোগ্যতার নিরিখে স্বীয় কামিল হক্কানী পীর/মুর্শিদ খেলাফত দানে ধন্য করেন। তখন তিনি মুরিদানের আগ্রহের ভিত্তিতে হেদায়তের নিয়তে তরিকতের রাস্তায় বাইয়াত করাতে অসুবিধা নাই। আর উপরক্ত গুণাবলী ও যোগ্যতা ছাড়া মুরিদ করালে অযোগ্য হেলপার গাড়ী চালালে যে দশা সে দশাই হবে। অর্থাৎ যে নিজেই সঠিক রাস্তা চেনে না সে অপরকে কিভাবে শরিয়ত ও তরিকতের রাস্তা দেখাবে। এসব জাহেল ও ভণ্ড হতে অবশ্যই দূরে থাকতে হবে।