মুহাম্মদ জসিম উদ্দিন
রাজাপুর, মাইছছাড়া
হালুয়াঘাট, ময়নসিংহ
প্রশ্ন: মুনাজাত করার জন্য কি কাবা শরীফের দিকে মুখ ফিরানো শর্ত? কবরকে সামনে রেখে মুনাজাত করার হুকুম কি? জানালে কৃতজ্ঞ হব।
উত্তর: মুনাজাত করার সময় কাবা শরীফের দিকে মুখ করা শর্ত নয়, জামাত সহকারে নামায আদায় করা হলে ইমাম সাহেব মুকতাদীর দিকে ফিরে আর কবর যিয়ারত করার সময় কবরবাসীর দিকে মুখ করে মুনাজাত করা হল শরীয়ত কর্তৃক উত্তম তরিকা। বায়তুল্লাহ্ শরীফ তথা খানায়ে কাবা নামায ও যবেহের জন্য কিবলা হিসেবে নির্ধারিত। দোয়া ও মুনাজাতের কিবলা খানায়েকাবা নয় বরং দোঁয়ার কেবলা হল আসমানের দিকে, তাই আল্লাহ্ তা‘আলার সমীপে বান্দাগণের দোয়া মুনাজাত আসমানের দিকে হাত উঠিয়ে যে কোন দিকে মুখ করে করা যায়। যেমন কুরআন করিমে উল্লেখ আছে- اينما تولوا فثم وجه الله অর্থাৎ যে দিকেই তোমরা মুখ কর না কেন সেদিকে আল্লাহ্ বিরাজমান। অন্যত্র এরশাদ হয়েছে- فلله المشرق والمغرب অর্থাৎ পূর্ব পশ্চিম তথা সকল দিক আল্লাহর জন্য। সুতরাং নবী রসূল ও আউলিয়াকেরামের মাযার এবং সাধারণ মৃত ব্যক্তির কবর যিয়ারতের সময়ে মাযার ও কবরের দিকে মুখ করে দোয়া মুনাজাত করতে শরিয়ত মোতাবেক কোন অসুবিধা নেই। জামাতে নামায আদায় করলে জমাতের পর ইমাম সাহেব মুসল্লীর দিকে মুখ করে দোয়া-মুনাজাত করবে। এটা হল সুন্নাত ও উত্তম তরিকা। নামাযে জুমার পূর্বে আর ঈদের নামাযের পর খতিব সাহেব ২য় খোতবা প্রদানের সময় মুসল্লিদের জন্য বিশ্ব মুসলিমের জন্য ও স্বীয় দেশের জন্য দোয়া-মুনাজাত করা সুন্নাত। আর খতিব সাহেব জুমা ও ঈদের উভয় খোতবায় বায়তুল্লাহ্ তথা কাবা শরীফকে পিছ দিয়ে ও মুসল্লিদের দিকে মূখ করাটাও সুন্নাত। সুতরাং জুমা ও ঈদের নামাযের ২য় খোতবায় খতিব সাহেব কাবাকে পিছ দিয়ে মুসল্লিদের দিকে মুখ করে দোয়া করবে-এটাই সুন্নাত। ইসলামী শরীয়তের এ মাস্আলা দ্বারা স্পষ্ট প্রমাণিত যে দোয়া-মুনাজাতের কিবলা বায়তুল্লাহ্ শরীফ নয়। এটাও প্রমাণিত যে, কাবাকে পিছ দিয়ে কবরবাসী ও মাজার শরীফে শরিয়ত অলি-গাউস ও কুতুবের দিকে মুখ করে দোয়া মুনাজাত করা শিরক/হারাম বিদআত নয় বরং শরিয়ত সম্মত। যেভাবে ২য় খোতবায় কাবা শরীফের পিছ দিয়ে মুসল্লিদের দিকে মুখ করে খতিব সাহেবের দোয়া-মুনাজাত করা শিরক/হারাম/বিদআত না বরং সুন্নাত ও উত্তম ইবাদত। সুতরাং শরিয়তের এসব বিধি-বিধান ও মাসআলা-মাসায়েল সম্পর্কে অবগত না হয়ে কবরে ও মাজার জিয়ারতের সময় কবরবাসীর দিকে মুখ করে দোয়া-মুনাজাত করাকে বাধা দেয়া বা শিরক/হারাম/বিদআত বলা শরিয়ত সম্পর্কে চরম অজ্ঞতা ও মারাত্মক সীমা লঙ্ঘন। এ জাতীয় লোক ইসলামের হীতাকাঙ্খী নয় বরং ইসলামের পরম শত্র“।
[ফতোয়ায়ে ফয়জুর রসূল, কৃত. মুফতি জালাল উদ্দিন আজমাদী রহ. ইত্যাদি]