প্রশ্ন: আমি ওহাবী মতবাদের এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনারা সিরাতুন্নবী করেন, না কি ঈদে মিলাদুন্নবী করেন? তিনি বললেন ১২ রবিউল আউয়াল নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দুনিয়াতে আসেন এবং ঐ দিন আবার দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। তাই আমরা ঐ দিন ঈদে মিলাদুন্নবী করি না। যেহেতু তিনি ঐ দিন দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। সেজন্য আমরা শোক প্রকাশ করে সিরাতুন্নবী করি। এ উত্তর কতটুকু যথার্থ- জানালে কৃতজ্ঞ হব।

0

?        মুহাম্মদ এরশাদুল মোস্তফা,    বি.আই.টি ক্যাম্পাস স্কুল এণ্ড কলেজ,  চট্টগ্রাম

প্রশ্ন: আমি ওহাবী মতবাদের এক ব্যক্তিকে প্রশ্ন করেছিলাম, আপনারা সিরাতুন্নবী করেন, না কি ঈদে মিলাদুন্নবী করেন? তিনি বললেন ১২ রবিউল আউয়াল নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দুনিয়াতে আসেন এবং ঐ দিন আবার দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। তাই আমরা ঐ দিন ঈদে মিলাদুন্নবী করি না। যেহেতু তিনি ঐ দিন দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। সেজন্য আমরা শোক প্রকাশ করে সিরাতুন্নবী করি। এ উত্তর কতটুকু যথার্থ- জানালে কৃতজ্ঞ হব।

্উত্তর: ইমাম ইবনে জোজী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি, ইমাম কোস্তালানী, মুহাদ্দিস ইমাম ইবনে দাহিরাহ্ এবং শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হিমসহ বিশ্বের সকল ইমাম, মুহাদ্দিস ও ঐতিহাসিকগণের মতে ১২ রবিউল আউয়াল শরীফে যুগে যুগে বিশ্বের সমস্ত মুসলমান হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর ধরা বুকে বেলাদত শরীফ তথা পবিত্র শুভাগমনের খুশী উদ্যাপন করে আসছেন। রবিউল আউয়াল শরীফে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ওফাত শরীফ হওয়া সত্ত্বেও এ মাসে কেউ ‘ওফাতুন্নবী’ বা ওফাত দিবস ইত্যাদি পালনার্থে শোক বা দুঃখ প্রকাশ করতে ইসলামী মনীষীগণ নিষেধ করেছেন। কেননা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হাদিস শরীফে ইরশাদ করেছেন ‘‘আমার হায়াত অর্থাৎ দুনিয়ার বাহ্যিক জীবন যেভাবে তোমাদের জন্য মঙ্গলময় আমার ওফাত শরীফও তোমাদের জন্য মঙ্গলময় ও কল্যাণময় (দুঃখ বা শোকের বিষয় নয়)। রবিউল আউয়াল মাসে যুগ যুগ ধরে চলে আসা ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর অনুষ্ঠান না করে যারা এ পবিত্র মাসে ‘সীরাতুন্নবী’ বা ‘ওফাতুন্নবী’ ইত্যাদি অনুষ্ঠান করে থাকে তাদের আসল উদ্দেশ্য হলো এ সবের মাধ্যমে ‘মিলাদুন্নবী’ এর খুশী উদ্যাপনের দিক থেকে মুসলিম সমাজের ধর্মীয় অনুভূতিকে অন্যদিকে ফেরানোর অপচেষ্টা। মূলত এটা সৎ উদ্দেশ্যে নয় বরং ষড়যন্ত্রমূলক। আরো উল্লেখ্য যে, ১২ রবিউল আউয়াল  কোন কোন ইতিহাসবিদগণের মতে হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ‘ওফাত দিবস’ প্রমাণিত হলেও ওফাতের শোক পালন করা শরিয়ত মোতাবেক নিষিদ্ধ। কারণ শরীয়ত মতে ওফাতের শোক প্রকাশ, ওফাতের তিন দিন পর স্ত্রী ছাড়া সকলের জন্য অকাট্যরূপে নিষিদ্ধ। তদুপরি আল্লাহর সম্মানিত নবীগণ আলাইহিমুস্ সালামের ইনতিকাল, ওফাত দিবস ও উম্মতের জন্য শোকের নয়। বরং মঙ্গল ও কল্যাণের দিন হিসাবে স্বীকৃত। এটা মূলতঃ সাধারণ মানুষও আল্লাহর প্রিয় নবীগণের ওফাতের মধ্যে এক বিরাট পার্থক্য। পবিত্র হাদিসে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-

اِنَّ من افضل ایامکم یوم الجمعۃ فیہ خلق اٰدم وفیہ قبض الحدیث (سنن نسائی صفح ۱۵۰)

অর্থাৎ তোমাদের দিনগুলোর মধ্যে আফজল, উৎকৃষ্ট দিন হচ্ছে জুমার দিন। কারণ ঐ দিনে হযরত আদম আলাইহিস্ সালামকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং ঐ দিনেই তাঁর ওফাত হয়েছে। [সুনানে নাসাঈ, পৃ.১৫০]

          অতঃপর হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-

ان ہذا یوم عید جعلہ اللہ للمسلمین (سنن ابن ماجہ ۷۸)

          অর্থাৎ এ জুমার দিবস হচ্ছে ঈদের দিন। এটাকে আল্লাহ তা‘আলা মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন। [সুনানে ইবনে মাজাহ্ পৃ. ৭৮]

          সুতরাং পবিত্র হাদিসের আলোকে স্পষ্ট হয়ে গেলো যে, জুমার দিনটি হচ্ছে একজন নবীর (হযরত আদম আলাইহিস্ সালাম) এর ‘মীলাদ বা সৃষ্টির দিনও, আবার তাঁর ওফাতের দিনও। এটা সত্ত্বেও আল্লাহর প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ওফাতের শোক কে উপেক্ষা করে বাবা আদম নবীর সৃষ্টির দিবসের খুশিকেই স্থায়ীত্ব দান করেছেন এবং প্রত্যেক জুমার দিবসে ইবাদত-বন্দেগীর মাধ্যমে ঈদ বা খুশী উদ্যাপনের নির্দেশ দিয়েছেন। অতএব কোন কোন ঐতিহাসিক ১২ রবিউল আউয়ালকে প্রিয় নবীর ‘মিলাদ’ দিবসের সাথে ‘ওফাত’ দিবস হিসেবে মেনে নিলেও উক্ত দিবস বা উক্ত মাসে ওফাত দিবসের শোক পালনের বৈধতা ওফাত শরীফের তিন দিন পরই শেষ হয়ে গেছে। কিন্তু মীলাদের খুশী কিয়ামত পর্যন্ত বাকী থাকবে। তাই এ মোবারক মাস ও দিনে ওফাত দিবস বা শোক দিবস নয় বরং মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র উৎসব পালনই শরিয়ত সমর্থিত। ১২ রবিউল আউয়ালের দিনে ওফাতুন্নবী ও সীরাতুন্নবী ইত্যাদি পালনের মাধ্যমে যারা হুযূর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর ওফাতের শোক দিবস পালন করে বলে বেড়ায় তারা মূলত শরিয়ত সম্পর্কে মূর্খ ও অজ্ঞ।

          উল্লেখ্য, ইনতেকাল ও ওফাতের পর সাধারণত তিন দিন পর্যন্ত পরিবারের সদস্যরা শোক পালন করবে তার পরে নয়। তবে স্বামী মারা গেলে শুধু স্ত্রী অন্তঃসন্ত্বা হলে গর্ভ প্রসব করা পর্যন্ত, অন্যথা স্ত্রী স্বামীর মৃত্যুর চার মাস দশদিন পর্যন্ত শোক পালন করবে। শুধু স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর ক্ষেত্রে এ বিধান। অন্য কারো জন্য নয়।

 [মা ছাবাতা বিছ্ সুন্নাহ্, কৃত. শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (রহ.) ও আল হাবী লিল ফতোয়া কৃত. ইমাম জালার উদ্দিন সুয়ূতী রহ. ও আল্ মাওয়াহেবুল লাদুন্নিয়া কৃত. ইমাম আহমদ কুস্তালানী রহ. ইত্যাদি]

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •