মুহাম্মদ মহিউদ্দীন
কর্ণফুলি, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: আমার এলাকায় কিছু সংখ্যক চায়ের দোকানে ডিস এন্টিনার সংযোগ রয়েছে। একইভাবে বিভিন্ন ছোট-খাটো দোকানে কম্পিউটার দিয়ে মোবাইলে বিভিন্ন গান ও রিংটোন দেওয়া হয়। ঐ সব দোকানে ডিস এন্টিনা/কম্পিউটারের মাধ্যেমে বিভিন্ন অর্ধ-অলঙ্গ মহিলাদের নৃত্য ও গান-বাজনা চলে। কিন্তু আবার দেখা যায়, ঐ সব দোকানে ডিস এন্টিনা/কম্পিউটারের মাধ্যমে ক্বোরআন তেলাওয়াতও করে। প্রশ্ন হলো টেলিভিশন/কম্পিউটারের মাধ্যমে অশ্লীল ও অর্ধনগ্ন-অশ্লীল ভিডিও ভারতীয় গান বাজনা দেখে, আর একই টেলিভিশনের মাধ্যমে যে ক্বোরআন তেলাওয়াত করা হয়। কাজেই তা জায়েয হবে কিনা? আর টেলিভিশন/কম্পিউটারের মাধ্যমে যে ক্বোরআন পড়ে তাতে ক্বোরআনের বেইজ্জত হবে কিনা? যদি বেইজ্জত হয়, তাহলে দোকানদারের গুনাহ্ হবে কিনা জানতে চাই।
উত্তর: ডিস এন্টিনা, কম্পিউটার, টিভি, মোবাইল ফোন, ইউ-টিউব ইত্যাদি মাধ্যমে ক্বোরআনে পাকের তিলাওয়াত ইসলামী আচার-অনুষ্ঠান দেখা ও শোনা ইসলামের দৃষ্টিতে অসুবিধা নেই। বরং ভালো ও উত্তম। আর ক্বোরআন তেলাওয়াতের সময় মনোযোগ সহকারে শ্রবণ করা ক্বোরআনের প্রতি আদব ও তাজিম। তবে হাটে-বাজারে, দোকানে-রাস্তাঘাট ও হাটা-চলার সময় টিভি ও কম্পিউটার সহ ইত্যাদির আধুনিক যোগাযোগ ও প্রযুক্তির মাধ্যমে ক্বোরাআন তেলাওয়াত প্রচারিত হলে শ্রবণ করা বাধ্যতামূলক নয়। যেহেতু সে সকল জায়গায় মানুষ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত থাকেন। তবে কেউ আন্তরিকতার সাথে শ্রবণ করলে অবশ্যই সওয়াব রয়েছে। প্রত্যেক বস্তুর দুটি দিক রয়েছে- ভালো আর মন্দ। তেমনি বিজ্ঞানের আবিস্কৃত বস্তুসমূহেও। বিজ্ঞানের প্রতিটি আবিস্কার কে ভালো ও পুণ্যের কাজে ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে সওয়াবের কাজ এবং বৈধ। যা ব্যক্তি, রাষ্ট্র সমাজের জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। আর মন্দ ও খারাপ কাজে ব্যবহার করা যেমন টিভি, কম্পিউটার, মোবাইল ফোন সহ যাবতীয় নিত্য নতুন প্রযুক্তি মন্দ ও অশ্লীল কাজে ব্যবহার করা অবশ্যই নিন্দনীয় ও গুনাহের কাজ। তাই টেলিভিশন, কম্পিউটার, ডিস লাইন মোবাইল ফোন ইত্যাদির মাধ্যমে অশ্লীল, নগ্ন ছায়া-ছবি, নাচানাচি, অশ্লীল গান-বাজনা ইত্যাদি দেখা এবং দেখানো দুটোই সমান অপরাধ, পাপ ও গর্হিত কাজের অন্তর্ভুক্ত। যা আল্লাহ্ তা’আলা পছন্দ করেন না। রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন-
لايحب الله الجهر بالسوء من القول الا من ظلم وكان الله سميعا عليما- (نساء ১৪৮)
অর্থাৎ আল্লাহ্ তা’আলা অশ্লীল ও কোন মন্দ বিষয় প্রকাশ করা পছন্দ করেন না। কিন্তু মজলুমের বিষয় স্বতন্ত্র, অর্থাৎ যার উপর অন্যায়ভাবে জুলুম করা হয়েছে সে জালেমের মন্দ দিকগুলো প্রকাশ করতে পারবে। [সূরা নিসা: ১৪৮]
তবে চায়ের দোকানে বা বিভিন্ন এন্টিনা ও কম্পিউটার দোকানে কাষ্টোমারকে আকৃষ্ট করার জন্য ডিস-এন্টিনা এর সাথে সংযোগ স্থাপন করে নারী-পুরুষ ও যুবক-যুবতীদের অর্ধ উলঙ্গ ছায়া-ছবি ও নাচানাচি প্রদর্শন করা নিঃসন্দেহে বেহায়াপনা ও অশ্লীলতা যা মুসলিম নর-নারী, মা-বোন, ও যুবক-যুবতী ও ছাত্র-ছাত্রীদের চরিত্র ধ্বংস ও অশ্লীল করে দিচ্ছে। সামর্থবান ও সক্ষম মুসলমানের উপর এ জাতীয় গর্হিত কূকর্মকে প্রতিহত করা অবশ্যই জরুরী। নতুবা আল্লাহর দরবারে জবাব দিহি করতে হবে। অশ্লীল নাচ-গান প্রদর্শন কারীর গুনাহ্ ও অপরাধ যে ব্যক্তি দেখে তার চেয়ে অনেক বেশী। যারা এসব দোকানে অশ্লীল ছায়া-ছবি দেখে নষ্ট হচ্ছে তাদের সকলের গুনাহের বোঝা প্রদর্শনকারীর উপর বর্তাবে।
এদেরকে বাধা দেয়া ও প্রতিরোধ করা আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় রাসূলের নির্দেশ। এ সম্পর্কে ক্বোরাআন অসংখ্য বর্ণনা এসেছে। যেমন আল্লাহর তা’আলা আমাদের প্রিয় নবীর উম্মতের চরিত্র ও প্রশংসা বর্ণনা করতে গিয়ে ক্বোরআনে পাকে ইরশাদ করেন-
كنتم خير امة اخرجت للناس تامرون بالمعروف تنهون عن المنكر- الاية (سورة ال عمران১১০)
অর্থাৎ হে আমার হাবীবের উম্মত। তোমরা সর্বশ্রেষ্ঠ সম্প্রদায় তোমাদেরকে মানুষের কল্যাণের জন্য পৃথিবীতে পাঠানো হয়েছে যেন তোমরা একে অপরকে সৎ ও পুণ্যের দিকে আদশে করবে এবং (যত প্রকারের) অশ্লীল মন্দ কাজ আছে তা হতে একে অপরকে বিরত রাখবে ও নিষেধ করবে। [সূরা আলে ইমরান: আয়াত-১১০]
প্রিয় নবী সরকারে দু’জাহান রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে হাদীস শরীফে ইরশাদ করেন-
من راى منكم منكرا فلغيره بيده فان لم يستطع فبلسانه وان لم يستطع فبقلبه وذالك اضعف الايمان-( صحيح مسلم وغيره)
অর্থাথ তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অশ্লীল ও কু-কর্ম দেখবে তা অবশ্যই হাতে প্রতিরোধ করবে অর্থাৎ শক্তি থাকলে শাস্তি প্রয়োগ করবে আর যদি হাতে বাধা দেয়ার সামর্থ না রাখে তবে মুখে বাধা দিবে আর যদি মুখে ও বাধাঁ দেয়ার সামর্থ না রাখ তবে এ জাতীয় অশ্লীল ও গুনাহের কাজকে মনে-প্রাণে ঘৃণা করবে। আর এটা হল খুবই দুর্বল ঈমানের পরিচয়।
[সহীহ মুসলিম শরীফ]
উল্লেখ্য এ সব নগ্ন ও উলঙ্গ অশ্লীল ছায়া-ছবি ও নাচা-নাচি প্রদর্শন কারীরা উক্ত ডিস-এন্টিনা ও কম্পিউটার হতে কখনো কখনো পবিত্র ক্বোরআনের তেলাওয়াত ও প্রচার করে থাকে তাদের উদ্দেশ্য যদি ক্বোরআন তেলাওয়াতকে হেয় প্রতিপন্ন ও বেইজ্জত করা হয় তখন ঈমান ধ্বংস হয়ে যাওয়ার আশংকা, আর এ উদ্দেশ্যে ও নিয়ত না হলে অসুবিধা নেই। আর শ্রবণকারী ও দর্শক যদি ভাল ও সওয়াবের নিয়তে টিভি-ডিস-এন্টিনা ও কম্পিউটার হতে ক্বোরআন তেলাওয়াত ভক্তি ও আদবের সাথে শ্রবণ করে তা হলে সওয়াব। এ সব বিষয়ে ইসলামী আইন ও ফিকহ ফতোয়ার ধারা হল الامور بمقاصدها অর্থাৎ কর্ম-কাণ্ডে ও দ্বীনী-দুনিয়াবী বিষয় সমূহ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের সাথে সম্পৃক্ত। উদ্দেশ্য ও নিয়ত সহীহ হলে সওয়াব পাবে আর উদ্দেশ্য শুদ্ধ না হলে গুনাহ হবে। [কিতাবুল আশবাহ ওয়ান্নাযায়ের কৃত: ইবনে নুজাইম হানাফী মিসরী রহ.]