প্রশ্ন: রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নূর হতে সৃষ্ট। এ কথার বিশ্লেষণ মূলক ও প্রামাণ্য আলোচনা পেশ করার অনুরোধ রইল। কোন কোন মহল রাসূলে পাকের শানে এ ধরণের মন্তব্য করতে শুনা যায় তিনি আমাদের মত সাধারণ মানুষ, দশজনের মত/মাটির তৈরি/ কবরের মাটির সাথে মিশে গেছে। লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা নেই। পরের কল্যাণ সাধন করা দূরের কথা নিজের কল্যাণ করতেও অক্ষম। তাদের ব্যাপারে ইসলামী শরীয়তের ফায়সালা কি? বিস্তারিত জানিয়ে ধন্য করবেন।

0

 সৈয়দ আহমদ রেযা
কুলগাও, জালালাবাদ, বায়েজিদ, চট্টগ্রাম।…

 প্রশ্ন: রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নূর হতে সৃষ্ট। এ কথার বিশ্লেষণ মূলক ও প্রামাণ্য আলোচনা পেশ করার অনুরোধ রইল। কোন কোন মহল রাসূলে পাকের শানে এ ধরণের মন্তব্য করতে শুনা যায় তিনি আমাদের মত সাধারণ মানুষ, দশজনের মত/মাটির তৈরি/ কবরের মাটির সাথে মিশে গেছে। লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা নেই। পরের কল্যাণ সাধন করা দূরের কথা নিজের কল্যাণ করতেও অক্ষম। তাদের ব্যাপারে ইসলামী শরীয়তের ফায়সালা কি? বিস্তারিত জানিয়ে ধন্য করবেন।…

 উত্তর: হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু কর্তৃক মরফু হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর জাতি নূরের জ্যোতি থেকে সৃষ্ট। অতঃপর উক্ত নূর হযরত আদম আলায়হিস্ সালামের ললাটে এই জগতে তশরীফ এনেছেন এবং আল্লাহর কুদরতে বিশেষ প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ঐ নূরে পাক এক দেহ হতে অন্য দেহে স্থানান্তরিত হতে হতে অবশেষে হযরত আবদুল্লাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ললাট হতে ঐ পবিত্র নূর সরাসরি হযরত আমেনা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহার গর্ভে স্থান লাভ করেন। তারপর যথাযথ সময়ে আল্লাহ তা’আলার হুকুমে দুনিয়াতে শুভাগমন করেন। তাতে বুঝা গেল যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের দেহ মোবারক নূরের সৃষ্টি। হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নূরে মুজাস্সম তথা আপাদমস্ততক নূর ছিলেন। বিধায় বিশুদ্ধ বর্ণনা অনুযায়ী চন্দ্র সূর্যের আলোতে রাসূলে করীমের (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) নূরানী শরীর মোবারকের ছায়া কখনো জমিনে পতিত হয়নি এবং কেউ দেখেনি যেহেতু হুযূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নূর হতে সৃষ্টি বিধায় নূরের ছায়া হয় না। এবং পবিত্র মেরাজ রজনীতে সরওয়ারে কায়েনাত নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মহান আল্লাহর বিশেষ দয়া ও মেহেরবানীতে রাতের সামান্য সময়ে মসজিদুল হারাম (মক্কা শরীফ) হতে বায়তুল্ল মোকাদ্দাস, সেখান হতে উর্ধ্ব জগত তথা সপ্ত আসমান বেহেশত-দোজখ, লওহ কলম, আরশ-কুরছি সব পরিদর্শন করত: স্বশরীরে জাগ্রতাবস্থায় আল্লাহর দিদারে ধন্য হয়ে পুনরায় মূহূর্তের মধ্যে মক্কা শরীফে ফিরে এসেছেন। যা সহীহ বোখারীসহ অনেক হাদীসের নির্ভরযোগ্য কিতাবের বিশুদ্ধ বর্ণনা (হাদীস) দ্বারা প্রমাণিত। তা একমাত্র সম্ভব হয়েছে এ জন্য যে, তিনি (আক্বা ও মওলা মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) আপাদ-মস্তক অর্থাৎ তার পবিত্র দেহ মোবারকসহ নূর ছিলেন। নূরানী স্বত্তা না হলে স্বশরীরে জাগ্রতাবস্থায় পবিত্র মেরাজের সফর কখনো সম্ভবপর হত না। অবশ্য রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নূরের সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও তিনি মানব বংশে নূরানী মানব ও সর্বশ্রেষ্ঠ রাসূল হিসেবে পৃথিবীতে মহান আল্লাহর পক্ষ হতে মানব জাতির হেদায়তের জন্য প্রেরিত হয়েছেন। ফেরেশতা বা জিন জাতীয় তিনি নন। কিন্তু সমগ্র কায়েনাতের এবং খোদার সমগ্র খোদায়ীর তিনি সর্বশ্রেষ্ঠ নবী-রাসূল। সুতরাং প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর ব্যাপারে প্রত্যেক প্রকৃত মুসলমানের এ আদর্শ ও বিশ্বাস পোষণ করতে হবে যে, আক্বা ও মওলা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ইমামুল আম্বিয়া এবং অদ্বিতীয় ও অতুলনীয় বেমেসাল নূরানী মানব ও আল্লাহর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। তাঁর উপর লাখো দরূদ লাখো সালাম। তাঁর শানে তিনি আমাদের মত সাধারণ মানুষ /দশজনের মত/ বড় ভাইয়ের মত মাটির তৈরি/ কবরের মাটির সাথে মিশে গেছে/ লাভ-ক্ষতির ক্ষমতা নাই/ পরের কল্যাণ সাধন করা দূরের কথা নিজের কল্যাণ সাধন করতেও অক্ষম ইত্যাদি এ জাতীয় মন্তব্য করা বা লেখা অবশ্যই জঘন্যতম বেয়াদবি ও বেঈমানীর নামান্তর। যদি না জেনে না বুঝে অন্য একজন হতে শুনে মন্তব্য করে জানার সাথে সাথে তওবা করবে এবং কলমা পড়ে সহীহ রাস্তায় অটল থাকবে। আর জেনে-বুঝে এ ধরণের কটূক্তিকারী বেঈমান হয়ে যাবে তার তওবা কবুল হবে না।
[আল্ মাওয়াহেবুল লাদুনিয়া কৃত: ইমাম কসতলানী রহ., রেসালায়ে নূর কৃত: মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রহ., নূরুন্নবী (দ.) কৃত অধ্যক্ষ হাফেজ এম এ জলিল রহ., বাগে খলিল ১খণ্ড, তরজুমানে আহলে সুন্নাত বিগত রবিউল আউয়াল তথা ঈদে মিলাদুন্নবী (দ.) সংখ্যা সমূহ ইত্যাদি]

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •