রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সুমহান চরিত্র অনুসরণই বিশ্বশান্তির পূর্বশর্ত-মাওলানা কাজী মুহাম্মদ কামরুল আহছান

0

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র
সুমহান চরিত্র অনুসরণই বিশ্বশান্তির পূর্বশর্ত
মাওলানা কাজী মুহাম্মদ কামরুল আহছান

======

আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন আমাদের প্রিয়নবী রহমাতুল্লিল আলামীন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামকে সর্বকালের সর্বযুগের সর্বশ্রেষ্ঠ জীবনাদর্শ দিয়ে প্রেরণ করেছেন। তাঁকে আল্লাহ্ পাক ‘‘খুলুকে আযীম’’ সুমহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত করেছেন। তাঁর সুমহান চরিত্রের আদর্শ শিক্ষার ফলে আরবের জাহেলিয়া যুগের বর্বর লোকেরা অনুপম চরিত্রের অধিকারী হয়ে গোটা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ আসন অর্জন করতে সক্ষম হয়েছিল। মানব সভ্যতার শান্তিময় অর্জনের ক্ষেত্রে রাসূলের আদর্শ শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপায় ভূষিত। বর্তমানে আমরা আধুনিক জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতার দোহাই দিয়ে প্রিয়নবীর আদর্শ চরিত্রের শিক্ষা ভুলে যাচ্ছি। আমাদের অজ্ঞতার কারণে আমরা নবীর শিক্ষাকে সংকুচিত ও অসম্পূর্ণ বলতেও দ্বিধা করছিনা। ফলে নৈতিকতা শূন্য জ্ঞান-বিজ্ঞানের উৎকর্ষতা সত্ত্বেও আমরা অশান্তির দাবানলে নিক্ষিপ্ত হচ্ছি। অথচ রাসূলুল্লাহ্র সুমহান চরিত্রের শিক্ষা ও আদর্শ বর্জন করে বিশ্ব মানবতার শান্তি ও মুক্তি অর্জন অসম্ভব।

আল্লাহ্ তা‘আলার প্রেরিত নবী-রাসূলগণ সকলেই সচ্চরিত্র ও উন্নত আখলাকে পরিপূর্ণ আদর্শ ছিলেন। বিপথগামী মানব সমাজ তাঁদের কাছ থেকেই উন্নত আচরণের পথ নির্দেশনা লাভ করতো। প্রিয়নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার পবিত্র সত্তার মধ্যেই সকল নবী-রাসূলগণের উত্তম চরিত্রাবলীর সামগ্রিক সমন্বয় বিদ্যমান।

পবিত্র ক্বোরআনুল করীমে প্রিয়নবীজীর চরিত্রের প্রশংসায় এরশাদ করা য়েছে-
وَاِنَّكَ لَعَلٰى خُلُقٍ عَظِيْمٍ- অর্থ: আপনি অবশ্যই সুমহান চরিত্রের উপর অধিষ্ঠিত।
[সূরাতুল ক্বলম: ৪] প্রিয়নবী নিজেই ঘোষণা করেছেন- بعثت لاتمم مكارم الاخلاق-
অর্থ: ‘‘আমি উত্তম চরিত্রসমূহকে পরিপূর্ণতা দান করার জন্য প্রেরিত হয়েছি।’’ [মিশকাতুল মাসাবীহ] পবিত্র ক্বোরআনে রাসূলের অনুসরণকে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের মাপকাঠি বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যেমন-قل ان كنتم تحبون الله فاتبعونى يحببكم الله-
অর্থাৎ হে মাহবূব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম! আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালোবাসো, তবে আমাকে অনুসরণ করো, তবে আল্লাহ্ও তোমাদেরকে ভালোবাসবেন। [সূরা আলে ইমরান: ৩১] রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার সুমহান চরিত্র ও গুণাবলীর কয়েকটি সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।

আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ছিলেন সত্যবাদিতা ও আমানতদারীর মূর্তপ্রতীক। মক্কাবাসীরা নবূয়াত প্রকাশের আগে বাল্যকাল থেকেই তাঁকে ‘আল্ আমীন’ (আমানতদার) ‘আস্সাদিক’ সত্যবাদী বলে ডাকতেন। মক্কার লোকেরা নিজেদের আমানত সমূহ গচ্ছিত রাখার জন্য নবীজী ব্যতীত অন্য কাউকে নির্ভরযোগ্য মনে করতেন না। এমনকি তাঁর গৃহ একটি উৎকৃষ্ট ‘দারুল আমানত’ বা আমানতের গৃহে পরিণত হয়েছিল। তাই হিজরতের সময়ে হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে ওই সকল আমানত মালিকদেরকে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য দায়িত্ব দিয়ে গিয়েছিলেন। তিনদিনের মধ্যে তিনি সকল মালসম্পদ মালিকদেরকে পৌঁছে দিয়েছিলেন।

হযরত আবু সুফিয়ান রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু’র নিকট ইসলাম গ্রহণের পূর্বে বায়যান্টান সম্রাট নবীজী সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলেন: নবূয়াত প্রকাশের পূর্বে তিনি কি কখনও মিথ্যা বলেছেন? তিনি বলেন, না, আবার জিজ্ঞাসা করলেন, তিনি কি কখনও প্রতারণা করেছেন। আবু সুফিয়ান বললেন না।[সহীহ বুখারী শরীফ: ওহী অধ্যায়]

কা’বা শরীফ পুণ:নির্মাণ করার সময় মক্কার লোকেরা হাজরে আসওয়াদ স্থাপন করাকে কেন্দ্র করে একে অপরের বিরুদ্ধে অসি-উত্তোলন করে। তখন তাঁরা রাসূলকে দেখে বলে উঠেছিল- هَذَا الْاَمِيْنُ رَضَيْنَا بِهِ
অর্থ: ‘‘এই যে আল্্ আমীন, আমরা তাঁর মীমাংসায় সন্তুষ্ট আছি।’’

আমাদের প্রিয়নবীর সুমহান চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যাঁরাই তাঁর সাথে কিছু সময় অতিবাহিত করেছেন, তাঁরা সকলেই তাঁর সদাচারের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। তৎকালীন আরবে লজ্জা ও শালীনতাবোধের দৈন্য ছিল। বর্তমানকালে আমাদের সমাজেও লজ্জা ও শালীনতা হ্রাস পেয়েছে। অথচ লজ্জা ও শালীনতা মানবতার মুকুটস্বরূপ। আরবের লোকদের মধ্যে কোন কোন সম্প্রদায় উলঙ্গ অবস্থায় কা’বা ঘর তাওয়াফ করতো। কিন্তু আমাদের নবীজী সম্পর্কে হযরত আবু সাঈদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘‘রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পর্দানশীন কুমারী নারী অপেক্ষাও অধিক লাজুক ছিলেন।’’ [মুসলিম শরীফ: হাদীস নম্বর ২৩২০]

তিনি ঘোষণা করলেন, লজ্জাশীলতা ঈমানের অঙ্গ। তিনি আরও ইরশাদ করেন, যদি কারও লজ্জা না থাকে, তাহলে সে যা ইচ্ছা তা করতে পারে। বর্তমান যুগে আমরা দেখছি অশ্লীলতারমূল হচ্ছে লজ্জার অভাব।

প্রিয়নবীজী ছিলেন কঠোর সংকল্প ও দৃঢ়চিত্ততার উজ্জ্বল নিদর্শন। তিনি ‘উলূল আযম’ (স্থির প্রতিজ্ঞা) রাসূলদের মধ্যে অন্যতম। যেমন- আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম যখন নবুয়াতের বিরাট দায়িত্ব বহন করেন, তখন মক্কার কুরাইশদের কেউই তাঁর সহযোগী ছিলনা। কিন্তু তিনি দৃঢ়চিত্তে স্বীয় গন্তব্যে অগ্রসর হতে বিন্দুমাত্র সংকোচবোধ করেননি। বরং তিনি মুশরিকদের অত্যধিক বিরোধিতার সময় বলেছিলেন, ‘‘আল্লাহর শপথ! তারা যদি আমার এক হাতে চন্দ্র ও অন্য হাতে সূর্যও এনে দেয় তবুও আমি দ্বীন প্রচার হতে বিরত হবো না। যে পর্যন্ত এ কাজ শেষ হবে কিংবা আমার ওফাত হবে।
[ইবনে হিশাম: সীরাত ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা ২৮৪]

প্রিয়নবীজীর পরিচালিত যুদ্ধগুলোকে (হুনায়ন যুদ্ধ ব্যতীত) মুসলমানদের তুলনায় শত্র“দের সংখ্যা কয়েকগুণ বেশী ছিল। কিন্তু এতদত্ত্বেও তিনি এক মুহূর্তের জন্যও আপন সংকল্প হতে বিচ্যুত হননি। একদা জনৈক শত্র“ হুযূরকে একাকী একটি বৃক্ষের ছায়ায় বিশ্রাম করতে দেখে তলোয়ার উত্তোলন করে বলল, ‘‘হে মুহাম্মদ! এখন তোমাকে আমার হাত থেকে কে রক্ষা করতে পারে? নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম দৃঢ় কন্ঠে বললেন, আল্লাহ্! একথা শুনা মাত্র সে ভয়ে কেঁপে উঠলো এবং তলোয়ার হাত থেকে পড়ে গেল। নবীজী পরে তাকে ক্ষমা করে দিলেন। [বুখারী শরীফ: ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ২২৬]

প্রিয় রাসূল ছিলেন অত্যন্ত বিনয়ী ও নম্রস্বভাবের অধিকারী। আল্লাহর নিকট থেকে তিনি এত সম্মান মর্যাদা লাভ করেছেন, যা দুনিয়ায় অন্য কেউ লাভ করেননি। এতদসত্ত্বেও তিনি সর্বদা বিনয় ও নম্রতার জীবন্ত আদর্শ হিসেবে জীবন অতিবাহিত করেছেন। তাঁর পবিত্র যবান হতে কখনও এমন কোন শব্দ উচ্চারিত হয়নি, যা দ্বারা অহংকার ও আত্মম্ভরিতার লেশমাত্র অনুভূত হয়। তিনি ইরশাদ করতেন, ‘‘আমাকে হযরত ইউনুচ ইবনে মাত্তার উপর শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করাও সমীচীন বলে মনে করিনা।’’[বুখারী শরীফ: ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা- ৩৬০]

একদা একজন মুসলমান ও ইয়াহুদী তাঁর ও হযরত মুসা আলায়হিস্ সালামের শ্রেষ্ঠত্ব বিষয়ে বিতর্ক হয়। একথা শুনে প্রিয়নবীজী ঘোষণা করলেন, ‘‘তোমরা হযরত মুসা আলায়হিস্ সালামের উপর আমাকে শ্রেষ্ঠত্ব দিওনা। কেননা, কিয়ামতের দিন মানুষ যখন সংজ্ঞাহীন হয়ে যাবে, তখন সর্বপ্রথম আমারই চেতনা লাভ হবে। তখন আমার দৃষ্টিতে পড়বে যে, হযরত মুসা আলায়হিস্ সালাম আরশের থাম ধরে আছেন। আমি জানিনা তিনি কি আমার পূর্বে সংজ্ঞা প্রাপ্ত হবেন, নাকি আদৌ সংজ্ঞা হারাবেন না।’’[বুখারী শরীফ: ২য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৩৫৪]

তিনি এভাবে জীবনের সকল ক্ষেত্রেই বিনয় ও নম্রতা পছন্দ করতেন। তিনি সাহাবায়ে কেরামের সম্মুখে অন্যান্য নবী ও বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের প্রশংসনীয় দিকগুলো উদ্ভাসিত করতেই ভালবাসতেন।

রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মুসলিম অমুসলিম, আত্মীয়-অনাত্মীয় সকলের জন্যই ধৈর্য, সহিষ্ণুতা, উদারতা ও মহানুভবতার জীবন্ত আদর্শ ছিলেন। তিনি তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে শত্র“র উপর কখনও প্রতিশোধ নেননি। মক্কা বিজয়ের পর স্বীয় রক্ত পিপাসু শত্র“দেরকে ক্ষমা ও হত্যার উদ্দেশ্যে আগত ঘাতকদেরকে বারবার নিস্কৃতিপ্রদান তাঁর ক্ষমার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তাঁর খাদেমদের থেকে কোন ভুল-ত্র“টি প্রকাশ পেলে তিনি সর্বদা তা মার্জনা করে দিতেন।

আমাদের প্রিয়নবীজী বীরত্ব ও সাহসিকতার জন্য সুখ্যাত ছিলেন। তাঁর পবিত্র জীবনে অসধারণ বীরত্ব, সাহসিকতা ও নির্ভীক চিত্ততা প্রমাণিত হয়েছে। কোন জিহাদে তিনি পরাজিত হননি। কোন জিহাদে তিন শত্র“দের ভয়ে স্বস্থান হতে পশ্চাৎগামী হননি। হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর উক্তি অনুসারে যুদ্ধের সময় নবীজী সর্বদা সম্মুখভাগে থাকতেন। যুদ্ধ তীব্র আকার ধারণ করলে হযরত আলীর মতো বীর যোদ্ধাদেরকেও হুযূরের পাশে আশ্রয় নিতে হতো, ভয়াবহ পরিস্থিতিতেও বিন্দুমাত্র ভীত-সন্ত্রস্ত হতেন না। তিনি বজ্রকন্ঠে বলতেন-انا النبى لاكذب انا ابن عبد المطلب-
অর্থ: ‘‘আল্লাহর প্রেরিত সত্য নবী এবং আমি আবদুল মুত্তালিবের পৌত্র।’’ [বুখারী ও মুসলিম শরীফ]

তিনি তাঁর সাহাবাদের মধ্যে এমন বীরত্ব ও সাহসিকতার গুণাবলী সৃষ্টি করেন যে, তাঁরা কখনও কোন মহাশক্তি দ্বারা প্রভাবিত হতেন না।

শিশুদেরকে প্রিয়নবীজী অত্যন্ত ভালবাসা ও মমতা প্রদর্শন করতেন এবং øেহভরা ব্যবহার করতেন। তিনি বলেন, ‘‘যে ব্যক্তি ছোটদের øেহ করে না, বয়োজ্যেষ্ঠদের অধিকার দেয় না, সে আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়।’’ [সুনানে তিরমীযী]

পথে খেলাধুলারত শিশুদেরকে দেখলে তিনি মৃদু হেসে সালাম দিতেন। সওয়ারীতে আরোহনের সময় আগে ও পিছনে শিশুদেরকে তুলে নিতেন। শিশুদের শিক্ষাদীক্ষার প্রতি তিনি এক সা’ সদকা হতে উত্তম বলতেন। তাঁর কাছে ছোট শিশুদের আনা হলে কোলে নিয়ে আদর ও দু‘আ করতেন।

সমাজের নিুস্তরের লোকদের প্রতি রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিশেষ লক্ষ্য রাখতেন। দাসদাসীদের বিষয়টি এতে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য, বিশ্বের ইহিতাসে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম সর্বপ্রথম দাসদাসীদেরকে দাসমুক্তিকে বিভিন্ন ইবাদতের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে দিয়েছেন এবং দাসদাসীদেরকেও নিজেদের সমতুল্য মানুষ মনে করার ও তাদের মানবিক অধিকার রক্ষা করার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন- এই দাসদাসীরাও তোমাদের মতোই মানুষ। তোমরা নিজেরা যা খাও, তাদেরকেও তা থেকে দেবে, যা পরিধান করো তা পরিধান করতে দেবে এবং তাদের সাধ্যের অধিক কাজ দেবে না। যদি দাও, তবে নিজেরাও সহায়তা করবে। [আবু দাঊদ, তিরমিযী ইত্যাদি]

এভাবে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠায় বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শ আজও সমুজ্জ্বল হয়ে আছে। আমাদের প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ছিলেন অত্যন্ত দানশীল ও মেহমান নওয়ায। মেহমানদারীকে তিনি ইসলামের অঙ্গ বলেছেন। [মুসলিম শরীফ: ৪৭-৪৮]

মেহমানদারীর ক্ষেত্রে তাঁর নিকট মুসলিম কাফিরের পার্থক্য ছিল না। একদা এক অমুসলিম মেহমান সাতটি বকরীর দুধ নিঃশেষ করে দেয়। [তিরমিযী: ২৬৭]

অনেক সময় মেহমানদারী করতে গিয়ে তাঁকে ও তাঁর পরিবারের লোকদেরকে অনাহারে থাকতে হতো। তাঁর মেহমানদারীতে মুগ্ধ হয়ে বহু অমুসলিম ইসলামে দীক্ষিত হয়েছিলো। অনেক ইহুদী তাঁর সাথে অশিষ্ঠ আচরণ করত; কিন্তু তিনি সর্বদাই তাদেরকে মার্জনা করতেন ও ধৈর্য ধারণ করতেন। শুধু মানব জাতির জন্য নয়, বরং সমগ্র সৃষ্ট জীবের জন্যই নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার হৃদয় দয়া ও অনুকম্পায় পরিপূর্ণ ছিল। তিনি সাহাবাদেরকে দেখলে ইরশাদ করতেন, ‘‘এই অসহায় প্রাণীদের ব্যাপারে তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, সদয়ভাবে এর উপর সওয়ার হবে এবং উৎকৃষ্ট খাদ্য দেবে। [আবু দাঊদ: হাদীস- ২৫৪৮]

দয়াল নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম একদিকে জীবে দয়ার শিক্ষা দিয়েছেন। অপরদিকে জাহেলী যুগের সকল কু-প্রথার মূলোৎপাটন করেছেন যা জীব জন্তুকে কষ্ট যাতনা দিত। এ সকল কাজকে তিনি বর্বরতা ও নির্দয়তা বলে অভিহিত করেন। আর্ত ও পীড়িতদের সেবা যতেœর প্রতি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। কারো অসুস্থতার খবর পেলে তার সেবার জন্য তিনি নিজে উপস্থিত হতেন। এমনকি কোন ইহুদী অসুস্থ হলেও তিনি দেখতে যেতেন, তিনি বলেছেন, যে কেউ অযু সহকারে কোন মুসলিম ভাইয়ের শুশ্র“ষা করে, সে জাহান্নাম থেকে সত্তর বছরের দূরত্বে থাকে। [আবু দাউদ: হাদীস- ৩০৯৭]

তিনি অসুস্থদের মুখমন্ডল ও বুকে পিঠে হাত বুলিয়ে বলতেন- হে আল্লাহ্! অমুককে আরোগ্য দান করো। উচ্চারণ- ‘লা বা’ছা তুহুরুন ইন শাআল্লাহ।’ তিনি রোগীদের ঘৃণা করা তাদের অস্পৃশ্য করে রাখার বিরোধী ছিলেন। সরকারে দো‘আলম মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম অগত-অনাগত, আত্মীয়-অনাত্মীয় এবং মানব ও পশু-পাখিসহ সমগ্র সৃষ্টি জীবের জন্যে দয়া ও করুণার সমুজ্জ্বল প্রতীক ছিলেন। বর্ণ-বংশ, দেশ-কাল, নির্বিশেষে সকলের প্রতি তাঁর দয়া মায়া ছিলো সর্বব্যাপী। প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মহত্ব ও সুমহান চরিত্রের বিবরণ এত ব্যাপক যে, তা কোন গ্রন্থাগারে লিপিবদ্ধ করা অসম্ভব। প্রকৃতপক্ষে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সুমহান চরিত্রের শিক্ষা ও আদর্শ যদি আমরা আমাদের জীবনে বাস্তবায়ন করতে পারি। তাহলে আজও বিশ্বময় শান্তি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠিত হবে এতে সন্দেহের অবকাশ নেই। আল্লাহ্ পাক আমাদেরকে রহমাতুল্লীল আলামীনের সুমহান চরিত্রের অনুসরণ করার

লেখক: উপাধ্যক্ষ-কাটিরহাট মুফিদুল ইসলাম ফাযিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসা, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •