রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র
প্রতি ভালোবাসা ঈমানের মূল
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আযহারী
ঈমানই মুমিনের প্রধান গুণ, এক অমূল্য সম্পদ। ঈমানের স্বাদ পেতে হলে কয়েকটি বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হতে হয়। তবেই ঈমানের স্বাদ অনুভব করা যায়। সেসব বৈশিষ্ট্যের মধ্যে অন্যতম হলো, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জগতের সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসা। কেননা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি মুহব্বত রাখা ঈমানের এক অপরির্হায অংশ। যার হৃদয়ে প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভালোবাসা নেই, তার হৃদয় অন্ধ,আলোহীন। সে হৃদয় জাহান্নামের উপযুক্ত।
আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন
قُلْ إِن كَانَ آبَاؤُكُمْ وَأَبْنَآؤُكُمْ وَإِخْوَانُكُمْ وَأَزْوَاجُكُمْ وَعَشِيرَتُكُمْ وَأَمْوَالٌ اقْتَرَفْتُمُوهَا وَتِجَارَةٌ تَخْشَوْنَ كَسَادَهَا وَمَسَاكِنُ تَرْضَوْنَهَا أَحَبَّ إِلَيْكُم مِّنَ اللّهِ وَرَسُولِهِ وَجِهَادٍ فِي سَبِيلِهِ فَتَرَبَّصُواْ حَتَّى يَأْتِيَ اللّهُ بِأَمْرِهِ وَاللّهُ لاَ يَهْدِي الْقَوْمَ الْفَاسِقِينَ [التوبة: ২৪[
“আপনি বলুন, তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান, তোমাদের স্ত্রী, তোমাদের গোত্র, তোমাদের ওই সম্পদ, যা তোমরা অর্জন করেছ, আর সে ব্যবসা যার মন্দ হওয়ার আশংকা তোমরা করছ এবং ওই বাসস্থান, যা তোমরা পছন্দ করছ, যদি তোমাদের কাছে অধিক প্রিয় হয় আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও তাঁর পথে জিহাদ করার চেয়ে, তবে তোমরা অপেক্ষা কর আল্লাহর নির্˜েশ আসা পর্যন্ত এবং আল্লাহ্ ফাসিক্বদেরকে সৎপথ প্রদান করেন না।”[আত-তাওবাহ: ২৪]
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন:
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ فَوَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ. ( )
“শপথ ঐ সত্ত্বার যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের কেউই ঈমানদার হবে না যতক্ষণ আমি তার কাছে তার পিতা ও তার সন্তান হতে প্রিয়তম না হই।’’( )
সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমে আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্র্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন
: لَا يُؤْمِنُ أَحَدُكُمْ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْهِ مِنْ وَالِدِهِ وَوَلَدِهِ وَالنَّاسِ أَجْمَعِينَ ( )
“তোমাদের কেউই ঈমানদার হবে না যতক্ষণ আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান ও সকল মানুষ হতে প্রিয়তম না হই”( )
আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন:
عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ هِشَامٍ قَالَ: كُنَّا مَعَ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَهُوَ آخِذٌ بِيَدِ عُمَرَ بْنِ الْخَطَّابِ، فَقَالَ لَهُ عُمَرُ: وَاللَّهِ يَا رَسُولَ اللَّهِ، لَأَنْتَ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ كُلِّ شَيْءٍ إِلَّا نَفْسِي . قَالَ: رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” لَا، وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ حَتَّى أَكُونَ أَحَبَّ إِلَيْكَ مِنْ نَفْسِكَ”، قَالَ عُمَرُ: فَأَنْتَ الْآنَ وَاللَّهِ أَحَبُّ إِلَيَّ مِنْ نَفْسِي، قَالَ: رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: “الْآنَ يَا عُمَرُ” ( )
আমরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গেই ছিলাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর হাত ধরে আছেন। ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু আরয করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! আপনি আমার কাছে শুধু আমার ‘জীবন’ ব্যতিত আর সকল কিছুর চাইতে অধিক প্রিয়।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন:‘না! সেই সত্তার কসম, যাঁর কুদরতের হাতে আমার প্রাণ! যতক্ষণ পর্যন্ত আমি তোমার কাছে তোমার নিজের জীবনের চেয়েও অধিক প্রিয় না হব।’ ওমর রাদিয়াল্লাল্লাহু আনহু বললেন, ‘আল্লাহর কসম! এখন আপনি আমার কাছে আমার নিজের জীবনের চেয়েও অধিক প্রিয়।’ নবীজী বললেন, ওমর! এখন হয়েছে। ( ) অর্থাৎ এখনই তোমার ঈমান পূর্ণতা লাভ করেছে।
আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন
عَنْ أَنَسِ بْنِ مَالِكٍ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ ثَلَاثٌ مَنْ كُنَّ فِيهِ، وَجَدَ حَلَاوَةَ الْإِيمَانِ ؛ أَنْ يَكُونَ اللَّهُ وَرَسُولُهُ، أَحَبَّ إِلَيْهِ مِمَّا سِوَاهُمَا، وَأَنْ يُحِبَّ الْمَرْءَ لَا يُحِبُّهُ إِلَّا لِلَّهِ، وَأَنْ يَكْرَهَ أَنْ يَعُودَ فِي الْكُفْرِ كَمَا يَكْرَهُ أَنْ يُقْذَفَ فِي النَّارِ( )
“তিনটি গুণ যার মাঝে থাকবে সে ঈমানের স্বাধ উপভোগ করতে পারবে, (১) আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অন্য সবকিছু থেকে তার কাছে অধিক প্রিয় হওয়া, (২) একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশ্যে কাউকে মহব্বত করা এবং (৩) ঈমান আনার পর কুফরে ফিরে যাওয়াটা আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মত অপছন্দের হওয়া। ( )
একদা হযরত আলী রাদিয়াল্লাল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আপনাদের মহব্বত কেমন ছিলো? উত্তরে তিনি বলেন:
وقد سئل الإمام علي بن أبي طالب – رضي الله عنه -: “كيف كان حبكم لرسول الله – صلى الله عليه وسلم – قال: “كان والله أحب إلينا من أموالنا، وأولادنا، وآباءنا، وأمهاتنا، ومن الماء البارد على الظمأ”.( )
‘হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে জিজ্ঞেস করা হলো যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি আপনাদের ভালবাসা কিরূপ ছিল? তখন তিনি উত্তরে বললেন, আল্লাহর শপথ! আমাদের কাছে তিনি আমাদের ধন-সম্পদ, সন্তান-সন্তুতি ও বাবা-মার চেয়েও অধিক প্রিয় ছিলেন। এমনকি তীব্র পিপাসার সময় ঠান্ডা পানি যেমন প্রিয়, আমাদের কাছে আল্লাহর রাসূল তার চেয়েও অধিক প্রিয় ছিলেন’।( ) কোরআন মজিদে এরশাদ হয়েছে:
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ (آل عمران (৩১)
“(হে রাসূল!) আপনি বলুন, যদি তোমরা আল্লাহর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে চাও তবে আমার অনুসরণ কর। তা’হলে আল্লাহ তাআলাও তোমাদেরকে ভাল বাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করে দেবেন”( আ-ল ইমরান-৩১) এ আয়াত প্রিয়নবীকে কেবল আল্লাহর হাবিব বা বন্ধুরূপেই উপস্থাপন করেনা বরং সরাসরি প্রমাণ করে আল্লাহর বন্ধু হওয়ারও মাধ্যম তিনি।
এই ভালোবাসার পুরস্কার হল
সে পরকালে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আলোকিত সান্নিধ্য লাভে ধন্য হবে। হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
عَنْ ثَابِتٍ ، عَنْ أَنَسٍ ، أَنَّ رَجُلا قَالَ ” يَا رَسُولَ اللَّهِ مَتَى السَّاعَةُ ؟ قَالَ: وَمَا أَعْدَدْتَ لَهَا ؟ قَالَ: لا، إِلا أَنِّي أُحِبُّ اللَّهَ وَرَسُولَهُ . قَالَ: فَإِنَّكَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ “قَالَ أَنَسٌ: فَمَا فَرِحْنَا بِشَيْءٍ بَعْدَ الإِسْلامِ فَرَحَنَا بِقَوْلِ رَسُولِ اللَّهِ: “إِنَّكَ مَعَ مَنْ أَحْبَبْتَ”. قَالَ أَنَسٌ: فَأَنَا أُحِبُّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَأَبَا بَكْرٍ وَعُمَرَ، فَأَرْجُو أَنْ أَكُونَ مَعَهُمْ بِحُبِّي إِيَّاهُمْ وَإِنْ كُنْتُ لا أَعْمَلُ بِأَعْمَالِهِمْ . ( )
“একদা এক ব্যক্তি(সাহাবী) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরবারে এসে আরয করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কেয়ামত কবে হবে? নবীজী প্রশ্ন করলেন: কেয়ামতের জন্যে কী প্রস্তুতি নিয়েছ? সাহাবী বলেন: আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে ভালোবাসি, নবীজী বললেন: তুমি যাকে ভালোবাস, তার সাথেই থাকবে! হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এ কথায় আমরা এতটা আনন্দিত হয়েছি যে, ইসলাম গ্রহণের পর অন্য কোন কারণে আর এতটা আনন্দিত হইনি। হযরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন: আমি আল্লাহকে ভালোবাসি, ভালোবাসি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ও হযরত আবু বকর এবং হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকেও। আমার আমল যদিও তাঁদের সমতূল্য নয় তবুও আমি আশাবাদী, আমি পরকালে তাঁদের সঙ্গেই থাকবো! ( )
এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে এসে আরয করলেন:
قِيلَ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ الرَّجُلُ يُحِبُّ الْقَوْمَ وَلَمَّا يَلْحَقْ بِهِمْ قَالَ الْمَرْءُ مَعَ مَنْ أَحَبَّ( )
“হে আল্লাহর রাসূল! আপনি সেই ব্যক্তি সম্পর্কে কী বলেন, যে একটি গোষ্ঠীকে ভালোবাসে অথচ তাদের সমান নেক আমল করতে পারেনি! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করলেন: যে যাকে ভালোবাসে তার হাশর হবে তারই সাথে।’ ( )
একজন সত্যিকার মুমিনের জীবনে এর চেয়ে বড় প্রার্থনা আর কী হতে পারে? এর চেয়ে বড় প্রাপ্তি ও পুরস্কারই বা আর কী হতে পারে?
উপরোক্ত আয়াত ও হাদীস থেকে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যায় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি মহব্বত ও ভালোবাসা পোষণ না করলে ঈমানদার বলে কেউ বিবেচিত হবে না। ঈমানের মূল হল- হুব্বে রসূল অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে ভালোবাসা।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মহব্বত করার খুব গুরুত্বর্পূণ ও বড় উপায় হচ্ছে
১. সকল মানবের উপর রাসূল্ল্লুাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রাধান্য ও শ্রেষ্ঠত্ব দেয়া
আল্লাহ তাঁর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সৃষ্টির আদি ও অন্তের সকলের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দিয়েছেন। অতএব তিনি হলেন নবীদের সর্দার। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى كِنَانَةَ مِنْ وَلَدِ إِسْمَاعِيلَ وَاصْطَفَى قُرَيْشًا مِنْ كِنَانَةَ وَاصْطَفَى مِنْ قُرَيْشٍ بَنِى هَاشِمٍ وَاصْطَفَانِى مِنْ بَنِى هَاشِمٍ ( )
“আল্লাহ ইসমাঈলের সন্তান থেকে কিনানাকে চয়ন করেছেন এবং কিনানা থেকে কুরাইশকে। আর কুরাইশ থেকে বনু হাশিমকে এবং আমাকে চয়ন করেছেন বনু হাশিম থেকে।’’( )
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:
্রأَنَا سَيِّدُ وَلَدِ آدَمَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ وَلاَ فَخْرَ وَأَوَّلُ مَنْ يَنْشَقُّ عَنْهُ الْقَبْرُ وَأَوَّلُ شَافِعٍ وَأَوَّلُ مُشَفَّعٍগ্ধ ( )
“আমি আদম সন্তানের সর্দার এবং এতে কোন অহংকার নেই। আর আমি ঐ ব্যক্তি প্রথম যার কবর বিদীর্ণ হবে, প্রথম যিনি শাফা‘আতকারী হবেন এবং প্রথম যার শাফা‘আত কবুল করা হবে।’’( )
২. সকল ক্ষেত্রে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে আদব ও শিষ্টাচার রক্ষা করাঃ
আল্লাহ ও আল্লাহর রাসূলের প্রতি সাহাবায়ে কেরামের মহব্বত কেমন ছিলো নিম্নের হাদীস থেকে তার যৎকিঞ্চিৎ ধারণা পাওয়া যায়। আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন:
وَمَا كَانَ أَحَدٌ أَحَبَّ إِلَيَّ مِنْ رَسُولِ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، وَلَا أَجَلَّ فِي عَيْنِي مِنْهُ، وَمَا كُنْتُ أُطِيقُ أَنْ أَمْلَأَ عَيْنَيَّ مِنْهُ إِجْلَالًا لَهُ، وَلَوْ سُئِلْتُ أَنْ أَصِفَهُ مَا أَطَقْتُ، لِأَنِّي لَمْ أَكُنْ أَمْلَأُ عَيْنَيَّ مِنْهُ، وَلَوْ مُتُّ عَلَى تِلْكَ الْحَالِ، لَرَجَوْتُ أَنْ أَكُونَ مِنْ أَهْلِ الْجَنَّةِ،.( )
আমর ইবনুল আস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অধিক প্রিয় ও মর্যদার অধিকারী আমার কাছে অন্য কেউ ছিলো না। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের প্রতি সম্মান ও মর্যদার কারণে আমি দৃষ্টি ভরে তাঁর দিকে তাকাতে পারতাম না। সুতরাং আমাকে রাসূলের অবয়ব বর্ণনা করতে বলা হলে আমি তা পারব না। কেননা দৃষ্টি ভরে রাসূলের দিকে আমি কখনো তাকাতাম না’( )।
৩. তাঁর প্রতি যথাযোগ্য সম্মান ও তা’যীম প্রদর্শন করা:
উম্মতের ওপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আরেকটি হক হলো, তাঁর প্রতি যথাযোগ্য সম্মান ও তা’যীম প্রদর্শন করা। উপযুক্ত বাক্য দ্বারা তার প্রশংসা করা। শুধু ‘মুহাম্মদ’ নামে তাকে উল্লেখ না করা, বরং এর সাথে ‘রাসূলুল্লাহ’ বা ‘নবী উল্লাহ সংযোজন করে সালাত ও সালাম পাঠ করা। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন:
لَا تَجْعَلُوا دُعَاء الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاء بَعْضِكُم بَعْضًا ( – سورةالنور – اية ৬৩
“তোমরা পরস্পরকে যেভাবে ডাকো রাসূলকে সেভাবে ডেকো না’ (সূরা নূর: ৬৩)।
মসজিদে নববীতে কেউ এলে তার উচিৎ এ মসজিদের আদব রক্ষা করা, এতে স্বর উচ্চ না করা। ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু একদল লোককে এজন্য খুব সতর্ক করেছিলেন। পাশাপাশি তাঁর শহর মদীনা মুনাওয়ারার সম্মান রক্ষা করাও অপরিহার্য।
আল্লাহ বলেন:
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا لَا تَرْفَعُوا أَصْوَاتَكُمْ فَوْقَ صَوْتِ النَّبِيِّ وَلَا تَجْهَرُوا لَهُ بِالْقَوْلِ كَجَهْرِ بَعْضِكُمْ لِبَعْضٍ أَنْ تَحْبَطَ أَعْمَالُكُمْ وَأَنْتُمْ لَا تَشْعُرُونَ)[الحجرات-০২]
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা নবীর আওয়াজের উপর তোমাদের আওয়াজ উঁচু করো না এবং তোমরা নিজেরা পরস্পর যেমন উচ্চস্বরে কথা বল, তার সাথে সেকরকম উচ্চস্বরে কথা বলো না।’’ (সূরা হুজুরাত০২)
৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উপর সালাত ও সালাম পাঠ না করাঃ
উম্মতের ওপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের অন্যতম হক হলো, তাঁর প্রতি বেশি বেশি সালাত ও সালাম পাঠ করা, যেন কাল কিয়ামতের দিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের জন্য সুপারিশ করেন।
আল্লাহ বলেন:
إِنَّ اللَّهَ وَمَلائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِيِّ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا صَلُّوا عَلَيْهِ وَسَلِّمُوا تَسْلِيمًا [الأحزاب:৫৬
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতাগণ নবীর উপর সালাত পেশ করেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরাও তার উপর সালাত ও সালাম পেশ কর।’’ [সূরা আহযাবঃ ৫৬]
অথচ তার নাম উচ্চারণ করে অথবা শুনে অনেকেই দরূদ ও সালাম পাঠ করে না।
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:
رَغِمَ أَنْفُ رَجُلٍ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ
“ঐ ব্যক্তির নাক ধুলি ধুসরিত হোক যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হয় কিন্তু সে আমার উপর সালাত পাঠ করেনি।’
তিরমিযী, ৩৫৪৫, আহমদ, হা-৭৪৪৪
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরও এরশাদ করে বলেন:
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ:الْبَخِيلُ مَنْ ذُكِرْتُ عِنْدَهُ فَلَمْ يُصَلِّ عَلَيَّ
“কৃপণ ঐ ব্যক্তি, যার কাছে আমার নাম উল্লেখ করা হয় অথচ সে আমার উপর সালাত পাঠ করেনি।’’
তিরমিযী, ৩৫৪৫, আহমদ, হা-৭৪৪৪
সালাত ও সালাম রাসূলের স্তুতি বলেই তাশাহুদ, খুতবা, সালাতুল জানাযা, আযানের আগে ও পর যে কোন দো‘আর সময়সহ আরো বহু ইবাদাতে তা পেশ করার নিয়ম করে দেয়া হয়েছে; বরং তার উপর সালাত ও সালাম পেশ আলাদাভাবেই একটি ইবাদাত হিসেবে স্বীকৃত।
৫. তাঁর ইত্তেবা ও আনুগত্য পোষণ করা:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন:
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيراً[الأحزاب:২১
“নিশ্চয় রাসূলুল্লাহর মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ, বিশেষ করে ঐ ব্যক্তির জন্য যে আল্লাহ ও শেষ দিবসের আশা পোষণ করে এবং আল্লাহকে বেশী করে স্মরণ করে।’’ [সূরা আহযাবঃ ২১]
অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা আরো বলেন:
مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا (النساء: ৮০(
“যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহর আনুগত্য করল। আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল আমি তো আপনাকে তাদের হেফাযতকারী রূপে প্রেরণ করিনি।’’ [সূরা নিসাঃ ৮০]
ইরশাদ হয়েছে:
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ [آل عمران-৩১[
“(হে রাসূল!) আপনি বলুন:, যদি তোমরা আল্লাহকে মহব্বত কর তাহলে আমার অনুসরণ কর। আল্লাহ তোমাদেরকে মহব্বত করবেন এবং তোমাদের গুনাহসমূহ মাফ করে দিবেন। আর আল্লাহ চিরক্ষমাশীল,পরমদয়ালু’
(আলে ইমরান: ৩১)।
৬. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পক্ষে অবস্থান নেয়াঃ অনেক মন্দ ও দুষ্ট লোক আছে যারা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও সাহাবীদের শানে কটুবাক্য উচ্চারণ করে এবং তাঁদের ব্যাপারে অশালীন ও অশোভন মন্তব্য করে। উম্মতের দায়িত্ব হলো তাদেরকে যুক্তির আলোকে বুঝানো এবং প্রতিবাদ করা, তাতে কাজ না হলে তাদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া, যাতে পরবর্তীকালে অন্য কেউ এ ধরনের অপকর্মে লিপ্ত হবার স্পর্ধা দেখাতে না পারে।
وصلى الله على سيدنا محمد وعلى آله وصحبه أجمعين. والحمد لله رب العالمين
টিকা:
– صحيح البخاري, كتاب الإيمان باب حب الرسول صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ من الإيمان, رقم الحديث-১৪
– সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৪, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৮
– صحيح البخاري, كتاب الإيمان باب حب الرسول صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ من الإيمان, رقم الحديث-১৫
– সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৫, সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৭৯
– صحيح البخاري গ্ধ كتاب الأيمان والنذور গ্ধ باب كيف كانت يمين النبي صلى الله عليه وسلم ১১/৫২৩, رقم الحديث ৬২৫৭
– বুখারী ১১: ৫২৩, হা-৬২৫৭
– (صحيح البخاري গ্ধ كتاب الإيمان গ্ধ باب حلاوة الإيمان. رقم الحديث: ১৬
– বুখারী, কিতাবুল ঈমান, হা-১৬
– (الشفا بتعريف حقوق المصطفى، للقاضي عياض، ২/৫৬৮ .)
– শিফা শরীফ ২/৫৬৮
– (رواه البخاري صحيح البخاري গ্ধ كتاب الأدب গ্ধ باب علامة حب الله عز وجل برقم (৭১৫৩, ৫৮১৯, ، ومسلم برقم ((৬৮৭৮ رواه مسلم (৪/২০৩২) رقم (২৬৩৯(.
– বুখারী, হা-৭১৫৩,৫৮১৯ ও মুসলিম, হা- ৬৮৭৮, ২৬৩৯
– صحيح البخاري গ্ধ كتاب الأدب গ্ধ باب علامة حب الله عز وجل. رقم الحديث: ৫৮১৮
– বুখারী ১:৫৫৭, হা-৫৮১৮ মুসলিম ৪: ২০৩৪
– أخرجه مسلمٌ ( ২২৭৬ / ১)، والبخاري في ( التاريخ الكبير ) ( ১/ ১/ ৪)، والترمذي ( ৩৬০৫، ৩৬০৬)، وأحمد (৪/ ১০৭)، وابنُ أبي شيبة ( ১১ / ৪৭৮)، وابن سعد في ( الطبقات ) (১/ ২০)، والطبراني في ( الكبير ) ( ج২২/ رقم ১৬১ )، والبيهقي في ( السنن الكبير) (৭ / ১৩৪)، وفي ( الدلائل) (১/ ১৬৫)، والخطيب ( ১৩ / ৬৪)، واللالكائي في ( شرح الأصول ) (১৪০০)، والجوزقاني في ( الأباطيل ) (১/ ১৭০)، والبغوي في ( شرح السنة ) ( ১৩، ১৯৪ ) من طريق الأوزاعي، حدثني أبو عمار شداد، عن واثلة بن الأسقع مرفوعًا به، والله أعلم .
– সহীহ মুসলিম,১/২২৭৬, হাদীস নং ৬০৭৭, তিরমিযী, হা-৩৬০৫-৩৬০৬, আহমদ-০৪/১০৭
– رواه مسلم : الفضائل/৪২২৩
– সহীহ মুসলিম, হা-৪২২৩
– مسلم ৮/১৪৫
– মুসলিম-৮/১৪৫
লেখক: সহকারী অধ্যাপক – সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ, খতীব- মুসাফির খানা জামে মসজিদ।