মুহাম্মদ আজিজুর রহমান,
শিক্ষার্থী- জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া,
চট্টগ্রাম।-
প্রশ্ন: খতমে গাউসিয়া ও গেয়ারভী শরীফ কোরআন-হাদীস সম্মত কিনা? আমাদের অঞ্চলের কিছু আলেম এটাকে নাজায়েজ, বিদআত এবং কোরআন হাদীসে নেই বলে দাবী করে। তাদের এই দাবী কি যথার্থ? জানিয়ে ধন্য করবেন।
উত্তর: কাদেরিয়া তরিকার আউলিয়ায়ে কেরাম কর্তৃক নির্বাচিত এবং কুরআনুল করিম ও হাদিস শরীফ থেকে সংগৃহীত, বকরতমণ্ডিত ও ফজিলতপূর্ণ যিকির-আযকার, দোয়া-দরূদ, বিভিন্ন সূরা ও আয়াতের সমষ্টিগত নাম হল খতমে গাউসিয়া ও গেয়ারভী শরীফ।
উল্লেখ্য যে, খতমে গাউসিয়া ও গেয়ারভী শরীফের তরতীবে যে অজিফাগুলো স্থান পেয়েছে তা বিশেষ মর্যাদা ও ফজিলতে পরিপূর্ণ। যা ভক্তি সহকারে পালনের মধ্যে রয়েছে দুনিয়া ও আখিরাতের অনেক কল্যাণ ও সফলতা। এটা শরীয়ত সম্মত। এটাকে অস্বীকার করা কোরআন-হাদিস তথা শরিয়ত সম্পর্কে অজ্ঞতার নামান্তর এবং সত্যিকার অর্থে আল্লাহর অলিদের প্রদর্শিত মত ও পথকে অবজ্ঞা করা, যা চরম বেয়াদবী ও গোমরাহীর সামিল। খতমে গাউসিয়া ও গেয়ারভী শরীফ এবং এ জাতীয় বরকতমণ্ডিত খতমসমূহ যেমন খতমে খাজেগান ইত্যাদি মূলত আমলে সালেহ বা সৎ কর্ম। কেননা এতে রয়েছে আল্লাহ্ ও তাঁর রসূলের স্মরণে যিকির-আযকার, দোয়া-দরূদ, ফাতেহাখানি এবং আল্লাহর বান্দাদের মাঝে তবররুক পরিবেশন। এসবই আমলে সালেহ বা নেক কাজ। এ প্রসঙ্গে কুরআন শরীফে উল্লেখ আছে-
ان الذين امنوا وعملوا الصالحات فلهم جنت
تجرى من تحتها الانهار ذالك الفوز الكبير
অর্থাৎ যারা ঈমান এনেছে এবং ভাল আমলসমূহ করেছে, তাদের জন্য রয়েছে এমন জান্নাত তথা বাগিছা যার তলদেশে থাকবে অনেক নহর বা ঝর্ণাধারা। এটা তাদের জন্য বড়ই কামিয়াবী। অপর এক আয়াতে পাকে রয়েছে-
من عمل صالحًا من ذكر وانثى وهو مؤمن
فلنحينه حيواة طيبة الخـ
অর্থাৎ ‘‘ঈমান থাকাবস্থায় পুরুষ বা মহিলা থেকে যে ভাল কাজ করবে তাকে আমি পবিত্র জীবন দান করব।’’ খতমে গাউসিয়া, খতমে খাজেগান ও গেয়ারভী শরীফ ইত্যাদি মূলত: উল্লিখিত আয়াতসমূহ বাস্তব আমল। তদুপরি উপরোক্ত খতমসমূহ হল মূলত আল্লাহ্র প্রিয় রাসূল ও আউলিয়ায়ে কেরামকে স্মরণ করার অন্যতম মাধ্যম আর কোরআন-হাদিস দ্বারাই প্রমাণিত এবং তা যিকরুল্লাহ্র সামিল। কেননা আল্লাহ্র যিকির, তিন প্রকারঃ ১. সরাসরি আল্লাহর যাত ও গুণাবলী স্মরণ করা, ২. আল্লাহর রসূল তথা প্রিয় বান্দাগণ ও তাঁর প্রিয় জিনিসসমূহের মাহাত্ম্য বর্ণনামূলক যিকির, ৩. আল্লাহর দুশমনদের তিরস্কার ও নিন্দাপূর্বক আলোচনা।
কাজেই বুঝা গেল, খতমে গাউসিয়া ও খতমে খাজেগান ও গিয়ারভী শরীফের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহর যিকির ও আল্লাহর বন্ধুদের স্মরণ। আল্লাহর যিকির সম্পর্কে কোরআন-হাদিসে অনেক বর্ণনা রয়েছে, খতমে গাউসিয়া ও গেয়ারভী শরীফ পালন করা মানে আল্লাহকে স্মরণ করা। এটা অস্বীকার করা মানে মহান আল্লাহর যিকিরকে অস্বীকার করা, যা খোদাদ্রোহীতার শামিল। বিশেষত যেসব মুসলমান কোরআন তেলাওয়াত জানে না, এসব খতম শরীফ দ্বারা পবিত্র কোরআনের অশেষ ফজিলতপূর্ণ বিশেষ বিশেষ সূরা ও আয়াতসমূহ তেলাওয়াতের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিভিন্ন আসমায়ে হুসনা অর্থাৎ আল্লাহর গুণাবলী পবিত্র নামসমূহ ও আল্লাহর প্রিয় বন্ধু ও অলীগণের নামসমূহ স্মরণ করা এবং শাজরা শরীফের মাধ্যমে এসব মহান অলিগণের উছিলায় আল্লাহর দরবারে দোয়া-মুনাজাত করার সুযোগ সৃষ্টি হয়। তদুপরি খতমে গাউসিয়া, (গেয়ারভী) শরীফ ও খতমে খাজেগান ইত্যাদিতে আদব-ভক্তিসহকারে উপস্থিত থাকলে সওয়াব ও নেকীর সাথে সাথে এ সময়টুকু গুনাহ্-নাফরমানী থেকে বিরত থাকার এক অনন্য সুযোগ সৃষ্টি হয়। সুতরাং এ সব নেক আমল ও খতম নিয়ে বাড়াবাড়ি করা, বিদ‘আত, কোরআন-হাদিসে নেই ইত্যাদি বলা মূলত: ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টির নামান্তর। পরম করুণাময় এ জাতীয় নেক আমলসমূহের গুরুত্ব ও ফজিলত অনুধাবন করে এ সব খতম শরীফে হাজির হয়ে সৌভাগ্য ও নেকী অর্জন করে আল্লাহ-রসূলের রেজামন্দি হাছিলের তাওফিক দান করুন!।
[বিস্তারিত দেখুন, আমার রচিত যুগ-জিজ্ঞাসা, প্রকাশনায়, আনজুমান]