গাউসে আযম বলা শিরক কিনা?

0

মুহাম্মদ বোরহান উদ্দিন
বাজালিয়া, সাতকানিয়া,
চট্টগ্রাম

প্রশ্ন: আমাদের এলাকার এক মওলভী বলেছে- ‘গাউসুল আযম’ মূলত আল্লাহ্ তা‘আলা। কোন মানুষ বা অলিকে ‘গাউসে আযম’ বলা শিরক। এখন প্রশ্ন হলো ‘আমরা বড়পীর আব্দুল কাদের জিলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে ‘গাউসে আযম’ বলি। তা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? বিস্তারিত জানিয়ে ধন্য করবেন।

উত্তর: ‘গাউসুল আযম’ আরবী শব্দ। যার অর্থ মহান সাহায্যকারী। এটা আল্লাহর গুণবাচক নামসমূহের অন্তর্ভুক্ত নয়। বরং আউলিয়া-এ কেরামের স্তরসমূহের মধ্যে একটি স্তরের নাম ‘গাউসুল আযম’। এটা যে শুধুমাত্র আল্লাহ তা‘আলার জন্য নির্দিষ্ট, যা আর কারো জন্য ব্যবহৃত হবে না -এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসে কোন দলিল বা প্রমাণ নেই। এ সব কথা নবী-অলির বিদ্রোহীরা বলে বেড়ায়। বড়পীর আব্দুল কাদের জীলানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর উপাধীসমূহের একটি হলো ‘গাউসুল আযম’ যা তাঁর এক বিশেষ গুণবাচক উপাধি। স্বয়ং রাব্বুল আলামীন বড়পীরকে এই নামে ইলহামের মাধ্যমে আহ্বান করেছেন। যা তাঁর রচিত কিতাব ‘রেসালায়ে গাউসুল আযম’ এ বর্ণনা করা হয়েছে। উক্ত কিতাবে দেখা যায়, ‘যখনই আল্লাহ্ তায়ালা কোন বিষয়ে তাঁকে ইলহামের মাধ্যমে আহ্বান করেছেন তখনই আল্লাহ্ তায়ালা আহ্বান করেছেন- এয়া গাউসুল আযম।
কোরআন শরীফে আল্লাহ্ তায়ালা এরশাদ করেছেন-ولله الاسماء الحسنى فادعوبها অর্থাৎ আল্লাহর বহু সুন্দর সুন্দর গুনবাচক নাম রয়েছে, সেই নামগুলো দিয়ে তোমরা তাকে আহ্বান কর। অত্র আয়াতে করীমার তাফসীর ও ব্যাখ্যায় উল্লেখ করা হয়েছে, হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, নবী করীম সরওয়ারে কায়েনাত সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন আল্লাহ্ তা‘আলার ৯৯টি গুণবাচক নাম রয়েছে, তোমরা সে নামগুলো শিখে নাও। যে ব্যক্তি ঐ ৯৯টি নাম শিখে নেবে সে অবশ্যই বেহেশতে প্রবেশ করবে। এ গুণবাচক ৯৯ নামের মধ্যে ‘গাউছুল আযম’ নামটির উল্লেখ নেই। সুতরাং এটা আল্লাহর জন্য নির্দিষ্ট আর কারো জন্য ব্যবহৃত হতে পারে না’ এমনটি বলা মূর্খতা ও অজ্ঞতা বৈ কি?
হুজুর গাউসে পাককে ‘গাউসুল আযম’ বলা বা তাঁর বরকতমণ্ডিত নামের সাথে উক্ত উপাধি ব্যবহার করা কখনো শিরক নয় এবং এটা শিরক বলে ফতোয়া দেয়া, শিরকের অর্থ সম্পর্কে তাঁর সম্যক জ্ঞান না থাকার পরিচায়ক। বস্তুত গাউসুল আযম আল্লাহর বান্দাদের মধ্য থেকে আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতাসম্পন্ন নির্দিষ্ট বান্দার উপাধি। সুতরাং যে কেউ চাইলে ‘গাউসুল আযম’ দাবী করতে পারে না। গাউসে আযম পদবীর জন্য এমন বিশেষ যোগ্যতা প্রয়োজন যা বড়পীর গাউসে পাকের মধ্যে বিদ্যমান ছিল। তাছাড়া বর্তমানে যদি কেউ জোরপূর্বক বা বল-শক্তি প্রয়োগ করে ‘গাউসে আযম’ উপাধি দাবী করে মূলত তা দ্বীনের ও জাতির সাথে ‘নিছক ভণ্ডামী’ ছাড়া আর কিছুই নয়। বস্তুত: গাউসুল আযমের অর্থ হল- আল্লাহ্ প্রদত্ত বিশেষ ও অসাধারণ ক্ষমতা বলে আল্লাহর পক্ষ হতে তাঁর সৃষ্টি জগৎ ও মাখলুকাতের প্রতি দয়া ও সাহায্য প্রদানকারী সুতরাং বিশেষ যেগ্যতার ভিত্তিতে পীরানে পীর হুজুর সৈয়্যদুনা গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে গাউসে আযম বলতে অসুবিধা নেই আর মিথ্যা দাবী ও অপবাদ থেকে মুক্ত থাকার নিমিত্তে কোন পীর/অলির ক্ষেত্রে গাউসে আযম উপাধি ব্যবহার না করাই নিরাপদ। যেহেতু এটা মূলত আউলিয়ায়ে কেরামের মধ্যে সর্বোচ্চ মকামে অধিষ্ঠিত আল্লাহর খাস বেলায়তী ক্ষমতা সম্পন্ন প্রকৃত অলির শান ও মহান উপাধি।
[মাজহারে জামালে মোস্তফা, কৃত. সৈয়্যদ নাসির উদ্দিন রহমাতুল্লাহি আলায়হি, তাফরিহুল খাতিরিল ফাতির ফী মানাকিবে শাইখ আব্দুল কাদির, কৃত. হযরত মোল্লা আরী কারী হানাফী রহমাতুল্লাহি আলায়হি, তরজুমানে আহলে সুন্নাত-প্রশ্নোত্তর বিভাগ বিগত রবিউস সানী সংখ্যাসমূহ ইত্যাদি]

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •