আলহাজ্ব মুহাম্মদ ওয়াজের আলী আলকাদেরী-
অধ্যাপক কাজী সামশুর রহমান –
মানুষকে বলা হয় ‘আশরাফুল মখলুখাত’ সৃষ্টির সেরা জীব, সমাজ, রাষ্ট্র বিনির্মাণে স্রষ্টার একত্ববাদ, রিসালতের মূল্যবোধ মানব জীবনের সুকুমার মূল্যবোধের প্রতিষ্ঠা করার দায়িত্ব বর্তায় মানুষের ওপর। স্রষ্টা প্রদত্ত বিবেক, মেধা, মনন’র সংমিশ্রণে স্বীয় প্রতিভার বিকাশ ঘটায় মানুষ। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ প্রতিষ্ঠায় কিছু কিছু মানুষের ভূমিকা হয় গৌরবোজ্জ্বল এবং এরাই হন প্রজন্মের আলোকবর্তিকা। এ সকল আলোকিত মানুষরাই সমাজের চোখে শ্রদ্ধাসনে অধিষ্ঠিত হন। আলোচ্য আলোকিত মানুষটি হলেন আমাদের শ্রদ্ধেয় অগ্রজ ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব মুহাম্মদ ওয়াজের আলী সওদাগর আলকাদেরী (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি)।
জন্ম পরিচয়
নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার অনুন্নত প্রত্যন্ত গ্রাম তালুয়া চাঁনপুরের ধার্মিক পরিবারে পিতা মরহুম আশরাফ আলী মিয়া ও মাতা মরহুমা আবুজান বিবির ঔরসে ১৯১৫ খ্রিস্টাব্দে ২০ ডিসেম্বর/ রবিউসসানীর এক শুভক্ষণে শিশু মুহাম্মদ ওয়াজের আলী জন্মগ্রহণ করেন। ধার্মিক পরিবারের সন্তান মুহাম্মদ ওয়াজের আলী ধর্মানুরাগী ও তীক্ষè বুদ্ধিসম্পন্ন ছিলেন। আর্থিক অসচ্ছলতা হেতু প্রাথমিক পাঠ শেষ করেছিলেন মাত্র। মক্তবে কিছুকাল অধ্যয়ন করেন। পারিবারিক অনটনে সে বয়সেই উপার্জনের প্রচেষ্টা ছিল তাঁর।
জীবিকার অন্বেষণে চট্টগ্রামে
সংসারের টানাপোড়নে ১৫ বছরের কিশোর মুহাম্মদ ওয়াজের আলী ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে বন্দরনগরী চট্টগ্রামে পাড়ি জমান। প্রিয়জনের গণ্ডি ছাড়িয়ে এক অজানা-অচেনা পরিবেশে এসে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েন। আল্লাহ্ যার সহায় হোন, তার ভাগ্য প্রসন্ন হবেই। বাণিজ্যকেন্দ্র আছাদগঞ্জ’র স্বনামধন্য ব্যবসায়ী মরহুম আবদুস্ সোবহান সওদাগর (রাজা মিঞা) এর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে স্বল্প মাইনের চাকরি নেন। অভিজ্ঞতা ও পরিচয়ের ভান্ডার একটু স্ফীত হলেই তিনি কয়েক বছর পর চাকরি থেকে ইস্তফা দেন। শুরু হলো জীবনের আরেক অধ্যায়। তাঁর প্রথম ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান মেসার্স মুহাম্মদ ওয়াজের আলী সওদাগর অ্যান্ড ব্রাদার্স, স্টেশন রোড এলাকায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কর্মের মূলতঃ ব্যবসা শুরু ছিল ফ্রুটস্ (ফল) আমদানী ও দেশে বাজারজাত করণ। অচিরেই তিনি একজন প্রথম শ্রেণির ফল ব্যবসায়ুী আমদানীকারক হিসেবে খ্যাতি লাভ করেন। এ উপলক্ষে তিনি পাকিস্তান, মধ্যপ্রাচ্যের বহু দেশ বহুবার পরিভ্রমণ করেন। ব্যবসার ক্রমশ বিস্তৃতি ঘটলে দেশ হতে ভাইদের এনে ব্যবসার সাথে সম্পৃক্ত করেন। ভাইদের সকলেই চট্টগ্রামে প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি লাভ করেন। রেয়াজুদ্দিন বাজারস্থ তিন পোল মসজিদের পশ্চিমে মুহাম্মদীয়া বোডিং প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান আলহাজ্ব মুহাম্মদ ওয়াজের আলী সওদাগরের মেধা সততা, পরিশ্রম ও অধ্যবসায়ের ফল।
বৈবাহিক বন্ধনে আবদ্ধ
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষের দিকে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে মরহুমা আলহাজ্ব ছাদিয়া বেগম নামে এক বিদুষী মহিলার সাথে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাঁদের ঔরসে ৭ পুত্র ও ৩ কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। প্রথম সন্তান আলহাজ্ব মুহাম্মদ মহিউদ্দীনের জন্ম হয় ১৯৪৮ খ্রিস্টাব্দে। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে আলহাজ্ব মুহাম্মদ সামশুদ্দীনের জন্ম হবার পূর্বাহ্নে ওয়াজের আলী সওদাগর আলকাদেরী সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে আন্দরকিল্লা মাতৃসদন হাসপাতালে (বর্তমান জেমিসন রেডক্রিসেন্ট হাসপাতাল) ভর্তি করান ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ। প্রসূতির যন্ত্রণাকাতর মুখচ্ছবি সহ্য করতে না পেরে, হাসপাতাল থেকে হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে ডাক্তারের খোঁজে যেতেই পথিমধ্যে কোহিনূর ইলেক্ট্রিক প্রেস এর সামনে কুতুবুল আউলিয়া হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব হাফেজ সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র রাজদার মুরীদ হালিশহর নিবাসী মরহুম আবুল বশর সাহেবের সাথে দেখা হয়ে যায়।
উভয়ের কথোপকথন
আবুল বশর: এত ক্ষীপ্রগতিতে কোথায় যাচ্ছেন সওদাগর সাহেব?
ওয়াজের আলী: ভাই, আমার স্ত্রী প্রসব বেদনায় কাতরাচ্ছে, ডাক্তার ডাকতে যাচ্ছি।
আবুল বশর: কোহিনূর ইলেক্ট্রিক প্রেস’র ওপরে আমার হুজুর ক্বিবলা আওলাদে রাসূল হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি অবস্থান করছেন, সেখানে চলুন।
ওয়াজের আলী: মুহূর্তখানেক চিন্তা করেই বললেন, চলুন।
উভয়ের সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠতেই সিঁড়ির মুখে হুজুরের সাথে সাক্ষাৎ হয়ে যায়। হুজুরকে এক পলক দেখেই সওদাগর সাহেবের অন্তরে খুশীর ঝিলিক বয়ে গেল। বশর সাহেব সওদাগর সাহেবের স্ত্রীর প্রসব বেদনার কথা জানালে হুজুর এক গ্লাস পানি আনতে বলেন। গ্লাসভর্তি পানিতে ‘দম’ (ফুঁক) দিয়ে প্রসূতিকে পান করাতে বললেন। হুজুরকে সালাম করে গ্লাসভর্তি পানি নিয়ে দ্রুত স্ত্রীর নিকট পৌঁছে পানি পান করালেন। নিমিষেই প্রসূতির সকল যন্ত্রণা লাঘব হয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠলো। অতি অল্প সময়ে দম্পতির ২য় সন্তানের (মুহাম্মদ সামশুদ্দীন) শুভজন্ম হয় ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দ জেমিসন মাতৃসদন হাসপাতালে। সওদাগর দম্পতি এমন এক অলৌকিক কার্যক্রমের বাস্তবতা প্রত্যক্ষ করে আনন্দে আত্মহারা। আওলাদে রাসূল হুজুর সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র কারামত প্রত্যক্ষ করে হুজুরের প্রতি ভীষণভাবে আকৃষ্ট হন স্বামী-স্ত্রী উভয়েই।
বাইয়াত গ্রহণ
এরপর ওয়াজের আলী সওদাগরের মধ্যে ভাবান্তর লক্ষ্য করা যায়। সময় পেলেই নিয়মিত হুজুর ক্বিবলার সান্নিধ্য পেতে উম্মুখ হয়ে থাকতেন। অবশেষে এল জীবনের ঐতিহাসিক স্মরণীয় দিনক্ষণ। ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দে কোন এক যোহর/আছর নামাযান্তে কোহিনূর ইলেক্ট্রিক প্রেসের উপর তলায় আওলাদে রাসূল কুতুবুল আউলিয়া হরতুল আল্লামা আলহাজ্ব হাফেজ সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র হাতে হাত রেখে বাইয়াত গ্রহণ করেন। এভাবেই তিনি হুজুরের রূহানী সন্তান বনে যান। গোলামী আর খেদমত করার সৌভাগ্য অর্জন করে নিজেকে মুর্শিদের ‘হুকুমের দাস’ হিসেবে পরিচিতি করতে লেগে যান বিভিন্নভাবে। হুজুর কেবলার সাথে সকল কর্মসূচিতে তিনি অংশগ্রহণ করতেন শত প্রতিকূলতা সত্ত্বেও।
আনজুমান-জামেয়ার দায়িত্ব পালন
মুর্শিদের ইচ্ছাতে বিলীন ওয়াজের আলী সওদাগর স্বীয় আত্মাকে উৎসর্গ ও সম্পূর্ণ নিবেদিত করতে পেরেছিলেন বলেই অতি অল্প সময়ে হুজুরের সন্তুষ্টি অর্জনে সমর্থ হন। এ কারণেই আনজুমান জামেয়াসহ শরীয়ত-তরীকতের সকল কার্যক্রমে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখেন। স্বদেশের সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান-আক্বিদা রক্ষার্থে নবী-অলী বিদ্বেষী ভ্রান্তমতবাদী ওহাবী গংদের ব্যাপক তৎপরতা স্তব্দ করতে ‘মসলকে আ’লা হযরত’ এর নীতি আদর্শ সমৃদ্ধ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের প্রচার-প্রসারে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া প্রতিষ্ঠালগ্নে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন অন্যান্য রাজদার পীরভাইদের সাথে। মুর্শিদের সন্তুষ্টি অর্জনে সমর্থ হওয়ায় আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্টের ট্রেজারার (কোষাধ্যক্ষ) ও জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া পরিচালনা পর্ষদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন।
এ ছাড়াও তিনি রেয়াজুদ্দীন বাজারস্থ তিন পোল মসজিদের সহ-সভাপতি ছিলেন। গ্রামে স্বীয়ভাগের জমি দিয়ে ও অর্থ ব্যয় করে প্রতিষ্ঠিত করেন মুহাম্মদীয়া তৈয়্যবিয়া ওয়াজেরিয়া মাদরাসা। বর্তমান আবাসস্থল সিরিকোট কলোনীতে আলহাজ্ব ওয়াজের আলী সওদাগর এবাদতখানা প্রতিষ্ঠা করেন। আনজুমান ট্রাস্টের উদ্যোগে ও সহযোগিতায় যেখানে মাদরাসা, মসজিদ, খানকাহ্ প্রতিষ্ঠা হয়েছে, সেখানেই সওদাগর সাহেবের ভূমিকা ছিল লক্ষণীয়। জাতীয় মসজিদ জমিয়াতুল ফালাহ্ প্রতিষ্ঠালগ্নে গঠিত বোর্ড অব গভর্নরস্ সদস্য, চট্টগ্রাম কো-অপারেটিভ হাউজিং সোসাইটি, আনজুমানে খাদেমুল হজ্ব কমিটির সদস্য ও ঢাকা, নোয়াখালী-চট্টগ্রামের বিভিন্ন ধর্মীয়-সামাজিক সংগঠনের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন তিনি। উদার মনোভাবাপন্ন এ ব্যক্তি অভাবগ্রস্ত, আত্মীয় স্বজন, বন্ধু বান্ধব, গরীব মিসকিনদের প্রতি দয়াশীল ছিলেন।
রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরীক্বত কুতুবুল আউলিয়া হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ১৯৫৮ সালে তাঁর বড় নাতি হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহ্ মাদ্দাজিল্লুহুল আলিকে নিয়ে একদল মুরিদসহ জীবনের শেষ হজ্বব্রত পালন করতে পবিত্র মক্কা মুয়াজ্জামা ও মদীনা মুনাওয়ারার উদ্দ্যোশে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম হতে যাত্রা করেন। ঐ যাত্রায় আলহাজ্ব মুহাম্মদ ওয়াজের আলী সওদাগর আলকাদেরীও সহযাত্রী ছিলেন। হুজুর ক্বিবলার এবারের হজ্ব যাত্রার পেছনে একটা রহস্য ইঙ্গিতপূর্ণ ঘটনা নিহিত ছিল। এরপূর্বে ১৯৪৫ খ্রিস্টাব্দে হুজুর কেবলা হজ্ব সমাপনান্তে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র রওজা মোবারকে সালাত সালাম ও যিয়ারত করে বিদায় নিচ্ছিলেন, ঠিক সে মুহূর্তে প্রিয় নবী হুজুরকে পরবর্তীতে হজ্ব করতে আসার সময় পৌত্র সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহকে সঙ্গে নিয়ে আসার নির্দেশ দেন। শিশু তাহের শাহ্-এর বয়স ছিল ৪ বৎসর। নাতি প্রাপ্তবয়স্ক না হওয়া পর্যন্ত হযরত সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হজ্বব্রত পালনে যাননি। ১৭ বছরের নাতিকে সাথে নিয়ে পবিত্র হজ্ব পালনার্থে শুভযাত্রা করেন ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে। সে বছরেই কুতুবুল আউলিয়া হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি পবিত্র আরাফাত ময়দানে প্রিয় নবীর নির্দেশে নাতি সৈয়্যদ মুহাম্মদ তাহের শাহকে ‘বাইয়াত’ করান (আলহামদুলিল্লাহ্)। পরবর্তীতে প্রিয় নাতিকে আক্বায়ে মাওলা তাজেদারে মদীনা হুজুর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র দরবারে মোস্তফায় সমর্পণ করেন। হুজুরের নেতৃত্বে যখন যিয়ারত চলছিল ঠিক সে সময় ডা. টি হোসেন আলকাদেরী (রহমামাতুল্লাহি আলায়হি)’র দিদারে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হচ্ছিল। আওলাদে রাসূল হুজুর ক্বিবলা বলে উঠলেন, ‘ডা. টি. হোসেন খোসনসীব হ্যায়, ইসওয়াক্ত আপকি সাথ সরকারে দোআলম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কি দিদার চল রাহা- আউর আপ কি ওপর সিলসিলাকি গেয়ারা (১১) ছবক কি হুকুম হোগ্যায়া।’’ একথা শুনে ওয়াজের আলী সওদাগর দিদারে মোস্তফা’র জন্য কান্নাকাটি শুরু করে দেন। এমনভাবে হুজুরের নিকট আবদার করতে লাগলেন যে, শেষ পর্যন্ত হুজুর সান্ত্বনার সুরে বললেন ‘সবর করো ওয়াজের আলী, কোশিস করো ইনশাল্লাহ্ দিদার হো যায়েগা।’
এরপর দিদারে মোস্তফার জন্য অস্থির, অধীর, চঞ্চল ওয়াজের আলী হঠাৎ করেই শান্ত নীরব নিস্তব্ধ হয়ে যান প্রিয় নবীর সাক্ষাতে। তরীক্বতে আসার প্রধান উদ্দেশ্য দিদারে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাথে সাথে জীবনের সর্বোচ্চ প্রাপ্তির সংযোগ ঘটে জীবন হয় কামীয়াব। মুর্শিদের কাজ হলো মুরীদকে প্রিয়নবী পর্যন্ত পৌঁছে দেয়া। এ জন্য কঠিন রিয়াজত ও মুর্শিদের দেয়া শর্ত পূরণের প্রয়োজন হয়। তবেই তো প্রাপ্তি। আপন পীরকে রাজী করতে পারলেই এ সর্বোচ্চ প্রাপ্তি ঘটে। (সুবহানাল্লাহ্) তিনি জীবনে আটবার হজ্বব্রত পালন করার সৌভাগ্য অর্জন করেন।
এক সময় অর্থবিত্ত, ব্যবসা-বাণিজ্য, সংসারধর্ম সবকিছুই অর্থহীন মনে হলো তাঁর। আধ্যাত্মিক উৎকর্ষতা ফানা ফীশ্শায়খ, ফানা ফীর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, ফানা ফীল্লাহ্র মোকামে পৌঁছতে হলে এসব অন্তরায় মনে করে সবকিছু ত্যাগ করে মুর্শিদ অমৃত দাসত্ব পালনে মনস্থ করে ওয়াজের আলী কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেসে অবস্থানরত প্রাণ প্রিয় মুর্শিদ হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হির দরবারে হাজিরা দিতে যান। দেখেন যে হুজুর দোতলার সিঁড়ির মুখে দাঁড়ানো। তাকে দেখে হুজুর কেবলা বলেন, ‘‘তুম একেলা জান্নাত মে যায়েগা তো, মখলুক কা কেয়্যা ফায়দা হোগা,’ মনের সংকল্প বাইরে প্রকাশ না হলেও আওলাদে রাসূল হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হির অন্তরদৃষ্টিতে ধরা পড়েছে। সওদাগর সাহেব স্তম্ভিত ও মূঢ় হয়ে যান। স্বীয় মুরিদকে সন্ন্যাস জীবনের কঠিন পথ থেকে সরে গিয়ে সংসার ও সামাজিক জীবনে অবস্থান করে দ্বীন-মাযহাব-মিল্লাত ও কওমের সেবা করার উপদেশ দেন। সম্বিৎ ফিরে পেয়ে তিনি হুজুরের নির্দেশে আত্মনিবেদিত হয়ে খেদমতে পুরোপুরি আত্মনিয়োগ করেন আমৃত্ব্য। কুতুবল আউলিয়া রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরীক্বত মুজাহিদে মিল্লাত আওলাদে রাসূল হযরতুল আল্লামা সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হির অযুত লক্ষ রূহানী সন্তান নবী-অলী প্রেমিকদের শোক সাগরে ভাসিয়ে আল্লাহ-রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সাক্ষাতে এ নশ্বর পৃথিবীকে বিদায় জানান ১১ যিলহজ্ব ১৩৮০ হিজরি, ২৭ এপ্রিল ১৯৬১ খ্রিস্টাব্দে।
শোকাভিভূত আলহাজ্ব মুহাম্মদ ওয়াজের আলী নীড়হারা পাখীর মতো চটফট করতে করতে একদিন সিরিকোট শরীফে গমন করেন। যেখানে দরবারের সাজ্জাদানশীন পীর সাহেব আওলাদে রাসূল কুতুবুল এরশাদ গাউসে জমান হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্’র রাহমাতুল্লাহি আলায়হির নিকট মা’য়ে ছাহেবান’র (হুজুর তৈয়্যব শাহর আম্মাজান) সাথে সাক্ষাৎ করে কদমবুছি করার অভিপ্রায় জ্ঞাপন করেন। অনাত্মীয় পরপুরুষের কারো সাথে হুজুরের পরিবারের বিদুষী মায়ছাহেবান সাক্ষাৎ দেন না। আকুতি-কাকুতি কান্নাকাটি সহ্য করতে না পেরে হুজুর তৈয়্যব শাহ্ এ মুরিদের আব্দারের কথা জানালে মা’য়ে ছাহেবান অগত্যা রাজী হন অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য। আপাদমস্তক আবরণে আবৃত হয়ে সামনে উপস্থিত হবার সাথে সাথে সওদাগর মায়ে ছাহেবান’র পা মোবারক জড়িয়ে কান্না শুরু করে দিলেন। আম্মাজান পুত্র তখন তৈয়্যব শাহ (রাহ.)’র নিকট ছেলেটা কাঁদছে কেন জানতে চান, সে কি চায়? হুজুর তৈয়্যব শাহ্ (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি) এ সময় সওদাগর সাহেবকে মায়ের কথা বুঝিয়ে বলেন। তিনি কাঁদছেন তো কাঁদছেনই, কিছুই বলছেন না দেখে বার বার কি চায় জিজ্ঞেস করলে অনেকক্ষণ পা না ছেড়েই বলেন যে, তিনি যা চাইবেন তা দেয়া হবে কিনা? এক কঠিন পরীক্ষা। অবশেষে মা ছাহেবান’র নিকট থেকে ইচ্ছা পূরণ করার সমর্থন পেয়ে তাঁকে নিজ পুত্র হিসেবে গ্রহণ করার আব্দার ধরেন মায়ে ছাহেবান’র নিকট, আসল জিনিসই চেয়ে বসলো। কি আর করা! ভাগ্যবান ওয়াজের আলী স্বামীর মুরিদ রূহানী সন্তান তারই সন্তান সম। এ ভেবে তিনি দাবী পূরণে অর্থাৎ স্বীয় সন্তান হিসেবে গ্রহণ করতে রাজী হলেন, সওদাগর সাহেব মায়ের পা ছেড়ে দিয়ে সহাস্যবদনে দাঁড়িয়ে পড়লে আম্মাজান দোয়া করেন। হুজুর তৈয়্যব শাহ্ (রাহ.) বললেন, মোবারক হো হাজী সাহেব। এ পাওয়ার কি বিকল্প আছে। এতোদিন ধরে কারো মনে কি এরকম ভাবান্তর লক্ষ্য করা গেছে। এ সবই হলো মুর্শিদের অশেষ কৃপা, সন্তুষ্টির বহিঃপ্রকাশ। মুর্শিদের অন্তরের মণিকোটায় কতো গভীরে সওদাগর সাহেবের স্থান প্রোথিত হয়েছিল সেটা কেবল আশেক মাশুকেরই জানার কথা। আমরা অনুধাবন করতেও অসমর্থ। সওদাগর সাহেব ব্যবসায়িক কাজে করাচী লাহোর ঘন ঘন যাতায়াত করতেন এবং প্রায়শ সিরিকোট শরীফে যিয়ারতে যেতেন। এরকম কোন এক সময় সওদাগর সাহেব সিরিকোট শরীফ হতে বিদায় নিয়ে জনৈক ব্যবসায়ী বন্ধুর পারিবারিক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পেশোয়ার গমন করেন। সেখানে তিনি হঠাৎ গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। অচেনা বিদেশ বিভূঁইয়ে এক নির্জনে কাতরাচ্ছে সওদাগর সাহেব। দেশে যোগাযোগ করার কোন সুযোগ নেই। মুমূর্ষু রোগীর কোন হদিস নেয়া সম্ভবপর হচ্ছিল না। আত্মীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব কেউ কোন খবর জানে না সওদাগর সাহেব সম্পর্কে। কিন্তু রূহানী সন্তানের বিপদের কথা মহিয়সী নারী মায়ে ছাহেবান’র অন্তর্দৃষ্টিতে ধরা পড়ে যায়। পুত্র সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ সাহেবকে বললেন, ‘বেটা এখনি পেশোয়ারে গিয়ে আমার ছেলে ওয়াজের আলীকে খোঁজ করে এখানে নিয়ে এসো। সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে কাতারাচ্ছে।’ আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ আম্মাজানকে বললেন, ‘পেশোয়ার বড় শহর, ঠিকানা জানা নেই কোথায় খুঁজব?’ আম্মাজান বললেন, কোসিস করো, ইনশাল্লাহ্ মিল যায়েগা।’’ আল্লাহর নাম নিয়ে হুজুর পেশোয়ার গিয়ে অতি সহজেই সওদাগর সাহেবের খোঁজ পেয়ে সিরিকোট শরীফে এনে মায়ের আশ্রয়ে হস্তান্তর করলেন। ইমাম আলী মাক্বাম হযরত ইমাম হোসাইনী ধারার আহলে বায়ত সাহেবে ‘কাশফ’ অন্তর্দৃষ্টি সম্পন্ন আধ্যাত্মিক শক্তিতে বলীয়ান মহিয়সী নারী সন্তানের বিপদ-আপদ সম্পর্কে সম্পূর্ণ জ্ঞাত ছিলেন বলেই সওদাগর সাহেব সে যাত্রা আল্লাহর রহমতে পরিত্রাণ পেয়েছিলেন, সুবহানাল্লাহ্! এ ঘটনার পর থেকে তৈয়্যব শাহ্র খেদমতে নিজেকে উজাড় করে দেন। শরীয়ত ত্বরীকতের প্রচার-প্রসার মুর্শিদের ইচ্ছাতে নিজেকে বিলীন করে দিয়ে মুরিদের শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তি ‘খিলাফত’ লাভে ধন্য হন। আর ‘আলকাদেরী’ উপাধিতে ভূষিত হন।
শহর কুতুবের সাথে সাক্ষাৎ লাভ
গাউসে জমান হযরত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র সাথে ট্যাক্সী করে সিরিকোট শরীফ হতে বাংলাদেশে আসার জন্য বের হন। হুজুর ক্বিবলা ও সওদাগর সাহেব পিছনে সিটে বসা। চলন্ত গাড়ির ড্রাইভার পেছনে তাকিয়ে অনবরত হুজুরের সাথে পুশতু ভাষায় কথা বলছিলেন। এমনকি ওয়াজের আলী সওদাগর সাহেব দুর্ঘটনার কথা ভেবে সামনে তাকিয়ে গাড়ি চালাবার জন্য ড্রাইভারকে বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও কর্ণপাত করছেনা দেখে রাগতঃস্বরে এক পর্যায়ে ধমক দেন। এতে বিরক্তবোধ করে ড্রাইভার যে কথা বললেন তা শুনে সওদাগর সাহেব নিশ্চুপ হয়ে যান।
আমি ড্রাইভার নই। গাড়ি চালাতে জানিনা। এ গাড়িতে জ্বালানী নেই। আমি একজন শহর কুতুব। হযরত দাতাগঞ্জ বখশ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁকে হুজুর তৈয়্যব শাহকে এয়ারপোর্টে পৌঁছে দেয়ার জন্য পাঠিয়েছেন। একথা শুনে বিস্মিত হয়ে তিনি হুজুর তৈয়্যব শাহ (রাহ.)’র আধ্যাত্মিক স্তরের গভীরতা নির্ণয়ে নিবিষ্ট হয়ে পড়েন। গন্তব্যস্থলে পৌঁছানো অব্দি পথিমধ্যে কোন কথাই বলেননি। মায়ে ছাহেবান’র নিকট হতে সন্তানের স্বীকৃতি পেয়ে শরীয়ত ত্বরীকত সিলসিলার কার্যক্রমে নিজেকে আরো গভীরভাবে সম্পৃক্ত করেন। আমৃত্যু তিনি হুজুরের রেজামন্দী লাভ করার নিরন্তর প্রয়াসে নিজেকে নিঃশর্তভাবে সমর্পিত করেন। মুর্শিদ সন্তুষ্ট হয়ে হযরাতে কেরামের পক্ষ থেকে দরবারে আলিয়া কাদেরিয়ার নির্ধারিত সনদ ‘খিলাফত’ প্রদান করে ফানাফীশ্ শেখ মুহাম্মদ ওয়াজের আলীকে ধন্য করেন গাউসে জামান হযরতুল আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। এভাবেই সওদাগর সাহেবের পরম প্রাপ্তি ঘটে।
একদিন কথা প্রসঙ্গে তিনি জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার সাবেক অধ্যক্ষ হযরতুল আল্লামা আলহাজ্ব মুহাম্মদ জালাল উদ্দীন আলকাদেরী (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি)কে জানাযার নামাযে ইমামতি করার জন্য অনুরোধ করেন। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে ১৬ মার্চ, ১৪০০ হিজরি ২৮ রবিউস সানী রোববার এ মহান ব্যক্তিত্ব আমাদের আদর্শ, অনুকরণীয় ব্যক্তিত্ব হযরতুলহাজ্ব মুহাম্মদ ওয়াজের আলী সওদাগর আলকাদেরী ইন্তেকাল করেন সিরিকোট কলোনীর স্বীয় বাসভবনে। তখন গাউসে জামান সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি) জশনে জুলুছে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি উদযাপনের কর্মসূচিতে এসে চট্টগ্রাম অবস্থান করছিলেন। হুজুর অসুস্থ সওদাগর সাহেবকে দেখতে রাতে তাঁর বাসভবনে গেলে হুজুর ক্বিবলার হাত ধরে জানাযার নামাযে ইমামতি করার জন্য সকাতরে অনুরোধ জানান। অথবা তাঁকে সাথে করে সিরিকোট শরীফ দরবারে নিয়ে যাবার আকুতি জানান। হুজুর বলুয়ার দিঘীরপাড়স্থ খানকায়ে কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়ায় ফিরে এসে খাদেম রশিদুল হককে রাত্রে সওদাগর সাহেবের কোন খবর আসলে হুজুরকে জানানোর কথা বলেন। হুজুর ক্বিবলার নিকট সওদাগর সাহেবের অন্তিম শয়নের কথা জানা ছিল বলেই এভাবে নির্দেশ দিয়েছিলেন খাদেমকে। ভোর সাড়ে চারটার সময় খবর এলো দরবারে আলিয়া কাদেরিয়ার খলীফা আলহাজ্ব মুহাম্মদ ওয়াজের আলী সওদাগর আলকাদেরী আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ভাগ্যবান ব্যক্তি মুহাম্মদ ওয়াজের আলী আলকাদেরীর লালদিঘী ময়দানে অনুষ্ঠিত প্রথম নামাযে জানাজায় ইমামতি করেন রাহনুমায়ে শরীয়ত ও ত্বরীকত সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। হুজুর ক্বিবলার পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলেন অধ্যক্ষ আল্লামা মুহাম্মদ জালাল উদ্দীন আলকাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। নামায শুরুর পূর্ব মুহূর্তে হুজুর পেছনে তাকিয়ে আল্লামা জালাল উদ্দীন (রাহ.)কে বলেন, আপকো জামেয়া ময়দানমে হোনে ওয়ালা নামাযে জানাজা মে ইমামত করনা হোগা। আভি নামায না পড়না।’ সুবহানাল্লাহ্! অধ্যক্ষ মুহাম্মদ জালাল উদ্দীন আলকাদেরীর সঙ্গে বহু পূর্বে সওদাগর সাহেব তাঁর নামাযে জানাজায় ইমামত করার অঙ্গীকার নিয়েছিলেন। হুজুর ক্বিবলার কথার সাথে সাথে সে কথা তাঁর স্মরণে আসে। গাউসে জামানের কথায় একদিকে মরহুমের ইচ্ছের প্রতিফলন অপরদিকে ওয়াদা ভঙ্গের দায় থেকে একজন বিজ্ঞ আলেমকে মুক্তি দিলেন। সুবহানাল্লাহ্! একজন কামেল মুর্শিদ কিভাবে মুরিদের মনের কথা জেনে ইচ্ছে পূরণ করেন তারই এক অনন্য দৃষ্টান্ত। সওদাগর সাহেব ও মাওলানা জালাল উদ্দীন’র মধ্যেকার অঙ্গীকার দু’জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। অথচ মুর্শিদের নিকট সবই জানা। গাউসে জামান সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলতেন, যে পীর বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখের মধ্যে মুরিদের অবস্থান প্রত্যক্ষ করতে পারেন না সে পীরের পীরগিরি করার অধিকার নেই। সওদাগর সাহেবের মনের কথা আল্লাহ্ রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যেমন জানেন, অনুরূপভাবে আল্লাহ-রাসূল (দ.) প্রদত্ত ক্ষমতা বলে মুর্শিদ সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রাহ.)’র জ্ঞানের মধ্যে ছিল। সুবহানাল্লাহ্! জানাজা শেষে হুজুর তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, আমি পাকিস্তানে অবস্থান করলেও ওয়াজের আলী সওদাগরের ইন্তেকালের খবরে জানাজার নামায পড়ার জন্য আমাকে চটগ্রামে আসতে হতো। জামেয়া কবরস্থানে দাফনের সময় হুজুর ময়ূতকে উদ্দেশ করে বলেছিলেন, সওদাগর সাহেব সবকো সালাম দেনা হামারা তরফছে। সুবহানাল্লাহ্!
আলহাজ্ব মুহাম্মদ ওয়াজের আলী আলকাদেরী (রাহমাতুল্লাহি আলায়হি) নিজে যেমন আপন মুর্শিদ ও সিলসিলার প্রতি নিবেদিত ছিলেন, তেমনি তার ভাই-বোন ও সন্তানগণও হুজুর ক্বিবলা ও সিলসিলার প্রতি নিঃশর্তভাবে অনুগত দেখা যায়। মরহুমের ছোট ভাই আলহাজ্ব নজির আহমদ সওদাগর আনজুমান ট্রাস্ট ও জামেয়া পরিচালনা কমিটির সদস্য হিসেবে খেদমত করেছেন। বর্তমানে তাঁর পুত্র বিশিষ্ট শিল্পপতি আলহাজ্ব তৈয়্যবুর রহমান আনজুমান ট্রাস্ট সদস্য। কনিষ্ঠ ভ্রাতা আলহাজ্ব সিরাজুল হক আনজুমান ট্রাস্টের ফাইন্যান্স সেক্রেটারী হিসেবে এখনো খেদমত আঞ্জাম দিয়ে যাচ্ছেন। মরহুমের জামাতা মরহুম আলহাজ্ব গোলাম সরওয়ার ছিলেন আনজুমান ট্রাস্ট’র সদস্য ও গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র কেন্দ্রীয় চেয়ারম্যান। মরহুমের ২য় সন্তান আলহাজ্ব মুহাম্মদ শামসুদ্দীন আনজুমান ট্রাস্ট’র এডিশনাল জেনারেল সেক্রেটারী ও জামেয়ার সদস্য হিসেবে নিষ্ঠার সাথে হুজুর ক্বিবলার মিশন ও সিলসিলার দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত’র একনিষ্ঠ সেবক ও সিলসিলায়ে আলিয়া কাদেরিয়ার প্রচার প্রসারের নিবেদিত একজন অকৃপণ ও অনুসরণীয় আদর্শ ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব মুহাম্মদ ওয়াজের আলী সওদাগর আলকাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি আমাদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। মরহুমের সমগ্র জীবনকর্ম সাধনার পথ বিশ্লেষণপূর্বক পথ চলার নীতি গ্রহণে আমরা যেন উদ্বুদ্ধ হতে পারি সেজন্য প্রয়োজন আল্লাহ্-রাসূল সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়সাল্লাম’র অনুগ্রহ এবং প্রাণ প্রিয় মুর্শিদের দয়া-দাক্ষিণ্য। আল্লাহ্ আমাদের শ্রদ্ধাষ্পদ অগ্রজ আলহাজ্ব মুহাম্মদ ওয়াজের আলী সওদাগর আলকাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র দরজা বুলন্দ করুন। আ-মী-ন
লেখক: প্রেস এণ্ড পাবলিকেশন সেক্রেটারী আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট