= দা’ওয়াতে খায়র’র গুরুত্ব ও আমাদের দায়িত্ব –
মাওলানা আবু যাহরা মুহাম্মদ মোজাম্মেল হক =
পূর্ব প্রকাশিতের পর
ইসলামের জন্য মহান ত্যাগের শিক্ষা নিয়ে এগিয়ে চলা উচিত। অন্যথায় কবর ও হাশরে আফসোস করা ব্যতীত আর কোন পথ ও উপায় অবশিষ্ট থাকবে না। আল্লাহ্ পাক আমাদের সহায় হোন।
হযরত সায়্যিদুনা আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, প্রিয় রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ঐ ব্যক্তি আগুনে প্রবেশ করবে না, যে আল্লাহ্ তা‘আলার ভয়ে কাঁদে, এমনকি দুধ স্তনে ফিরে যেতে পারে, কিন্তু কোন বান্দার উপর আল্লাহ্ পাকের পথের ধূলি ও দোযখের ধোঁয়া একত্রিত হতে পারে না। [মিশকাত, তিরমিযী শরীফ]
হযরত আল্লামা মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন, অর্থাৎ যেমনিভাবে দোহন করা দুধ স্তনে পুনরায় ফিরে যাওয়া অসম্ভব, তেমনিভাবে ঐ ব্যক্তির (যে আল্লাহ্ পাকের ভয়ে কাঁদে) দোযখে যাওয়া অসম্ভব। তিনি আরো বলেন, আল্লাহ্ পাকের পথের ধূলি হচ্ছে ঐ ধূলি, যে আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য পথ চলে এবং সে পথের ধূলি শরীর বা কাপড় সমূহে, পায়ে বা চেহারার উপর পড়ে। যেমন মসজিদে যেতে, ইল্মে দ্বীন অন্বেষণ, জিহাদ, হজ্জ্ব ও উমরা ইত্যাদি আদায় করাবস্থায় যে ধূলিবালি পড়ে। যেহেতু নাকের ছিদ্র, পেট ও মস্তিস্কের প্রবেশদার, সেটার মাধ্যমে বাতাস বাইরে ভিতের আসা-যাওয়া করে, যদি তাতে আল্লাহর পথের ধূলি পতিত হয় তাহলে নিশ্চয় নিঃশ্বাসের সাথে তা পেট ও মস্তিস্কে পৌঁছে যায়। যে মু’মিনের পেটে নিঃশ্বাসের মাধ্যমে আল্লাহ্ তা‘আলার পথের ধূলি পৌঁছে যায়, সেখানে দোযখের ধোঁয়া পৌঁছবে না। অর্থাৎ সে দোযখে যাওয়া তো দূরের কথা দোযখের নিকটবর্তীও হবে না। [মিরআতুল মানাজীহ্]
সুতরাং মসজিদে যাওয়া ও অন্যান্য ইবাদতের জন্য পথ চলা যেমনিভাবে আল্লাহর পথে বের হওয়া, তেমনি মানুষকে দা’ওয়াতে খায়র তথা কল্যাণের পথে আহ্বান অর্থাৎ দ্বীনি জ্ঞানার্জনের জন্য দা’ওয়াতে খায়র মাহফিলে অংশগ্রহণ করার দা’ওয়াত নিয়ে এলাকায় দাওরাহ্ বা প্রদক্ষিণপূর্বক দা’ওয়াত দেয়াও আল্লাহ্র পথে বের হওয়া। এ অবস্থায় যার শরীর, কাপড়, পা ও চেহারা ধূলিময় হবে ইনশাআল্লাহ্ সে জাহান্নামের আগুন থেকে মুক্তি লাভ করবে।
রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন- ‘‘যে কদম আল্লাহ্ তা‘আলার পথে ধূলিময় হয়ে যায়, ওগুলোর উপর জাহান্নাম হারাম।’’ [তিরমিযী শরীফ]
এছাড়া কেউ যদি দাওরাহ্ করতে গিয়ে কোনভাবে আহত হয় তবে তার জন্যও মহাসুসংবাদ রয়েছে। যেমন সাইয়্যিদুল মুরসালীন, রাহমাতুল্লিল ‘আলামীন সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে আহত হয় আর আল্লাহ্ তা‘আলা অধিক জ্ঞাত যে, কে তাঁর পথে আহত হয়েছে, তবে সে ক্বিয়ামত দিবসে (এমতাবস্থায়) আসবে যে, তখন তার আঘাত প্রাপ্ত স্থান তরতাজা হবে। রং রক্তের হবে কিন্তু সুগন্ধ মেশ্কের মতো হবে। [বোখারী ও মুসলিম শরীফ]
মানুষকে নেকীর দিকে আহ্বানের ইহকালিন ও পরকালিন কল্যাণের কথা কি বলব! আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম’র প্রতি ওহী প্রেরণ করলেন, যে ব্যক্তি সৎকাজের আদেশ দেবে, অসৎ কাজ থেকে বারণ করবে এবং লোকজনকে আমার আনুগত্য করার দিকে আহ্বান করবে, সে ব্যক্তি ক্বিয়ামত দিবসে আমার আরশের ছায়ায় থাকবে। [হিলইয়াতুল আউলিয়া]
সুতরাং বৈদ্যুতিক পাখা ও এয়ার কন্ডিশনের শীতল হাওয়ায় বসে, হাশরের ময়দানের ঐ কঠিন মুহূর্ত, যখন সূর্য সোয়া মাইল উপরে হবে, তামার যমীন হবে, খালি পায়ে দাঁড়াতে হবে আর পঞ্চাশ হাজার বছরের দিনটি হবে, যখন কোন ছায়া থাকবে না কেবল আরশে ইলাহীর ছায়া ব্যতীত, তখন তা কিভাবে অর্জন করা যায় এবং সেখানেও এর চেয়ে ঠান্ডা ও আরামদায়ক পরিবেশে অবস্থান করা যায় তার চিন্তা-চেতনা সৃষ্টি হওয়া জরুরী। অন্যথায় নিজের ও পরের কল্যাণে আল্লাহর পথে না নেমে বর্তমান কোটি কোটি মাইল দূরে অবস্থানকারী সূর্যের তাপের ভয়ে, অলসতার চাদর জড়িয়ে নিদ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে থাকার মাশুল দিতে হবে কঠিন শাস্তির সম্মুখিন হয়ে। যে দেহ আজ এত দূরের সূর্যের তাপ বরদাস্ত করতে পারছে না তখন উপরোল্লিখিত অবস্থায় কিভাবে তা সহ্য করা সম্ভব হবে? কখনো হবে না। আল্লাহ্ আমাদের রক্ষা করুন। আল্লাহ্ পাক এ মহান নি’মাত দা’ওয়াতে খায়রকে উপলব্ধি ও কদর করার এবং তা যথাযথভাবে বাস্তবায়নে দাওরাহ্ বা নেকীর দা’ওয়াত নিয়ে বের হওয়ার সৌভাগ্য দান করুন। আওলাদে রসূল, ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র বাগানের সুবাসিত ফুল হুযূর ক্বিবলাদ্বয়ের নির্দেশ পালন করে এ মহান মিশনের নিবেদিত প্রাণ সৈনিক হয়ে যান। শয়তানের আড্ডাখানা ভেঙ্গে মানুষকে আল্লাহর পথে সুন্দর পন্থায় আহ্বান করার সুন্নাতকে জীবিত করার এবং এ খেদমতে আমৃত্য অংশগ্রহণ করার সৌভাগ্য দানপূর্বক বিজয়ী করুন।
মু‘আল্লিমের পরিচয়
মু‘আল্লিম অর্থ হচ্ছে শিক্ষাদাতা। দা’ওয়াতে খায়র’র পরিভাষায় যাঁরা দা’ওয়াতে খায়র মাহফিলে দ্বীন ও মাসআলা-মাসায়িল বিষয়ক আলোচনা করবেন এ বিষয়ে প্রশিক্ষণ প্রদান করবেন তাঁরা হলেন মু‘আল্লিম। এ মহান দায়িত্বও সুন্নাতে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। আল্লাহ্ রব্বুল ইয্যাত তাঁর প্রিয় মাহবূব’র শানে ইরশাদ করেন- يٰاَيُّهَا النَّبِىُّ اِنَّا اَرْسَلْنٰكَ شَاهِدًا وَّمُبَشِّرًا وَّنَذِيْرًا-
অর্থ: হে অদৃশ্যের সংবাদদাতা (নবী)! নিশ্চয় আমি আপনাকে প্রেরণ করেছি হাযির-নাযির করে, সুসংবাদদাতা এবং সর্তককারী রূপে। [কান্যুল ঈমান: সূরা আহযাব, আয়াত-৪৫]
ইবনে মাজাহ্ শরীফে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন- হুযূর পুরনূর, শাফি‘ই ইয়াওমুন্নুশূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম একদিন বাইরে তাশরীফ নিয়ে গেলেন। অতঃপর তিনি তাঁদেরকে (সাহাবায়ে কিরাম) পেলেন যে, তাঁরা ক্বোরআন পাক তিলাওয়াত ও শিক্ষা করছেন। অতঃপর তিনি তাঁদের উদ্দেশ্যে যা ইরশাদ করেছেন তা’তে এটাও রয়েছে- وَاِنَّمَا بُعِثْتُ مُعَلِّمًَا-
‘নিশ্চয় আমি মু‘আল্লিম (শিক্ষাদাতা) হিসেবে প্রেরিত হয়েছি। [ইবনে মাজাহ শরীফ]
রসূলে মক্ববূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সৃষ্টির মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ মহান শিক্ষক। যাঁকে সকল জ্ঞান শিক্ষা দান করেছেন মহান আল্লাহ। সাহাবায়ে কিরাম আলায়হিমুর রিদ্বওয়ান-এর মাধ্যমে উম্মতের ওলামায়ে কিরাম রাহিমাহুমুল্লাহ্ এ জ্ঞান সাধারণ মুসলমানকে মু‘আল্লিম’র দায়িত্ব নিয়ে শিক্ষাদান করবেন। যা অন্যান্য মাহফিলের ন্যায় ‘দা’ওয়াতে খায়র মাহফিল’র মাধ্যমে শিক্ষা দেবেন তাঁদের প্রতি আল্লাহ্-রসূল প্রদত্ত মহান দায়িত্ব পালন করবেন। তাঁদের শিক্ষার বিষয়গুলো তাঁদের কাছ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করে যারা রপ্ত করতে সক্ষম হবেন এবং তাঁদের লিখিত গ্রন্থাবলী পাঠ করে যারা দ্বীনি জ্ঞানের অধিকারী হবেন তারাও পরবর্তীতে মুসলমানদের দ্বীনি জ্ঞান বিতরণ করতে পারবেন। মুসলিম সমাজে মু‘আল্লিমের দায়িত্ব পালনে তাদের জন্য খিদমতের দ্বার উম্মুক্ত হবে। যদিও তারা কোন দ্বীনি শিক্ষা নিকেতন থেকে সনদ অর্জন না-ও করেন। ‘দা’ওয়াতে খায়র কেন্দ্রীয় দপ্তর’ কর্তৃক ‘মু‘আল্লিম প্রশিক্ষণ গ্রহণপূর্বক এ মহান সুন্নাতে হাবীবে কিবরিয়া নিজের জীবনে সাজাতে পারেন, যা একজন ‘আশিক্বে রসূলের শ্রেষ্ঠ পরিচয় হতে পারে। এর সমর্থনে আ’লা হযরত ইমাম আহমদ রযা রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি খাঁটি পীর’র যোগ্যতার আলোচনায় একটি শর্ত লিপিবদ্ধ করেছেন, তা হলো তাঁকে (পীর) আলিম হতে হবে। অর্থাৎ কমপক্ষে এতটুকু জ্ঞান থাকা আবশ্যক যে, কারো সাহায্য ব্যতীত নিজের প্রয়োজনীয় মাসআলা কিতাব থেকে বের করতে পারেন। ইসলামের সঠিক পথ ও মত আহলে সুন্নাত ওয়াল জমা‘আত সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকতে হবে। ইসলাম ও কুফর, সঠিক পথ ও পথভ্রষ্টতার মধ্যে পার্থক্য জানতে হবে। [ফাতাওয়া আফ্রিকা]
এখানে কিতাব বলতে আরবী ভাষায় মুদ্রিত জরুরী নয়। বাংলা সহ যে কোন ভাষায় রচিত বা অনুদিত দ্বীনি জ্ঞান বিষয়ক যে কোন গ্রন্থ পাঠের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জ্ঞান অর্জন বিশেষ করে দৈনন্দিন জীবনের জরুরী মাসআলা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল (অবগত) হলে এ যোগ্যতা অর্জিত হবে তথা ‘আলিম’ হিসেবে গণ্য হবে।
‘দাওয়াতে খায়র’ কর্মসূচীর মু‘আল্লিম যিনি হবেন তিনি ক্বোরআন মজীদ সহীহ পাঠে সক্ষম হবেন। একখানা আয়াত শরীফ তিলাওয়াত করে কান্যুল ঈমান শরীফ যা বাংলায় অনূদিত বিশুদ্ধ তরজমা গ্রন্থ থেকে অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত তাফসীর ‘নূরুল ইরফান’ থেকে উপস্থাপন, অতঃপর হাদীসে পাকের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘মিরআতুল মানাজীহ’ হতে একখানা হাদীস শরীফের অনুবাদ ও সংক্ষিপ্ত ব্যাখ্যা এবং ‘গাউসিয়া তারবিয়াতী নেসাব’ থেকে যিকরে ইলাহীর ফযীলত অতঃপর দুরূদ শরীফের একটি ফযীলত বর্ণনা করে মাসআলা- অংশ থেকে কিছু মাসআলা আর সময়ের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন ফাযাইল ও অন্যান্য বিষয়াবলী বর্ণনা দক্ষতার সাথে উত্তমরূপে উপস্থাপন করতে সক্ষম ব্যক্তি হবেন এবং তিনি মু‘আল্লিম হিসেবে গণ্য হবেন।
মুসলমানদের দ্বীনি জ্ঞান শিক্ষা দেয়ার অগণিত ফযীলত রয়েছে। যেমন হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ইলমে দ্বীনের একটা অধ্যায়ের জ্ঞান অর্জন করেছে, সেই ইল্ম তাকে দুনিয়া ও আখিরাতে উপকৃত করবে। আল্লাহ্ তা‘আলা তার জন্য দুনিয়াবী বয়সের এমন সাত হাজার বছরের নেকী দান করবেন, যে বছরগুলোর দিনগুলো রোযায় এবং রাতগুলো জাগ্রতাবস্থায় ইবাদতে মাক্ববূল ও অপ্রত্যাখ্যাতরূপে অতিবাহিত হয়েছে। [মাওহযায়ে হাসানাহ্]
উল্লেখ্য যে, মানুষকে ইল্মে দ্বীন শিক্ষা দেয়ার পূর্বে নিজে ঐ বিষয়ে অধ্যয়ন করে আয়ত্ত করতে হয় আর এতেই এ ফযীলত অর্জিত হবে। হাদীসে পাকে আরো রয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহ্ তা‘আলার ফরযসমূহ থেকে এক, দুই, তিন, চার কিংবা পাঁচটি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করল এবং লোকদের তা শিক্ষা দেয়, তাহলে সে ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ করবে। [আত্তারগীব ওয়াত্ তারহীব: ১ম খণ্ড]
রসূলে করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ভাল কিছু শিখার বা শিখানোর জন্য মসজিদের দিকে গমন করবে, সে একজন পরিপূর্ণ হজ্জ্ব পালন কারীর সাওয়াব অর্জন করবে।
[ত্বাবরানী কবীর: ৮ম খণ্ড]
যে ব্যক্তি অন্যান্য লোকদেরকে শিক্ষাদানের উদ্দেশ্যে ইল্মের একটি অধ্যায় শিখবে, তাকে ৭০ জন সিদ্দীক্বের সমান নেকী দান করা হবে। [ফাযাইলে ইল্ম ও ওলামা: পৃষ্ঠা ১১]
পক্ষান্তরে ইল্ম দ্বীন অর্জন করে তা অপরকে শিক্ষা না দেয়ার শাস্তিও বিপদ সম্পর্কেও সতর্ক থাকতে হবে। যেমন- হুযূর সরকারে মদীনা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘‘ক্বিয়ামতের দিন সর্বাপেক্ষা বেশী দুঃখ হবে তারই, যে দুনিয়ায় শিক্ষার্জনের সুযোগ পেয়েছে, কিন্তু তা অর্জন করেনি। আর ওই ব্যক্তিরও হবে, যে ইল্ম হাসিল করেছে এবং তার নিকট থেকে শুনে অন্য কোন লোকেরা উপকৃত হয়নি। [ইবনে আসাকীর]
আর দুনিয়া অর্জন করার জন্য ইলমে দ্বীন অর্জন করার ব্যাপারে সতর্ক করে রসূলে আরবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ইল্ম আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টির জন্য অর্জন করা হয়, সেটা যে ব্যক্তি এজন্য অর্জন করে যে, সে দুনিয়ার দৌলত পেয়ে যাবে, সে ক্বিয়ামতের দিন জান্নাতের খুশবুও পাবে না।
[আহমদ, আবূ দাউদ ও ইবনে মাজাহ্ শরীফ]
সুতরাং মু‘আল্লিমের উচিত, ইলমে দ্বীন শিক্ষা দেয়ার এসব ফযীলত থেকে নিজের মধ্যে উৎসাহ সৃষ্টি করা এবং এ মহান দায়িত্ব যথাযথভাবে আন্তরিকতার সাথে আদায় করা এবং নিজ দায়িত্বে দা‘ঈদের সুসংগঠিত করে বরং দা’ওয়াতে খায়র কেন্দ্রীয় দপ্তর ঘোষিত পবিত্রতা, ওযূ তায়াম্মুম, গোসল, প্র্যাকটিক্যাল নামায শিক্ষা, মৃত মুসলমানদের তালকীন, গোসল, কাফন-দাফনের পদ্ধতি এবং দা‘ওয়াতে খায়র’র গুরুত্ব ও ফযীলত সম্বলিত বিকাল ৩টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত নিজ এলাকায় দা‘ঈ প্রশিক্ষণ কর্মশালা-এর আয়োজন করে তাদের দক্ষ দা‘ঈ হিসেবে গড়ে তোলা। এবং প্রতি বৃহস্পতিবার বাদে মাগরিব, চট্টগ্রাম ষোলশহর আলমীর খানক্বাহ্ শরীফে কেন্দ্রীয় ‘দা’ওয়াতে খায়র মাহফিলে’ যেখানে নিয়মিত দা’ওয়াতে খায়র মাহফিল করছেন, সে মসজিদগুলোর মুসল্লিদের নিয়মিতভাবে অংশগ্রহণ করে কেন্দ্রীয় মাহফিলকে বিস্তৃত করা এবং সফল করা। যার বিশেষ প্রভাবে ‘দা’ওয়াতে খায়র’ কর্মসূচীর দ্রুত প্রসার ঘটবে। যার মাধ্যমে মাযহাব ও মিল্লাত এবং ত্বরীক্বতের প্রসার ও স্থায়িত্বে সুদূর প্রসারী বিশেষ ভূমিকা থাকবে। সুশৃংখলভাবে মহান কর্মসূচীকে এগিয়ে নিতে সম্মানিত মু‘আল্লিমদের প্রতি কেন্দ্রীয় অনুমোদিত নিয়মাবলী অনুসরণ ও আন্তরিকতার সাথে মেনে চলার সবিনয় অনুরোধ রইল।
==============
সংশোধনী: মাসিক তরজুমান মাহে রবিউল আউয়াল (১৪৩৯ হিজরি) সংখ্যায় প্রকাশিত দা’ওয়াতে খায়র’র গুরুত্ব ও আমাদের দায়িত্ব প্রবন্ধের ১০২ পৃষ্ঠায় দা’ওয়াতে খায়র কর্মসূচি উপশিরোনামে ২০১০ ইংরেজি সালে প্রতিষ্ঠা করেন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ মুদ্রিত হয়। প্রকৃতপক্ষে তা হবে ১৯৮৬ সালে হুজুর কেবলা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি গাউসিয়া কমিটি প্রতিষ্ঠা করেন। এবং পীরে বাঙ্গাল আল্লামা ছাবের শাহ্ (মু.জি.আ.) ২০১০ সালে গাউসিয়া কমিটির মাধ্যমে দা’ওয়াতে খায়র কর্মসূচি চালুর নির্দেশ দেন।