নবী-রাসূলকে আমাদের মত, দশ জনের মত, সাধারণ মানুষ বলা কতটুকু শুদ্ধ?

0

প্রশ্ন করেছেন  ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ মুহিবুল হক, মেখল ফকিরহাট, হাটহাজারী, চট্টগ্রাম।
 প্রশ্ন: আল্লাহর প্রিয় নবী সরকারে দু’ আলম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং অন্যান্য নবী-রাসূলকে আমাদের মত, দশ জনের মত, সাধারণ মানুষ বলা কতটুকু শুদ্ধ? পবিত্র ক্বোরআন মজিদে আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন, قل انما انا بشر مثلكم الاية অর্থাৎ হে রাসূল! আপনি বলুন, নিশ্চয় আমি তোমাদের মত মানুষ। এ আয়াতের মর্মার্থ বিশদ ব্যাখ্যাসহ জানালে কৃতজ্ঞ হব।

উত্তর: নবী ও রসূলগণ যারা মানব জাতির হিদায়তের জন্য আল্লাহ তা‘আলা কর্তৃক প্রেরিত হয়েছেন, তারা মানবজাতি থেকেই প্রেরিত হয়েছেন। জিন বা ফিরিশতা থেকে নন। যদিও তাঁরা আমাদের মত সাধারণ মানব নন বরং তাঁদের হাক্বীক্বত, ব্যক্তিত্ব, আকৃতি-প্রকৃতি সবই সাধারণ মানুষের চেয়ে অনেক ঊর্ধ্বে। সর্বোপরি আল্লাহর প্রিয় মাহবুব রাসূলে আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর হাক্বিক্বত, ব্যক্তিত্ব, আকৃতি, প্রকৃতি সব কিছুই তুলনাহীন। ¯্রষ্টা হিসেবে মহান আল্লাহর যেভাবে কোন তুলনা ও নমুনা বা সাদৃশ্য নেই, সৃষ্টির মধ্যে নুরানী অতুলনীয় মানব হিসেবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মত কোন মানবের তুলনা নেই। এক কথায় তিনি হলেন মানব জাতির মধ্যে তুলনাবিহীন নূরানী অদ্বীতিয় মানব ও সর্ব শ্রেষ্ঠ রসূল। রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং অন্যান্য নবী রাসূলকে আমাদের মত বা দশজনের মত অথবা সাধারণ মানুষ বলা নবী-রাসূলের মান-মর্যাদাকে খাটো/ক্ষুন্ন করা। আর নবী, রাসূলের মান-মর্যাদা ক্ষুন্ন করা বা খাটো করার অপর নাম হল কুফরী এবং উক্ত কুফরীর সাজা হল চিরস্থায়ী জাহান্নাম। বিভিন্ন বর্ণনায় দেখা যায় যে, বশর তথা সাধারণ মানুষ ও নবী মুস্তাফার বশরিয়তের মধ্যে সাতাশটি স্তর-ব্যবধান রয়েছে। অতএব, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর অসাধারণ মান-মর্যাদা সাধারণ মানব থেকে লাখো-কোটি গুণ উর্ধ্বে। আমাদের সত্তা ও মহান আল্লাহর সত্তা যেমন এক হতে পারেনা, তদ্রুপ আমাদের বশরিয়্যাত ও প্রিয়নবী মাহবুবে কিবরিয়ার বশরিয়াত এক হতে পারে না। তাফসীরে রূহুল বয়ানে আল্লামা ইসমাইল হক্কী রহ. সূরা মারযামে كهيعص এর ব্যাখ্যায় উল্লেখ করেছেন যে, প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর আকৃতি হল তিনটি। এক. মানবীয় আকৃতি, দুই. ফিরিশতাসূলভ আকৃতি, তিন. সূরাতে হাক্বক্বী তথা আসল আকৃতি বা আল্লাহর গুণে গুণান্বিত। এ তিন আকৃতির সমষ্টির নাম হল প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। আর আমাদের (উম্মতের) আকৃতি হল শুধুমাত্র মানবীয়/বশরিয়্যাত। অতএব আল্লাহর রসূলকে শধু আমাদের মত বা সাধারণ মানুষ বলা মানে তাঁর যথাযথ বাস্তব আল্লাহ্ প্রদত্ত শান-মান ও অসাধারণ ইজ্জত ও মরতবাকে অস্বীকার করা যা কুফরীর নামান্তর। উল্লেখ্য যে, পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ্ তা‘আলার বাণী قل انما انا بشرمثلكم الاية অর্থাৎ ‘হে হাবীব! আপনি বলুন যে, আমি (বাহ্যিক দৃষ্টিতে) তোমাদের মত মানুষ। উক্ত আয়াতের মর্মার্থ হল, আল্লাহ্ তা‘আলা প্রিয় নবীর মাধ্যমে উম্মতগণকে বিনয়, ন¤্রতা ও ভদ্রতার শিক্ষা প্রদান করেছেন। অর্থাৎ প্রিয়নবী হুজুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সর্বশ্রেষ্ঠ রসূল এবং ইমামুল আম্বিয়া হওয়ার পরেও যদি (বাহ্যিক আকৃতিতে) ‘আমি তোমাদের মত’ বলেন আমাদেরকে স্বীয় অস্তিত্ব কিভাবে মিঠাতে হবে? এ আয়াত থেকে শিক্ষা নিতে হবে, অথবা এ আয়াত কাফিরদের উদ্দেশ্যে বলা হয়েছে। অর্থাৎ হে কাফির ও নাফরমানগণ! আমি তোমাদের মত মানবজাতির মধ্যেই সৃষ্টি হয়েছি। আমি ফেরেশতা বা জীন জাতি নই। আমাকে তোমাদের আপনজন ও বন্ধু জানো অপর বা ভিন জাত মনে করো না। সুতরাং তোমরা আমার নিকট এসো হিদায়াত পাবে। জান্নাত পাবে, আমার আল্লাহ্ পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে। দূরে সরে থাকনা। মূলতঃ এটাও একটি আল্লাহর বান্দাগণকে হিদায়াত করার কৌশল। আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন, হে হাবীব আপনার প্রভুর দিকে কৌশল ও হিকমতের মাধ্যমে দাওয়াত প্রদান করুন। অথবা উপরিউক্ত আয়াত মুতাশাবাহাত পর্যায়ের অন্তর্ভুক্ত। যার সঠিক মর্মার্থ মহান আল্লাহ্ ও তাঁর রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ভালো জানেন। [তাফসীরে কবির, তাফসীরে জাহেদী ও মাদারিজুন্ নুবূয়্যত ইত্যাদি]

এসব তাফসীর ও ব্যাখ্যা না পড়ে শাব্দিক অর্থ নিয়ে ঢালাওভাবে এ আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে প্রিয়নবীকে আমাদের মত বা দশজনের মত সাধারণ মানুষ বলা হুজুর পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শান-মানকে খাটো করার নামান্তর। যা মূলতঃ বেঈমানী, চরম মূর্খতা, ধৃষ্টতা ও বেয়াদবী ছাড়া আর কি? তদুপরি ছহি বোখারীসহ বিভিন্ন হাদীস গ্রন্থের ‘সওমে বেসাল (খাবার গ্রহণ ব্যতীত একাধারে রোযা) শীর্ষক অধ্যায়ে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হতে বর্ণিত আছে, ‘আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সাহাবায়ে কেরামকে উদ্দেশ্য করে এরশাদ করেছেন, ‘ايكم مثلى الحديث অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে কে আছ! আমার মত? অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে কেউই আমার মত নেই। নবী-রাসূলগণকে আমার মত বলা প্রকৃত মু’মিন মুসলমানের আদর্শ ও চরিত্র নয় বরং কাফির-মুনাফিক্বের চরিত্র, যা কুরআন শরীফের বিভিন্ন আয়াত দ্বারা প্রমাণিত। অবশ্য আমাদের প্রিয় নবীসহ অন্যান্য নবী-রাসূলগণ সম্পর্কে বলতে হবে তারা আমাদের মত সাধারণ মানুষ নন বরং তারা আল্লাহর প্রিয় বন্ধু, তাঁরা অতুলনীয় ও অসাধারণ নূরানী মানুষ এবং আল্লাহর প্রিয় নবী ও রাসূল। আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং সকল নবী রাসুলের প্রতি জানাই লাখো দরুদ ও সালাম।
[সহীহ বুখারী শরীফ, মিশকাত শরীফ, তাফসীরে কবির ও তাফসীরে জাহেদী ও মাদারিজুন্নবূয়্যত ইত্যাদি]

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •