শানে রিসালত : বিজয় সবসময় মুসলমানদেরকেই দেওয়া হয়েছে-মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান

0

শানে রিসালত : বিজয় সবসময় মুসলমানদেরকেই দেওয়া হয়েছে

মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান >

আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ ফরমান-
هُوَالَّذِي أَرْسَلَ رَسُولَهُ بِالْهُدٰىوَدِينِ الْحَقِّ لِيُظْهِرَهُ
(عَلَى الدِّينِ كُلِّهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُشْرِكُونَ ﴿ ٩
তরজমা: তিনিই হন, যিনি আপন রসূলকে হিদায়ত ও সত্য দ্বীন সহকারে প্রেরণ করেছেন, যেন সেটাকে সমস্ত ধর্মের উপর শ্রেষ্ঠত্ব দান করেন, যদিও অপছন্দ করে মুশরিকগণ। [সুরা সফ্: আয়াত-৯, কানযুল ঈমান]

এ আয়াত শরীফও হুযূর মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রশংসাকারী। এ’তে ইসলামের বিজয়ের সংবাদ দেওয়া হয়েছে। هُوَ الَّذىْ দ্বারা মহান রব এ ওয়াদা করেছেন যে, তিনি ইসলামকে সমস্ত ধর্মের উপর বিজয়ী রাখবেন আর তিনি এ ওয়াদা পূরণও করেছেন। আজও আমরা এটা স্বচক্ষে দেখতে পাচ্ছি। যেমন- প্রথমত, যখন ইসলামের রবি মক্কা মুর্কারমায় উদিত হলো, তখন সেটার উপর অনেক ধূলিবালি ও মেঘ এসে পড়লো। এমনকি ইসলামের মহান প্রবর্তক আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম এবং মুসলমানদেরকে মক্কা মুকাররমাহ্ ছেড়ে হিজরত করতে হলো; কিন্তু তবুও পরিণতি এ-ই হলো যে, সমগ্র আরব দেশে ইসলামই জয়ী হয়ে রইলো। তারপর আরবের ওইসব লোক, যাদেরকে সমগ্র দুনিয়া থেকে নি¤œ পর্যায়ের বলে মানা হতো, একমাত্র ওই মহান মুনিবের মাত্র ২৩ বছরের শিক্ষা ও দীক্ষার বরকতে তাঁরা সমগ্র দুনিয়া অপেক্ষা উত্তম ও উন্নত পর্যায়ের হয়ে গেলেন; তারা আলিম হয়ে মুর্খদের শিক্ষাদাতা হয়ে গেলেন। অনেক চৌর্যবৃত্তির লোকও ইসলামী দুনিয়ার সংরক্ষণকারী হয়ে গেলেন, অসভ্য দুনিয়া সভ্যতার শিক্ষক হয়ে গেলেন, অনেক পদ্যপায়ী মদ্যপান ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর ভালবাসার পানীয়ের মধ্যে নিমজ্জিত হয়ে গেলেন, অনেক মূর্তিপূজারী আল্লাহর ইবাদতকারী হয়ে গেছেন, আরো অনেকে কি কি হয়ে গেছেন তাতো জানাও যায়নি।

ইসলামের প্রবর্তনকারী আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম গোটা জাতি বরং গোটা দুনিয়ার যেই সংস্কার এত কম সময়ে ও এত কম সম্পদ ও সামগ্রী থাকাবস্থায় করেছেন, সেটার উদাহরণ আজ পর্যন্ত অন্য কোন জাতির পেশোয়া (নেতা)’র মধ্যে পাওয়া যায় না। তারপর ওই সব লোককে তিনি রাজমুকুট ও রাজ সিংহাসনের মালিক করে দিয়েছেন। তাঁরা শতাব্দির পর শতাব্দি ধরে অতি দাপটের সাথে দুনিয়ায় রাজত্ব করেছেন। আজ এত দুরাবস্থায়ও আল্লাহর অনুগ্রহক্রমে হুযূর মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর গোলামগণ রাজ মুকুটের ধারক হয়ে আছেন।

আজ যদিও পার্থিব অবস্থাদির বিচেনায় মুসলমানগণকে অন্য জাতির তুলনায় পেছনে বলে মনে হচ্ছে, অর্থ, মর্যাদা, রাজত্ব ও জ্ঞানে অন্যান্য জাতি তাদের থেকে আগে বেড়ে গেছে বলে প্রতীয়মান হয়; কিন্তু গভীরভাবে চিন্তা করলে জানা যাবে যে, দ্বীনী (ধর্মীয়) বিজয় এখনো মুসলমানরাই অর্জন করে আছেন। এর উদাহরণও নি¤েœ পেশ করার প্রয়াস পাচ্ছিঃ
মসজিদ, গীর্জা ও মন্দিরের মধ্যে তুলনামূলক পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, মসজিদ দৈনিক পাঁচবার আবাদ হয়, গীর্জা হয় সপ্তাহে একবার, অর্থাৎ প্রতি রবিবারে, মন্দির হয় দৈনিক একবার সন্ধ্যায়, তাও আবাদ (সরগরম) হয় না; বরং দু’ একজন লোক এসে ঘন্টা ইত্যাদি বাজিয়ে যায়। কোরআনের ক্বিরাআত (তিলাওয়াত বা পাঠ), লিখনের ক্ষেত্রে যের, যবর ও পেশ এবং একেকটি শব্দ বা পদ একেবারে সংরক্ষিত রয়েছে; কিন্তু ইঞ্জীল ও তাওরীত এবং মূল বেদ-গ্রন্থ দুনিয়া থেকে অদৃশ্যই হয়ে গেছে। আর এ যে ইঞ্জীল, যা বিনা মূল্যে সরবরাহ কিংবা দু/এক পয়সার বিনিময়ে বিক্রি হচ্ছে, তা মূল ইন্জীল নয়; বরং সেটার (বিকৃত) অনুবাদ। আসল ইনজীল অদৃশ্য।
যে পরিমাণ বা যত সংখ্যক তাফসীর ক্বোরআন করীমের রয়েছে, আর যত পদ্ধতির ক্বিরাআত (পঠনরীতি) এ মহান কিতাবের রয়েছে, তত সংখ্যক পদ্ধতি অন্য কোন কিতাবের নেই।
পবিত্র ক্বোরআনের হাফিয প্রত্যেক শহরে পাওয়া যাবে, যদি কোন জলসায় কেউ একটি মাত্র আয়াত, একটি মাত্র যবরও ভুল পড়ে, তাৎক্ষণিকভাবে লোকেরা তাকে পাকড়াও করে; কিন্তু অন্য কিতাবগুলোর কোন হাফিয নেই। আজকাল রাজত্ব অন্যান্য জাতির অনেক দেশে ও অঞ্চলে বিদ্যমান; কিন্তু যেহেতু ক্বোরআন আরবী ভাষায় এসেছে (নাযিল হয়েছে), সেহেতু এখনো প্রত্যেক জায়গায় আরবী জানে এমন লোক পাওয়া যায়, যদিও সরকারের পক্ষ থেকে ওই ভাষায় কোন পৃষ্ঠপোষকতা নেই। হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর জীবনী যে শান-শওকতের সাথে ইসলামে রয়েছে, অর্থাৎ হুযূর-ই আক্রামের সমগ্র জীবন শরীফের প্রতিটি অবস্থা, যেমন ঘরের, বাইরের জীবনের, হুযূর-ই আক্রামের ওঠা, বসা, চলাফেরা, হাসি-কান্না, কথাবলা, এমনকি পূর্ণাঙ্গ শরীর মুবারকের গড়ন শরীফ, যেমন-দাড়ি মুবারকের কতটা লোম মুবারক সাদা হয়েছিলো, এমনিভাবে কোন ধর্মের প্রবর্তকের নেই। হাদীস শরীফ কি? তাতো হুযূর আলায়হ্সি সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর জীবন-বৃত্তান্তই। কোন বাদশাহ্, কোন প্রেমাস্পদ কোন পলোয়ান (বীর-পুরুষ), মোটকথা, দুনিয়ায় কোন শানদার মানুষেরও এমন জীবনী লিপিবদ্ধ হয়নি।
গরু-ছাগলের গোশ্ত মুসলমানগণ আহার করে, শূয়রের মাংস হিন্দু, খ্রিস্টান ও ইহুদী ইত্যাদি জাতিই খায়; কিন্তু যেই বরকত গরু-ছাগলের মধ্যে রয়েছে, তা শূয়রের মধ্যে নেই। বলুন তো, হিন্দুস্তানে কত বাজার গরু-ছাগলের রয়েছে? আর কতটা শূয়রের গোশতের রয়েছে?
তাছাড়া, সমস্ত জাতি ও সম্প্রদায়ের মানুষ ধীরে ধীরে ইসলামের কানূনগুলো মেনেই চলেছে। এ পর্যন্ত অন্য ধর্মের লোকেরা আপত্তি করতো- একজন পুরুষকে চারজন নারীকে বিবাহ্ করার অনুমতি কেন দিলেন? কিন্তু যখন নারীর জন্মের সংখ্যা বৃদ্ধি পেতে এবং পুরুষদেরকে যুদ্ধ ইত্যাদিতে মারা যেতে দেখলো, তখন তারা বুঝতে পারলো একাধিক বিবাহের (এক সাথে সবোর্দ্ধ চার নারী) বিবাহের উপকারিতা কি?
কলেবর বৃদ্ধি পাবে। অন্যথায় আমি একেকটা মাসআলা সম্পর্কে (বিস্তারিতভাবে) আলোচনা করতাম। ইসলাম (যে বিষয়ে) যে হুকুম (বিধান) দিয়েছে, তা অত্যন্ত উত্তম। মোটকথা, ধর্মীয় বিজয় মুসলমানদের ভাগে এখনো অর্জিত ও বিদ্যমান। অবশ্য এটা ভিন্ন বিষয় যে, মুসলমানগণ তাদের কোন কোন মন্দ কর্মের কারণে দুনিয়ায় অপমানিত-লাঞ্ছিতও হচ্ছে, অথবা তারা অর্থ-সম্পদ শূন্য হবে। এতে অবশ্য আমাদেরই দোষ, ইসলামের নয়।
আল্লাহ্ পাক তাওফীক দিন যেন আমরা এ ইসলামের রজ্জুকে আঁকড়ে ধরে রাখতে পারি।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •