কাশফ কি? কাশফ হতে অর্জিত জ্ঞান কতটুকু আমলযোগ্য?

0
মুহাম্মদ রায়হান উদ্দীন-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।
প্রশ্ন: কাশ্ফ কি? কাশ্ফ হতে অর্জিত জ্ঞান কতটুকু আমলযোগ্য? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: কাশ্ফ মূলত আরবী শব্দ। যার অর্থ উম্মুক্ত হওয়া, বাতেনী রহস্যাদি সম্পর্কে অবগত হওয়া। তরিকতের দৃষ্টিতে কাশ্ফ হচ্ছে এক ধরনের অন্তর্দৃষ্টি, যার সাহায্যে প্রকৃত অলি, গাউস ও সাধক বাতেনী জগতের দৃশ্য, অদৃশ্য বিষয়াদি এবং আল্লাহ্ তা’আলার জাত ও সিফাতকে জানতে প্রয়াস পান। এবং ভবিষ্যত জগতের অনেক কিছু তাদের নিকট স্পষ্ট হয়ে যায়। তবে এটা অর্থাৎ কাশ্ফ প্রকৃত আল্লাহ্র বন্ধুদের জন্য আল্লাহ্র পক্ষ হতে খাচ দয়া ও করুণা। কোন কোন তরিকতপন্থী সূফির নিকট কাশ্ফ লব্ধ জ্ঞানই প্রকৃত জ্ঞান। কিন্তু ইমামে আহলে সুন্নাত আ’লা হযরত শাহ্ ইমাম আহমদ রেযা খাঁন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি সহ অনেক বুজর্গানে দ্বীন প্রসিদ্ধ ও হকপন্থী তরিকতের ইমামদের উক্তি উদ্ধৃতি পূর্বক লিখেছেন যে, আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাতে রাসূল তথা শরিয়তের বিধি-বিধানকে ওলিদের কাশ্ফ অতিক্রম করতে পারে না। ক্বোরআন ও  প্রিয়নবীর সুন্নাহ্ তথা ওহীর মাধ্যমে যে ইলম অর্জিত অর্থাৎ ইলমে দ্বীন এটাই মূলজ্ঞান। প্রসঙ্গে প্রখ্যাত সাধক-অলিকুল শিরমণি, সৈয়্যদুনা হযরত জুনাইদ বাগদাদী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, ‘আমাদের সূফীদের ইলম (হাল ও কাশ্ফ) হল মহান আল্লাহ্ তা’আলার কিতাব ও রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সুন্নাত দ্বারা আবদ্ধ। আর যে কাশ্ফের স্বপক্ষে কিতাবুল্লাহ্ ও সুন্নাতে রাসূল সাক্ষ্য দেয় না তা কোন বস্তুই নয়। আর তাই প্রকৃত অলিদের ইলম তথা কাশ্ফ অর্জিত জ্ঞান কখনো কিতাবুল্লাহ্ তথা আল্লাহ্ তা’আলার কিতাব ও সুন্নাতে রাসূলের বাইরে যাবে না। যদি সামান্য পরিমাণও বাইরে যায় তাহলে বুঝতে হবে যে তা প্রকৃত ইলম নয়, প্রকৃত সূফীদের কাশ্ফও নয়। বরং নিছক মূর্খতা।
 আল্লাহ্ তা’আলা শয়তানকে এমন ক্ষমতা দিয়েছেন, সে বহু কাশ্ফের অধিকারী ব্যক্তিকে ধোকায় পতিত করে। ফলে ঐ ধরনের কাশ্ফের দাবীদার ভন্ডরা সেটাকে আল্লাহ্র পক্ষ থেকে মনে করে।
এটার উপর আমল করে নিজে যেমন পথভ্রষ্ট হয় অন্যদেরকেও পথভ্রষ্ট করে। ঐ জন্যই শরিয়ত তরিকতের প্রখ্যাত ও প্রকৃত শায়খ ও ইমামগণ কাশ্ফ দ্বারা অর্জিত ইলমের/জ্ঞানের উপর আমল করার পূর্বে তা কিতাবুল্লাহ্  তথা আল্লাহর কিতাব ও সুন্নাতে রাসূলের মাপকাঠিতে যাচাই করে নেন। যদি কাশ্ফে অর্জিত জ্ঞান কিতাবুল্লাহ্ ও সুন্নাতের অনুরূপ হয় তবেই তা আমলযোগ্য, নতুবা তা পরিত্যাজ্য এবং আমল যোগ্য নয়। বরং তা শয়তানের প্রতারণা মনে করতে হবে।
 [ফতোয়ায়ে রজভীয়া: কৃত- ইমাম আ’লা হযরত শাহ্ আহমদ রেযা বেরলভী রাহ. ও সাবয়ে সানাবেল: কৃত- মীর আবুল ওয়াহিদ বিলগরামী ইত্যাদি]
শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •