দরসে কোরআন : অধ্যক্ষ হাফেয কাজী আবদুল আলীম রিজভী
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
يَا أَيُّهَا النَّبِيُّ لِمَ تُحَرِّمُ مَا أَحَلَّ اللَّهُ لَكَ تَبْتَغِي مَرْضَاتَ أَزْوَاجِكَ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيم- قَدْ فَرَضَ اللَّهُ لَكُمْ تَحِلَّةَ أَيْمَانِكُمْ وَاللَّهُ مَوْلَاكُمْ وَهُوَ الْعَلِيمُ الْحَكِيمُ- وَإِذْ أَسَرَّ النَّبِيُّ إِلَى بَعْضِ أَزْوَاجِهِ حَدِيثًا فَلَمَّا نَبَّأَتْ بِهِ وَأَظْهَرَهُ اللَّهُ عَلَيْهِ عَرَّفَ بَعْضَهُ وَأَعْرَضَ عَنْ بَعْضٍ فَلَمَّا نَبَّأَهَا بِهِ قَالَتْ مَنْ أَنْبَأَكَ هَذَا قَالَ نَبَّأَنِيَ الْعَلِيمُ الْخَبِيرُ- إِنْ تَتُوبَا إِلَى اللَّهِ فَقَدْ صَغَتْ قُلُوبُكُمَا وَإِنْ تَظَاهَرَا عَلَيْهِ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ مَوْلَاهُ وَجِبْرِيلُ وَصَالِحُ الْمُؤْمِنِينَ وَالْمَلَائِكَةُ بَعْدَ ذَلِكَ ظَهِيرٌ-
তরজমা: (মহান আল্লাহ্ এরশাদ করেছেন) ওহে নবী! আপনি নিজের উপর কেন হারাম করে নিচ্ছেন ওই বস্তুকে, যা আল্লাহ আপনার জন্য হালাল করেছেন? আপন বিবিগণের সন্তুষ্টি চাচ্ছেন। আর আল্লাহ ক্ষমাশীল। দয়ালু নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের জন্য তোমাদের শপথগুলো থেকে অব্যাহতি লাভের উপায় নির্ধারণ করে দিচ্ছেন। আর আল্লাহ তোমাদের মুনিব এবং তিনি সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়। আর যখন নবী তাঁর একজন স্ত্রীর কাছে একটি কথা গোপনে বললেন, অতঃপর ওই স্ত্রী যখন তা বলে দিল এবং আল্লাহ নবীকে তা জানিয়ে দিলেন, তখন নবী সে বিষয়ে স্ত্রীকে কিছু বললেন, তখন স্ত্রী বললেন, কে আপনাকে এ সম্পর্কে অবহিত করল? নবী বললেন, আমাকে যিনি সর্বজ্ঞ ও সর্ববিষয়ে ওয়াকিফহাল তিনি বলেছেন। (হে নবীর স্ত্রীদ্বয়!) যদি তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যেহেতু তোমাদের অন্তর সঠিক পথ থেকে কিছুটা সরে গেছে, আর যদি নবীর বিরূদ্ধে একে অপরকে সাহায্য কর, (তবে জেনে রাখো) নিশ্চয় আল্লাহ, জিব্রাঈল (আলায়হিস্ সালাম) এবং সৎকর্মপরায়ণ মু’মিনগণ তাঁর সহায়ক। উপরন্তু ফেরেশতাগণও তাঁর সাহায্যকারী। [১-৪ নং আয়াত, সূরা আত তাহরীম]
আনুষঙ্গিক আলোচনা
সূরার প্রারম্ভিক আয়াতসমূহের শানে নুযুল
সূরা আত-তাহরীমের প্রারম্ভিক আয়াতসমূহের শানে নুযুল বর্ণনায় মুফাচ্ছেরীনে কেরাম উল্লেখ করেছেন, উম্মুল মু‘মীনীন হযরত আয়েশা ছিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা থেকে বণির্ত আছে যে, রাসূলে কারীম রাউফুর রাহীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অভ্যাস মুবারক এ ছিল যে, প্রত্যহ তিনি নিয়মিতভাবে আসরের নামাজের পর দাঁড়ানো অবস্থায়ই তাঁর পবিত্র বিবিগণের কাছে কুশল জিজ্ঞাসার জন্য গমন করতেন। এরই ধারাবাহিকতায়
একদিন তিনি হযরত যয়নব বিনতে জাহ্শ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহার কাছে একটু বেশি সময় অতিবাহিত করলেন এবং মধু পান করলেন। এতে আমার (অর্থাৎ হযরত আয়েশা) মনে ঈর্ষা হলো। এবং আমি হযরত হাফসা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘য়ালা আনহা)-এর সঙ্গে পরামর্শ করে স্থির করলাম যে, তিনি আমাদের মধ্যে যার কাছে আসবেন, সেই বলবে, ওহে আল্লাহর রাসূল, (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) আপনি “মাগাফীর” পান করেছেন। (মাগাফীর এক প্রকার বিশেষ দুর্গন্ধযুক্ত আটাকে বলা হয়)। অতঃপর পরিকল্পনানুযায়ী কাজ হল। রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘‘না, আমি তো মধু পান করেছি।’’ ওই বিবি বললেন, সম্ভবতঃ কোন মৌমাছি “মাগাফীর” বৃক্ষে বসে তাঁর রস চুষেছিল। একারণেই মধু দূর্গন্ধযুক্ত হয়ে গেছে। আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দূর্গন্ধযুক্ত বস্তু হতে স্বযতেœ বেঁচে থাকতেন। তাই তিনি মধু খাবেন না বলে কসম করলেন। আর হযরত যয়নব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা মনঃক্ষুন্ন হবেন চিন্তা করে তিনি বিষয়টি প্রকাশ না করার জন্যও বলে দিলেন। কিন্তু ওই বিবি বিষয়টি অন্য বিবির গোছরীভূত করে দিলেন।
অন্য এক রেওয়ায়াতে বর্ণিত আছে যে, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত মারিয়া কিবতীয়া রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহাকে নিজের উপর হারাম করে নিয়েছিলেন। লক্ষণীয় যে, একাজ কোন প্রয়োজন ও উপযোগীতার কারণে হলে জায়েয, গুনাহ নয়; কিন্তু আলোচ্য ঘটনায় এমন কোন প্রয়োজন ছিলনা যে, এর কারণে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজে কষ্ট স্বীকার করে নেবেন এবং একটি হালাল বস্তু বর্জন করবেন। কেননা, একাজ রাসূলে খোদা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কেবল বিবিগণকে খুশি করার জন্য করেছিলেন। এরূপ ব্যাপারে বিবিগণকে খুশি করা রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর জন্য অপরিহার্য ছিল না। তাই মহান আল্লাহ সহানুভূতির সাথে আয়াত নাযিল করলেন, “ওহে নবী! বিবিগণকে সন্তুষ্ট করার জন্য আপনি নিজের উপর একটি হালাল বস্তুকে হারাম করেছেন কেন? আর আল্লাহ ক্ষমাশীল, দয়াময়”। আয়াত শরীফ নাযিল হওয়ার পর আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এই কসম ভঙ্গ করেন এবং কাফ্ফারা স্বরূপ একটি ক্রীতদাস আযাদ করে দেন।
[সহীহ বুখারী শরীফ, তাফসীরে নূরুল ইরফান ও দুররে মানছুর শরীফ]
إِنْ تَتُوبَا إِلَى اللَّهِ فَقَدْ صَغَتْ قُلُوبُكُمَا
উদ্ধৃত আয়াতাংশের ব্যখ্যায় মুফাচ্ছেরীনে কেরাম উল্লেখ করেছেন, আল্লাহর মহান বাণী- إِنْ تَتُوبَا إِلَى اللَّهِ এর মাধ্যমে আল্লাহর নবীর যে দুইজন মহিমান্বিত বিবির তাওবার প্রসঙ্গ বিবৃত হয়েছে তাঁরা কারা ? এ প্রসঙ্গে সহীহ বুখারী শরীফ ও তাফসীরে মাযহারী সহ বিভিন্ন নির্ভরযোগ্য তাফসীর গ্রন্থে সাইয়্যেদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস ও আমীরুল মুমীনীন ওমর ফারুকে আজম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এর রেওয়ায়াতে উল্লেখিত হয়েছে, এঁরা হলেন হযরত উম্মুল মুমীনীন হাফসা ও আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা। فَقَدْ صَغَتْ قُلُوبُكُمَا অর্থাৎ অবশ্য তোমাদের অন্তর সঠিক পথ থেকে কিছুটা সরে গেছে।’ এর তাফসীরে মুফাচ্ছেরীনে কেরাম বলেছেন, অন্তর সরে যাওয়া মানে ফাসেকী ও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া নয়; বরং অপছন্দনীয় কথা পছন্দ করা। কেননা, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ছুহবত সমৃদ্ধ সাহাবীগণ কখনো ফাসেক তথা পাপাচারী হতে পারেন না। যাঁদের শানে মহান আল্লাহ এরশাদ করেছেন, الزمهم كلمة التقوى অর্থাৎ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁদের উপর তাকওয়া-পরহেযগারীর বাণী অপরিহার্য ও সাব্যস্থ করে নিয়েছেন। [সূরা-৪৮, আয়াত-২৬]
তাই তাঁদের মাধ্যমে গুনাহ সম্পন্ন হতে পারতো কিন্তু তাঁরা সেটার উপর স্থির থাকতেন না; বরং তাৎক্ষণিকভাবেই তাঁদের তাওবার সৌভাগ্য হয়ে যেতো। [তাফসীরে মাযহারী ও নূরুল ইরফান শরীফ]
তাওবা আল্লাহর অতীব পছন্দনীয় আমল
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উদ্ধৃত আয়াতের মাধ্যমে নবীর দুইজন বিবিকে সম্বোধন করে তাওবার আহ্বান করে সমস্ত মুমীন নর-নারীকে তাওবার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। কেননা, তাওবার মাধ্যমে বান্দার হৃদয়ে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর স্মরণ জাগ্রত হয়, আল্লাহর প্রতি ঐকান্তিক নির্ভরশীলতা সঞ্চারিত হয়। সর্বোপরি পাপাচার পরিত্যাগ করে মানুষ আল্লাহ প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে আল্লাহর আনুগত্যের প্রতি সুদৃঢ় শপথের মাধ্যমে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। এজন্য কুরআনে কারীমের একাধিক আয়াতে মহান আল্লাহ তাওবার প্রতি অধিকতর তাগিদ দিয়েছেন। বান্দাকে তাওবার মধ্য দিয়ে আল্লাহমুখী হওয়ার প্রতি উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে। যেমন, এরশাদ হয়েছে, وَتُوبُوا إِلَى اللَّهِ جَمِيعًا أَيُّهَا الْمُؤْمِنُونَ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ অর্থাৎ হে মুমীনগণ! তোমরা সম্মিলিতভাবে আল্লাহর নিকট তাওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও। অর্থাৎ আল্লাহর দরবারে খালেছ নিয়্যতে ও বিশুদ্ধ অন্তঃকরণে তাওবা করাই মুমীনগণের দুনিয়া-আখেরাতে সর্বাঙ্গিন কল্যাণ-মঙ্গল লাভে সফলকাম হওয়ার চাবিকাঠি। (আলহামদুলিল্লাহ)
অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا تُوبُوا إِلَى اللَّهِ تَوْبَةً نَصُوحًا عَسَى رَبُّكُمْ أَنْ يُكَفِّرَ عَنْكُمْ سَيِّئَاتِكُمْ وَيُدْخِلَكُمْ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَار-
তরজমা: হে মুমীনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট বিশুদ্ধ ও খালেছ তাওবা করো। (যার বদৌলতে) শিঘ্রই তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের গুনাহসমূহ মুছে দেবেন এবং তোমাদেরকে এমন বাগানে প্রবেশ করাবেন যার তলদেশে বিভিন্ন ঝর্ণাধারা প্রবহমান রয়েছে।
অথাৎ বিশুদ্ধও খালেছ তাওবা আমলনামার রেকর্ডকৃত গুনাহ মুছে দেবে এবং তাওবাকারীদের এমন বেহেশতে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করবে যার তলদেশে অনেক ঝর্ণাধারা বহমান থাকবে। (আলহামদুলিল্লাহ)
অন্য আয়াতে এরশাদ হয়েছে, انّ الله يحبّ التّوّابين অর্থাৎ মহান আল্লাহ অত্যধিক তাওবাকারীকে অবশ্যই ভালবাসেন।
তাওবা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের অতীব পছন্দনীয় আমল। আল্লাহর নিবিড়তম নৈকট্য ও সনতুষ্টি অর্জনের নিশ্চিত সহায়ক। সর্বোপরি উম্মতকে তাওবা-ইস্তেগফারের তা’লীম ও অভ্যস্তকরণের লক্ষ্যে রহমতে আলম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম দৈনিক একশত বার আল্লাহর দরবারে তাওবা করতেন। যেমন, সহীহ বুখারী শরীফের ২৬ নং পারা কিতাবুদদা’ওয়াতে রয়েছে, রাসূলে খোদা আশরাফে আম্বিয়া সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, يا ايها الناس توبوا الى الله فانّى اتوب اليه فى اليوم مائة مرّة- অর্থাৎ হে মানব! তোমরা আল্লাহর নিকট তাওবা করো। কেননা, আমি নবী অবশ্য দৈনিক একশত বার আল্লাহর নিকট তাওবা করি। [সহীহ বুখারী]
অন্য রেওয়ায়াতে আল্লাহর নবী আরো এরশাদ করেছেন, التائب من الذنب كمن لا ذنب له অর্থাৎ খালেছ নিয়্যতে ও বিশুদ্ধ অন্তঃকরনে তাওবাকারী বেগুনাহ হয়ে যায়। (আলহামদুলিল্লাহ)
মু’মিন নর-নারীর জীবনে সর্বনাশা ব্যধি হলো নাফস শয়তান দ্বারা প্ররোচিত হয়ে জাগতিক লোভ-লালসায় আকৃষ্ট হয়ে গুনাহে লিপ্ত হওয়া। অতঃপর দিবা-রজনীতে অধিকহারে তাওবা-ইস্তেগফার করতঃ বান্দা যদি আল্লাহ প্রেমে উজ্জীবিত হয়ে আল্লাহর প্রতি আকৃষ্ট হয়, তবে তার উপর খোদায়ী কৃপা-করুণার বারিধারা বর্ষিত হয়। ফলশ্রুতিতে জাগতিক জীবন পবিত্র ও পরিশুদ্ধ হয়। পাপাচারের প্রতি ঘৃণার সঞ্চার হয়।
তাওবা কবুল হওয়ার শর্তাবলী
মুহাদ্দেসীনে কেরাম হাদিসের ব্যাখ্যাগ্রন্থে আর মুফাচ্ছেরীনে কেরাম তাফসীরের কিতাবে বর্ণনা করেছেন, আল্লাহর দরবারে তাওবা কবুল হওয়ার বিভিন্ন শর্ত রয়েছে। যথা;
প্রথমতঃ কৃত পাপসমূহের কারণে আন্তরিকভাবে লজ্জিত ও অনুতপ্ত হওয়া, যার বহিঃপ্রকাশ হলো অন্তর আল্লাহর ভয়ে ন¤্র ও বিগলিত হয়ে দু’চোখ বেয়ে অশ্রুধারা গড়িয়ে পড়া। এজন্য হাদিসে নববীতে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, الندم توبة অর্থাৎ কৃত পাপকর্মের উপর লজ্জিত-অনুতপ্ত হওয়ার নামই তাওবা।
দ্বিতীয়তঃ পুনরায় পাপকর্মে লিপ্ত না হওয়ার জন্য ইস্পাত কঠিন শপথ করে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হওয়া। হযরত আবু বকর ওয়াসেতী রহমাতুল্লাহি আলায়হিকে ‘তাওবায়ে নাছূহা’ তথা বিশুদ্ধ তাওবা সম্পর্কে জিজ্ঞাস করা হলে তিনি জবাবে বলেন, তাওবাকারীর সার্বিক জীবনাচারে প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে পাপাচারের কোন চিহ্নই যেন অবশিষ্ট না থাকে।
তৃতীয়তঃ কৃত গুনাসমূহের কাফফারা যদি আদায়যোগ্য হয় তবে তা যথাসাধ্য আদায় করে দেয়া। যেমন, ক্বাজা নামাজ, রোজা, যাকাত ইত্যাদি আদায় করে দেয়া। বান্দার হকসমূহ যা অনাদায়ী রয়েছে তা যথার্থরূপে হিসাব-নিকাশ করে যথাসাধ্য আদায় করে নেয়া।
চতুর্থতঃ সর্বাবস্থায় সকল প্রকার কর্মকান্ডে গুনাহ হতে বিরত থাকা ।
উপরোক্ত শর্তাবলীর আলোকে বিশুদ্ধ ও খালেছ নিয়্যতে তাওবা-ইস্তেগফার করলে মহান আল্লাহ বান্দার তাওবা কবুল করবেন। তাওবা কবুল হলে জীবন পবিত্র-পরিশুদ্ধ হয়। রিজিক প্রসারিত হয় এবং সামগ্রিক জীবন নিরাপদ, নির্বিঘœ,সমৃদ্ধ ও সম্মানজনক হয়।
মহান আল্লাহ সকল মুমিন নর-নারীকে আমল করার সৌভাগ্য নসীব করুন। আমীন।
লেখক: অধ্যক্ষ-কাদেরিয়া তৈয়্যবিয়া আলিয়া, মুহাম্মদপুর এফ ব্লক, ঢাকা।