তাদেরকে বলা হলো তোমরা উভয় নারী জাহান্নামে প্রবেশ কর প্রবেশকারীদের সাথে

0

তাদেরকে বলা হলো তোমরা উভয় নারী জাহান্নামে প্রবেশ কর প্রবেশকারীদের সাথে

অধ্যক্ষ হাফেয কাজী আবদুল আলীম রিজভী

بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمَنِ الرَّحِيمِ
يا ايها النبي جاهد الكفّار والمنافقين واغلظ عليهم وماؤهم جهنّم – وبئس المصير- ضرب الله مثلا للذين كفروا امرات نوح وامرات لوط- كانتا تحت عبدين من عبادنا صالحين فخانتاهما فلم يغنيا عنهما من الله شيئا وقيل ادخلا النار مع الداخلين – وضرب الله مثلا للذّين امنوا امرات فرعون –اذ قالت رب ابن لي عندك بيتا في الجنة ونجّني من فرعون وعمله ونجّني من القوم الظّالمين- ومريم ابنت عمران الّتي احصنت فرجها فنفخنا فيه من روحنا وصدّقت بكلمات ربّها وكتبه وكانت من القانتين-

তরজমাঃ (মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন) হে নবী! কাফিরগণ এবং মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদ করুন, এবং তাদের প্রতি কঠোর হোন এবং তাদের ঠিকানা হচ্ছে জাহান্নাম। আর কতই না মন্দ পরিণতি। আল্লাহ কফেরদের জন্য, নূহ-পত্ন ও লূত-পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। তারা দু’জন্ই আমার বান্দাদের মধ্যে দু’জন আমার নৈকট্য ধন্য বান্দার বিবাহে ছিল। অত:পর তারা তাদের সাথে বিশ^াস ভঙ্গ করল। সুতরাং তাঁরা (অর্থাৎ হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম ও হযরত লূত আলায়হিস্ সালাম তাদেরকে আল্লাহর আযাব হতে রক্ষা করতে পারলেন না এবং তাদেরকে বলা হলো তোমরা উভয় নারী জাহান্নামে প্রবেশ কর প্রবেশকারীদের সাথে। আর আল্লাহ মুমিনদের জন্য ফেরআউন পত্নীর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন- যখন সে আরজ করল, হে আমার পালনকর্তা, আপনার সন্নিকটে আমার জন্য জান্নাতে একটি গৃহ নির্মাণ করুন। এবং আমাকে ফেরআউন ও তার দুষ্কর্ম থেকে মুক্তি দান করুন এবং আমাকে জালেম সম্প্রদায় থেকে মুক্তি দান করুন। আর (দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন) ইমরান-তনয় মারয়ামের, যে আপন সতীত্ব রক্ষা করেছিল। তখন আমি আল্লাহ তার মধ্যে আমার নিকট থেকে “ রূহ” ফুৎকার করেছি। এবং সে আপন প্রতিপালকের বাণীসমূহ ও তাঁর কিতাবসমূহের সত্যায়ন করলো এবং অনুগতদের অর্ন্তভুক্ত হলো। [সুরা আত-তাহরীম, ৯Ñ ১২ নং আয়াত]

আনুষঙ্গিক আলোচনা
আল্লাহর বাণী وضرب الله مثلا للذّين امنوا এর শানে নুযুল :
উদ্ধৃত আয়াতের শানে নুযুল বর্ণনায় মুফাসসেরীনে কেরাম উল্লেখ করেছেন- আলোচ্য আয়াতে মহান আল্লাহ অভিশপ্ত ও পাপিষ্ঠ কাফির মিশরের বাদশাহ ফেরআউনের বিবি হযরত আছিয়া বিনতে মুযাহিম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর দৃষ্টান্ত বর্ণনা করেছেন। যিনি ফেরআউনের ন্যায় খোদায়ী দাবীদার জালেম শাসকের ঘরে অবস্থান করেও সাইয়্যেদুনা হযরত মুছা কালিমুল্লাহ আলাইহিস সালামের উপর ঈমান আনয়ন করত: আল্লাহর দরবারে নাজাত ও নৈকট্যের অধিকারী হয়েছিলেন।
ফেরআউনের পক্ষ থেকে লেলিয়ে দেয়া হাজার- হাজার যাদুকরদের যাদু বিদ্যার মোকাবেলায় আল্লাহর নবী হযরত মুছা আলায়হিস্স সালাম যখন সফল হন এবং যাদুকররা সকলে মুসলমান হয়ে যায় তখনই হযরত আছিয়া আলায়হিস্ সালাম তাঁর ঈমান প্রকাশ করেন। এতে ক্রুদ্ধ হয়ে পাপিষ্ঠ ফেরআউন তাঁকে ভীষন শাস্তি দিতে উদ্যত হলো। কোন কোন রেওয়ায়াতে উল্লেখ আছে যে, ফেরআউন তাঁর হস্তদয় আর চরণযুগলে পেরেক ঠুকে বুকের উপর ভারী পাথর রেখে দিল যাতে তিনি নড়াচড়া করতে না পারেন। এ অবস্থায় তিনি আল্লাহ তাআলার দরবারে আলোচ্য আয়াতে বর্ণিত দোয়া করেন। কোন কোন রেওয়ায়াতে আরো উল্লেখ আছে যে, অভিশপ্ত ফেরআউন উপর থেকে তাঁর মাথার উপর একটি ভারী পাথর ফেলে দিতে উদ্যত হলে তিনি উল্লেখিত দোয়া করেন। ফলে আল্লাহ তাআলা তাঁর রূহ কবজ করে নেন এবং পাথরটি নিদ্রান দেহের উপর পতিত হয়। মহান আল্লাহ দুনিয়াতেই তাঁকে জান্নাতের গৃহ দেখিয়েছেন [তাফসিরে মাযহারী ও খাযায়েনুল ইরফান]

فلم يغنيا عنهما من الله شيئا وقيل ادخلا
উদ্ধৃত আয়াতাংশের ব্যাখ্যায় তাফসির বিশারদগণ উল্লেখ করেছেন- আলোচ্য আয়াতাংশে মহান আল্লাহ রব্বুল আলামীন সাইয়্যেদুনা হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম-এর পত্নী ‘ওয়াহিলা’ আর সাইয়্যেদুনা হযরত লূত আলায়হিস্ সালাম-এর স্ত্রী ‘ওয়াইলাহ’ এর প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। এরা উভয় আল্লাহর দুজন মহান নবীর ঘরনী হয়ে নবীর সান্নিধ্যে অবস্থান করে ও ঈমান আনয়ন করেনি। বরং অন্তরে কুফর-শিরক লালন করে কাফির-মুশরিকদের সঙ্গে গোপন সম্পর্ক রাখতো। আর তার সম্প্রদায়ের লোকদেরকে সাইয়্যেদুনা নূহ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলতো তিনি উম্মাদ (নাউজু বিল্লাহ) আর ওয়াহিলাহ হযরত লূত আলাইহিস সালামের নিকট কোন মেহমান আগমন করলে আগুন জ্বালিয়ে সম্প্রদায়ের লোকদেরকে জানান দিত। এভাবেই তারা দুজন আল্লাহর নবীর প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করেছিল।
মহান আল্লাহর দরবারে পরকালীন আযাব হতে নাজাত লাভ আর আল্লাহ রব্বুল আলামীনের সন্তুষ্টি ও নৈকট্য অর্জনের মাধ্যমে চির ধন্য হওয়ার একমাত্র মাপকাঠি ও মূল ভিত্তি হলো আল্লাহ- রসুল ও আখেরাতের উপর পরিপূর্ণরূপে ঈমান আনয়ন করত: তদনুযায়ী আমল করা। এটাই একমাত্র কুরআন-সুন্নাহ নির্দেশিত অবলম্বন। ঈমান বিনে অন্য কোন জাগতিক বন্ধন-বন্ধুত্ব, সম্পর্ক-সান্নিধ্য কিংবা সম্পদ-সন্তান-সমৃদ্ধি এ উদ্দেশ্য সাধনে সম্পূর্ণরূপে অকার্যকর ও অগ্রহণযোগ্য। এ কারণে সাইয়্যেদুনা হযরত নূহ আলায়হিস্ সালাম আর সাইয়্যেদুনা হযরত লূত আলায়হিস্ সালাম এর ন্যায় দুজন আল্লাহর নবীর ঘরনী হয়ে ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্যে জাগতিক জীবন অতিবাহিত করার সৌভাগ্য অর্জন করে ও নবী পত্নীদ্বয় ওয়াহিলাহ আর ওয়াইলাহ জাহান্নামের আযাব হতে পরিত্রাণ পায় নি। পক্ষান্তরে ফেরআউনের ন্যায় জালেম ও পাপিষ্ঠ শাসকের ঘরনী হওয়া সত্বে ও আল্লাহ ও তাঁর প্রেরিত রসুল হযরত মুছা আলায়হিস্ সালাম-এর উপর ঈমান আনয়ন করার কারণে হযরত আছিয়া আলায়হিস্স সালাম আল্লাহর আযাব হতে নাজাত লাভ করত: জান্নাতী হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন।

নবী অলীর শাফায়াত যথার্থ ও প্রমাণিত সত্য
কুরআন-সুন্নাহ সহ শরীয়তের নির্ভরযোগ্য কিতাবসমূহের বর্ণনালোকে কিয়ামতের কঠিনতম সময় সন্ধিক্ষণে আল্লাহর দরবারে পাপী-তাপী ঈমানদারের নাজাতের জন্য নবী-অলীর শাফায়াত করার বিষয়টি প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত সত্য। এতে কোনরূপ সংশয়-সন্দেহ করার অবকাশ নেই। হাদীছে নববী শরীফে রাসূলে আকরাম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- ‘شفاعتي لاهل الكبائرمن امتي ’ অর্থাৎ কিয়ামতের দিন আল্লাহর দরবারে আমি নবীর শাফায়াত হবে বড় বড় পাপীদের জন্য। (আলহামদুলিল্লাহ) ছোট ছোট গুনাহ তো অযুর সময় অযুর পানিতে ঝরে যায়। কাবিরা গুনাহ যা তাওবা ব্যতীত মাপ হয় না, এসব কাবিরা গুনাহকারীর জন্য নাজাত নসীব হবে নবীর শাফায়াতের বদৌলতে। সুপ্রসিদ্ধ আকায়েদের কিতাব শরহে আকায়েদে নছফীতে রয়েছে ‘ الشفاعة ثابتة للرسول والاخيار’ অর্থাৎ আল্লাহর দরবারে গুনাহগারদের নাজাতের জন্য নবী-রাসূল এবং অলীউল্লাহদের শাফায়াত প্রমাণিত সত্য। এছাড়া কুরআনে করিমের অসংখ্য আয়াত ও হাদিসে অসংখ্য রেওয়ায়াত নবী-অলীর শাফায়াতকে সুস্পষ্টরূপে সাব্যস্ত ও প্রমাণ করে। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় তা এখানে উল্লেখ করা হলো না।
তবে এ বিষয়ে লক্ষণীয় দিক হলো আল্লাহর দরবারে কেয়ামত দিবসে নবী-রাসূল আর আলীউল্লাহগণের শাফায়াত হবে গুনাহগার ঈমানদারের জন্য। যা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে। বেঈমানদের জন্য নবী-অলীগণ কোনোরূপ শাফায়াত করবেন না। যেমন হযরত নূহ আর হযরত লূত আলাইহিমাস সালাম তাদের পত্নীদ্বয়ের জন্য কোন প্রকার শাফায়াত করেন নি। যেহেতু তারা বেঈমান ছিল। এ জন্য আমরা জাগতিক জীবনেও দেখছি যে, বাতিল পন্থীরা নবী-অলীর শাফায়াতকে অস্বীকার করে। কারণ, তাদের পক্ষে নবী-অলীর শাফায়াত হবে না কখনো।
পরিশেষে আল্লাহর আলীশান দরবারে ফরিয়াদ জানাই তিনি যেন সকলকে উপরোক্ত দরছে কুরআনের উপর আমল করার সৌভাগ্য নসীব করেন। আমীন।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •