অলৌকিক ঘটনাবলীর প্রকারভেদ: মু’জিযা ও কারামত

0

অলৌকিক ঘটনাবলীর প্রকারভেদ: মু’জিযা ও কারামত-

মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান >

প্রথমে মানুষের ‘ইখতিয়ার বা ক্ষমতা সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। বান্দার ইখতিয়ার গত কার্যাদি সম্পর্কে বিভিন্ন মাযহাব বা মতভেদ রয়েছে। ওইগুলোর মধ্যে তিনটি দলের অভিমত ও মতবাদ প্রসিদ্ধ। ওইগুলো নি¤œরূপঃ
১. মু’তাযিলা ফির্ক্বার মতবাদ। তারা বলে, বান্দার সম্পন্নকৃত কার্যাদি তার নিজস্ব ক্বুদরত বা ক্ষমতায় সৃষ্ট।
২. জবরিয়া ফির্ক্বার মতবাদ। সেগুলোকে আল্লাহ্ তা‘আলাই সৃষ্টি করেন। বান্দার তাতে কোন ইখ্তিয়ার বা ক্ষমতা নেই। সুতরাং বান্দাগণ একেকটা পাথরের মতোই।
৩. আহলে সুন্নাতের আক্বীদা ও অভিমত। আহলে সুন্নাতের ইমাম শায়খ আবুল হাসান আশ্‘আরী বলেন, কর্মগুলোকে সৃষ্টি তো আল্লাহ্ তা‘আলাই করেন; কিন্তু বান্দাকে একটি ক্বুদ্রত বা ইখতিয়ার দেওয়া হয়েছে। যখন সে ওই ক্ষমতাকে কোন কর্মের দিকে ধাবিত করে, তখন আল্লাহ্ তা‘আলা ওই কর্ম সৃষ্টি করে দেন। সুতরাং ওই কর্ম আল্লাহ্ তা‘আলার সৃষ্টি হলো আর বান্দা হয় ওই সৃষ্টির কারণ।  [সূত্র. আল্লামা আবদুল আযীয পুরহারভী কৃত ‘নিবরাস’, শাহ্ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী একাডেমী, বন্দিয়াল, ভারত, পৃ. ২৭২]

সৃষ্টি ও উপার্জন (خلق و كسب)
আল্লামা তাফতাযানী খাল্ক্ব ও কাসাব (সৃষ্টি ও সম্পাদন করা বা উপার্জন করা)’র মধ্যে পার্থক্য এভাবে বর্ণনা করেছেন-
اِنَّ صَرَفَ الْعَبْدِ قُدْرَةً وَاِرَادَةً اِلَى الْفِعْلِ عَقِيْبَ ذلِكَ خَلِقَ وَالْمَقْدُوْرُ الْوَاحِدُ دَاخِلُ تَحْتَ الْقُدْرَتَيْنِ لكِنْ بِجِهْتَيْنِ مُخْتَلِفِيْنِ ـ فَالْفِعْلُ مَقْدُوْرُ اللهِ تَعَالى بِجِهْةِ الْاِيْجَادِ وَمَقْدُوْرُ الْعَبْدِ بِجِهْةِ الْكَسَبِ ـ
অর্থাৎ: বান্দা যদি তার কোন ক্ষমতা ও ইচ্ছাকে কোন কর্মের দিকে ফেরায়, তখন (ভরপুর) আল্লাহ্ তা‘আলা তা সৃষ্টি করে দেন অর্থাৎ নিশ্চয় বান্দার ক্ষমতা ও ইচ্ছাকে কোন কর্মের দিকে ফেরানো হচ্ছে, বান্দার কর্ম সম্পাদন বা উপার্জন। আর এরপরে আল্লাহ্ তা‘আলা কর্তৃক ওই কর্মকে অস্তিত্ব দান করার নাম সৃষ্টি করা। ক্বুদরতের অধীনস্থ বিষয় হচ্ছে একটি, যা দু’টি ক্বুদরত বা ক্ষমতার অধীনস্থ, দু’দিক থেকে। সুতরাং ‘কর্ম’ সৃষ্টি হওয়ার দিক দিয়ে আল্লাহ তা‘আলার ক্বুদরত বা ক্ষমতার অধীনে। আর সম্পাদন ও উপার্জনের দিক দিয়ে বান্দার খোদাপ্রদত্ত শক্তির অধীনে। [সূত্র. আল্লামা মাস‘ঊদ ইবনে ওমর তাফতাযানী কৃত. শরহে আক্বাঈদ, মুদ্রিত-শওকতুল ইসলাম, ছাপাখানা, লক্ষ্ণৌ, পৃ. ৬-৬৫]

যদি কেউ বলে, এটা তো শির্ক হবে যে, আল্লাহকেও শক্তিমান বলবে এবং বান্দাকেও শক্তিমান বলবে, তাহলে তার শির্ক বলার ‘ফাত্ওয়া’ হবে নিছক ফাত্ওয়াবাজি; তার কথা মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। কারণ, বান্দার ক্বুদরত বা ক্ষমতা হচ্ছে আল্লাহর প্রদত্ত। তাহলে শির্ক হবে কেন? আর তাতে সমকক্ষতাও হচ্ছে না। এভাবে, যদি কেউ একথা বলে যে, মানুষের জন্য ক্বুদ্রত বা ক্ষমতা ও ইখতিয়ার মেনে নেওয়ার অর্থই হচ্ছে এ যে, আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দাকে ক্ষমতা দিয়ে নিজে ক্ষমতাহীন ও অকেজো হয়ে গেছেন, তাহলে এমন লোকের কথাও কানে নেওয়ার উপযোগী মোটেই নয়। কারণ, অসীম ক্বুদরতের মালিক আল্লাহ্ তা‘আলা অতুলনীয় অনুপম, তাঁর দানও অসীম, অক্ষয় ও অনুপম। তিনি এবং তাঁর কোন গুণও অন্য কারো মত নয়; বরং আল্লাহকে তেমন মনে করলেই শির্ক হবে। আর বান্দাকে যদি নিছক ইখতিয়ারহীন মনে করা হয়, তবে মানুষকে ফির্ক্বা-ই জবরিয়ার মতো নিছক পাথরের মতো মনে করা হবে। তাও নিতান্তই অবাস্তব ও অমূলক কথা। তাই বান্দার খোদাপ্রদত্ত ক্ষমতা ও ইখতিয়ারের বিষয়টিও মেনে নিতে হবে। বস্তুতঃ মানুষ (বান্দা) নিছক ইখতিয়ারহীন পাথর নয়; বরং তার দ্বারা স্বাভাবিক ও অস্বাভাবিক বা অলৌকিক কর্মও সম্পন্ন হয়।

মানুষের অলৌকিক কার্যাদির প্রকারভেদ
মানুষ কর্তৃক স্বাভাবিক নিয়মানুসারে অগণিত কর্ম-সম্পাদিত হয়। কোন কোন মানুষ (আল্লাহর বিশেষ বিশেষ বান্দা) কর্তৃক এমন কার্যাদিও সম্পাদিত হয়, যেগুলো চূড়ান্ত পর্যায়ের অস্বাভাবিক ও অলৌকিক। ওইগুলোকে খাওয়ারিক্ব’ (অলৌকিক) বলা হয়। ইমাম ফখর উদ্দীন রাযী আলায়হির রাহমাহ্ এমন কার্যাদির বিভিন্ন প্রকারের কথা বলেছেন-
১. এমন কিছু কাজ, যেগুলো খোদা বলে দাবী করে বসেছে এমন লোকদের হাতেও প্রকাশ পেয়েছে। যেমন, ফিরআউনের হাতের কিছু অস্বাভাবিক কাজ প্রকাশ পেয়েছে, দাজ্জালের হাতে প্রকাশ পাবে। এটা তাদের জন্য সম্ভব; কারণ ওই ব্যক্তি বা ব্যক্তিবর্গের শারীরিক গড়ন ও সূরত তাদের মিথ্যাবাদী হবার পক্ষে সাক্ষী। সুতরাং তাদের হাতে অস্বাভাবিক কর্ম সম্পন্ন হওয়া বা প্রকাশ পাওয়ার ফলে বিবেকবান মানুষের জন্য মোটেই বিভ্রান্তিকর ঠেকবে না।
২. এমন অলৌকিক কার্যাদি, যেগুলো নুবূয়তের সত্যিকার দাবীদারের পবিত্র হাতে সম্পন্ন হতো ও প্রকাশ পেতো। বস্তুতঃ তাঁদের হাতে এমনটি প্রকাশ পাওয়া জরুরীও ছিলো। এর উপর নবীগণ আলায়হিমুস্ সালাম-এর নুবূয়তে বিশ্বাস স্থাপনকারীদের ঐকমত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।
৩. যে লোকটি নুবূয়তের মিথ্যাদাবীদার হয়, তার হাতে প্রথমে তো অলৌকিক কিছু প্রকাশ পাবেনা; আর যদি ঘটনাচক্রে প্রকাশও পেয়ে যায়, তবে সেটার সাথে মোকাবেলা ও খন্ডন অবশ্যই করা যেতে পারে।
৪. যে ব্যক্তি বেলায়তের দাবীদার হয়; (ওলী বলে দাবী করে বা করা হয়), তবে তাঁর হাতে অলৌকিক ঘটনা তাঁর দাবী অনুসারে প্রকাশ পাওয়া বৈধ কিনা তাতে মতবিরোধ রয়েছে।
৫. যে ব্যক্তি জাদু ও শয়তানের আনুগত্যের দাবীদার হয়, আমাদের মতে তার হাতেও অলৌকিক (অস্বাভাবিক) কার্যাদি প্রকাশ পেতে পারে; কিন্তু মু’তাযিলা ফির্ক্বার মতে, হতে পারে না।
৬. এক ব্যক্তি নেক্কার (সৎকর্মপরায়ণ), আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে পছন্দনীয়। তিনি কিছু দাবী করেননি। তাঁর হাতে অলৌকিক ঘটনা প্রকাশ পাওয়া ওলীসূলভ কারামতই। আহলে সুন্নাত সেটাকে বৈধ সাব্যস্ত করেন- আবুল হাসান বসরী ও মাহমূদ খাওরেযমী ব্যতীত। মু’তাযিলা ফির্ক্বার লোকেরা ওলীগণের কারামতকে অস্বীকার করে।
৭. যে ব্যক্তি আল্লাহর আনুগত্য করে না, ফাসিক্ব অথবা কাফির, তার হাতে অলৌকিক কিছু প্রকাশ পেলে তা হবে ‘ইস্তিদরাজ’। [সূত্র. ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী, তাফসীর-ই কবীর, খন্ড:২১, পৃ.৮১] আল্লামা আবদুল আযীয পুরহারভী ‘খাওয়ারিক্ব’ বা অলৌকিক ঘটনাবলীর সাত প্রকার এভাবে বর্ণনা করেছেন-
১. নবীগণের মু’জিযা, ২. ওলীগণের কারামত, ৩. ওই আম মু’মিনের ‘মা‘ঊনাত’, যিনি না ওলী, না ফাসিক্ব, ৪. ‘ইরহাস’; নবীর নুবূয়ত প্রকাশের পূর্বে যা নবী (আলায়হিস্ সালাম) থেকে প্রকাশ পায়। যেমন নবী-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে পাথরগুলো সালাম করা ইত্যাদি, ৫. কাফির ও ফাসিক্বের ইস্তিদরাজ; এমন অলৌকিক ঘটনা, যা তার উদ্দেশ্যের অনুরূপ হয়। অবশ্য, এটা তাকে ধীরে ধীরে দোযখের আগুন পর্যন্ত পৌঁছিয়ে দেয়।
৬. ইহানাত। এটা হচ্ছে ওই অলৌকিক বিষয়; যা কাফির কিংবা ফাসিক্বের ইচ্ছার বিপরীতে প্রকাশ পায়। যেমন মুসায়লামা কায্যাব। সে কোন কূপে কুল্লি করলে ওই কূপের মিঠা পানি লবণাক্ত হয়ে যেতো। সে একদা এক টেরা চোখের উপর হাত বুলিয়ে দিলে সে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলো।
৭. জাদু; দুষ্ট নাফসের শয়তানদের সাহায্যে কিছু কিছু বিশেষ কাজ সম্পাদিত হয়ে যায়। এগুলো অস্বাভাবিকও হতে পারে; কিছু সংখ্যক আলিম এগুলোকে ‘খাওয়ারিক্ব’-এর অন্তর্ভুক্ত বলে মন্তব্য করলেও সেগুলো তো জাদুই। [সূত্র. নিবরাস, পৃ. ৪৩০]

দেখুন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মু’জিযাকে মক্কার কাফিররা অস্বীকার করতো, সেগুলোকে যাদু বলতো, ওলীর কারামতকে ওহাবী-লা মাযহাবীরা অবিশ্বাস করে। কারামতে বিশ্বাস করাকে শির্ক বলে। এভাবে অলৌকিক ও অস্বাভাবিক কার্যাদির উপরোল্লেখিত শ্রেণী ও প্রকারভেদগুলোর তোয়াক্কা না করে, একটার স্থলে অন্য একটি সাব্যস্ত করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করে। এ ক্ষেত্রে সঠিক পথে রয়েছেন আহলে সুন্নাত। উদাহরণস্বরূপ, আমাদের আক্বা ও মাওলা হুযূর-ই আক্রাম থেকে অগণিত মু’জিযা প্রকাশ পেয়েছে। হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম মাটি দিয়ে পাখী তৈরী করে তাতে ফুঁক মারতেন। সেটা জীবিত হয়ে উড়ে যেতো। মাতৃগর্ভের অন্ধ ও কুষ্ঠরোগীকে আরোগ্য দিতেন। এমনকি তিনি মৃতকেও জীবিত করতে পারতেন। এগুলো আল্লাহ্ তা‘আলার অনুমতি ও প্রদত্ত ক্ষমতা বলে তাঁরা সম্পন্ন করতেন। এগুলোর কথা ক্বোরআন ও হাদীস শরীফে আলোচনা করা হয়েছে। আল্লাহ্ ও রসূল কি শির্ক শিক্ষা দেন? মোটেই না। বস্তুত এসব অলৌকিক কার্যাদি সম্পর্ক সৃষ্টির দিকে স্থাপন রূপকভাবে করা হয়। আর আল্লাহর অনুমতিক্রমে এগুলো সম্পন্ন হয় বললে ও বিশ্বাস করলে শির্ক হবার কি আছে?
এ বিষয়টি না মুশকিরা বুঝেছে, না ওহাবীরা। এক কট্টর ওহাবী ইনসান-ই ইলাহী যহীর তার ‘আল বেরলভিয়াহ্’ নামক পুস্তকের ৭৩ পৃষ্ঠায় লিখেছে-
فَمَا دَامَ الشَّيْخُ عَبْدُ الْقَادِرِ مَاذُوْنًا مُخْتَارًا مُتَصِرّفًا، مُحْيِيًا، مُمِيْتًا، مُغِيْثًا، مُعْطِيًا، مُوْصِلاً فَلِمَاذَا الدُّعَاءُ اِلَى اللهِ وَلِمَاذَ الْاِسْتِغَاثَهُ بِذَوِى الْاِسْتِغَاثَةِ مِنْهُ وَالتَّوَكُّلِ مِنْهُ، فَكُلَّمَا يَطْلُبُهُ الْاِنْسَانُ يَطْلُبُ مِنَ الشَّيْخِ الْجِيْلاَنِىْ ـ عِيَاذًا بِاللهِ ـ
অর্থঃ যতক্ষণ পর্যন্ত শায়খ আবদুল কাদের জীলানী অনুমতিপ্রাপ্ত, ইখতিয়ারপ্রাপ্ত, ক্ষমতা প্রয়োগকারী, জীবন ও মৃত্যুদাতা, সাহায্যদাতা, দানশীল এবং সরবরাহ্কারী হবেন, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে দো‘আ-প্রার্থনা কেন করা হবে? তাঁর (আল্লাহ) নিকট থেকে সাহায্য কেন চাওয়া হবে? তাঁর উপর ভরসাও কেন করা হবে? মানুষ যা চাইবে তা শায়খ-ই জীলানীর নিকট চেয়ে নেবে! না‘ঊযুবিল্লাহ!

উক্ত ওহাবীর যুক্তি যদি মেনেও নেয়া হয়, তবে বলতে হবে, না‘ঊযুবিল্লাহ্, খোদ্ ক্বোরআন-ই করীমও শির্কী বিষয়াদিতে ভরপুর। কারণ, এগুলো ক্বোরআন-ই করীমে স্বীকৃত বিষয়। এখন যদি কেউ উক্ত ওহাবীকে তার যুক্তি অনুসারে বলে, যখন হযরত ঈসা আলায়হিস্ সালাম রুগ্নকে আরোগ্য দিতেন, মৃতদের জীবিত করতেন, মৃত্যুদূত ফেরেশতাগণ মৃত্যুর সময় প্রাণ কব্জ করেন, বিশ্বের কার্যাদির ব্যবস্থাপনা করেন, হযরত জিব্ররাঈল আমীন সন্তান দেন, তখন আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট চাওয়ার কি প্রয়োজন? হযরত ঈসা ও হযরত জিব্রাঈল আলায়হিমাস্ সালাম-এর নিকট চেয়ে নিলে হতো!
বাস্তবতা হচ্ছে, হযরত মরিয়মকে পুত্র আল্লাহ্ তা‘আলা দিয়েছেন; কিন্তু হযরত জিব্রাঈলের মাধ্যমে দিয়েছেন, বদরের যুদ্ধে বিজয় ও সাহায্য আল্লাহ্ তা‘আলা দিয়েছেন; কিন্তু ফেরেশতাদের মাধ্যমে দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-
بَلى اِنْ تَصْبِرُوْا وَتَتَّقُوْا وَيَأْتُوْكُمْ مِنْ فَوْرِهِمْ هذَا يُمْدِدْكُمْ رَبُّكُمْ بِخَمْسَةِ الاَفٍ مِّنَ الْمَلئِكَةِ مُسَوِّمِيْنَ [سوره ال عمران : ايت ১৩৫] তরজমা: হাঁ, কেন নয়, যদি তোমরা ধৈর্যধারণ করো এবং তাক্বওয়া অবলম্বন করো, আর কাফিরগণ ওই সময় তোমাদের উপর এসে পড়ে, তখন তোমাদের রব তোমাদের সাহায্যার্থে পাঁচ হাজার চিহ্ণিত ফেরেশতা পাঠাবেন। [সূরা আলে ইমরান : আয়াত-১৩৫]

দেখুন, সাহায্য তো আল্লাহ্ করেছেন; কিন্তু ফেরেশতাদের মাধ্যমে করেছেন। এখন কেউ কি একথা বলতে পারে যে, আমাদের জন্য ফেরেশতারা যথেষ্ট। আল্লাহ্ তা‘আলার সাহায্যের কি প্রয়োজন?
অনুরূপ, যদি কারো উদ্দেশ্য সম্মানিত ওলীগণের হাতে পূরণ হয়ে যায়; তবে তা তো আল্লাহ্ তা‘আলারই সাহায্য হবে, কিন্তু হবে ওলীগণের মাধ্যমে। অনুরূপ, যদি কোন মৃত ব্যক্তির কোন ওলীর ‘ক্বুম বিইযনিল্লাহ্! (আল্লাহর অনুমতিক্রমে দাঁড়িয়ে যাও) বলার ফলে জীবিত হয়ে যায় অথবা কোন বেয়াদব তাঁদের ক্রোধে আপতিত হয়ে ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়ে যায়, তবে তাদের জীবন এবং মৃত্যুও বাস্তবিকপক্ষে আল্লাহ্ তা‘আলার নিকট থেকে হবে। আর ওলীগণ হবেন মাধ্যম ও কারণ।
বান্দা যেসব কাজের কারণ বা মাধ্যম হয়, সেগুলোতে তার ততটুকু দখল থাকে যে, সে তার খোদাপ্রদত্ত ইচ্ছা ও শক্তিকে ওইসব কাজের দিকে ফেরায় (নিবদ্ধ করে)। এরপর কাজগুলো সৃষ্টি করা আল্লাহ্ তা‘আলার কাজ। এ কারণে প্রকৃতপক্ষে সাহায্যের আশা ও সাহায্য চাওয়া হবে আল্লাহর দরবারে, যদিও বাহ্যিকভাবে সেগুলোকে কোন বান্দার দিকে সম্পৃক্ত করা হয়। এ সুক্ষ্ম বিষয়টি যথাযথভাবে অনুধাবন করা জরুরী।
পরিশেষে, উপরোক্ত প্রকারভেদকে সামনে রেখে প্রতিটি অলৌকিক ও অস্বাভাবিক কাজকে যে প্রকারের অন্তর্ভুক্ত হয় ওই প্রকার অনুযায়ী সাব্যস্ত করা হলে এ ক্ষেত্রে বিভ্রান্তি দূরীভূত হবে নিঃসন্দেহে।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •