মাহে রমজানুল মুবারক ও শবে কদর

0

মাহে রমজানুল মুবারক ও শবে কদর

অধ্যক্ষ হাফেজ আবু জাফর সিদ্দিকী

চন্দ্র বছরের মধ্যে রমজান মাস সব চেয়ে অধিক বরকতমন্ডিত ও ফযিলতের মাস। এ মুবারক মাসে নাযিল হয় পবিত্র ক্বোরআন মজিদ। নিয়ামতপূর্ণ এ মাসে আল্লাহ রব্বুল আলামীন তার রহমতের দরজাসমূহ খুলে দেন। বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন তোমাদের মাঝে রমজান উপস্থিত। এ মাসের রোজা আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের উপর ফরয করেছেন। এ মাসে আসমানের দরজাসমূহ উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। আর জাহান্নামের দরজা বন্ধ করা হয়, আটক রাখা হয় শয়তানগুলোকে।

আল কুরআনের দৃষ্টিতে মাহে রমযান
রমজানের রোযা যে ফরজ এ ঘোষণা সরাসরি আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ হতে দেয়া হয়েছে, এ ফরজ গেজেট নোটিশ আকারে প্রকাশ করা হয়েছে যা অলংঘনীয় নির্দেশ। এ ফরজ অমান্য করার কোন সুযোগ একজন মুসলমানের নেই। যেমন আল্লাহর ভাষায় বলা হয়েছে-
يٰٓـاَيُّهَا الَّذِيۡنَ اٰمَنُوۡا كُتِبَ عَلَيۡکُمُ الصِّيَامُ کَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِيۡنَ مِنۡ قَبۡلِکُمۡ لَعَلَّكُمۡ تَتَّقُوۡنَۙ‏ ﴿۱۸۳﴾
অর্থঃ হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোযা ফরজ করা হয়েছে যেমন তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছে। যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার। [সূরা বাক্বারা, আয়াত-১৮৩] হাকীমুল উম্মত আল্লামা মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী তাফসীরে নুরুল ইরফানে বলেন, ইসলামে সর্বপ্রথম শুধু আশুরার রোযা ফরয ছিলো। অর্থাৎ মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখ। তারপর রমজান মাসের রোযা এ আয়াত দ্বারা ফরজ হয়েছে। আর ওই রোযাগুলোর ফরজ হওয়া রহিত হয়ে গেছে। রোযা অতি প্রাচীন ইবাদত পূর্ববর্তী ধর্মগুলোতেও ছিলো। রোযা তাকওয়া অর্জন করার মাধ্যম। কেননা গুনাহ্ নাফসকে আম্মারাহ্ করে দেয়। আর রোযার কারণে নাফস দুর্বল হয়ে পড়ে।
অন্যত্র মহান আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন-
شَهۡرُ رَمَضَانَ الَّذِىۡٓ اُنۡزِلَ فِيۡهِ الۡقُرۡاٰنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَ بَيِّنٰتٍ مِّنَ الۡهُدٰى وَالۡفُرۡقَانِۚ فَمَنۡ شَهِدَ مِنۡكُمُ الشَّهۡرَ فَلۡيَـصُمۡهُ ؕ وَمَنۡ کَانَ مَرِيۡضًا اَوۡ عَلٰى سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنۡ اَيَّامٍ اُخَرَؕ يُرِيۡدُ اللّٰهُ بِکُمُ الۡيُسۡرَ وَلَا يُرِيۡدُ بِکُمُ الۡعُسۡرَ  وَلِتُکۡمِلُوا الۡعِدَّةَ وَلِتُکَبِّرُوا اللّٰهَ عَلٰى مَا هَدٰٮكُمۡ وَلَعَلَّکُمۡ تَشۡكُرُوۡنَ‏ ﴿۱۸۵﴾
অর্থ: রমযানের মাস যাতে ক্বোরআন অবতীর্ণ হয়েছে যা মানুষের জন্য হিদায়ত এবং পথ নির্দেশ ও মীমাংসার সুস্পষ্ট বাণীসমূহ। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যে কেউ এ মাস পাবে, সে যেন অবশ্যই সেটার রোযা পালন করে। আর যে ব্যক্তি রুগ্ন হয় কিংবা সফরে থাকে, তবে ততো সংখ্যক রোজা অন্যান্য দিনসমূহে (আদায় করবে)। আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদের উপর সহজ চান এবং তোমাদের উপর ক্লেশ চান না; আর এ জন্য যে, তোমরা সংখ্যা পূরণ করবে এবং আল্লাহর মহিমা বর্ণনা করবে এর উপর যে, তিনি তোমাদেরকে হিদায়ত করেছেন আর যাতে তোমরা কৃতজ্ঞ হও। [সূরা বাক্বারা, আয়াত-১৮৫]

রমযান শব্দের ব্যাখ্যা
মুহাককেকীন ওলামায়ে কেরাম বলেন- رَمَضَانٌ শব্দটি رَمْضٌ শব্দ হতে নির্গত। رمض অর্থ জ্বালিয়ে দেয়া। ভস্মিভূত করা, সিয়াম সাধনার মাধ্যমে মানুষের দেহ ও অন্তর থেকে গুনাহ্সমূহকে জ্বালিয়ে ভষ্মিভূত করে মানুষকে পবিত্র করে। তাই এ মাসের নাম রাখা হয়েছে رمضان (রমযান)
গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন-
رَمَضَانُ خَمْسَةُ اَحْرُفٍ اَلرَّاءُ رِضْوَانُ اللهِ وَالْمِيْمُ مُحَابَاةُ اللهِ اَلضَّادُ ضِمَانُ اللهِ وَالْاِلِفُ اُلْفَةُ اللهِ وَالنُّوْنُ نُوْرُ اللهِ
অর্থাৎ গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন- রমযান শব্দটি পাঁচটি হরফে লিখা হয়। (ر) ‘রা’ হরফ দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলার সন্তুষ্টি বুঝানো হয়েছে। (ميم) দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলার মুহাব্বত বা ভালবাসা। (ض) দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলার জামিন বুঝানো হয়েছে। (الف) দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলার উলফত বা আকর্ষণ। (ن) দ্বারা আল্লাহ্ তা‘আলার আলো বুঝানো হয়েছে।
হযরত শাহ্ ওয়ালী উল্লাহ্ মুহাদ্দেস দেহলভী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন, ‘রোযা শ্রেষ্ঠ পুণ্যের কাজ। কেননা রোযা ফেরেশতা শক্তিকে প্রবল ও পশু শক্তিকে দুর্বল করে দেয়। আত্মার পরিচ্ছন্নতা এবং প্রবৃত্তিকে দমন করে রাখার জন্য রোযার ন্যায় উপকারী এমন অস্ত্র তার কিছুই নেই। [হুজ্জাতুল্লাহিল বালেগা] কোন কোন ওলামায়ে কেরাম বলেন رَمْضَانٌ আল্লাহর নামসমূহের মধ্যে একটি নাম। অতএব شهر رمضان অর্থ আল্লাহর মাস। হযরত জাফর সাদেক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু তাঁর পূর্ব পুরুষের সূত্রে বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন ‘রমযান’ আল্লাহর মাস। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হলেন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন তোমরা শুদু রমযান বলো না বরং সম্মানের সাথে বলো। কেননা আল্লাহর পবিত্র কুরআনে বলেছেন মাহে রমযান। [গুনিয়াতুত্ তালেবীন, পৃ. ৩৫১] হযরাত ওলামায়ে কেরাম এরূপও বলেছেন যে, رمض বর্ষাকালের বৃষ্টি বর্ষাকালের বৃষ্টি যেমনি সমস্ত ময়লা আবর্জনা পরিস্কার করে পবিত্র করে ফেলে তেমনি মাহে রমযান মানুষের শরীরের সমস্ত পাপ ধুয়ে পরিস্কার করে অন্তরসমূহকে পবিত্র করে দেয়। [গুনিয়াতুত্ তালেবীন, পৃ. ৩৫২]

রাসূলে পাকের হাদীস শরীফের আলোকে রমজানের ফযিলত
عن عبد الله بن عمرو رضى الله عنهما انّ رسول الله صلى الله عليه وسلم قال الصيام والقران يشفعان للعبد يقول الصيام اى رب انى منعته الطعام والشهوات بالنهار فشفّعنى فيه ويقول القران منعته النوم بالليل فشفعنى فيه فيشفعان
অর্থাৎ হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূল-ই পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, রমজান ও কোরআন (কিয়ামতে দিবসে) রোযাদারের জন্য (আল্লাহর দরবারে) সুপারিশ করবে। রোযা আবেদন করবে, হে রাব্বুল আলামীন! আমি আপনার এ বান্দাকে দিনের বেলায় পানাহার ও মনের বাসনা বাসনার বস্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত রেখেছি। তাই আজ আমার সুপারিশ তার পক্ষে কবুল করুন। আর ক্বোরআন বলবে আমি তাকে রাতের বেলায় নিদ্রা থেকে বিরত রেখেচি। অতএব আমার সুপারিশ তার পক্ষ কবুল করুন। অতঃপর রোযা ও কোরআন উভয়ের সুপারিশ রোযাদারের পক্ষে কবুল করা হবে। [বায়হাক্বী শুআবুল ঈমান] عن ابى هريرة رضى الله تعالى عنه قال قال رسول الله صلى الله تعالى عليه وسلم كل عمل ابن ادم يضاعف الحسنة بعشر امثالها الى سبع مائه ضعف قال الله تعالى الاالصوم فانه لى وانا اجزى به يدع شهوته وطحامه من اجلى للصائم درجنان فرحة عند فطره وفرحة عند لقاء ربه
অর্থাৎ হযরত আবু হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আদম সন্তানের সকল নেক আমলের সওয়াব বর্ধিত করা হয়। একটি নেক আমলের সাওয়াব দশগুণ থেকে সাতশত গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি করে প্রদান করা হয়। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন; কিন্তু রোযার বিষয় ব্যতিক্রম। কেননা রোযা আমারই জন্য। আর আমি নিজেই এর প্রতিদান দেবো। রোযাদার আমার উদ্দেশ্যে তার মনের কামনা বাসনার বস্তু ও পানাহার বর্জন করে। রোযাদারের জন্য দু’ প্রকারের বিশেষ আনন্দ রয়েছে। এক প্রকারের আনন্দ ইফতারের সময় আর দ্বিতীয় প্রকারের আনন্দ মহান আল্লাহ পাকের দিদার লাভের সময়ে। [সহীহ্ বোখারী ও মুসলিম শরীফ] রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- ইফতারের সময় রোযাদারের জন্য একটি মাকবুল দোআ রয়েছে। [আবু দাঊদ শরীফ] হযরত আবু সায়িদ খুদরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষে স্বেচ্ছায় একটি মাত্র রোযা পালন করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তাকে জাহান্নামের আগুন থেকে সত্তর বছরের দুরত্বের ব্যবধানে সরিয়ে রাখবেন।
[সহীহ্ বোখারী ও মুসলিম শরীফ] হযরত আবু উমামা বাহেলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একটি মাত্র রোযা পালন করবে আল্লাহ্ রব্বুল আলামীন তার এবং জাহান্নামের মধ্যে আসমান-জমীনের মধ্যবর্তী ব্যবধানের ন্যায় একটি গর্ত সৃষ্টি করে দেবেন। (যাতে রোযাদার জাহান্নামের তাপ ও গন্ধ না পায়) [তিরমিযী শরীফ] হযরত সালমান ফারেসী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মাহে শাবানের শেষ দিবসে আমাদের সামনে খুতবা প্রদানকালে এরশাদ করলেন হে মানবজাতি! তোমাদের উপর একটি শানদার মাস বরকতময় মাস ছায়া বিস্তার করেছে। যে মাসে সহ¯্র মাসের চেয়েও অধিক উত্তম একটি রজনী রয়েছে (অর্থাৎ শবে কদর)। এ মাসে রোযা পালনকে আল্লাহ্ পাক ফরজ এবং রাতে ইবাদত করাকে নফলরূপে সাব্যস্ত করেছেন। যে ব্যক্তি এ পবিত্র মাসে একটি নফল আদায় করে নৈকট্য অর্জনে তৎপর হবে সে অন্যান্য মাসে ফরয আদায়কারীর ন্যায়-প্রতিদান পাবে। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করবে সে অন্য মাসের ৭০টি ফরজ আদায়কারীর সমান সওয়াব পাবে। এটা ধৈর্য ও সংযমের মাস আর সবরের প্রতিদান হলো জান্নাত। এটা পরস্পর সহমর্মিতার মাস। এটা মু’মিনের রিয্ক্ব বৃদ্ধি পাবার মাস। [বায়হাকী শরীফ] হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি পবিত্র মক্কা শরীফে রমযান শরীফ পাবে এবং দিনের বেলায় রোযা পালন করবে ও রাতের বেলায় যতটুকু সম্ভব নফল ইবাদত করবে আল্লাহ্ তা‘আলা তার আমলনামায় অন্য স্থানের এক লক্ষ রমযানের সওয়াব লিপিবদ্ধ করে দেবেন এবং প্রতিদিন একটি গোলাম আযাদ করার এবং প্রতিদিন জেহাদের জন্য ঘোড়ায় সওয়ার হওয়ার সওয়াব লিপিবদ্ধ করে দেবেন এবং প্রতি দিবা রজনী তার আমলনামায় সওয়াব লিপিবদ্ধ করা হবে। [ইবনে মাজাহ্ শরীফ] হযরত সালমান ফারসী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, হাদীসের অংশে রয়েছে এ মাসের প্রথম দশ দিন রহমত, মধ্যের দশ দিন মাগফিরাত এবং শেষ দশদিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি পাওয়ার মাস আর যে ব্যক্তি তার অধিনস্থ কর্মচারীর উপর রমযানে কাজ কর্ম সহজ কিংবা হ্রাস করে দেবে আল্লাহ্ তাকে ক্ষমা করে দেবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিবেন। [বায়হাকী শরীফ] ইমাম নখঈ রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, এ মাসের একদিনের রোযা হাজার দিনের রোযার চেয়ে উত্তম। এ মাসের এক তাসবীহ্ হাজার তাসবীর চেয়ে উত্তম এবং এ মাসের এক রাক‘আত নামাজ হাজার রাক‘আত নামাজ থেকে উত্তম। [ইবনে রজব হাম্বলী] গাউসে পাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন, আবু নছর তার পিতার সূত্রে হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর বরাত দিয়ে আমার নিকট হাদিস বর্ণনা করেন যে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, রমজানের রাত যখন আসে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় সৃষ্টির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন, আর যখন কোন বান্দার প্রতি আল্লাহর রহমতের নজর করেন, তবে তাকে কোন আযাব দেন না। মহান আল্লাহর হুকুমে সহ¯্র ব্যক্তি দোযখ থেকে মুক্তি লাভ করবে। [গুনিয়াতুত্ তালেবীন]

ঘটনা
মাহে রমজানের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের কারণে একজন অগ্নিপূজারীর ঈমান নসীব হয়ে জান্নাতে যাওয়ার ঘটনা নুযহাতুল মাজালিস গ্রন্থের ১৩৬ পৃষ্ঠায় বর্ণিত হয়েছে। ঘটনা নি¤œরূপঃ
বুখারা শহরে একজন অগ্নিপূজারী বসবাস করত। একদিন অগ্নিপূজারী ব্যক্তি তার ছেলেকে নিয়ে রমজান মাসে মুসলমানদের বাজারে গেলেন। এ সময় তার ছেলে কোন খাবার বস্তু খাচ্ছিল। অগ্নিপূজারী এটি দেখে তার ছেলের গালে এক তাপ্পর মের অসন্তুষ্ট হয়ে বলল, মাহে রমজানে মুসলমানদের বাজারে খাবার খেতে লজ্জাবোধ করা উচিত। ছেলে উত্তর দিল আব্বাজান! আপনিও তো রমজান মাসে খাবার গ্রহণ করেন। উত্তরে পিতা বলল, আমি খেয়ে থাকি ঠিক; কিন্তু ঘরে, মানুষের সামনে খাইনা এবং এ মাসের সম্মান ও পবিত্রতা নষ্ট করিনা। পরবর্তীতে ঐ ব্যক্তি যখন মারা গেল কোন এক বুযুর্গ ব্যক্তি স্বপ্নে ঐ ব্যক্তিকে জান্নাতে দেখতে পেলেন। তিনি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলেন তুমি তো অগ্নিপূজারী ছিলে জান্নাতে কিভাবে এসেছ? উত্তরে সে বলল, বাস্তবিকই আমি অগ্নিপূজারী ছিলাম। কিন্তু যখন আমার মৃত্যু সন্নিকট হল তখন রমজান শরীফকে সম্মান করার কারণে মহান আল্লাহ তা‘আলা আমাকে ঈমানী দৌলত নসীব করেন এবং আজকে এ জান্নাত রমজান শরীফের সম্মানের ফলশ্রুতিতে পেয়েছি।
অতএব, এ কথা স্পষ্ট যে, একজন অগ্নিপূজারী যদি মাহে রমজানের ইজ্জত ও সম্মান করার কারণে জান্নাত পায় তবে আমরা মুসলমান হয়ে মাহে রমজানকে সম্মান করলে নিশ্চয় আমরা জান্নাতের অধিকারী হতে পারবো, সে আশা পোষণ করি।

শবে ক্বদর
شب (শব) শব্দটি ফার্সী, এর অর্থ রাত। قدر (ক্বদর) শব্দটি আরবী। এর অর্থ মহিমান্বিত, সম্মান-মর্যাদা। শবে ক্বদর অর্থ-‘মহিমান্বিত রাত’। আরবী ভাষায় বলা হয়- ليلة القدر। যেমন বলা হয়-ليلة العظمة والشرف من قول الناس لفلان عند الامير قدرٍ اى جاءٍ وقدر منزلة قال علامة الازهرى অর্থাৎ মর্যাদাবান ও মহত্বের রাত যেমন বলা হয়ে থাকে আমিরের কাছে অমুক ব্যক্তির কদর আছে অর্থ সম্মান মর্যাদা ও প্রতিপত্তি রয়েছে।
[আল্লামা আযহারী, তাফসীরে কাশফুল আসরার, ১ম খন্ড-, ৫৫৮পৃ.] شب قدر است اودريات اورا امان يابى چوبرخوانى بداتش
অর্থ: সে তো মর্যাদার রাত খুজে নাও তাকে যার মাঝে পাবে তুমি জাহান্নাম থেকে মুক্তি। [মাওলানা রূমী, মসনবী শরীফ] اگر همه شبها قدر بودى قدر بى قدر بودى
অর্থ: সকল রাত যদি শবে কদর হতো তাহলে থাকতো না শবে কদরের মর্যাদা। [হযরত শেখ শাদী]

‏ক্বোরআন মজীদে লায়লাতুল ক্বদর
﴿১﴾ اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنٰهُ فِىۡ لَيۡلَةِ الۡقَدۡرِ   ۖ وَمَاۤ اَدۡرٰٮكَ مَا لَيۡلَةُ الۡقَدۡرِؕ‏ ﴿২﴾ لَيۡلَةُ الۡقَدۡرِخَيۡرٌ مِّنۡ اَلۡفِ شَهۡرٍؕ‏ ﴿৩﴾ تَنَزَّلُ الۡمَلٰٓٮِٕكَةُ وَالرُّوۡحُ فِيۡهَا بِاِذۡنِ رَبِّهِمۡ‌ۚ مِّنۡ كُلِّ اَمۡرٍ ﴿৪﴾ سَلٰمٌ هِىَ حَتّٰى مَطۡلَعِ الۡفَجۡرِ‏ ﴿৫﴾
অর্থ: আমি (আল্লাহ্) এটি (ক্বোরআন মজীদ) অবতীর্ণ করেছি শবে ক্বদরে। শবে ক্বদরের মর্যাদা সম্পর্কে আপনি জানেন? শবে ক্বদর এক হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এতে প্রত্যেক কাজের জন্য ফেরেশতাগণ বিশেষত: জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালাম দুনিয়াতে আসেন তাদের প্রভুর আদেশক্রমে। এ শান্তি বা নিরাপত্তা ফজর উদয় হওয়া পর্যন্ত অব্যাহত থাকে।

শানে নুযূল
হযরাত মুফাস্সিরীনে কেরাম বলেন, একদা রাসূলে আরবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বনী ইসরাঈলের জনৈক আবেদ মুজাহিদ সম্পর্কে সাহাবায়ে কেরামের সামনে আলোচনা করেন। কারো মতে ঔ ব্যক্তির নাম ছিল শামউন। সে এক হাজার মাস পর্যন্ত দিনে অবিরাম জিহাদ ও রাতে ইবাদতে লিপ্ত ছিলেন। মুসলমানগণ একথা শুনে বিস্মি হলো।
মুসলমানগণ অল্পবয়সের কাণে কম ইবাদতের জন্য চিন্তিত হলো। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা এ সূরাটি অবতীর্ণ করে রাসূলে পাকের ওসীলায় সুসংবাদ প্রদান করেন। এক রাতের ইবাদত হাজার মাসের ইবাদত অপেক্ষা উত্তম।
আল্লামা আবদুল আজিজ মুহাদ্দেস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন, একদিন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নিজের উম্মত ও অন্যান্য নবীদের বয়সের তুলনা করেন। অন্যান্য নবীদের উম্মতের বয়স বেশী ও ইবাদত বেশী। এতে মুসলমানগণ হতাশ হলেন এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর চেহারা মুবারক মলিন হলেন। তখন আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় হাবিবের সন্তুষ্টির জন্য এ সূরা নাযিল করে সুসংবাদ দিলেন। [তাফসীরে আজিজী, পৃ.-২৪৭]

লায়লাতুল কদর ২৭ রমযানে নিহিত
হাদীস শরীফে লায়লাতুল ক্বদর যদিও পবিত্র রমযান মাসের শেষ দশ দিনের যে কোন বেজোড় রাতে নিহিত রয়েছে তবুও ওলামায়ে কেরাম ও বুযুর্গানে দ্বীনগণ বলেছেন, সূরা কদরে ليلة القدر শব্দটিতে নয়টি হরফ আছে। এ শব্দটি তিনবার ব্যবহার হয়েছে। নয়কে তিন দিয়ে গুণ করলে (৯ী৩=২৭) সাতাশ হয়।
অথবা উক্ত সুরায় ত্রিশটি শব্দ আছে। তৎমধ্যে هى শব্দটি হল সাতাশ নম্বর শব্দ। আর هى দ্বারা লায়লাতুল কদর উদ্দেশ্য। অতএব লায়লাতুল কদর সাতাশ তারিখ রাতে নিহিত রয়েছে। আর এটাকে গোপন রাখার উদ্দেশ্য হল লোকেরা কেবলমাত্র ঐ রাতের ইবাদতের উপর ভরসা করে অন্যান্য দিবা রাতের ইবাদত পরিত্যাগ করবে।
বিশুদ্ধ রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে যে, হযরত ওসমান ইবনে আস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর গোলাম একদিন তার কাছে আরয করল যে, হে মুনিব! আমি দীর্ঘদিন যাবৎ নৌকা চালিয়েছি। মাঝে মধ্যে নদীর পানিতে এক বিস্ময়কর ঘটনা আমি অনুভব করেছি যা আমি বুঝতে পারিনা। তিনি জিজ্ঞেস করলেন তা কি? উত্তরে সে বলল প্রতি বছর এমন এক রাত আসে যে রাতে নদীর পানি মিষ্টি হয়ে যায়। তিনি গোলামকে বললেন এবার খেয়াল রাখবেন যেদিন নদীর পানি মিষ্টি হয় তারিখসহ বলবেন। যখন রমজান মাসের ২৭ তারিখ আসল তখন গোলাম তাকে বলল হে মুনিব! আজ রাতে নদীর পানি মিষ্টি হয়ে গেছে।
[তাফসীরে আজিজী, পৃ.-২৫৭]

লায়লাতুল ক্বদরের ফযিলত
লায়লাতুল ক্বদর সম্পর্কে আল্লামা বদরুদ্দিন আইনি বুখারী শরীফের শরাহ্ উমদাতুল কারীতে লিপিবদ্ধ করেছেন- تَقْدِيْرُ الْاُمُوْرِ وَقَضَائِهَا وَالْحكم وَالْفضل ومعنى ليلة القدر ليلة يقضى الله فيها قضاء السنّة অর্থাৎ লায়লাতুল কদর বলতে এমন রাতকে বুঝায় যাতে যাবতীয় বিষয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। এর চূড়ান্ত রূপদান করা হয় এবং একটি বছরের জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা এ রাতে সব বিধান ও মর্যাদার ফয়সালা করেছেন। [আইনী শহরে বুখারী] ইমাম যুহরী রহমাতুল্লাহি আলায়হি বর্ণনা করেন, এ রাতকে শবে কদর এ জন্য বলা হয় যে, এ রাত অত্যন্ত মূল্যবান, অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং উচ্চ মর্যাদাবান সম্পন্ন।
শেখ আবু বকর ওয়াররাক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, এ মহান রাতে ইবাদতের কারণে এমন লোকের মর্যাদা ও সম্মান বৃদ্ধি পায় ইতিপূর্বে যাদের কোন মর্যাদা মরতবা কদর ছিল না তাই এ রাতকে শবে কদর বলা হয়। [ফাজায়েলে মাহে রমজান, মুফতী আমীমুল ইহসান (রহ.) পৃ.-২৬] শবে কদর মূলত উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর ওসীলায় মহান আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে মহান দান ও অনুগ্রহ, রহমত স্বরূপ। যেমন রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- اِنَّ اللهَ اهب لِاُمَّتِىْ لَيْلَةَ الْقَدْرِ وَلَمْ يُعْطِيْهَا مَنْ كَانَ قَبْلَهُمْ অর্থ: আল্লাহ্ তা‘আলা আমার উম্মতকেই শবে কদর দান করেছেন। এর পূর্বে কোন উম্মতকে তা দেয়া হয়নি। [দুররে মানসুর, খন্ড-৮, পৃ. ৫৮০] শবে কদর রাতের যে কোন আমল এক হাজার মাসের তথা ৮৩ হাজার ৪ মাসের চেয়ে উত্তম। যেমন আল্লামা ইবনে জারীর তাবারী (রহ.) বর্ণনা করেছেন- عَمَلٌ فِيْهَا خَيْرٌ مِنْ عَمَلٍ فِى اَلْفِ شَهْرٍ এ রাতের যে কোন আমল হাজার মাসের আমলের চেয়ে উত্তম। [নুযহাতুল মাজালিস, পৃ.-১৬৬] হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যে ব্যক্তি কদর রাতে ঈমান ও ইখলাসের সাথে কিয়াম করবে তার পূর্ববর্তী যাবতীয় গুনাহ্ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। [বুখারী ও মুসলিম] হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলতেন, নিশ্চয়ই রমযান মাস তোমাদের নিকট উপস্থিত হয়েছে। এতে এমন বরকতমন্ডিত রাত নিহিত আছে যা হাজার মাস থেকে উত্তম। যে একে সম্মান করবে সে যেন পুরো কল্যাণ থেকেই বঞ্চিত হল। [ইবনে মাজাহ্] লায়লাতুল কদর রমজানের শেষ দশ রাতের বেজোড় রাতে অনুসন্ধান করার জন্য হাদীস শরীফে তাগিদ দিয়েছেন। রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, তোমরা রমজানের শেষ দশকের বেজোড় রাতে লায়লাতুল কদরকে সন্ধান কর। [বুখারী শরীফ]

ফেরেশতাদের ঈদ
এ রাতে হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালামসহ অন্যান্য অগণিত ফেরেশতাদের নিয়ে পৃথিবীতে আল্লাহর রহমত নিয়ে অবতরণ করেন। মানবজাতি বছরে দু’ দিন তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল্ আযহার দিন ঈদ তথা খুশী উদযাপন করে পক্ষান্তরে ফেরেশতারা ঈদ উদযাপন করে দু’ রাতে তথা শবে বরাত ও কদরের রাতে। এ রাত ফেরেশতাদের ঈদের রাত। তারা সারা রাত আল্লাহর রহমত ও সালামত নিয়ে সূর্যাস্ত হতে ফজর উদিত হওয়া পর্যন্ত রহমত বিতরণ করতে থাকেন।
ইমাম ফখরুদ্দিন রাযী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি লিখেছেন, যখন আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম’র সৃষ্টি সম্পন্ন করেছেন তখন ফেরেশতাগণ আল্লাহর দরবারে আরয করল, হে আল্লাহ্ তা‘আলা! আপনি আদমকে কেন সৃষ্টি করলেন? পৃথিবীতে গিয়ে তাঁর সন্তানরা ঝগড়া-ফ্যাসাদ, যুদ্ধ বিগ্রহ ও রক্তপাত করবে এবং নিজের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য অন্যের রক্ত দ্বারা নিজের হাত রক্তে রঞ্জিত করবে। আপনার ইবাদতের জন্য আমরা কি যথেষ্ট নই? তখন আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন- اِنِّىْ اَعْلَمُ مَالاَ تَعْلَمُوْنَ তথা আমি (আল্লাহ্) যা জানি তোমরা তা জান না।
শবে কদরে ফেরেশতাদেরকে পৃথিবীতে প্রেরণ করে বান্দার আমল ও ইবাদত দেখাখায়ে চাক্ষুষ জবাব দেবেন। আল্লাহ বলবেন, হে ফেরেশতা! তোমরা বলেছিলে তারা পৃথিবীতে গিয়ে রক্তপাত ঘটাবে; কিন্তু আজকে দেখ তারা আমার ইবাদতে মশগুল। তখন ফেরেশতারা আল্লাহর দরবারে ক্ষমা চাইবে।
এ পবিত্র রজনীতে আল্লাহ্ তা‘আলা জিব্রাঈল, মিকাঈল ও ইসরাফিল আলায়হিমুস্ সালামকে বেহেশত থেকে চারটি পতাকা নিয়ে প্রতিজনের সাথে সত্তর হাজার ফেরেশতাসহ দুনিয়াতে আগমনের নির্দেশ দেন।
لواء الحمد ـ لواء المغفرة ـ لواء الكرامة ـ لواء الرحمة
অর্থাৎ ১. হামদের পতাকা তথা প্রশংসার পতাকা, ২. মাগফিরাতের পতাকা তথা ক্ষমার পতাকা, ৩. কারামাত বা মর্যাদার পতাকা এবং ৪. রহমতা বা দয়ার পতাকা।
মাগফিরাতের পতাকা রাসূলে পাকের রওজা পাকের উপর, হামদের পতাকা আকাশ জমিনের মধ্যখানে, রহমতের পতাকা বায়তুল্লাহ্ শরীফে, কারামত বা মর্যাদার পতাকা বায়তুল মুক্বাদ্দাসের উপর স্থাপন করা হয়।
এ রাতে প্রত্যেক মু’মিনকে ফেরেশতাগণ সালাম জানিয়ে থাকেন। তাই মাগফিরাত পেতে হলে বেশী বেশী তওবা ও দরূদ শরীফ পড়তে হবে। [নুযহাতুল মাজালিশ, পৃ. ১৬৭] নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম অন্যত্র এরশাদ করেন, তোমরা যদি তোমাদের কবরসমূহকে আলোকিত পেতে চাও, তবে শবে কদরে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত কর।
এ রাতে একজন মু’মিন কি দো‘আ পড়বে এ প্রসঙ্গে হযরত আয়শা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেন- قلت يارسول الله صلى الله عليه وسلم ان وافقت ليلة القدر فما اقول؟ আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! যদি মবে কদর পেয়ে থাকি কি পড়ব? রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন- اَللهُمَّ اِنَّكَ عَفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّىْ (আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুউবুন তুহিব্বুল আফওয়া ফাফু আন্নী) অর্থাৎ হে আল্লা! আপনিতো ক্ষমাকারী, ক্ষমা পছন্দ করেন, আমাকেও ক্ষমা করুন।
[তিরমিযী শরীফ, মসনদে আহমদ] এ পবিত্র রাতে আল্লাহর রহমত ও মাগফিরাত থেকে যারা বঞ্চিত থাকবে তারা হলেন নি¤œরূপঃ ১. মদখোর, মাদাকদ্রব্য ব্যবসায়ী, ২. মাতাপিতার অবাধ্য সন্তান-সন্তুতি, ৩. আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী, ৪. জেনাকারী, সুধখোর এবং ৫. বিনা কারণে অপর মুসলমান ভাইয়ের সাথে সম্পর্ক ছিন্নকারী। [তাফসীরে কাশফুল আসরার, ১ম খন্ড, পৃ. ৫৬৩]

শবে কদরের নফল নামায
প্রথম দুই রাক‘আত করে ১২ রাকআত নামায আদায় করা উত্তম। প্রথম চার রাক্আতে প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতেহার পর একবার সূরা কদর ও তিনবার সূরা ইখলাস প্রতি সালাম ফিরিয়ে একশত বার দরুদ শরীফ পাঠ করা, দ্বিতীয় চার রাকআতে প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতেহা ও সূরা কদরের পর সূরা এখলাস দশ বার পড়তে হবে। এরপর সালাম ফিরিয়ে একশতবার দরূদ শরীফ পড়তে হবে। তৃতীয় চার রাক্আতে একই নিয়মে সূরা এখলাস ২৫ বার পড়তে হবে। এরপর একশত বার দরূদ শরীফ পড়ে মোনাজাত করবে।

শবে কদরের নামাযের নিয়ত
نَوَيْتُ اَنْ اُصَلِّىَ لِلهِ تَعَالى رَكْعَتَىْ صَلَوةِ لَيْلَةِ الْقَدْرِ نَفْلِ مُتَوَجِّهًا اِلَى جِهْةِ الْكَبَةِ الشَّرِيْفَةِ اَللهُ اَكْبَرُ
হযরত ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলেন, পবিত্র কদরের রাতে জাগ্রত থেকে নফল নামায পড়া, কুরআন শরীফ তিলাওয়াত করা এবং দরূদ শরীফ পাঠ করা উত্তম।
হে পরম করুণাময়! পবিত্র মাহে রমজানে আমাদেরকে মহান আল্লাহ আপনার ও রসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, আওলাদে রসূলের মহব্বত নিয়ে আমল করার তওফিক দিন। আমিন।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •