আরব দেশে তাঁর সফরের কারণে-
মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার >
মক্কা শরিফ, মদিনা শরিফ, বাগদাদ শরিফ বিভিন্ন সময়ে সফর করেছিলেন সিরিকোটি হুজুর। এ সব সফরের সময় তাঁর হাতে স্থানীয় এবং ভিন্ন দেশ হতে সফরকারী বহু লোক বায়াত গ্রহণ করে দ্বীনের খেদমতে আত্মনিয়োগ করেছিলেন। এদের মধ্যে, ১৯৪৫ খ্রিষ্টাব্দের হজ্বের সময়ের একটি ঘটনা প্রনিধানযোগ্য। আর, ঘটনাটি হল, এই বছর সিরিকোটি হুজুর মদিনা শরিফে অবস্থানকালে সে সময়ে মদিনা পাকের রওজা শরিফের খাদেম সৈয়্যদ মনজুর আহমদের মত একজন অতিব সন্মানিত আধ্যাত্মিক ব্যক্তিত্ব সিরিকোটি হুজুরের কাছে এসে, তাঁকে বায়াত করিয়ে নেবার আবেদন জানান। হুজুর কেবলা বলেন, ‘‘বর্তমান দুনিয়ায় আপনার চেয়ে এমন সম্মানিত হাস্তি আর কে হতে পারেন, যিনি খোদ রওজায়ে আক্বদাস শরিফের খেদমতে আছেন? সুতরাং আপনি কেন আমি অধমের হাতে বায়াত হবেন?’’। তখনি উক্ত সন্মানিত খাদেম সাহেব জানালেন যে, তিনি নিজের ইচ্ছায় নয়, বরং স্বয়ং রাসুলাল্লাহ্ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশ পেয়েই হযরত সিরিকোটি হুজুরের হাতে বায়াত গ্রহনের জন্য আসতে বাধ্য হয়েছেন। আর, সিরিকোটি হুজুরও তাঁকে শেষতক বায়াত করিয়ে নিজের মুরিদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে নেন। সে থেকে উক্ত মহামান্য খাদেম সাহেব হুজুরের অনুসরণে চলতেন, এবং দ্বীনের সেবায় যোগ দেন। এ বছর, ১৯৪৫ সনের হজ্জের সময়েই ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধি লর্ড ওয়াবেল ব্রিটেনের পথে জেদ্দা বিমান বন্দরে যাত্রা বিরতি করেছিলেন। এ সময়ে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের এক উত্তরে তিনি বলেছিলেন যে,আন্দোলনরত ভারতীয় মুসলমানদের পাকিস্তান দাবি কখনো বাস্তবায়িত হবেনা। আর, এ খবর পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হবার পর সমগ্র বিশ্বের মুসলমানরা হতাশাগ্রস্থ হয় এবং ভারতীয় মুসলমানরা একদম ভেঙ্গে পড়েন। তাঁরা রওজা মোবারকে এ জন্য আরজি পেশ করবার জন্য হজ্বব্রত পালনরতদের মাধ্যমে উক্ত মহামান্য খাদেম হযরত সৈয়্যদ মনজুর আহমদ সাহেবের স্মরণাপন্ন হলেন। কিন্তু খাদেমজি নিজে সরাসরি রওজা পাকে ফরিয়াদ না করে চলে আসেন সিরিকোটি হুজুরের কাছে, এবং বিষয়টি হুজুরের কাছে পেশ করে বলেন, হুজুর আপনি আমার পীর -মুর্শিদ, সুতরাং এখন আপনি এখানে অবস্থানকালে আমি সরাসরি এ ফরিয়াদ করতে পারিনা, তাই মেহেরবানি করে আপনি আসুন, এবং ভারতীয় মুসলমানদের স্বাধীনতার ফরিয়াদটি আপনি নিজেই দয়াল নবী পাক (সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের) কদম পাকে পেশ করুন। হুজুর, খাদেম সাহেবের কাছে ওয়াবেলের কথা শুনে খুব ক্ষেপে যান এবং ‘‘এটা অসম্ভব’’ বলে মন্তব্য করেন। সাথে সাথে খাদেমকে সাথে নিয়ে রওজা শরিফের ভিতরের বিশেষ জায়গায় প্রবেশ করলেন, আর বের হয়ে, অত্যন্ত জালালি হালতে বললেন, ‘‘ওয়াবেলকা বাত ঝুটা হ্যায়, (মুসলমানুকা) পাকিস্তান করিব আ যায়েগা’’। আলহামদুলিল্লাহ্, এর দুই বছর পরই, ১৯৪৭ সনের ১৪ আগস্ট, পাকিস্তানের জন্ম হল, এবং ভারত থেকে স্বাধীনতার প্রথম স্বাদ পেল মুসলমানরা। এই প্রসঙ্গে, সিরিকোটি (রাহ.) ১৯৫২ সনের ২৪ ফেব্রুয়ারি, চট্টগ্রামের ঐতিহাসিক লালদীঘি ময়দানে অনুষ্ঠিত ‘‘জমিয়তে ওলামায়ে পাকিস্তান’’র এক জনসভায় সভাপতির ভাষণে বলেছিলেন যে, তাঁর মহান পীর খাজা চৌহরভী (রাহ.) তাঁকে ২৭ বছর আগে (১৯২০ খ্রি.) বলে দিয়েছিলেন, ‘‘ইংরেজ চলা যায়েঙ্গে, আউর মুসলমানুকা কাম দাড়িমুন্ডা সে সাম্বালেঙ্গে’’। [খোতবায়ে ছদারাত, প্রকাশনায়, করাচি, পাকিস্তান]
যা, সাতাশ বছর পর, ১৯৪৭ সনে বাস্তবায়িত হয় পাকিস্তানের জন্ম দাড়ি বিহীন নেতা ড. ইকবাল, জিন্নাহ্, লিয়াকত আলি খা, শেরে বাংলা ফজলুল হক, সোহরাওয়ার্দী’দের নেতৃত্বে আলোর মুখ দেখার মধ্য দিয়ে। যা হোক, সিরিকোটি হুজুরের কোন সফরই দ্বীনের সেবার বাইরে ছিলনা। বাগদাদ শরিফ সহ আরো যে সব দেশে তাঁর ভ্রমন হয়েছে সেখানেও হয়ত পাওয়া যাবে তাঁর খেদমতের নিদর্শন, যা গবেষকদের মাধ্যমে ভবিষ্যতে বেরিয়ে আসবে ইনশাল্লাহ্।