রঙ্গিলা রেঙ্গুনের আঁধার তাড়াতে, সিরিকোটি এলেন মশাল হাতে-
মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার >
বার্মার রঙ্গিলা শহর রেঙ্গুনে হুজুরের আগমন ১৯২০ খ্রি.। তখন তাঁর বয়স ছিল কমপক্ষে তেষট্টি। পীরের নির্দেশ আর ইসলাম প্রচারের নেশা তাঁকে এই বয়সেও বিদেশ সফরে বাধ্য করল। এখানে তিনি ছিলেন ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দের ডিসেম্বর পর্যন্ত। মোট ২১-২২ বছরের নিরলস প্রচেষ্টায় তিনি তৎকালিন বার্মার হাজার হাজার অমুসলিমকে যেমন মুসলমান বানিয়েছেন, তেমনি অসংখ্য বিপদগামি মুসলমানদের বানান সাচ্চা আক্বিদার পরহেজগার বান্দা। [১৯৩৫ সালে রেঙ্গুনে অনুষ্ঠিত বিদায়ী সংবর্ধনার মানপত্র,রচনায়- তফজ্জল হক, সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট, আনজুমানে শুরা-ই রহমানিয়া রেঙ্গুন ১৬ অক্টোবর ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে]
অনেক ভাগ্যবান বান্দা তাঁর তা’লিম তারবিয়তের ফলে হয়েছিলেন ইনসানে কামেল অলি-আউলিয়া। জানা যায়, শুরুতে তিনি ক্যাম্পবেলপুরে মৌলানা সুলতানের মাদ্রাসায় এবং পরবর্তিতে রেঙ্গুনের বিখ্যাত বাঙ্গালি সুন্নি জামে মসজিদের খতিব ও ইমাম হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই বিখ্যাত মসজিদই ছিল তাঁর সুন্নিয়ত প্রচারকেন্দ্র- যা তাঁর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে ১৯৪১ এর ডিসেম্বর পর্যন্ত অব্যাহত ছিল। বিখ্যাত আ’লা হযরত গবেষক প্রফেসর ড: মাসউদ আহমদ, আনজুমানে শুরায়ে রহমানিয়ার ১৯৩৫ সনের রিপোর্টের তথ্যানুসারে জানান যে, পীরের নির্দেশকে অক্ষরে অক্ষরে পালন করতে গিয়ে হযরত সিরিকোটি (রাহ.) ১৯২০-৩৫ পর্যন্ত ১৬ বছর একাধারে রেঙ্গুনে থেকে যান, একটি বারের জন্যও স্বদেশে আপনজনদের কাছে যাননি। যদিও এই সময়ের মধ্যে ১৯২৪ সনের ৫ জুলাই তাঁর মহান পীর খাজা চৌহরভী (রাহ.) এবং ৩ শাবান ১৯২৮ তারিখ বুধবারে তাঁর বড় শাহজাদা মৌলানা সৈয়্যদ মুহম্মদ সালেহ্ শাহ্ ওফাত প্রাপ্ত হন (ইফতিতাহিয়্যা)। অবশ্য, এ সংক্রান্ত একটি কারামতের কথা জানা যায় হুজুর কেবলার প্রবীণ মুরীদদের কাছ থেকে, যা ড. মাওলানা সাইফুল ইসলামের একটি রচনায়ও স্থান পেয়েছে। সে অলৌকিক ঘটনানুসারে, হুজুর কেবলা সিরিকোটি, ঐদিন ৩ শা’বান, বুধবার আসরের নামাজের সময়ে, বা নামাজের পরে হঠাৎ করে নিজের হুজরার দরজা বন্ধ করে দীর্ঘক্ষণ বের হননি। তখন তিনি তাঁর অসুখ বলে বলেছিলেন। কিন্তু ঐ দিকে সিরিকোট শরীফে একই সময়ে অনুষ্ঠিত তাঁর বড় শাহজাদার নামাজে জানাজায় তাঁকে দেখা যায়, সুবহানআল্লাহ। [সূত্র, তরজুমান]
উল্লেখ্য, খাজা চৌহরভী তাঁকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, যেন ৩০ পারা দরুদ গ্রন্থ ছাপানোর কাজ এবং দারুল উলুম রহমানিয়ার কোন বিহীত না করে রেঙ্গুন না ছাড়েন। আর, এ জন্যই তিনি ১৬ বছর পরই স্বদেশে যান। আর, এরি মধ্যে তিনি ১৯৩৩ সনে এতবড় বিশাল ৩০ পারা কিতাব রেঙ্গুনে থেকেই প্রথম প্রকাশ সম্পন্ন করেন, এবং রহমানিয়া মাদ্রাসার দ্বিতল ভবন তৈরী করেন। এমনকি মাদ্রাসার ছাত্র-শিক্ষকদের আবাসনের এবং শিক্ষকদের নিয়মিত বেতনের ব্যবস্থাটাও তিনি রেঙ্গুন থেকে করেন, আর এমন বিরল খেদমতে সে সময়েও অংশগ্রহণের সুযোগটা হয়েছিল রেঙ্গুন প্রবাসী চট্টগ্রামের মুসলমানদের।