রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র অনন্য মর্যাদাঃ তিনি ‘কাওসার’- এর মালিক

0
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র অনন্য মর্যাদাঃ
তিনি ‘কাওসার’- এর মালিক –
মাওলানা আহমদুল্লাহ ফোরকান খান কাদেরী >
আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,إنا أعطيناك الكوثر -“হে মাহবূব! নিশ্চয় আমি আপনাকে কাওসার (অসংখ্য গুণ) দান করেছি। [সূরা কাওসার, আয়াত নং ১] ‘মুফাসসিরীনে কিরামের মতে ‘কাওসার’ শব্দটি ব্যাপক অর্থবোধক। তন্মধ্যে বিশ্ব বিখ্যাত তাফসীর গ্রন্থ ‘মাফাতিহুল গায়ব’ তথা তাফসীরে কাবীরে ইমাম ফখরুদ্দীন রাযী রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি ‘কাওসার’-এর পনেরটি মর্মার্থ বর্ণনা করেছেন। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় তাফসীরের মূল ইবারত উল্লেখ না করে শুধুমাত্র ভাবানুবাদটুকু সংক্ষিপ্তভাবে সম্মানিত পাঠকদের সমীপে উপস্থাপন করা হলো।
এক. ‘কাওসার’ হচ্ছে জান্নাতের একটি নদী। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, رأيت نهرا فى الجنة حافتاه قباب اللؤلؤ المجوف فضربت بيدي إلى مجرى الماء فإذا أنا بمسك أذفر. فقلت :ما هذا؟ قيل: الكوثر الذى أعطاك الله -‘আমি জান্নাতে একটি নদী দেখেছি। যার দু’ তীরে মুক্তার গম্বুজ রয়েছে। এর প্রবহমান পানিতে হাত দিয়ে দেখলাম,ওগুলো সুগন্ধময় মিশক। আমি বললাম, এটা কি? বলা হলো, ‘এ হলো ‘কাওসার’, যা আল্লাহ তাআলা আপনাকে দান করেছেন।’
অন্য বর্ণনায় এসেছে, أشد بياضا من اللبن و أحلى من العسل فيه طيور خضر لها أعناق كأعناق البخت. من أكل من ذالك الطير وشرب من ذلك الماء فاز بالرضوان-এর পানি দুধের চেয়ে সাদা, মধুর চেয়ে মিষ্টি। এতে এমন কিছু পাখি রয়েছে যেগুলোর ঘাড় খোরাসানী উটের ন্যায়। যে ঐ পাখির গোশত আহার করবে এবং পানি পান করবে সে আল্লাহর সন্তুষ্টি পেয়ে সফল হবে।
এ নদীর নাম ‘কাওসার’ রাখার কারণ হচ্ছে, এ নদীর পানি জান্নাতের অন্যান্য নদীর তুলনায় পরিমাণ ও কল্যাণের বিবেচনায় সর্বাধিক। অথবা এ নদী থেকেই অন্য নদীগুলোর উৎপত্তি। বর্ণিত আছে, জান্নাতে এমন কোন বাগান নেই যে বাগানে কাওসার থেকে একটি স্রোতধারা প্রবাহিত হয়নি অথবা এ পানি যারা পান করবে, তাদের সংখ্যা বেশী হবে কিংবা এ পানির উপকারিতা বেশী। যেমন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, إنه نهر وعدنيه ربى فيه خير كثير ‘এটা এমন এক নদী, যার প্রতিশ্রুতি আমার রব আমাকে দিয়েছেন। এতে রয়েছে অধিক কল্যাণ।
দুই. ‘কাওসার’ অর্থ জলাধার। কাওসার একটি জলাধার হবার সমর্থনে বর্ণনাগুলো সুপ্রসিদ্ধ। প্রথম ও দ্বিতীয় মতের মধ্যে সামঞ্জস্য বিধান এভাবে করা যেতে পারে যে, হয়তো জান্নাতী নহরের পানিগুলো এ জলাধারে এসে জমা হয়েছে অথবা এ জলাধার থেকে নহরসমূহ প্রবাহিত হয়েছে।
তিন. ‘কাওসার’ অর্থ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আওলাদ বা বংশধর। মুফাসসিরগণ বলেন, এ সূরা নাযিল হয়েছে কাফিরদের, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে নিঃসন্তান হওয়ার অপবাদ দেয়ার জবাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘হে মাহবূব! আমি আপনাকে এমন আওলাদ তথা বংশধর দান করেছি, যার ধারা কিয়ামত পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
লক্ষ্য করুন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আহলে বায়তের কত সদস্য শহীদ হয়েছেন, তবু আজও সমগ্র বিশ্বে আওলাদে রাসূলের বিচরণ। পক্ষান্তরে আস ইবনে ওয়াইল প্রমুখ কাফির (যারা নবী আক্রামকে নিঃসন্তান বলে অপবাদ দিয়েছিল তাদের কোন বংশধর নেই।
আরো লক্ষ্য করুন, আওলাদে পাকের মধ্যে অনেক আলিম, ওলী-বুযর্গ রয়েছেন, যেমন, ইমাম বাক্বির, ইমাম জাফর সাদিক্ব,ইমাম মূসা কাযেম ও ইমাম আলী রেযা (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) প্রমুখ।
চার. ‘কাওসার’ মানে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মতের আলিমগণ। নিঃসন্দেহে তারা অনেক বড় কল্যাণ। কেননা তাঁরা (কিছু কিছু ক্ষেত্রে) বনী ইসরাঈলের নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম)-এর ন্যায়। তাঁরা রাসূলুল্লাহর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। আলোচনা করতে খুবই পছন্দ করেন। তাঁর দ্বীনের প্রচার করেন। তাঁরা ইসলামী শরীয়তের নিদর্শন বা অলংকার।
পূর্ববর্তী নবীগণ (আলাইহিমুস সালাম)-এর সাথে এ উম্মতের ওলামায়ে কিরামের তুলনার কয়েকটি কারণ রয়েছে। যেমন-
১. কিয়ামতের দিন এমন কিছু সন্মানিত নবী আলায়হিস্ সালাম উপস্থিত হবেন, যাঁদের সাথে একজন বা দুজন উম্মত থাকবে। অপরদিকে রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) উম্মতের এমন অনেক আলিম রয়েছেন, যাঁদের একজনের অনুসারী কয়েক হাজার নবীর উম্মতের চাইতে বেশী হবে।
২. পূর্ববর্তী আম্বিয়ায়ে কিরাম আলায়হিমুস্ সালাম তাঁদের উম্মতকে আল্লাহ প্রদত্ত ওহী দ্বারা শরীয়ত প্রদান করেছেন আর এ উম্মতের আলিমগণ ইজতিহাদ (গবেষণা) ও ইস্তিম্বাত তথা কুরআন সুন্নাহ থেকে মাসআলার উদ্ভাবন করে দেন। যদি এ ইজতিহাদে আলিমগণের ত্রুটিও হয় তখনো তারা সাওয়াব পেয়ে থাকেন। পাঁচ. ‘কাওসার’ অর্থ -নুবুওয়াত। আল্লাহ তাআলার রাবূবিয়াতের পরেই এই সুমহান মর্যাদা। এজন্য আল্লাহ তাআলা বলেন, من يطع الرسول فقد أطاع الله – যে রসূলের নির্দেশ মান্য করেছে, নিঃসন্দেহে সে আল্লাহর নির্দেশ মান্য করেছে। [সূরা নিসা, ৮০] যাঁর আলোচনা ও সৃষ্টি সকল নবী আলায়হিমুস্ সালাম-এর পূর্বে কিন্তু প্রেরণ করা হয়েছে সকলের পরে। তিনি মানুষ ও জিন উভয় জাতির প্রতি প্রেরিত। সমস্ত নবী আলায়হিমুস্ সালাম-এর পূর্বে তাঁকে হাশরের ময়দানে উপস্থিত করা হবে। তিনি পূর্বেকার বিধি-নিষেধের রহিতকারী। তাঁর রহিত করা বিধান পালন করা কারো জন্য বৈধ নয়।
এভাবে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মর্যাদা অসংখ্য ও অগণিত। তন্মধ্যে কয়েকটি অতুলনীয় মর্যাদা উপস্থাপন করা হলোঃ
১. আল্লাহ তাআলা আদম আলায়হিস্ সালাম-এর কিতাব বা ইলমকে كلمات বলেছেন। যেমন আল্লাহ বলেন, فتلقى آدم من ربه كلمات – অতঃপর শিখে নিলেন আদম আপন প্রতিপালকের নিকট থেকে কিছু কলেমা। [সূরা বাকারা, ৩৭] অনুরূপভাবে হযরত ইবরাহীম আলায়হিস্ সালাম-এর ব্যাপারেও كلمات বলা হয়েছে। আল্লাহ তাআলা বলেন, وإذ ابتلى إبراهيم ربه بكلمات فأتمهن
এবং যখন ইবরাহীমকে তাঁর প্রতিপালক কতিপয় কথা দ্বারা পরীক্ষা করেছিলেন; অতঃপর তিনি সেগুলোকে পূর্ণ করে দেখিয়েছেন। [সূরা বাক্বারা, ১২৪] হযরত মূসা আলায়হিস্ সালাম এর কিতাবকে বলা হয়েছে( صحف)৷ কুরআন বলছে, صحف إبراهيم و موسى ইবরাহীমও মূসার সহীফাগুলোতে। [সূরা আ‘লা, ১৯] কিন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর কিতাব কুরআনকে বলা হয়েছে الكتاب المهيمن (পূর্ববর্তী কিতাবসমূহের রক্ষণাবেক্ষণকারী কিতাব)। যেমন আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, وأنزلنا إليك الكتاب بالحق مصدقا لما بين يديه من الكتاب ومهيمنا عليه এবং হে মাহবূব! আমি আপনার প্রতি সত্য কিতাব অবতীর্ণ করেছি পূর্ববর্তী কিতাবগুলোর সমর্থকরূপে এবং সেগুলোর সংরক্ষক ও সাক্ষীরূপে। [সূরা মায়িদাহ, ৪৮] ২. হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম-এর সন্মানে আল্লাহ চ্যালেঞ্জ করেছেন কিছু বিক্ষিপ্ত নামের। যেমন কুরআনে এসেছে, أنبؤونى بأسماء هؤلاء আমাকে তোমরা এসব বস্তুর নাম বলে দাও। [সূরা বাক্বারা, ৩১] কিন্তু সাইয়িদুল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম চ্যালেঞ্জ করেছেন পরিপূর্ণ কুরআন দিয়ে। আল্লাহ বলেন, قل لئن اجتمعت الإنس والجن على أن يأتوا بمثل هذا القرآن لا يأتون بمثله ولو كان بعضهم لبعض ظهيرا – আপনি বলুন, যদি মানুষ ও জিন সবাই এ কথার উপর একমত হয়ে যায় যে,এ ক্বোরআনের অনুরূপ আনয়ন করবে,তবে এর অনুরূপ আনয়ন করতে পারবে না,যদিও তাদের পরস্পর পরস্পরের জন্য সাহায্যকারী হয়। [সূরা বনী ইসরাঈল, ৮৮] ৩. আল্লাহ তাআলা হযরত নূহ আলায়হিস্ সালামকে মহাপ্লাবনে নৌকা দ্বারা সাহায্য করেছেন। এক্ষেত্রে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আরো বড় ও আশ্চর্যজনক মুজিযা দিয়ে আল্লাহ তা‘আলা সন্মানিত করেছেন। তা হচ্ছে প্রকান্ড আকারের পাথরকে পানিতে ভাসানো। বর্ণিত আছে, একদা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম একটি স্রোতধারা বা জলাধারের তীরে ছিলেন। সাথে ছিলেন আবূ জাহলের পুত্র ইকরামা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। ইকরামা নবীজিকে বললেন, আপনি যদি সত্যবাদী হোন তবে ঐ তীরে প্রকান্ড পাথরটিকে ডাক দিন, যাতে পাথরটি পানিতে না ডুবে এ তীরে চলে আসে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পাথরকে ইশারা করলেন। তৎক্ষণাৎ পাথরটি নড়াচড়া করে নিজ অবস্থান থেকে আলগা হয়ে সাঁতার দিয়ে এ তীরে চলে আসলো। এসেই নবী করীমকে সালাম দিয়ে রিসালাতের সাক্ষ্য দিল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, ‘‘তুমি খুশী হয়েছ তো?’’ ইকরামা বললেন, ‘যদি ওই পাথর পূর্বের স্থানে ফিরে যায় তবে (আমি বেশী খুশী হবো)।’ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আদেশ করা মাত্র পাথরটি পুনরায় ওই জায়গায় ফিরে গেলো।
৪. আল্লাহ তাআলা ইবরাহীম আলায়হিস্ সালামকে সন্মানিত করেছেন আগুনকে শীতল ও আরামদায়ক করে। এ বিষয়েও রাসূলুল্লাহ আলায়হিস্ সালামকে অধিকতর সম্মান দিয়েছেন। সাহাবী হযরত মুহাম্মদ বিন হাতিব রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত- كنت طفلا فانصب القدر علي من النار فاحترق جلدي كله.فحملتني أمي إلى الرسول صلى الله عليه وسلم فقالت: هذا ابن حاطب احترق كما ترى فتفل رسول الله صلى الله عليه وسلم على جلدى ومسح بيده على المحترق منه و قال: أذهب البأس رب الناس، فصرت صحيحا لا بأس بي – শৈশবে আমার শরীরে আগুণের পাতিল (বা পাতিলের গরম পানি) পড়ে আমার সম্পূর্ণ চামড়া পুড়ে গিয়েছিল। আমার মা আমাকে নিয়ে নবীজির (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) কাছে গেলেন। বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! এই দেখুন আমার ছেলে পুড়ে গেছে। নবীজি আমার পুড়ে যাওয়া ত্বকের উপর থুথু মোবারক দিয়ে নিজ হাতে মালিশ করে দিলেন। এরপর এ দুআ’ করলেন, হে মানুষের রব! আপনি রোগ দূর করে দিন। সেই মুহূর্তেই আমি পরিপূর্ণ সুস্থ হয়ে গেলাম।
৫. মূসা আলায়হিস সালামের মুজিযা হচ্ছে সমুদ্রের পানিকে দু’ভাগ করা। শ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম চাঁদকে দু’ টুকরো করে দিলেন। দু’জনের মুজিযার ব্যবধান হয়ে গেলো আসমান ও যমীনের।
৬. আল্লাহ তা‘আলা মূসা আলায়হিস্ সালাম-এর জন্য পাথর থেকে পানি প্রবাহিত করলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আঙ্গুল মোবারককেই পানির ঝর্ণা বানিয়ে দিলেন।
৭. মূসা আলায়হিস্ সালাম-এর ন্যায় আমাদের নবীকেও (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) আল্লাহ তা‘আলা মেঘের ছায়া দিয়েছেন। (তবে নবীজির (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এই মুজিযা যখনই তিনি রোদের মধ্যে বের হতেন তখনই প্রকাশ পেতো)।
৮. মূসা আলায়হিস্ সালাম-এর মুজিযা আলোকোজ্জ্বল হাত আর আমাদের নবীর (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) মর্যাদা অতুলনীয় নূর কুরআন, যার আলোয় আলোকিত হয়েছে পুরো পৃথিবী।
৯. মূসা আলায়হিস্ সালাম-এর লাঠি মুজিযা হিসেবে অজগর সাপে পরিণত হয়েছিল। পক্ষান্তরে আবু জাহল যখন আমাদের নবীকে (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) পাথর দিয়ে আঘাত করার জন্য অগ্রসর হয়েছিল তখন সে নবীজির দু’পাশে দুটি অজগর সাপ দেখতে পায়। যার কারণে সে প্রাণভয়ে পালিয়ে যায়।
১০. দাঊদ আলায়হিস্ সালাম-এর সাথে পাহাড় তাসবীহ পড়তো। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) ও সাহাবীদের হাতে পাথর তাসবীহ পড়েছে।
১১. দাঊদ আলায়হিস্ সালাম লোহা স্পর্শ করলে মোমের মত গলে যেতো। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এক অতি বয়স্ক ও দুর্বল ছাগীর স্তন স্পর্শ করলে তা দুধে পরিপূর্ণ হয়েছিল।
১২. দাঊদ আলায়হিস্ সালামকে পাখির সমষ্টিতে তৈরী উড়ন্ত যান দেয়া হয়েছিল। আমাদের নবীর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বাহন হচ্ছে বোরাক।
১৩. ঈসা আলায়হিস্ সালাম-এর মুজিযা ছিল মৃতকে জীবন দান। এমন মুজিযা সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এর কাছেও রয়েছে। যখন এক ইয়াহুদী নারী নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর খাবারে বিষ মিশালো, তখন খাবারের দানাগুলোই (জীবিত মানুষের মতো) সেই খবরটি নবী করীমকে জানিয়ে দেয়।
১৪. ঈসা আলাইহিস সালামের আরেকটি মুজিযা হচ্ছে জন্মান্ধ ও কুষ্ঠ রোগীর নিরাময় করা। বর্ণিত আছে, হযরত মু‘আয বিন আফরা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর স্ত্রী কুষ্ঠ রোগের নিরাময়ের উদ্দেশ্যে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে হাজির হন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তার শরীরে একটি গাছের ডাল বুলিয়ে দেন। এতে তার কুষ্ঠ রোগ ভাল হয়ে যায়। অপর এক সাহাবী হযরত কাতাদাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু উহুদ যুদ্ধে আঘাত পেলে তাঁর চোখের মণি বের হয়ে গিয়েছিল। চোখটি নিয়ে তিনি নবীজি সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে উপস্থিত হলেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ওই চোখ পূর্বের স্থানে স্থাপন করে সুস্থ করে দিয়েছিলেন।
১৫. ঈসা আলায়হিস্ সালাম মানুষের ঘরে লুকিয়ে রাখা বস্তুর খবর বলে দিতে পারতেন। গায়বের খবরদাতা সাইয়িদুল আম্বিয়া সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর চাচা আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ও চাচী উম্মুল ফদ্বল রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর মধ্যকার গোপন (গচ্ছিত রাখা সম্পদের) খবর চাচার সামনে প্রকাশ করে দিয়েছিলেন। তখনই হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ইসলাম কবুল করেন।
১৬. আল্লাহ তা‘আলা সুলায়মান আলায়হিস্ সালাম-এর জন্য সূর্যকে পূণরায় উদিত করেছিলেন। কোন এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর কোলে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। যখন জাগ্রত হলেন তখন সূর্য ডুবে গিয়েছিল অথচ আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আসরের নামাজ পড়েন নি। তখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ডুবে যাওয়া সূর্যকে পূনরায় ফিরিয়ে এনেছিলেন। হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আসরের নামাজ আসরের সময়েই আদায় করেন।
১৭. হযরত সুলায়মান আলায়হিস্ সালামকে আল্লাহ তাআলা পাখির ভাষা বুঝার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। সেই ক্ষমতা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকেও দেওয়া হয়েছে। বর্ণিত আছে, একদিন একটি পাখি তার ছানা হারিয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শির মুবারকের কাছে আসলেন এমন সময় পাখিটি নিজের ভাষায় নবীজি সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বিচার দেয়। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, এ পাখিটির ছানা চুরি করে কে তাকে কষ্ট দিচ্ছ?
একজন বললো, ‘‘আমি’’ নবীজি সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, পাখির ছানাটিকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দাও। বাঘের সাথে নবীজি সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামার কথা বলার ঘটনাটিও সুপ্রসিদ্ধ।
১৮. সুলায়মান আলায়হিস্ সালাম এক মাসের দূরত্ব এক সকালে অতিক্রম করতেন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা অতি অল্প সময়ে মসজিদে হারাম থেকে বায়তুল মোক্বাদ্দাস পর্যন্ত (এরপর সাত আসমান,জান্নাত, জাহান্নাম, সিদরাতুল মুনতাহা, আরশ কুরসী, লওহ কলম) ভ্রমণ করিয়েছেন। [চলবে]
শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •