হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতির সমসাময়িক আধ্যাত্মিক সাধকগণ-
শেখ মুহাম্মদ ইব্রাহীম>
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সমসাময়িক কালের বুজর্গানেদ্বীন হলেন।
হযরত শেখ ওয়াজিউদ্দীন আবু হাফজি সোহরাওয়ার্দী
তখনকার সময়ের একজন প্রসদ্ধি অলি ছিলেন। তিনি হযরত সৈয়দ মুহাম্মদ আমোয়া রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর খলিফা ছিলেন। আরেক যুগ-বিখ্যাত অলি হযরত শেখ শিহাব উদ্দীন উমর সোহরাওয়ার্দী তাঁর বিবির ভাই ছিলেন- যিনি তাঁর থেকে রূহানী ফয়েজ হাসিল করেন। তিনি ৫৫৬ হিজরি সনের ৩ রমজান বাগদাদ নগরীতে ইন্তেকাল করেন। সোহরাওয়ার্দী তরিকার প্রচলন ঐ দুজনের মাধ্যমে চালু হয়।
হযরত শেখ আবদুল খালিক মুজদান
তিনি যুগ-প্রসিদ্ধ অলি হযরত ইউসুফ হামদানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর অন্যতম প্রধান খলিফা ছিলেন। তিনি বুখারার নিকটবর্তী মুজদানে জন্মগ্রহণ করেন। মহৎ ব্যক্তি ও মনীষীদের স্মৃতি রক্ষার্থে অনুষ্ঠানাদি প্রচলনের তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা ও অগ্রদূত। বিশেষ করে সরওয়ারে দোজাঁহা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর শানে মিলাদ-উন-নবীর অনুষ্ঠান তিনি রীতিমতো জারি রাখেন প্রতি হিজরি সনে ১২ রবিউল আউয়াল। তিনি ৫৭৫ হিজরি সনের ১২ রবিউল আউয়াল মুজদানে পরলোক গমন করেন।
হযরত শেখ মুহাম্মদ আরিফ দেওগরী
তিনি হযরত শেখ আবদুল খালিক মুজদান রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সাজ্জাদানশীন খলিফা ছিলেন। তখনকার সময়ের তিনি একজন প্রখ্যাত কামেল অলি ছিলেন। দামেস্কের বিখ্যাত উমাইয়া মসজিদে তিনি হযরত খাজা উসমান হারুনী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও হযরত শেখ ওয়াহিদ উদ্দীন কিরমানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর পবিত্র সাহচর্যে এসে প্রচুর রূহানী ফয়েজ অর্জন করেন। তিনি ৬৫০ হিজরি সনে বুখারা থেকে আঠার মাইল দূরে দেহগরে ইন্তেকাল করেন এবং এখানে তাঁকে দাফন করা হয়।
হযরত শেখ মহীউদ্দীন ইবনে আরবী
তাঁর আসল নাম মুহাম্মদ বিন আলী বিন মুহাম্মদ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। তবে তিনি মহীউদ্দীন ইবনে আরবী নামে সমধিক পরিচিত। তিনি ৫৬১ হিজরি সনের ১৭ রমজান মেরশিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একজন বিখ্যাত দরবেশ ও মহাজ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। আরবের ইতিহাস ও আরবি সাহিত্য নিয়ে তিনি গ্রন্থ রচনা করেন। তাঁর রচিত গ্রন্থগুলোর মধ্যে ‘ফতুহাত-ই-মক্কী’ ও ‘ফুসুস-উল-হিকাম’ উল্লেখযোগ্য। তিনি ৬৩৭ হিজরি সনে ইন্তেকাল করেন। দামেস্কের নিকটবর্তী জাবল কাশিয়ুনে তাঁকে দাফন করা হয়।
হযরত শেখ সাদী
শেখ সাদী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি পারস্যের সিরাজনগরে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অসাধারণ পন্ডিত ও কাব্যিক প্রতিভার অধিকারী ছিলেন। শরীয়ত ও মারেফাত নিয়ে তিনি বেশ কিছু ফারসি কাব্য রচনা করেন। তাঁর লিখিত গ্রন্থগুলো সমগ্র ইসলামী বিশ্বে সমাদৃত। তিনি তাঁর লেখনীর মাধ্যমে ইসলামের সেবা করে গেছেন। তাছাড়া তিনি আধ্যাত্মিক জগতের একজন মহান তাপস ছিলেন। তিনি একবার ভারতে আগমন করেন খাজা গরীবে নেওয়াজের সান্নিধ্য লাভের জন্য। তাঁর ইন্তেকালের পর সিরাজনগরে তাকে দাফন করা হয়।
হযরত শেখ ফরিদ উদ্দীন আত্তার
পারস্যের নিশাপুরে ৫১৩ হিজরি সনে জন্মগ্রহণ করেন। একজন রসায়নবিদ হিসেবে তিনি জীবিকা শুরু করেন। তিনি প্রসিদ্ধ অলি হযরত রুখম উদ্দীন কাফ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও হযরত মুজাদাদ উদ্দীন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সান্নিধ্যে বাগদাদে অনেক দিন কালাতিপাত করেন। তিনি হযরত মুজাদাদ উদ্দীন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর কাছ থেকে খিলাফত লাভ করেন। তিনি পূর্ণবয়স প্রাপ্তির মাধ্যমে ৬২৮ হিজরি সনে ১১৪ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন এবং তাঁকে নিশাপুরে দাফন করা হয। তিনি বেশ কতকগুলো গ্রন্থ রচনা করেন। তন্মধ্যে ‘মনতাক উত্-তাহির’ ও ‘ছালিশ রিসালা-ই নজম’ উল্লেখ্য।
হযরত শামসুদ্দীন তাবরিজ
তিনি কিয়ানিস-এর বংশধরদের মধ্যে অন্যতম। তিনি দীর্ঘদিন ধরে হযরত শেখ রুকন উদ্দীন সঞ্জরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সাহচর্যে ছিলেন। পীরের নির্দেশে তিনি রূহানিয়াতের মশাল হৃদয়ে প্রজ্বলিত করার জন্য পারস্যের কুনিয়ায় গমন করেন। সেখানে তিনি বিখ্যাত মনীষী হযরত মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমীর কাছ থেকে আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করেন। আধ্যাত্মিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে কামালিয়াত হাসিল করেন। ৫৪৫ হিজরি সনে তিনি ইহলোক ত্যাগ করেন এবং বাগদাদে তাঁকে দাফন করা হয়।
হযরত মাওলানা জালাল উদ্দীন রুমী
তিনি হযরত মাওলানা বাহাউদ্দীন ওয়ালদ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর পুত্র ছিলেন। ৬০৪ হিজরি সনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। পিতার মৃত্যুর পর ৬২৮ হিজরি সনে তিনি পিতার উত্তরাধিকারী হন। তিনি পিতার শিষ্য বোরাহানউদ্দীন তুরমাজী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সাহচর্যে দীর্ঘ নয় বছর অতিবাহিত করেন এবং প্রচুর আধ্যাত্মিক ও ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন করেন। পিতার মৃত্যুর পাঁচ বছর পরে তিনি হযরত শামসুদ্দীন তাবরিজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর খুবই ঘনিষ্ঠ হিসেবে নিজেকে গড়ে তোলেন। ৬৭২ হিজরি সনের ৫ জমাদিউস্ সানিতে পরলোকগমন করেন। জগদ্বিখ্যাত মহাগ্রন্থ মসনবী শরীফের রচয়িতা হিসেবে তিনি সারা দুনিয়ায় পরিচিতি লাভ করেন। অসাধারণ এই কাব্যিক মহাগ্রন্থ যুগ যুগ ধরে মানব সমাজের আধ্যাত্মিক তৃঞ্চা মেটাচ্ছে। মাওলানা রুমী রাহমাতুল্লাহি আলায়হির ‘মসনবী শরীফ’ পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় অনূদিত হয়ে বিশ্বব্যাপী স্বীকৃতি লাভ করেছে।
উপরের আলোচিত মনীষী, বুজর্গানেদ্বীন, আউলিয়ে কেরামগণই হযরত খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সময়কার প্রসিদ্ধ ব্যক্তিত্ব ছিলেন। তাছাড়া আরো অনেকেই ছিলেন- যারা অনেকটা তুলনাবিহনি ছিলেন।
স্বনামধন্য খলিফা ও শিষ্যগণ
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর স্বনামধন্য খলিফা ও শিষ্যগণ হলেন-
হযরত খাজা কুতুবউদ্দীন বখতিয়ার কাকী
তিনি হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর অধঃস্তন পুরুষ ছিলেন। মাত্র সতের বছর বয়সে তিনি খিলাফত প্রাপ্ত হন এবং আধ্যাত্মিক জ্ঞান লাভ করেন। ৫৮৭ হিজরি সনে তিনি গরীবে নেওয়াজ সমভিব্যবহারে ভারতে আগমন করেন। হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর নির্দেশে তিনি দিল্লিতে অবস্থান করেন পবিত্র ইসলাম ধর্ম প্রচারে নিজেকে নিয়োজিত করেন। তিনি অত্যন্ত উচ্চমার্গের একজন কামিল অলি ছিলেন। তাঁর সাধারণ চালচলন, অমায়িক ব্যবহার, ইবাদত-বন্দেগী, আধ্যাত্মিক সাধনা, পরোপকারিতা ও মানুষের জন্য মায়া-মমতা তাঁকে অত্যন্ত জনপ্রিয় করে তোলেন। তখনকার সময়ে তিনি দিল্লির একজন সম্মানি জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব ছিলেন। আজীবন মানুষের কল্যাণ ও আধ্যাত্মিক সাধনার মাধ্যমে তিনি কালাতিপাত করেন। ৬৩৩ হিজরি সনের ১৪ রবিউল আউয়াল সুলতান শামসুদ্দীন ইলতুৎমিশের রাজত্বকালে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁকে দিল্লিতে দাফন করা হয়। তিনি তাঁর পীর মুর্শিদ হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর ওফাতের পাঁচ বছর আট মাস আট দিন পর এ পৃথিবী থেকে চিরবিদায় নেন।
হরত খাজা ফখর উদ্দীন আবুল খায়ের
তিনি হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর জ্যেষ্ঠপুত্র। তিনি ৫৯১ হিজরি সনে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আজমীর থেকে তিন মাইল দূরবর্তী মন্ডল নামক গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তিনি একজন উঁচু দরের কামেল অলি ছিলেন এবং আধ্যাত্মিক সাধনায় উচ্চ শিখরে আরোহন করেন। ভাবজগৎ ও বস্তুজগৎ সম্পর্কে তাঁর অগাধ পান্ডিত্য ছিল। তিনি ৬৬১ হিজরি সনের ৫ শাবান সত্তর বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। আজমীর থেকে ৩৪ মাইল দূরে সারওয়ার নামক স্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। প্রতি বছর তিন থেকে ছয় শাবান তাঁর বার্ষিক ওরশ মোবারক অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।
সুলতান-উত-তারেকীন
হযরত সূফী হামিদ উদ্দীন নাগরী
আবু মুহাম্মদ তাঁর প্রচলিত নাম। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাহাবা হযরত সাঈদ বিন জায়েদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু-এর বংশধর তিনি। তিনি ছিলেন একজন খাঁটি দরবেশ, যার আধ্যাত্মিক জগতের অবস্থান ছিল খুবই উঁচুতে। তিনি সাওয়ালি নামক স্থানে বসবাস করতেন, যার বর্তমান নাম ফাগলি। তিনি প্রায় ১০৪ বছর জীবিত ছিলেন। এই দীর্ঘ সময়ে তিনি ধর্ম প্রচার ও আধ্যাত্মিক জ্ঞান অর্জন এবং শিক্ষা-দীক্ষায় কাটিয়ে দেন। ৬৭২ হিজির সনে তিনি পরলোকগমন করেন এবং নাগোরে তাঁকে দাফন করা হয়।
হযরত শেখ মঈনউদ্দীন
তিনি হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর অন্যতম খলিফা ছিলেন। তিনি দিল্লিতে অবস্থান করেন। হযরত খাজা কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর ওফাতের পর তিনি দিল্লিতেই অবস্থান করেন তাঁর পীর ভাইয়ের আরুদ্ধ কাজ সমাপণের জন্য তিনি হযরত কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর যোগ্য উত্তরসূরী ছিলেন।
হযরত কাজী হামিদ উদ্দীন নাগরী
তিনি হযরত শেখ শিহাব উদ্দীন উমর সোহরাওয়ার্দীর ভাবশিষ্য ছিলেন। আবার তিনি হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এরও মুরিদ ছিলেন। ৪৬৩ হিজরি সনে তিনি জন্মগ্রহণ করেন। ৬৪৩ হিজরির ৯ রমজান ১৮০ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁর বিবি হাসিনার গর্ভে সাত ছেলে ও দুই মেয়ে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি অত্যন্ত জ্ঞানী ব্যক্তি ছিলেন। তিনি আধ্যাত্মিক জগতেও প্রচুর কামালিয়াত হাসিল করেন। তাঁর এই সুদীর্ঘ জীবনকালে তিনি বিভিন্ন গ্রন্থ রচনা করেন, তন্মধ্যে তাওয়ালি-উস-সামুছ, শারাহ্-ইসমা-হুসনা, লাওয়ানি লাওয়াহা, মাতালি শারাহ্, সেহাল হাদিস প্রভৃতি গ্রন্থ।
হযরত শেখ ওয়াজিউদ্দীন
তিনি একজন কামেল অলি ছিলেন। ৬৪৫ হিজরি সনের ৯ জমাদিউস্ সানী তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁকে আফগানের হেরাতে দাফন করা হয়।
হযরত আবদুল্লাহ্ বিয়াবানী
প্রাক্তন নাম অজয় পাল যোগী। রাজা পৃথ্বিরাজের প্রধান যাদুকর অজয় পাল যোগী যাদুবিদ্যায় খুবই পারদর্শী ছিলেন। হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হিকে আজমীর থেকে বিতাড়িত করার জন্য নানা যাদুবিদ্যার আশ্রয় নেয়। তার সব তন্ত্রমন্ত্রকে ধূলিস্যাৎ করে দিয়ে খাজা সাহেবের কেরামতের কাছে তিনি পরাভূত হন। পরে নিজের ভুলের জন্য ক্ষমা চেয়ে দারুণ অনুতপ্ত হৃদয়ে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হন। কথিত আছে, হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর দো’আর বরকতে তিনি অমরত্ব লাভ করেন। তিনি প্রতি শুক্রবার রাত্রে খাজা খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হির মাযার জেয়ারত করে যান। ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে তার নাম হয় আবদুল্লাহ্ বিয়াবনী। তিনি গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর একান্ত সান্নিধ্যে থেকে আধ্যাত্মিক জগতের প্রভূত জ্ঞান হাসিল করেন এবং একজন কামেল অলিতে পরিণত হন।
হযরত সাইয়্যেদ হোসাইন মাশহাদী
তিনি মাশহাদের সাইয়্যেদ বংশীয় ছিলেন। তিনি বাহ্যিক ও রূহানি জ্ঞানের আলোকে উদ্ভাসিত ছিলেন। তিনি অত্যন্ত জ্ঞানী কামেল ব্যক্তিত্ব ছিলেন। সুলতান কুতুবউদ্দীন আইবেক তাঁকে আজমীরের শাসনকর্তা নিয়োগ করেন। তিনি হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর খুবই প্রিয়ভাজন ও ঘনিষ্ঠ সান্নিধ্য লাভ করেন। তিনি খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর অন্যতম খলিফা ছিলেন। আজমীরের তারাগড় পাহাড়ের সুউচ্চ চূড়ায় তাঁকে অন্য শহীদদের সাথে দাফন করা হয়। তিনি ৬১০হিজরি সনের ১৭ রজব শাহাদাত বরণ করেন। তিনি সাধারণের কাছে ‘সুলতান সাওয়ার’ হিসেবে পরিচিত। তাঁর প্রতি বছর ওরস ১৬ থেকে ১৮ রজব তারিখে তারাগড়ের সুউচ্চ পাহাড়ে সাড়ম্বর পালিত হয়।
হযরত শেখ নিজাম উদ্দীন নাগরী
তিনি হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর খুব ঘনিষ্ঠজন ছিলেন। সকল কিছু পরিত্যাগ করে তিনি পীরে মুর্শিদের চরণতলে আজীবন কাটিয়ে দেন। এক মুহূর্তের জন্যও তিনিও পীরকে ছেড়ে কোথাও যাননি। খাজা বাবার আস্তানায় তাঁর বসতি ছিল। খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর অগাধ শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা দেখে খুবই বিমোহিত হয়ে বললেন: ‘আমাদের দীনতা প্রতিফলিত হয় ফখরউদ্দীনের মাধ্যমে এবং নিজাম উদ্দীনের সাথে প্রশাসনিক ক্ষমতা বিরাজ করছে।
হযরত শেখ মুজাহিদ উদ্দীন সঞ্জরী
তিনি হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর মাতৃকুলের দিক থেকে আপন খালাতো ভাই ছিলেন। তিনি গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর নকলনবিশ ছিলেন। তিনি গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর বাণী লিপিবদ্ধ করতেন। বিশেষ করে গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি কর্তৃক প্রদত্ত খেলাফতের বিবিধ শর্তাবলী তিনি লিখে দিতেন। তাছাড়া তিনি হযরত খাজা কুতুব উদ্দীন বখতিয়ার কাকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর খুবই প্রিয়পাত্র ছিলেন। তিনি একজন কামেল অলি ছিলেন। তাঁকে দিল্লির বিখ্যাত মসজিদ কুওয়াতুল ইসলামের চত্বরে দাফন করা হয়।
উপরিল্লিখিত শিষ্য, মুরিদ ও খলিফা ছাড়া আরো স্বনামধন্য যাঁরা ছিলেন, তাঁরা হলেন: হযরত শেখ ওয়াজি উদ্দীন (রাহ.), হযরত শেখ বুরহান উদ্দীন প্রকাশ বুদ্দু (রাহ.), হযরত শেখ আহমদ (রাহ.), হযরত মাওলানা আহমদ খাদিম (রাহ.), হযরত শেখ মেহতা (রাহ.), হযরত পীর করিম সালোনী (রাহ.), হযরত হাসান মক্কী (রাহ.) সহ আরো অনেকে।
হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ (রাহ.)’র বংশধরগণ
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি যৌবনের প্রারম্ভে থেকে অধিককাল পর্যন্ত সংসার ধর্ম পালন করেননি। আল্লাহর হুকুমে, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নির্দেশে অনেকটা বৃদ্ধ বয়সে দু’বার শাদী করেন। একজন বিবি হলেন ভারতে অমাত্যরাজের এক পরমাসুন্দরী কন্যা যিনি স্ব-ইচ্ছায় ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর মুসলমান নাম রাখা হয় বিবি উম্মত উল্লাহ। অপরজন হলেন আজমীরের শাসনকর্তা ওয়াজিউদ্দীন মাশহাদীর কন্যা বিবি আসমত উল্লাহ।
বিবি উম্মত উল্লাহর গর্ভে খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র দু’জন পুত্র ও একজন কন্যা সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। তাঁরা খাজা ফখরউদ্দীন আবুল খায়ের, খাজা হিশাম উদ্দীন আবু সালেহ ও বিবি হাফিজ জামাল।
বিবি আসমত উল্লাহর ঘরে একমাত্র পুত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হলেন খাজা জিয়া উদ্দীন আবু সাঈদ।
হযরত খাজা ফখর উদ্দীন আবুল খায়ের রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ৫৯১ হিজরি সনে জন্মগ্রহণ করেন করেন। তিনি হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর জ্যেষ্ঠ সন্তান ছিলেন। তিনি আজমীরের অদূরবর্তী মন্ডল নামক গ্রামে বসতি স্থাপন করেন। তিনি একজন উঁচুদরের অলি ছিলেন। কামালিয়াতের শেষ পর্যায়ে পৌঁছেছিলেন। তিনি পার্থিব ও আধ্যাত্মিক জ্ঞানে ব্যুৎপত্তি লাভ করেন। ধর্মচর্চা, ইবাদত-বন্দেগী, ধর্মপ্রচার ও আধ্যাত্মিক সাধনায় নিজের মূল্যবান জীবন অতিবাহিত করেন। তিনি সত্তর বছর বয়সে ৬৬১ হিজরি সনের ৫ শাবান পরলোকগমন করেন। আজমীর থেকে ৪৩ মাইল দূরে সরওয়ার নামাক স্থানে বিধর্মীদের সাথে এক যুদ্ধে শাহাদাত বরণ করেন। কিষাণগড়ের সরওয়ার নামক স্থানেই তাঁকে দাফন করা হয়। প্রতি বছর শাবান মাসের ৩ থেকে ৬ তারিখ পর্যন্ত তাঁর মাযার শরীফে ওরস অনুষ্ঠিত হয়।
হযরত গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর দ্বিতীয় সন্তান হযরত খাজা হিশাম উদ্দীন আবু সালেহ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। বাল্যকাল থেকেই তিনি আধ্যাত্মিক জগতের সাথে মিশে যান। তিনি একজন মজযুব কামেল অলি ছিলেন। সংসার-ধর্ম পালন করলেও যৌবনের প্রারম্ভেই তিনি আবদালের দলভুক্ত হয়ে যান। তিনি সাত পুত্র সন্তানের জনক ছিলেন। অতি অল্প বয়সে মাত্র পঁয়তাল্লিশ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। তাঁকে ঝাল্লরা বা ঝর্ণা পাড়ের নিকটবর্তী স্থানে দাফন করা হয়।
রমনীদের মুকুট বিবি হাফিজ জামাল রাহমাতুল্লাহি আলায়হা হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর একমাত্র কন্যাসন্তান। তিনি অত্যন্ত বিদূসী ও পরহেজগার মহিলা ছিলেন। তিনি শরীয়ত ও মারেফাতের প্রভুত জ্ঞান অর্জন করে তা অন্য রমণীদের শিক্ষা দিতেন। আধ্যাত্মিক সাধনায় তিনি খুবই উচ্চমার্গে পৌঁছেছিলেন। তাঁকে ইসলামী জগতের দ্বিতীয় রাবেয়া বসরী (রাহ.) বলা হয়। বিবি হাফিজ জামাল রাহমাতুল্লাহি আলায়হা-এর সাথে বিখ্যাত সাধক হামিদ উদ্দীন নাগরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সুযোগ্য সন্তান হযরত শেষ রাজী উদ্দীন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সাথে শাদী হয়। তাঁদের বৈবাহিক সূত্রে দু’পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করে, তবে অল্প বয়সে তাঁরা মৃত্যুবরণ করেন। বিবি হাফিজ জামাল রাহমাতুল্লাহি আলায়হার ইন্তেকালের পর তাঁকে গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর রওয়াজা মোবারকের দক্ষিণ পাশের দেয়াল ঘেঁষে দাফন করা হয়। তাঁর সমাধিতে হাজার হাজার ভক্ত-অনুরক্তদের বিপুল সমাগম হয়। প্রতি বছর ১৭ রজব দরগাহ্ শরীফ প্রাঙ্গণে ওরস অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর চিল্লা- যা ‘চিল্লা বিবি হাফিজ জামাল’ নামে পরিচিত।
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর দ্বিতীয় বিবির গর্ভে একমাত্র পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেন- তাঁর নাম হযরত খাজা জিয়াউদ্দীন আবূ সাঈদ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। তিনিও একজন কামেল অলি ছিলেন। তাঁর দু’জন পুত্রসন্তান জন্মগ্রহণ করেন। তিনি মাত্র পঞ্চাশ বছর বয়সে ইন্তেকাল করেন। তাঁর মাযারও ঝাল্লারা পাড়ের ছায়াঘাটে অবস্থিত। প্রতিবছর ১৩ ও ১৪ জিলহজ্ব তাঁর ওরস অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর মাযারেও অসংখ্য পুণ্যার্থী ও ভক্ত অনুরক্তের ভিড় জমায়।
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন হাসান চিশতী সঞ্জরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র বড় ছেলে হযরত খাজা ফখরউদ্দীন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সন্তান হযরত খাজা হিশাম উদ্দীন চোক্তা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। তিনিও প্রভূত আধ্যাত্মিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন। তিনি দিল্লির হযরত নিজামউদ্দীন আউলিয়ার গভীর সান্নিধ্য লাভ করেন। ফুলেরা জংশনের নিকটবর্তী চামভার হ্রদের পাশে তাঁকে দাফন করা হয়। এ স্থানে ১২ থেকে ১৪ রজব তাঁর ওরস অনুষ্ঠিত হয়।
হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর অন্যতম বংশধর হযরত খাজা ওয়াহিদউদ্দীন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। তিনি খাজা সাহেবের পৌত্র ছিলেন। তিনি হযরত বাবা ফরিদ উদ্দীন গঞ্জেশকর রাহমাতুল্লাহি আলায়হির কাছে গমন করেন তাঁর কাছ থেকে আধ্যাত্মিক শিষ্যত্ব লাভের জন্যে। তাঁকে মুরিদ হিসেবে গ্রহণ করতে বাবা ফরিদ অস্বীকার করেন। তিনি বললেন, যার পরিবার থেকে আমি অমূল্য রতœ সংগ্রহ করেছি তাকে কিভাবে শিষ্যত্বে বরণ করি এবং আধ্যাত্মিক তালিম দিই- যা মোটেও সম্ভব নয়। পরে অবশ্য অনেক কিছু বিবেচনা করে তাঁকে আধ্যাত্মিক শিষ্য হিসেবে বরণ করে নেন বাবা ফরিদ উদ্দীন গঞ্জেশকর রাহমাতুল্লাহি আলায়হি।
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ছিলেন হযরত খাজা শেখ হিশাম উদ্দীন চোকতার কনিষ্ঠ সন্তান এবং গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর প্রপৌত্র। দীর্ঘকাল পূর্বে তিনি দিল্লির বিখ্যাত অলি হযরত শেখ নাসির উদ্দীন চিরাগ দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর মুরিদ ছিলেন। হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর রওয়াজা মোবারক হতে তিনি প্রচুর রূহানি ফয়েজ হাসিল করেন। তাঁর অনেক সন্তান ছিল। ৭৬১ হিজরি সনে তিনি ইন্তেকাল করেন। হযরত খাজা মঈনউদ্দীন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর ভাই হযরত শেখ কাইয়ূম উদ্দীন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর অত্যন্ত ধার্মিক বুজর্গ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি সবল দেহের অধিকারী খুবই শক্তিশালী সুপুরুষ ছিলেন।
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সন্তান হযরত শেখ কুতুব উদ্দীন রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ‘চিশত্ খুয়ান’ নামে পরিচিত। সুলতান গিয়াস উদ্দীন খিলজীর অধীনে তিনি পদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ছিলেন। তিনি বার হাজার অশ্বারোহী বাহিনীর প্রধান ছিলেন। সামরিক বাহিনী থেকে অবসর গ্রহণের পর সুলতান চেয়েছিলেন আজমীরের শাসনভার তাঁর হাতে ন্যস্ত করতে। কিন্তু তিনি তা প্রত্যাখ্যান করেন এবং বাকি জীবন আধ্যাত্মিক সাধনায় অতিবাহিত করেন। তখনকার সময়ের সমৃদ্ধশালী নগরী মালওয়াতে (মন্ডুতে অবস্থিত) অবস্থান করেন, বর্তমানে যা বিরান এলাকায় পরিণত হয়েছে।
হযরত শেখ বায়েজিদ
খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর অধঃস্তন পুরুষ যাঁর সম্পর্ক নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি হয়। দিল্লির সুলতানের কার্যকলাপে অসন্তুষ্ট হয়ে তিনি বাগদাদ নগরীতে চলে যান। সুদীর্ঘকাল বাগদাদে অবস্থান করে তিনি দিল্লিতে ফিরে আসলে তাঁর সম্পর্কে অনেকেই অজ্ঞাত থেকে যায় এবং গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সাথে তাঁর আত্মীয়তার যে বন্ধন তা অনেকেই অস্বীকার করে। এ বিতর্কিত বিষয়ে সুষ্ঠু সমাধানের জন্য সুলতান মাহমুদ খিলজীর দেশের প্রখ্যাত আলেম-উলেমা, মুফতি ও অন্যদের ডেকে এ ব্যাপারে ফয়সালা দিতে বলেন। তখনকার বিখ্যাত ব্যক্তিত্ব নাগোরার শেখ হোসাইন এবং আজমীরের মাওলানা রুস্তমের সাক্ষ্য- প্রমাণে সাব্যস্ত হয়- শেখ বায়েজিদ শেখ কাইয়ুম উদ্দীনের সন্তান, তাঁর পিতামহ খাজা শেখ হিশাম উদ্দীন চোকতা, প্রপিতামহ খাজা ফখর উদ্দীন এবং খাজা ফখর উদ্দীন হলেন হযরত গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হির প্রথম সন্তান। পরবর্তী সময়ে শেখ হোসাইন নাগোরার কন্যার সাথে শেখ বায়েজিদের পুত্রসন্তানের শাদী হয়।
হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর ভারতে অবস্থানকারী আত্মীয়স্বজন সম্বন্ধে জানা যায়- হযরত খাজা আলী সঞ্জরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর আপন খালাতো ভাই। তিনি খাজা সাহেবের নকলবনিশ ছিলেন। হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজের প্রদত্ত খেলাফতের শর্তাবলী, আদেশ-উপদেশ তিন লিপিবদ্ধ করতেন। তিনি কুতুবউদ্দীন বখতিয়ার কাকী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর খুবই প্রিয়ভাজন ছিলেন। তাঁর ইন্তেকালের পর তাঁকে দিল্লির বিখ্যাত কুয়াত-উল-ইসলাম মসজিদের কাছে দাফন করা হয়।
হযরত মিরন নাতা শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। তাঁর পিতা হযরত মিরন সাময়ান কোহ-হিরাতের নিকটবর্তী নিলান শহরে অবস্থান গ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম আসমত খাতুন। তিনি আবদুর রাজ্জাক চারখী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর মুরিদ হন। চারখ হলো গজনির এক নিভৃত গ্রাম। হেরনের কাসিম জুনাইদ মসজিদের কাছে তিনি উসমান হারুনী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর সাথে একই খানকায় অবস্থান করেন। যখন হযরত খাজা মঈনুদ্দীন চিশতী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর পীরে মুর্শিদ হযরত উসমান হারুনী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর কাছে গমন করেন তখন তিনি বললেন, ওহে মঈনুদ্দীন! তোমার মাসতুতো ভাই সাইয়্যেদ হামিদউল্লাহ্ (না তা শা শাহ্) এখানে আছে।
তার সাথে দেখা করে আলিঙ্গন কর। পীরের নির্দেশে হযরত খাজা গরীবে নেওয়াজ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি জ্ঞাতী ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করেন। বুকের মাঝে টেনে নিয়ে আলিঙ্গন করেন। হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁকে ‘কুসুরুল হিন্দ’ উপাধিতে ভূষিত করেন। তাঁকে আকবর শাহ্ গেটের কাছে গাউসে পাকের সিল্লার ওখানে দাফন করা হয়। প্রতি বছর ১০ ও ১১ জিলহজ্ব তাঁর ওরস অনুষ্ঠিত হয়। রাজা রওন পাওয়ারের দৌহিত্র রাজা সানুওয়ান্ত পানওয়ার তাঁর হাতেব বায়েত গ্রহণ করে পবিত্র ইসলাম ধর্মে দীক্ষা নেন। তিনি তাঁকে শিষ্যত্ব দান করেন। তাকে সবাই মালিক চত্বর পাট্টি নামে অভিহিত করেন।