জানাযার নামাযের পরে ‘‘এ মানুষটি কেমন ছিল’’ প্রশ্নটা কি শরীয়ত সম্মত?

0

প্রশ্ন করেছেন- মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম- সরফভাটা, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।

প্রশ্ন: জানাযার নামাযের পরে ‘‘এই মানুষটি কেমন ছিল’’ প্রশ্ন করা হয়- এটা কি শরীয়ত সম্মত? বিস্তারিত জানালে উপকৃত হব।

উত্তর: কোন আমলের কারণে বান্দা আল্লাহ্ তা’আলার নিকট প্রিয়ভাজন ও ক্ষমা প্রাপ্ত হয় তা পরম করুণাময় আল্লাহ্ তা’আলার একান্ত করুণা রহমত ও দয়ার উপর নির্ভরশীল। একেবারে সাধারণ নেকীর বিনিয়ের ও পরম করুণাময় তাঁর মু’মিন ও বিশ্বাসী বান্দাকে তার জীবনের সকল গুনাহ মাফ করত: জান্নাত প্রদান করতে পারেন। হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মতগণের জন্য একান্ত সৌভাগ্য ও আশার বিষয় যে, অতি ক্ষুদ্র নেক আমল দ্বারাও শ্রষ্ঠার সে করুণা লাভের প্রত্যাশা করা যায়। মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে জানাযার নামাযে উপস্থিত জীবিত মুসলমানদের ভালো ধারণা ও ভালো সাক্ষ্য সে ধরনের এক অনন্য আমল, প্রিয়নবী রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হাদীস শরীফে মৃত ব্যক্তির কল্যাণে সুন্দর নির্দেশনা দিয়ে ইরশাদ করেছেন-
عن ابن عمر رضى الله عنهما قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اذكروا محاسن موتاكم كفوًا عن مساويهم-
অর্থাৎ- প্রসিদ্ধ ফকিহ সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘‘তোমরা মৃত ব্যক্তির সুন্দর ও ভাল দিকগুলো আলোচনা কর এবং মন্দ কার্যাদি বা বিষয়াদি আলোচনা করা থেকে যবানকে হেফাজত কর। [আবু দাঊদ শরীফ: হাদীস নম্বর ৪৯০০, তিরমিজি শরীফ: হাদীস নম্বর ১০১৯ ও বায়হাকী সুনানিল কুবরা: ১৪২১]

এ হাদীস সম্পর্কে ইমাম হাকিম নিশাপুরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন- هذا حديث صحيح الاسناد ولم يخرجاہ-
অর্থাৎ- উক্ত হাদীসটির সনদ বিশুদ্ধ। যদিও ইমাম বুখারী ও মুসলিম রাহমাতুল্লাহি আলায়হিমা বর্ণনা করেননি। অপর হাদীসে উল্লেখ রয়েছে- قال النبى صلى الله عليه وسلم ايما مسلم شهد له اربعة بخير أدخله الله الجنة- فقلنا وثلاثة قال وثلاثة فقلنا واثنان قال اثنان ثم لم نساله عن الواحد- অর্থাৎ- প্রিয় নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন চারজন ঈমানদার ব্যক্তি যদি একজন মুসলমানের পক্ষে ভাল বলে সাক্ষ্য দেয়, তাহলে আল্লাহ্ তা’আলা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন। বর্ণনাকারী বলেন- অতঃপর আমরা জিজ্ঞেস করলাম, যদি তিনজন মুসলমান ভাল বলে সাক্ষী দেয়? রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন তাহলেও। তারপর জিজ্ঞেস করলাম, যদি দুইজন সাক্ষ্য দেয়? প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম বললেন, দুইজন মুসলমান ভাল বলে সাক্ষী দিলে তার উসিলায় আল্লাহ্ তা’আলা জান্নাত দান করবেন। বর্ণনাকারী হযরত ওমর ফারুক রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, তারপর একজনের ব্যাপারে আমরা আর জানতে চাইনি। [কিতাবুল জানাইয, বুখারী শরীফ: হাদীস নম্বর ১৯৩৪]

অন্য একটি হাদীসে মৃত ব্যক্তির সমালোচনা বা মন্দ চরিত্রের বর্ণনা না করার ব্যাপারে প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, উম্মুল মু’মিনীন ফকিহাতুল উম্মত হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হতে বর্ণিত, আল্লাহর হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, তোমরা মৃতদেরকে গালিগালাজ ও বদনাম করো না। কারণ তারা তাদের নিজেদের কার্যাদির নিকট তারা আখেরাতের জন্য যা করেছেন সেখানে পৌঁছে গেছে। [ইমাম বুখারী- আস্সহীহ: কিতাবুল জানাইয: হাদীস নম্বর ১৩৯৩ এবং নাসাঈ শরীফ: হাদীস নম্বর ১৯৩৬]

প্রতীয়মান হল যে, একজন মৃত মুসলিম ব্যক্তি সম্পর্কে ভাল সাক্ষ্য দেওয়ার মাধ্যমে মৃত মুসলিমের প্রতি করুণা, ভ্রাতৃত্ব, মমতা প্রকাশ করা এবং সর্বোপরি উদার মনোভাব ব্যক্ত করার তাৎপর্যই তুলে ধরা হয়েছে উপরোক্ত হাদীসে। মৃত ব্যক্তি সম্পর্কে কোনরূপ ক্ষোভ-রাগ থাকলে তা ক্ষমা করে দিয়ে তার জন্য মাওলা তা’আলার দরবারে মাগফিরাত ও রহমত কামনা করার মাধ্যমে মুসলিম মৃতের প্রতি নিজেদের ঐকান্তিক ভালোবাসা প্রদর্শন করা নামাযে জানাযার উদ্দেশ্য।

সুতরাং সুন্নি ওলামায়ে কেরাম ও হক্কানী পীর মাশায়েখ সমাজের মুসলমানদেরকে আল্লাহর প্রিয় রাসূলের নির্দেশনানুসারে এ ভাল আমলগুলো শিক্ষা দেন এবং নামাযে জানাযা আদায়ের পর লোকটি কেমন ছিলেন/মাইয়িতটি কেমন ছিলেন- এ কথাটা বলা ইসলামী শরীয়ত সম্মত। যারা বিরোধীতা করে মূলত: উল্লেখিত হাদীস শরীফ সম্পর্কে অজ্ঞ এবং মুর্খ। এসব অজ্ঞ ও মুর্খ ব্যক্তিকে আলিম বা মাওলানা/মুফতি আখ্যায়িত করা ইসলাম ও আলিম সমাজের জন্য বড়ই কলঙ্ক। [সহীহ বুখারী, মুসলিম, সুনানে নাসাঈ ইত্যাদি]

 

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •