প্রশ্ন করেছেন মুহাম্মদ মহসিন আহমদ (মারুফ)
ছাত্র: জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: সূরা ইয়াসীন তেলাওয়াতের ফজিলত সম্পর্কে জানিয়ে উপকৃত করবেন।
উত্তর: মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীন উম্মতে মুহাম্মদীর উপর বড় অনুগ্রহ করেছেন যে, তিনি আমাদের উপর ধর্মগ্রন্থ হিসেবে ‘ক্বোরআনুল করীম’ অবতীর্ণ করেছেন। পবিত্র ক্বোরআন হলো নূর। যা দ্বারা গোমরাহী ও মুর্খতা থেকে মুক্তি লাভ করা যায়। অন্তরের কালিমা দূর করার এক মহৌষধ হলো পবিত্র ক্বোরআন। আল্লাহ্ ও বান্দার মাঝে সেতু বন্ধনের অন্যতম উপায় ক্বোরআন মজিদ। এটা একটা পরিপূর্ন জীবন বিধান। ক্বোরআন তিলাওয়াত করার মধ্যেও রয়েছে অসংখ্য ফজিলত। সূরা ইয়াসীন পবিত্র ক্বোরআন মজীদের ফজিলতপূর্ণ ৩৬ নম্বর সূরা; যার আয়াত সংখ্যা ৮৩, রুকু সংখ্যা ৫। হাদীসে পাকে সূরা ইয়াসীন শরীফকে ক্বোরআনের কলব/হৃদয় বলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে হাদীসে পাকে বর্ণিত রয়েছে-
عن اَنَس قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم اِنَّ بكل شئ قَلْبٌ وَقَلْب الْقرانِ يس كتب الله له بقرأتِهَا قِرَأتَ القُرْأنِ عَشَرَ مَرَّاتٍ- (رواه الترمذى) অর্থাৎ- বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, প্রিয়নবী রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- প্রত্যেক বস্তুর কলব/অন্তর রয়েছে, আর পবিত্র ক্বোরআনের কলব হলো সূরা ইয়াসীন। অতএব, যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে তাঁর জন্য আল্লাহ্ দশবার পূর্ণ ক্বোরআন তিলাওয়াতের সাওয়াব লিপিবদ্ধ করবেন। [তিরমিযী শরীফ]
হাদীসে পাকে সূরা ইয়াসীন পাঠ করার দরুণ সকল প্রয়োজন পূর্ণ হয় মর্মে উল্লেখ রয়েছে। যেমন-
عن عطاء بن رباح قال بلغنى اَنَّ رسول الله صلى الله عليه وسلم قال مَنْ قَرَأَ “يس” فى صَدْرِ النَهَارِ قُضِيَتْ حَوَائِجُه- (دارمى شريف) অর্থাৎ- বিশিষ্ট হাদীস বর্ণনাকারী হযরত আ’তা ইবনে রাবাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমার নিকট এ হাদীস পৌঁছেছে যে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- ‘‘দিনের প্রথমাংশে যে ব্যক্তি সূরা ইয়াসীন পাঠ করবে, তার সকল প্রয়োজন/ আশা পূর্ণ হয়ে যাবে। [দারেমী শরীফ]
অপর হাদীসে পাকে রয়েছে ‘সূরা ইয়াসীন’ পাঠের দরুন জীবনের পূর্বাপর সকল গুনাহ্ ক্ষমা হয়ে যায়। যেমন- عن معقل ابن ياسر المزنى اَنَّ النَّبِىَّ صلى الله عليه وسلم قال من قَرَأ “يس” اِبْتِغَاء وَجْهِ الله تعالى غُفِرَلَه مَا تَقَدَّمَ مِنْ ذَنْبِه فَاقْرَوأهَا عِنْدَ مَوْتكُمْ—(رواه البيهقى)
অর্থাৎ- সাহাবায়ে রাসূল হযরত মা’ক্বাল ইবনে ইয়াসের মুযানী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ‘‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য সূরা ইয়াসীন শরীফ পাঠ করবে, তাঁর পূর্বাপর সকল গুনাহ্ ক্ষমা করে দেয়া হবে। অতএব, তোমাদের মৃত ব্যক্তিদের নিকট বা মৃত্যুর সময় তা পাঠ করো। [বায়হাকী শরীফ]
এভাবে সূরা ইয়াসীন শরীফ তিলাওয়াতের অনেক ফজিলত ও সাওয়াবের কথা নির্ভরযোগ্য হাদীস ও তাফসিরের কিতাব সমূহে বর্ণিত আছে। [তাফসীরে রুহুল বয়ান ইত্যাদি]