সম্পাদকীয়

0
সম্পাদকীয়…
বছরান্তে ফিরে এসেছে নতুন হিজরী নববর্ষের (১৪৪২ হি.) প্রথম মাস মুর্হরম। আহলান-সাহলান। এ মাসেই সংঘটিত হয়েছে বিশ্বের নিষ্ঠুর এক ভয়াবহ মমন্তুদ ঘটনা। ইরাকের কারবালা প্রান্তরে সপরিবারে শহীদ হন জান্নাতের সর্দার তাজেদারে মদীনা সরওয়ারে কায়েনাত হুযূর পুরনূর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র চোখের মনি অতি আদরের প্রিয়তম দৌহিত্র্য ইমামে আলী মাকাম সৈয়্যদুনা হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুম। আল্লাহ্ জাল্লাশানুহুর মনোনীত প্রিয় নবীর প্রচারিত ধর্ম ইসলাম’র নীতি-আদর্শ ও মুল্যবোধকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে চির অম্লান রাখার জন্য ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু নিশ্চিত শাহাদত বরণের কথা জেনেও আল্লাহ্-রসূলের নির্দেশিত পথ ও মতের সঠিক রূপরেখা উন্নত রাখার মানসে সত্যের মুখোমুখি হতে ইতস্ততঃ করেননি। ভয় পাননি, নির্ভীক চিত্তে অন্যায়ের প্রতিবাদে কঠোর হয়েছেন, আহার-নিদ্রা ত্যাগ করে দুধের শিশুর পিপাসার্ত করুন রোদনেও তিনি সত্যের জন্য লড়াই করে যেতে পিছপা হননি। সাবাশ ইমাম হোসাইন! বিন¤্র শ্রদ্ধায় ও আমরা আপনার নিকট চির ঋণী, নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান ক্ষয় নাই, তার ক্ষয় নাই। আপনার মহৎ আত্মদানে আপনি যেমন মহিমান্বিত হয়েছেন তেমনি আপনার গোলামরা আমরাও গৌরবান্বিত হয়েছি আপনার কারণে। বিশ্ব মুসলিম মিল্লাত এ ঋণ কিভাবে শোধ করবে। হে মহান সেনাপতি, আপনি আমাদের জন্য যে আদর্শ নীতি ও মূল্যবোধ রেখে গেছেন তা অনুসরণ করার মাঝেই আমাদের দায়ভারও মুক্তি নিহিত রয়েছে। আপনার নিকট থেকে আমরা শিক্ষা পেয়েছি অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, নিজেকে যে কোন ধরনের অন্যায় কাজ হতে বিরত রাখা, প্রয়োজনে শির দেয়া তবুও মাথা নত নয়। অপর গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা যার কোন বিকল্প নেই তা হলো নামায। আপনার নানাজান আমাদের প্রাণপ্রিয় নবী ইমামুল আম্বিয়া হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র নিকট হতে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ বিধান ‘নামায’ কায়েম রাখা আমাদের জন্য ফরয। দাজ্জাল ঘাতকের তরবারির নীচে শির থাকা সত্ত্বেও নামাযের জন্য আপনি সময় প্রার্থনা করেছেন আর নরঘাতক জাহান্নামী সাজদারত অবস্থায় আপনাকে শহীদ করল। আপনার শিক্ষা যে কোন অবস্থায় নামায আদায় করতে হবে। ইসলাম তথা শরীয়ত বিরোধী কর্মকান্ড প্রতিহত করতে হবে, সত্য-ন্যায়ের পথে নির্ভীকতার সাথে পথ চলতে হবে। এখানে কোন আপোষ নেই, বিকল্প চুক্তি নেই। এ দু’টি পথ নির্দেশনার মাঝে একজন মুমিন মুসলমানের যাবতীয় কার্যক্রম আবর্তিত হতে হবে, তবেই তিনি হবেন ঈমানদার মুসলিম, নবী-অলী প্রেমিক যোদ্ধা। আল্লাহ্ আমাদের ইমামে আলী মাকামের প্রদর্শিত পথে অটল থাকার তাওফিক দিন। 01. Moharram
বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় দিকপ্রান্ত, দিশেহারা, বিধর্মীদের হাতে লাঞ্ছিত, নিগৃহীত, অপমানিত, ১৫০ কোটি মুসলিম ভীত সন্ত্রস্থ, অভ্যন্তরীন কলহ, দ্বন্দ্বও শ্রেষ্ঠত্বে লড়াইয়ে পরস্পর পরস্পরের রক্তস্লাতে উল্লাসিত। দম্ভ, অহমিকা, ভোগ দখলে মত্ত হয়ে ধ্বংসের লেলিহান শিখার দোঁয়ায় বিবর্ণ, বিষন্ন, অতীতের সোনালী যুগ আজ ইতিহাস। জাতি আর ধ্বংসম্মুখ, ইসলামের নীতি আদর্শ, স্বকীয়তা, বৈশিষ্ট্য, আল্লাহ্-রসূল’র সাবধান বাণী ভুলে গিয়ে আমরা আজ কুপমন্ডুপ হয়ে পড়েছি। পরিত্রাণ কিভাবে হবে, ধ্বংসস্তুপ থেকে বের হবার পথ কে দেখাবে? শরীয়ত-তরীকতের রজ্জুকে শক্ত অবস্থানে দাঁড় করানোর উপায়ও বা কি? হারানো অতীত ঐতিহ্য ইসলামী তমদ্দুন কিভাবে ফিরে পাব এসকল প্রশ্নের উত্তর খোঁজার সর্বোৎকৃষ্ট সময় এখন। বিলম্ব, অবহেলা আর আত্মঘাতি পদক্ষেপ-আমাদের বিধর্মীদের দাসত্বের শৃঙখলে আবদ্ধ করবে। মুসলমান বীরের জাতি। আমরাই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ জাতি। ইসলামই মহিমান্বিত, শাশ্বত, আলোয় ভরা আলোকিত পথ। তাহলে আমাদের এই অবস্থা কেন? আমরা হারিয়ে যাচ্ছি পংকিল আবর্তে? নোংরামী আর ভাড়ারের বর্জ্জ্য কেন আমাদের বিধিলিপি হবে? ভেবে দেখুন মুসলিম ভাইয়েরা! ইমামে আলী মাকামের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য, তাকওয়া, সত্য সন্ধানী এবং সত্য ও ন্যায়ের প্রতিষ্ঠাকারী বীর শহীদের অনুসরণ অনুকরণ এবং স্বীয় চরিত্রে প্রতিষ্ঠা করার মাঝেই আমাদের মুক্তি নিহিত, ইহকাল পরকালের সুখ সমৃদ্ধি নির্ভরশীল। আসুন শোহাদায়ে কারবালার স্মৃতির প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধা জানিয়ে ইমাম হোসাইনের দেখানো পথে অভিযাত্রী হই, তাহলেই আমাদের হারানো গৌরব ফিরে পাব। আল্লাহ্ ও রসূলের রেজামন্দি হাসিল হবে। পাপী-তাপীর অতীতের ভুল ভ্রান্তি অপরাধ মার্জনা করার ক্ষমতা মহান ¯্রষ্টা আল্লাহর। তাঁর কাছে কৃত অপরাধের ক্ষমা প্রার্থনার মধ্যেই আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। নবী-অলীর শরনাপন্ন হলে আল্লাহ্র পথের দিশা মিলবে। এখনই শুরু হোক মনস্ততাত্বিক যুদ্ধ। হে আল্লাহ্ আমাদের ক্ষমা করুন। হে ইমামে আলী মাকাম আমাদের ক্ষমা করুন, আগামী পথচলার সাহস দিন। আপনার অধম সন্তান পরিচয়ে যেন জীবন উৎসর্গ করতে পারি। ‘তরজুমান’র পাঠক শুভানুধ্যায়ী, বিজ্ঞাপনদাতা, লেখক সহ সর্বস্তরের মুসলিম ভাইদের জানাই হিজরী নববর্ষের শুভেচ্ছা ও মুবারকবাদ। অতীতের গ্লানি থেকে মুক্তি লাভ করে আমরা যেন নতুন পৃথিবী গড়তে পারি এ প্রার্থনা রইলো আল্লাহর নিকট।
শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •