দাঁতের পরিচর্যায় মিসওয়াকের উপকারিতা

0
মুহাম্মদ কুতুব উদ্দীন-সাদারপাড়া, পাইরোল পটিয়া,
চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: দাঁতের পরিচর্যায় মিসওয়াকের উপকারিতা জানানোর জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
উত্তর: ফরজ ওয়াজিব ইবাদত পালনের পাশাপাশি দৈনন্দিন জীবনে সুন্নাত পালনের ব্যাপারে ইসলাম ও প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম উদ্বুব্ধ এবং গুরুত্বারোপ করেছেন। আর মিসওয়াক করা প্রিয়নবীর রেখে যাওয়া অতি বরকতময় একটি সুন্নাত।
হাদীসে পাকে মিসওয়াক করার ফযিলত ও উপকারিতা সম্পর্কে প্রায় ৪০টি হাদিস পাওয়া যায়। তন্মধ্যে দু’ একটি বরকত ও সাওয়াবের উদ্দেশ্যে প্রদত্ত হলঃ
عَنْ عآئِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَلسِّوَاكُ مَطْهَرَةٌ لِلْفَمِّ مَرَ ضَاةٌ لِلرَّبِّ [رَوَاهُ مِشكواة] অর্থাৎ উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, মিসওয়াক হলো মুখ পবিত্র রাখার মাধ্যম এবং আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উপায়। [মিশকাত শরীফ, পৃ. ৪৪] অপর একটি হাদীসে মিসওয়াক করার ফজিলত প্রসঙ্গে প্রিয়নবী রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
عَنْ عَآئِشَةَ قَالَتْ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَفْضَلُ الصَّلوة ُالَّتِىْ يستاك لها على الصلوة التى لا يستاك لها سبعين ضعْفًا [رواه البيهقى ـ مشكوة صفحه ৪৫] অর্থাৎ হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, নামাযের জন্য (ওযূর সময়) মিসওয়াক করে আদায়কৃত নামায ওই নামায অপেক্ষা ৭০ (সত্তর) গুণ বেশী সাওয়াবের অধিকারী, যে নামাযে মিসওয়াক করা হয় নাই।
[বায়হাকী ও মিশকাত শরীফ, পৃ. ৪৫] তাছাড়া প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো এরশাদ করেছেন,
لَوْلَا اَنْ اَشُقَّ عَلى اُمَّتِىْ لاَ مرتُهُمْ بِالسِّوَاكِ عِنْدَ كُلَّ صَلوةٍ وَلَاَخَّرْتُ صَلوةَ الْعِشَاءِ اِلى ثُلُثِ اللَّيْلِ الخـ .. [رواه الترمذى وابوداؤد ـ مشكوة ـ صفحه ৪৫] অর্থাৎ যদি আমি আমার উম্মতের উপর কঠিন মনে না করতাম, তাদেরকে প্রত্যেক নামাযের (অযূর) সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম এবং এশার নামাযকে রাতের এক-তৃতীয়াংশ পর্যন্ত দেরী করে আদায় করার আদেশ করতাম। [তিরমিযি ও আবু দাউদ ও মিশকাত শরীফ, পৃ. ৪৫]
এ ছাড়া হাদীসে পাকে প্রিয়নবী রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মিসওয়াক করা অধিকাংশ নবীদের তরিকা ও ফিতরত বা স্বভাবজাত অভ্যাস হিসেবে উল্লেখ করেছেন। তাই এর মধ্যে ইহ ও পরকালীন ফায়দা বিদ্যমান। যেমন (ক.) ইহকালীন ফায়দাসমূহঃ ১. মস্তিস্ক সজীব হয়, ২. দাঁত জীবানুমুক্ত হয়, ৩. দাঁতের ক্যালসিয়াম পূরণ হয়, ৪. দারিদ্রতা দূর হয় এবং সচ্ছলতা আসে, ৫. স্মৃতি শক্তি বৃদ্ধি পায়, ৬. মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়, ৭. দাঁতের মাড়ি শক্ত হয়, ৮. পাকস্থলী রোগমুক্ত হয়, ৯. চেহারার সৌন্দর্য বৃদ্ধি হয় ও ৯. হৃদয় পরিচ্ছন্ন হয় ইত্যাদি।
(খ.) পরকালীন ফায়দা বা উপকারঃ ১. ইবাদতে বিশেষতঃ নামাযে ৭০ গুণ সওয়াব বৃদ্ধি হয়, ২. মৃত্যুর সময় কালমা নসীব হয়, ৩. গুনাহ্ হতে মুক্ত হয়ে মৃত্যুবরণের সুযোগ হয়, ৪. মিসওয়াক কারীর জন্য জান্নাতের দরজা খোলে দেওয়া হয়, ৫. জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় ৬. আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ ও সুন্নাত পালনের সওয়াব অর্জিত হয়, ৭. মিসওয়াককারীর সাথে ফেরেশতারা ইস্তেগফার ও মুসাফাহা করেন, ৮. ইবাদতে আনন্দ সৃষ্টি হয় এবং ৯. আমলনামা ডান হাতে লাভ করবে ইত্যাদি।
মিরকাত শরহে মিশকাত গ্রন্থের ২য় খন্ডের ৩য় পৃষ্ঠায় হযরত শেখ মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহ. উল্লেখ করেন, মিসওয়াকের ৭০টি উপকার রয়েছে, তন্মধ্যে সর্বনি¤œটি হলো মৃত্যুকালে কালমা নসিব হবে।
[মেরকাত শরহে মিশকাত, কৃত. মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী রহ. ও মেরাত শরহে মেশকাত, কৃত. মুফতি আহমদ ইয়ারখাঁন নঈমী রহ. মিসওয়াক অধ্যায়]
শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •