ফেরেশতা নূরের সৃষ্টি
অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি
عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهَا عَنْ رَسُوْلِ اللهِ صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ خُلقَتِ الْمَلَائِكَةُ مِن نُوْرِ وخُلِقَ الْجَانّ من مَّارِج مِّنْ نَار وخُلِقَ اَدَمُ مِمَّا وُصِفَ لَكُمْ- (رواه مسلم)
عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّ اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّمَ مَا مِنْ يَوْمٍ يُصْبِحُ العِبَادُ اِلَّا مَلَكَانِ يَنْزِلَان فَيَقُوْلُ اَحَدُهُمَا اَللَّهُمَّ اَعْطِ مُنْفِقًا خَلَفًا وَيَقُوْلُ الاخر اَعْطِ مُمْسِكًا تَلَفًا- (رواه البخارى و مسلم)
অনুবাদ: হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ফেরেশতাদেরকে নূর থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে, জ্বীন সৃষ্টি হয়েছে কালো ধোঁয়া মিশ্রিত আগুন থেকে। আর আদম সৃষ্টি সম্পর্কে তোমাদেরকে বর্ণনা দেয়া হয়েছে। [মুসলিম শরীফ]
হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, যখনই আল্লাহর বান্দারা প্রত্যুষে শয্যা ত্যাগ করে তখনই দু’জন ফেরেশতা অবতীর্ণ হন। তন্মধ্যে একজন বলতে থাকেন, হে আল্লাহ্! তুমি দাতা ব্যক্তিকে প্রতিদান দাও। অন্যজন বলতে থাকেন, হে আল্লাহ্! কৃপণ ব্যক্তিকে ধ্বংস করো। [বুখারী ও মুসলিম শরীফ]
প্রাসঙ্গিক আলোচনা
বর্ণিত হাদীসদ্বয়ে ফেরেশতার সৃষ্টির বর্ণনা ও তাঁদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালনের বর্ণনা আলোকপাত হয়েছে, জেনে রাখুন, ফেরেশতারা আল্লাহ্র নূরের সৃষ্টি। তাঁদের প্রতি ঈমান রাখা ইসলামের মৌলিক বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত। ক্বোরআন ও হাদীসের আলোকে ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান আল্লাহ্র প্রতি ঈমানের পূর্ণতার প্রমাণ। তাঁদের অস্বীকার করা কুফরীর নামান্তর। ফেরেশতারা আল্লাহ্র সম্মানিত বান্দা।
ফেরেশতার সংজ্ঞা: আরবি মালাকুন শব্দের অর্থ ফেরেশতা। এবং বহুবচন মালায়িকা, ফেরেশতাগণ আল্লাহর এক প্রকার সম্মানিত সৃষ্টি। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়-اَلْمَلَائِكَةُ جِسْمٌ نُوْرِىٌّ متشكل بِاشكَالٍ مُختلفَةٍ لَا يَعْصُوْنَ اللهَ مَا اَمَرَهُمْ وَ يَفْعَلُوْن مَا يُؤمَرُؤنَ- (قواعد الفقه)
অর্থ: ফেরেশতাগণ জ্যোতির্ময় সুক্ষ্ম দেহের অধিকারী নূরের সৃষ্টি। যাঁদের বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। যারা আল্লাহর নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে না। সর্বদা আল্লাহর নির্দেশ পালনে নিয়োজিত থাকেন। [কাউয়ায়েদুল ফিকহ্]
বুখারী শরীফের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র মতে ফেরেশতার এক অর্থ “বার্তা বাহক” তাঁদের অবস্থানস্থল আসমানী জগত।
[ফাতহুলবারী খন্ড- ৬, পৃষ্ঠা ২৩২]
ফেরেশতাদের ব্যাপারে যে ধরনের ঈমান রাখা অপরিহার্য
* ফেরেশতাদের অবিশ্বাস করলে মু’মিন হিসেবে গণ্য হবে না।
* তাঁরা আল্লাহর নূরের সৃষ্টি।
* তারা পুরুষও নন, নারীও নন।
* ফেরেশতাদের কোন সন্তান-সন্ততি নেই।
* তাঁরা পানাহার করে না, তাঁদের তন্দ্রাও নেই, নিদ্রাও নেই।
* তারা সর্বপ্রকার গুনাহ্ থেকে পুতঃপবিত্র। সকলেই মাসুম বা নিষ্পাপ।
* তাঁরা বিভিন্ন আকৃতি ধারণ করতে পারেন। (কুকুর ও শূকর ব্যতীত)
* ফেরেশতাদের প্রকৃত সংখ্যা আল্লাহ্ ব্যতীত কারো জানা নেই।
* আল্লাহ্র ইবাদত-বন্দেগীতে নিয়োজিত থাকা তাঁদের প্রধান কাজ।
* ফেরেশতারা আল্লাহ্ যা বলেন, তা ছাড়া নিজ এখতিয়ারে কিছু করতে পারেন না।
* হযরত জিবরীল আলায়হিস্ সালাম বিভিন্ন আকৃতিতে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র দরবারে উপস্থিত হতেন। অধিকাংশ সময় হযরত দেহইয়া কালবী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র আকৃতিতে আসতেন। [আল্ হিদায়াতুল মুবারাকা ফী তাখলীকে মালায়িকা: কৃত- ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি]
আল্ ক্বোরআনে ফেরেশতাদের বর্ণনা
ফেরেশতাগণ তাওহীদ তথা একত্ববাদের সাক্ষ্য দাতা। আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-
شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لاَ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ وَالْمَلائِكَةُ وَأُوْلُواْ الْعِلْمِ-
‘‘আল্লাহ্ সাক্ষ্য দেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কোন ইলাহ্ নেই, ফেরেশতাগণ এবং জ্ঞানীগণ (এই সাক্ষ্য দেন)। [সূরা: আলে ইমরান, আয়াত- ১৮]
ফেরেশতাদের পরিচয় হলো তাঁরা আল্লাহর সম্মানিত বান্দা। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন- بَلْ عِبَادٌ مُّكْرَمُونَ-
‘‘বরং তারা (ফেরেশতারা) আল্লাহর সম্মানিত বান্দা।’’ [সূরা: আম্বিয়া, আয়াত- ২৬]
আল্লাহ্র নির্দেশের বাইরে কোন কাজ তারা করেন না। তাঁরা আল্লাহ্র একান্ত অনুগত সৃষ্টি কোন প্রকার নাফরমানী তাঁরা করেন না। এরশাদ হয়েছে-
لَا يَعْصُوْنَ اللهَ اَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُوْنَ مَا يُؤمَرُوْنَ-
তাঁরা আল্লাহ্ নির্দেশের বিরুদ্ধাচারণ করেন না। আল্লাহ্ যা আদেশ করেন তাই তাঁরা পালন করেন। [সূরা: নাহল, আয়াত- ৫০]
ফেরেশতাদের অবিশ্বাস করা কুফরী
ফেরেশতাদের প্রতি ঈমান রাখা ঈমানের সপ্ত মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত। পবিত্র ক্বোরআনে এরশাদ হয়েছে-
وَمَن يَكْفُرْ بِاللَّهِ وَمَلائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ فَقَدْ ضَلَّ ضَلالاً بَعِيدًا-
অর্থ: যে আল্লাহ্ তাঁর ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাব সমূহ,তাঁর রাসূলগণ ও পরকালকে অবিশ্বাস করবে সে ভীষণভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে পড়বে। [সূরা: নিসা, আয়াত- ১৩৬]
ফেরেশতার সংখ্যা
ফেরেশতাদের সংখ্যা আল্লাহ্ ব্যতীত কারো জানা নেই। আল্লাহ্ তা‘আলা অসংখ্য ফেরেশতা সৃষ্টি করেছেন। এ প্রকৃত সংখ্যা তিনিই জ্ঞাত। তবে পবিত্র ক্বোরআনে আল্লাহ্ তা‘আলা কিছু সংখ্যক ফেরেশতাদের নাম উল্লেখ করেছেন। যেমন সূরা বাকারায় জিবরীল আলায়হিস্ সালাম, মিকাঈল আলায়হিস্ সালাম, হারুত ও মারুত আলায়হিমাস্ সালাম ফেরেশতাদের নাম উল্লেখ হয়েছে। এরশাদ হয়েছে- مَن كَانَ عَدُوًّا لِّلَّه وَمَلائِكَتِهِ وَرُسُلِهِ وَجِبْرِيلَ وَمِيكَالَ فَإِنَّ اللَّهَ عَدُوٌّ لِّلْكَافِرِينَ-
অর্থ: যে কেউ আল্লাহর তাঁর ফেরেশতাগণের তাঁর রাসূলগণের এবং জিবরীল মিকাঈলের শত্রু, সে জেনে রাখুক নিশ্চয় আল্লাহ্ কাফিরদের শত্রু। [সূরা: বাক্বারা, আয়াত- ৯৮]
চার ফেরেশতার বিশেষ দায়িত্ব
আল্লাহ্ তা‘আলা চার জন ফেরেশতাকে বিশেষ মর্যাদা ও দায়িত্ব দিয়েছেন।
১. হযরত জিবরীল আলায়হিস্ সালাম তিনি আল্লাহর নিকট থেকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সহ সম্মানিত নবী-রাসূলণের নিকট ওহী আনয়ন করেছেন। তিনি নবীজির দরবারে চব্বিশ হাজার বার ওহী নিয়ে এসেছেন।
২. হযরত মিকাঈল আলায়হিস্ সালাম’র দায়িত্ব হলো- সৃষ্টি জাতের খাদ্য-দ্রব্যের ব্যবস্থাপনা করা। মেঘমালা প্রস্তুতকরণ, বৃষ্টি বর্ষণ, আল্লাহর নির্দেশক্রমে সৃষ্টি জগতের জীবিকা সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত।
৩. হযরত ইসরাফীল আলায়হিস্ সালাম’র দায়িত্ব হলো- আল্লাহর নির্দেশে কিয়ামতের পূর্বক্ষণে সিঙ্গায় ফুৎকার দেওয়া। বিশ্বজগতের আয়ুস্কাল সমাপ্তির সাথে সাথে তিনি সিঙ্গায় ফুৎকার দিবেন। শেষ বিচারের দিনেও ফুৎকার দিবেন। এরশাদ হয়েছে-
يَوْمَ يُنفَخُ فِي الصُّورِ فَتَأْتُونَ أَفْوَاجًا-
৪. হযরত আযরাঈল আলায়হিস্ সালাম’র দায়িত্ব পবিত্র ক্বোরআন ও হাদীসে তাঁকে ‘মালাকুল মওত’’ (মৃত্যুর ফেরেশতা) বলা হয়েছে। বিশ্বজগতের রূহ কবজ করা তাঁর দায়িত্ব। পবিত্র ক্বোরআনে এরশাদ হয়েছে-
قُلْ يَتَوَفَّاكُم مَّلَكُ الْمَوْتِ الَّذِي وُكِّلَ بِكُمْ ثُمَّ إِلَى رَبِّكُمْ تُرْجَعُونَ-
অর্থ: (হে হাবীব) আপনি বলুন! তোমাদের জন্য নিযুক্ত মৃত্যুর ফেরেশতা তোমাদের প্রাণ হরণ করবে। অবশেষে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের নিকট প্রত্যাবর্তিত হবে। [সূরা: সাজদা, আয়াত- ১১]
কবরের ফেরেশতা মুনকার ও নাকীর
মৃত ব্যক্তিকে দাফন করার পর কবরে মুনকার ও নাকীর নামে দু’জন ফেরেশতা কবরবাসীর নিকট সওয়াল-জওয়াব এর দায়িত্ব পালন করেন। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-
اِذَا اُقْبِرَ الْميتُ اَتَاهُ مَلَكَانِ اسَوَادَانِ اَزْرَاقَانِ يُقَالُ لِاحدِهما الْمُنْكَرُ والاخر النكير- فيسئلان عَنْ رَبّهِ وَدِينه ونبيه-
নবীজি সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, যখন মৃত ব্যক্তিকে কবস্থ করা হয়। তখন কালো নীল চক্ষু বিশিষ্ট দু’জন ফেরেশতা আগমন করেন। একজনকে বলা হয় মুনকার, অন্যজনকে নাকীর অতঃপর তাঁরা তার রব, দ্বীন ও নবী সম্পর্কে প্রশ্ন করেন।
ফেরেশতারা সর্বদা নবীজির উপর দরূদ শরীফ পাঠ করেন
দরূদ শরীফ এক উত্তম ও বরকতময় আমল। স্বয়ং আল্লাহ্ তা‘আলা ও তাঁর অসংখ্য ফেরেশতারা তাঁর প্রিয় হাবীবের উপর সর্বদা দরূদ শরীফ পাঠ করেন। পবিত্র ক্বোরআনে আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন-
إِنَّ اللَّهَ وَمَلائِكَتَهُ يُصَلُّونَ عَلَى النَّبِىِّ الاية-
‘‘আল্লাহ্ নবীর প্রতি রহমত বর্ষণ করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও নবীর উপর দরূদ পাঠ করেন। [সূরা: আহযাব, আয়াত- ৫৬]
ফেরেশতাগণ মু’মিনদের জন্য রহমত কামনা করেন ও ক্ষমা প্রার্থনা করেন। পবিত্র ক্বোরআনে এরশাদ হয়েছে-
هُوَ الَّذِي يُصَلِّي عَلَيْكُمْ وَمَلائِكَتُهُ لِيُخْرِجَكُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ وَكَانَ بِالْمُؤْمِنِينَ رَحِيمًا-
‘‘তিনি আল্লাহ্ তোমাদের প্রতি রহমত করেন এবং তাঁর ফেরেশতাগণও তোমাদের জন্য অনুগ্রহ প্রার্থনা করে অন্ধকার হতে তোমাদেরকে আলোতে আনার জন্য এবং তিনি মু’মিনদের প্রতি পরম দয়ালু। [সূরা: আহযাব, আয়াত- ৪৩]
নবীজি ফেরেশতাকে দেখেন
নবীজি হযরত জিবরীল আলায়হিস্ সালামকে তাঁর প্রকৃত আকৃতিতে দু’বার দেখেছেন। মক্কার পাহাড়ের উপত্যকায় একবার, দ্বিতীয়বার মি’রাজ রজনীতে সিদরাতুল মুনতাহা নামক স্থানে। আল্লাহ্ তা’আলা এরশাদ করেন-وَلَقَدْ رَآهُ بِالأُفُقِ الْمُبِينِ-
অর্থ: আর তিনি (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) জিবরীলকে স্পষ্ট দিগন্তে দেখেছেন। [সূরা: তাকভীর, আয়াত- ২৩]
وَلَقَدْ رَآهُ نَزْلَةً أُخْرَى- عِندَ سِدْرَةِ الْمُنتَهَى- ‘‘নিশ্চয়ই তিনি (মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) তাঁকে জিবরীলকে আরেকবার দেখেছিলেন।
[সূরা: নাজম, আয়াত- ১৩-১৪]
তখন রূহুল আমীন হযরত জিবরীল আলায়হিস্ সালাম’র ছয়শত ডানা বিশিষ্ট বৃহদাকার আকৃতিতে পৃথিবী ও আকাশের মধ্যবর্তী স্থান পূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে- وَقَدْ اَخرجَ مُسلم و البخارى عَنْ عبد الله بنُ مسعُود رضى اللهُ عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ تَرَاى جِبْرِئيلَ عَلَيْهِ السَّلام لَهُ سِتٌّمِائَة جَنَاحِ-
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম জিবরীল আলায়হিস্ সালামকে ছয়শত ডানা বিশিষ্ট অবস্থায় দেখেছেন। [ফাতহুল বারী: খন্ড- ২, পৃষ্ঠা- ২৪২]
ফেরেশতাদের মৃত্যু
পবিত্র ক্বোরআনে আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন- كُلُّ نَفْسٍ ذَائِقَةُ الْمَوتِ- প্রত্যেকেই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। [সূরা: আল্ ইমরান, আয়াত- ১৮৫]
যখন এ আয়াত অবতীর্ণ হলো, ফেরেশতারা জানলো, তাঁরাও মৃত্যুবরণ করবে। ইমাম রাযী তাফসীরে কবীরে ইবনে জরীর থেকে বর্ণনা করেন-
وَكُلّ مَلَكَ الْمَوت بِقَبْضِ اَرْوَاحِ الْمُؤمِنِيْنَ وَالمَلَائِكَة-
মালাকুল মাওত মুসলমান ও ফেরেশতাদের রূহ কবজ করবেন, তবে ফেরেশতাগণ কিয়ামত পর্যন্ত জীবিত থাকার বিষয়টি অসংখ্য হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিয়ামতের পূর্বে কোন ফেরেশতার মৃত্যু হবে না। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে হাদীস বর্ণিত হয়েছে-
وَالْمَلَائِكَةُ يَمُوْتُوْنَ فِى الصَّعْقَه الْاُولى واَنَّ مَلَكَ الموتِ يقبَضُ اَرْوَاحَهُمْ ثُمَّ يَمُوْتُ-
শিংগায় যখন প্রথম ফুৎকার দেওয়া হবে,মালাকুল মাওত ফেরেশতাদের রূহ কবজ করবেন। অতঃপর তিনিও মৃত্যু বরণ করবেন।
হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
اَخِرُهُمْ مُوتًا مَلَكَ الْمَوْت-
ফেরেশতাদের মধ্যে সর্বশেষ মালাকুল মাওত এর মৃত্যু হবে। আল্লাহ্ তা‘আলার পক্ষ থেকে নির্দেশ হবে মরে যাও, তখন তিনিও মৃত্যু বরণ করবেন। তবে শেখুল আকবর মুহিউদ্দীন ইবনুল আরবী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি সহ একদল মনীষীদের মতে ফেরেশতারা হলেন, ‘রূহ’ সদৃশ্য রূহের মৃত্যু হয় না। দেহের মৃত্যু হয়। সুতরাং ফেরেশতার সাথে মৃত্যুর কোন সম্পর্ক নেই। এটাই বিশুদ্ধ ও গ্রহণযোগ্য অভিমত। আল্লাহ্ তা‘আলা অধিক জ্ঞাত। [আল্ হিদায়াতুল মুবারাকা ফী তাখলীকে মালায়িকা: কৃত- ইমাম আহমদ রেযা (রাহ.)]
হে আল্লাহ্ ফেরেশতাদের প্রতি আমাদের পরিপূর্ণ ঈমান নসীব করুন- আমীন। বেহুরমাতি সৈয়্যাদিল মুরসালীন।
লেখক: অধ্যক্ষ- মাদ্রাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া, হালিশহর, চট্টগ্রাম