রমযানুল মুবারকে ঐতিহাসিক দিবসসমূহের স্মরণ-

0
রমযানুল মুবারকে ঐতিহাসিক দিবসসমূহের স্মরণ-
মাওলানা মুহাম্মদ আবুল হাশেম >
আল্লাহ তা‘আলা মাহে রমযানুল মুবারককে অফুরন্ত বরকত ও ফযিলতের প্র¯্রবন বানিয়েছেন। আর এ ফযিলতের অগণিত কারণ ও যুক্তি রয়েছে, যেগুলোর বদৌলতে এটিকে شهرالله‘শাহরুল্লাহ’ আখ্যা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ তা‘আলা স্বীয় উলূহী কিতাব ক্বোরআনুল কারীমও এ মাসে নাযিল করেছেন, যা এ মাসের ফযিলতের একটি চিরস্থায়ী কারণ। ইরশাদ-ই বারী তা‘আলা- شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنْزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ ‘রমযান মাস, যাতে ক্বোরআন অবতীর্ণ হয়েছে।’
লায়লাতুল ক্বদর, রোযা রাখা এবং ই’তিকাফ করা ওই সকল ফযিলত, যেগুলো এ মাসের গুরুত্ব ও ফযিলতকে অবর্ণনীয় পর্যায় পর্যন্ত সমৃদ্ধ করেছে। এছাড়াও মাহে রমযানুল মুবারকে কতগুলো মর্যাদাপূর্ণ ঘটনা সংঘটিত হয়েছে, যেগুলোর স্মরণ অত্যধিক কল্যাণের কারণ হয়। তন্মধ্যে সায়্যিদাহ-ই কায়িনাত হযরত ফাতিমাতুয্যাহ্রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র ওফাত দিবস, হযরত খাদীজাতুল কোবরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র ওফাত দিবস, হযরত সায়্যিদাহ আয়েশা সিদ্দিক্বাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র ওফাত দিবস, ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ, ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়, মাওলায়ে কায়িনাত হযরত আলী মুরতাদ্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র শাহাদাত, ই’তিকাফ, ক্বোরআন নাযিল দিবস উল্লেখযোগ্য। এ ঘটনাবলি ও দিবসসমূহ স্মরণ করা ও হৃদয়-মস্তিষ্কে বিদ্যমান রাখা আল্লাহ রাব্বুল আলামীন-এর এ বাণীর আওতাভুক্ত। এরশাদ হচ্ছে, وَذَكِّرْهُمْ بِأَيَّامِ اللهِ ‘এবং তাদেরকে আল্লাহর দিনসমূহ স্মরণ করিয়ে দাও!’
নিচে উল্লেখিত ঘটনাবলি ও দিবসসমূহের সংক্ষিপ্ত আলোচনা তুলে ধরার প্রয়াস পাচ্ছি।
০১. হযরত ফাতিমাতুয্যাহ্রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র ওফাত দিবস: 
(০৩ রমযানুল মুবারক, ১১ হিজরী)
সায়্যিদাতুন নিসা-ইল ‘আ-লামীন, নূর-ই দীদাহ-ই রাহমাতুল্লিল ‘আলামীন, হযরত সায়্যিদাহ ফাতিমাতুয্যাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সর্বাধিক প্রিয় ও আদরের ‘সাহেবযাদী’ (তনয়া) ছিলেন। তাঁর শুভ জন্ম ৩৯ নবভী বছরে হয়েছিল। তিনি ‘যাহরা’, ‘বতুল’, ‘ত্বয়্যিবাহ’, ‘ত্বাহিরাহ’, ‘শাকিরাহ’, ‘আবিদাহ’, ‘সায়্যিদাতুন নিসা’-এর ন্যায় পবিত্র উপাধীসমূহ দ্বারা সুপ্রসিদ্ধ ও পরিচিত ছিলেন। যিনি ‘আহলে বায়ত’-এর উলূহী ‘লক্বব’ (উপাধী) পেয়েছেন এবং ‘اهل كساء’ ‘আহলে কিসা’ তথা চাদরাবৃত ব্যক্তিবর্গের মধ্যে শামিল হওয়ার মর্যাদাও হাসিল করেছেন। যিনি এমন মহামর্যাদাবান ‘মা’, যাঁর দু’শাহযাদাহ سَيِّدَا شباب أهل الْجنَّة নবী মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ফরমান মোতাবেক জান্নাতের যুবকদের সরদার। তিনি এমন নেককার স্ত্রী, যাঁর পরম সম্মানিত স্বামী হলেন খলীফা-ই রাশিদ, বিলায়তের প্র¯্রবন, ‘বাবু মাদীনাতিল ইলম’ (ইলমের শহরের দ্বার) খেতাবপ্রাপ্ত মাওলায়ে কায়িনাত হযরত আলী মুরতাদ্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু। তিনি স্বয়ং সায়্যিদাতুন নিসা-ইল ‘আ-লামীন আর তাঁর সর্বাধিক মর্যাদাবান পিতা হলেন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, ইমামুল আম্বিয়া এবং সায়্যিদুল মুরসালীন। তাঁর মহামর্যাদার বিন্যাস যেন এভাবেই সুসজ্জিত যে, তাঁর পরম সম্মানিত পিতা হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, সম্মানিত স্বামী হযরত আলী মুরতাদ্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু, এক শাহযাদা হযরত ইমাম হাসান মুজতবা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এবং অপর শাহযাদা ইমাম হুসাইন সায়িদুশ শোহাদা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু।
সারা জগতের সকল সম্মান ও মর্যাদা এ পরিবারেরই পবিত্র সত্ত্বাগণের পদযুগলের ধুলি। সমস্ত পবিত্রতা তাঁদের নিকট থেকেই অর্জিত হয়। আল্লাহ রাব্বুল ইয্যত সায়্যিদাহ-ই কায়িনাত-এর সুমহান পরিবার-পরিজনের পবিত্রতা বর্ণনা করে স্বীয় উলূহী কিতাব ক্বোরআনুল হাকীমে এভাবে এরশাদ করছেন,
إِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا
‘হে নবী পরিবারবর্গ! আল্লাহ তো এটাই চান যে, তোমাদের থেকে প্রত্যেক অপবিত্রতা দূরীভূত করে দেবেন এবং
তোমাদেরকে পবিত্র করে অতীব পরিচ্ছন্ন করে দেবেন।’
কালাম-ই ইলাহীর মধ্যে আল্লাহ তা‘আলা তাঁর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা) পরিবারবর্গকে ‘আহলে বায়ত’ উপাধী দান করে বিশ্বজগতের চতুর্দিকে তাঁর মহত্ব ও উঁচুতার ঢংকা বাজিয়ে দিয়েছেন। কিয়ামত পর্যন্ত তাঁর ওই সকল মহত্ব ও মর্যাদাকে স্থায়ী রাখার জমানত প্রদান করেছেন। হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ধারাবাহিকভাবে ছয় মাস পর্যন্ত তাঁকে ‘আহলুল্ বায়ত’-এর হৃদয়স্পর্শী আহ্বান দ্বারা সম্বোধন করে মুসলমানগণের অন্তরে তাঁর মর্যাদা, মর্তবা ও ফযিলতকে সুপ্রতিষ্ঠিত করে দিয়েছেন এবং মুসলমানগণকে মুক্তির পথের দিশা দিয়েছেন।
হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, ছয় মাস পর্যন্ত হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র নিয়মিত আমল ছিল যে, যখন ফজরের নামাযের জন্য তশরীফ নিয়ে যেতেন, তখন সায়্যিদাহ-ই কায়িনাত ফাতিমাতুয্যাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র দরজায় পাশ দিয়ে অতিক্রমকালে এরশাদ করতেন: الصلاة ، يا اهل البيت ‘হে আহলে বায়ত! নামায কায়েম করো। অতঃপর এ পবিত্র আয়াত তিলাওয়াত করতেন-
إِنَّمَا يُرِيْدُ اللهُ لِيُذْهِبَ عَنْكُمُ الرِّجْسَ أَهْلَ الْبَيْتِ وَيُطَهِّرَكُمْ تَطْهِيْرًا
হযরত সায়্যিদাহ-ই কায়িনাত ফাতিমাতুয্যাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র ফাযাইল ও মানাক্বিব অপরিসীম, অন্তহীন। হাদিস শরীফের কিতাবসমূহ, ইতিহাসের গ্রন্থাদিতে তাঁর মহামর্যাদার কথা ভরপুর রয়েছে। তন্মধ্যে কয়েকটি বর্ণনা নিচে তুলে ধরা হলো:
 হযরত মিস্ওয়ার ইবনে মাখ্রামাহ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:
فَاطِمَةُ بِضْعَةٌ مِنِّي، فَمَنْ أَغْضَبَهَا أَغْضَبَنِي
‘ফাতিমা আমার (শরীরের) টুকরা, যে তাঁকে অসন্তুষ্ট করলো, সে যেন আমাকে অসন্তুষ্ট করলো।’
এ হাদিস-ই মুবারকে হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সায়্যিদাহ-ই কায়িনাতকে শুধুমাত্র স্বীয় শরীরের অংশ আখ্যা দিয়েছেন তাই নয়, বরং স্বীয় উম্মতকে প্রকাশ্যে জানিয়ে দিয়েছেন , যে ব্যক্তি আমাকে খুশি ও আনন্দিত দেখতে চায়, সে যেন আমার প্রাণ ফাতিমাকে অসন্তুষ্ট না করে। আমার শাহযাদী’র প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শন প্রত্যেকের উপর আবশ্যক। যে ব্যক্তি আমার শরীরের টুকরাকে অসন্তুষ্ট করেছে, আমিও তার প্রতি অসন্তুষ্ট।
 হযরত আলী মুরতাদ্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সায়্যিদাহ ফাতিমাকে এরশাদ করেন:
إِنَّ اللهَ يَغْضَبُ لِغَضَبِكِ وَيَرْضَى لِرَضَاكِ
‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা তোমার অসন্তুষ্টিতে অসন্তুষ্ট হন এবং তোমার সন্তুষ্টিতে সন্তুষ্ট হন।’
 হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত,
عَنْ أُمِّ الْمُؤْمِنِينَ عَائِشَةَ أَنَّهَا قَالَتْ: مَا رَأَيْتُ أَحَدًا كَانَ أَشْبَهَ كَلَامًا وَحَدِيثًا بِرَسُولِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِنْ فَاطِمَةَ، وَكَانَتْ إِذَا دَخَلَتْ عَلَيْهِ قَامَ إِلَيْهَا، وَقَبَّلَهَا، وَرَحَّبَ بِهَا، وَأَخَذَ بِيَدِهَا، وَأَجْلَسَهَا فِي مَجْلِسِهِ، وَكَانَتْ هِيَ إِذَا دَخَلَ عَلَيْهَا، قَامَتْ إِلَيْهِ، فَقَبَّلَتْهُ، وَأَخَذَتْ بِيَدِهِ،
‘তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সাথে কথাবার্তায় সায়্যিদাহ ফাতিমা’র চেয়ে অধিক মিল আর কাউকে দেখিনি। হযরত ফাতিমা যখন হুযূর করীমের নিকট আসতেন, তখন তিনি (হুযূর করীম) দাঁড়িয়ে যেতেন, তাঁকে চুম্বন করতেন, স্বাগতম জানাতেন এবং তাঁর হাত ধরে তাঁকে স্বীয় আসনে বসাতেন। আর যখন তিনি (হুযূর করীম) তাঁর নিকট তশরীফ নিয়ে যেতেন, তখন তিনি (সায়্যিদাহ ফাতিমা) দাঁড়িয়ে তাঁকে (হুযূর করীম) অভ্যর্থনা জানাতেন, তাঁকে চুম্বন করতেন এবং তাঁর হাত মুবারক ধরে নিজ আসনে বসাতেন।’
সায়্যিদাহ ফাতিমাতুয্যাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা স্বীয় পরম সম্মানিত পিতা হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ওফাত শরীফের পর ছয় মাস পর্যন্ত এ দুনিয়ায় জীবিত ছিলেন, কিন্তু এ কয়েক মাসে রসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বিচ্ছেদে তিনি ভীষণ কষ্ট অনুভব করেন। হুযূরের প্রতি তাঁর গভীর ভালোবাসা তাঁকে সদাসর্বদা অস্থির করে রাখত। এমনিতে তো প্রত্যেক মানুষেরই মৃত্যুর সময় সুনির্দিষ্ট, যা কোনভাবেই ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু আমরা যখন সায়্যিদাহ-ই কায়িনাত হযরত ফাতিমা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা)’র ওফাত মুহুর্তটির দিকে লক্ষ্য করি এবং তাঁর আল্লাহ তা‘আলা ও হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সাথে সাক্ষাতের প্রস্তুতি দেখি, তখন এ দৃশ্যের উপর অন্তর ঈর্ষান্বিত হয়ে যায়।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত উম্মে সালমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা তাঁর ওফাত সম্পর্কে এভাবেই ব্যক্ত করেছেন যে, যখন হযরত ফাতিমার ওফাতের সময় নিকটবর্তী হলো, তখন আমি তাঁর সেবাযযত্ন করছিলাম। অসুস্থতার সময়ে আমি দেখলাম একদিন সকালে তাঁর শারীরিক অবস্থা কিছুটা উন্নতি হয়েছে, হযরত আলী মুরতাদ্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু কোন এক প্রয়োজনে বাহিরে গেলেন। সায়্যিদাহ ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা বললেন,
يَا أُمَّهْ اسْكُبِي لِي غُسْلًا ، فَاغْتَسَلَتْ كَأَحْسَنِ مَا رَأَيْتُهَا تَغْتَسِلُ، ثُمَّ قَالَتْ: يَا أُمَّهْ أَعْطِينِي ثِيَابِيَ الْجُدُدَ ، فَأَعْطَيْتُهَا فَلَبِسَتْهَا، ثُمَّ قَالَتْ: يَا أُمَّهْ قَدِّمِي لِي فِرَاشِي وَسَطَ الْبَيْتِ فَفَعَلْتُ، وَاضْطَجَعَتْ، وَاسْتَقْبَلَتِ الْقِبْلَةَ، وَجَعَلَتْ يَدَهَا تَحْتَ خَدِّهَا ثُمَّ قَالَتْ: يَا أُمَّهْ إِنِّي مَقْبُوضَةٌ الْآنَ، وَقَدْ تَطَهَّرْتُ الْآَنَ، فَلَا يَكْشِفُنِي أَحَدٌ فَقُبِضَتْ مَكَانَهَا.
‘মা, অনুগ্রহ করে আমার গোসলের জন্য পানি নিয়ে আসুন; (আমি পানি পেশ করলাম); তিনি (সায়্যিদাহ ফাতিমা) আমার দেখা সর্বোত্তমভাবে গোসল করেছেন; অতঃপর বললেন, মা! আমাকে নতুন কাপড় দিন। আমি তাঁকে নতুন কাপড় দিলে, তিনি সেটা পরিধান করে নেন। অতঃপর বললেন, মা! আমাকে গৃহের মধ্যখানে বিছানা করে দিন; আমি অনুরূপ করে দিলাম। তিনি (সায়্যিদাহ ফাতিমা) কিবলামুখী হয়ে শুয়ে গেলেন, হাত মুবারক গাল মুবারকের নীচে রাখলেন; অতঃপর এরশাদ করলেন, মা! এখনই আমার ওফাত হবে। আমি পবিত্র হয়ে গেছি; সুতরাং কেউ যেন আমাকে বিবস্ত্র না করে। এরপর পরই ওই স্থানে তাঁর ওফাত হয়েছে।’
পরিশেষে ০৩ রমযানুল মুবারক ১১ হিজরী সনে নবী তনয়া সায়্যিদাহ ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা ওফাত পান। তাঁকে জান্নাতুল বাক্বী’ তে দাফন করা হয়।
০২. হযরত খাদীজাতুল কোবরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র ওফাত: 
(১০ রমযানুল মুবারক ১০ নবভী সন)
হযরত খাদীজাতুল কোবরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা বিনতে খুওয়ায়লিদ ওই পবিত্র ও সৌভাগ্যবতী রমণী ছিলেন, যিনি শুধুমাত্র প্রথমেই নুবূয়তের সত্যায়ন করেছেন তা নয়, বরং ইসলামের শুভসূচনায় দ্বীনের দা’ওয়াত ও তাবলীগের মুশকিল ও কঠিন পর্যায়গুলোতে হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-কে সুপরামর্শদাতা, সাহায্য-সহায়তাকারী হিসেবে প্রমাণিত হয়েছেন। তাঁর আদর্শিক ও ঈর্ষার উপযুক্ত দাম্পত্য সঙ্গ সায়্যিদ-ই আলম হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র হৃদয়ের উপর বড় গভীর রেখাপাত করেছে। হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম প্রায়ই সায়্যিদাকে ভীষণ মহব্বতে স্মরণ করতেন।
রমণীগণের মধ্যে সর্বপ্রথম ইসলাম কবূলকারীর মর্যাদা তিনিই অর্জন করেছেন। অধিকাংশ ইতিহাসবিদের অভিমত অনুযায়ী নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সাথে আক্বদ মুবারক-এর সময় তাঁর বয়স চল্লিশ বছর ছিল, তখন হুযূর করীমের বয়স শরীফ ছিল পঁচিশ বছর। হযরত খাদীজা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা আরবের একজন সম্পদশালী রমণী ছিলেন, কিন্তু নুবূয়তের চাদরের সাথে সংযুক্ত হওয়ার পর তিনি তাঁর সমস্ত সম্পদ স্বীয় প্রাণাধিক প্রিয় স্বামী হাবীব-ই খোদা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র কদমে উৎসর্গ করে দিয়েছেন। তিনি ছিলেন ‘যা-হিদাহ’ (দুনিয়াবিমুখ), ‘আ-বিদাহ’(ইবাদতগুজার),‘শাকিরাহ’ (কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপনকারিনী) ,‘মুজাহিদাহ’ (প্রচেষ্টাকারিনী) এবং ‘সোয়াবিরাহ’ (ধৈর্যশীল রমণী)। হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বীয় পবিত্র মুখে উম্মুল মু’মিনীন হযরত খাদীজাতুল কোবরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র মক্বাম, সম্মান ও মর্যাদার কথা অসংখ্য হাদিস শরীফে বর্ণনা করেছেন; ওই সবগুলো অল্পপরিসরের আলোচনায় ব্যক্ত করা সম্ভব নয়, শুধুমাত্র কয়েকটি হাদিস শরীফ লক্ষ্য করুন-
 ‘হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
্রمَا غِرْتُ عَلَى امْرَأَةٍ لِلنَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، مَا غِرْتُ عَلَى خَدِيجَةَ، هَلَكَتْ قَبْلَ أَنْ يَتَزَوَّجَنِي، لِمَا كُنْتُ أَسْمَعُهُ يَذْكُرُهَا، وَأَمَرَهُ اللهُ أَنْ يُبَشِّرَهَا بِبَيْتٍ مِنْ قَصَبٍ، وَإِنْ كَانَ لَيَذْبَحُ الشَّاةَ فَيُهْدِي فِي خَلاَئِلِهَا مِنْهَا مَا يَسَعُهُنَّ
‘আমি হুযূর নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র রমণীগণের মধ্যে কারো প্রতি এত বেশি ঈর্ষা করি না, যতটুকু হযরত খাদীজার প্রতি করি। অথচ তিনি আমার শাদীর পূর্বেই ওফাত পেয়েছেন। আমি হুযূর করীমকে তাঁর কথা স্মরণ করতে গিয়ে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ তা‘আলা হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে নির্দেশ দেন যে, আপনি খাদীজাকে মোতির প্রাসাদের সুসংবাদ দিন। যখন হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কোন বকরী যবেহ করতেন, তখন হুযূর করীম হযরত খাদীজার বান্ধবীদের নিকট গোশত হাদিয়া পাঠাতেন, যা তাদের জন্য যথেষ্ট হত। (বোখরী)
 ‘হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন:
خَيْرُ نِسَائِهَا مَرْيَمُ بِنْتُ عِمْرَانَ وَخَيْرُ نِسَائِهَا خَدِيجَةُ بِنْتُ خُوَيْلِدٍ
‘নিজ যুগে সবচেয়ে উত্তম রমণী, হযরত মারইয়াম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা আর (এমনিভাবে) নিজ যুগে সর্বাধিক উত্তম রমণী হচ্ছে, হযরত খাদীজা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা।’ (মুসলিম)
 হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
أَتَى جِبْرِيلُ عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ إِلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَعِنْدَهُ خَدِيجَةُ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا، فَقَالَ: إِنَّ اللهَ يُقْرِئُ خَدِيجَةَ السَّلَامَ، فَقَالَتْ: إِنَّ اللهَ هُوَ السَّلَامُ وَعَلَيْكَ السَّلَامُ وَرَحْمَةُ اللهِ
‘হযরত জিব্রাইল আলায়হিস সালাম নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র খেদমতে হাজির হলেন; এমতাবস্থায় হযরত খাদীজা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহাও হুযূর করীমের নিকট উপস্থিত ছিলেন। হযরত জিব্রাইল আরয করলেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা হযরত খাদীজার প্রতি সালাম প্রেরণ করেন।’ (এ সুসংবাদ শুনে) হযরত খাদীজা এরশাদ করলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা-ই সালাম; আর আপনার প্রতিও আল্লাহর সালাম ও রহমত প্রেরিত হোক।’
নবী-ই আকরম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পরম অন্তরঙ্গ সাথী, সহানুভূতিশীল রমণী ও ইসলামের প্রতি ভীষণ অনুগ্রহকারিনী ১০ নবভী সনের ১০/১১ রমযানুল মুবারক স্বীয় রবের দরবারে হাজির হয়েছেন।
  • ০৩. হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র ওফাত: (১৭ রমযানুল মুবারক ৫৮ হিজরী)
    উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা ‘আ-লিমাহ’ (জ্ঞানী), ‘ফা-দ্বিলাহ’ (মর্যাদাবতী) ও ‘ফকীহা-ই উম্মত’ (উম্মতের মধ্যে বিজ্ঞ মুফতী) ছিলেন। পবিত্র রমণীগণের মধ্যে তিনিই কুমারী রমণী ছিলেন। বড় বড় উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন সাহাবা-ই কিরাম ফিকহী মাসা-ইল-এর বিষয়ে দিকনির্দেশনা নেয়ার জন্য তাঁর প্রতি-ই প্রত্যাবর্তন করতেন। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র তাঁর প্রতি গভীর ভালবাসা ছিল। পবিত্র হাদিস শরীফে অধিক পরিমাণে তাঁর ব্যক্তিগত ফাযা-ইল বর্ণনা করা হয়েছে। তন্মধ্যে তাঁর কিছু ফাযা-ইল ও গুণাবলি নিম্নে লক্ষ্য করুন-
     হযরত জিব্রাইল আমীন তাঁর খিদমতে সালাম আরয করতেন।
     হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পবিত্র রমণীগণের মধ্যে সর্বাধিক ভালবাসতেন হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহাকে।
     হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র নিকট যখন কোন কিছু আসত, তিনি তাৎক্ষনিকভাবে সেটি আল্লাহর রাস্তায় সাদ্ক্বাহ করে দিতেন।
     সায়্যিদাহ আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা দুনিয়া ও আখেরাতে হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র স্ত্রী হওয়ার মর্যাদা হাসিল করবেন।
     সায়্যিদাহ আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা অত্যধিক প্রাঞ্জলভাষী ছিলেন।
     হযরত সায়্যিদাহ ফাতিমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহাকে হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘কা’বার রবের শপথ! আয়েশা তোমার পিতার নিকট অতীব প্রিয়।’
     হযরত আয়েশা ‘শে’র’ (আরবি কাব্য), ‘ফারায়েয’ (উত্তরাধিকার বন্টন নীতি) এবং ফিকহ্ (ইসলামী আইনশাস্ত্র)’র সবচেয়ে বড় ‘আ-লিমাহ’ (জ্ঞানী) ছিলেন।
     হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা ক্বোরআন মাজীদ, হালাল-হারাম এবং ‘নসবনামা’ (বংশানুক্রম)-এর সর্বাধিক ইলমের অধিকারী ছিলেন।
  • নিচে উল্লেখিত কিছু বৈশিষ্ট্য এমন রয়েছে, যা পুরো উম্মতের মধ্যে শুধুমাত্র হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা-ই অর্জন করেছেন। যথা:
    ক. হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র কোলে হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র উপর ওহী নাযিল হয়েছে।
    খ. রফীক্ব-ই আ’লা (সুমহান বন্ধু)’র সাথে সাক্ষাতের সময় হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র নূরানী মাথা মুবারক হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র কোল মুবারকে ছিল।
    গ. ওফাতের পূর্বে হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যে মিস্ওয়াক করেছিলেন, সেটি হযরত আয়েশা সিদ্দিক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা স্বীয় মুখে নিয়ে নরম করে হুযূর করীমকে পেশ করেছিলেন।
    ঘ. ওফাত শরীফের পূর্বের কিছু দিন ওফাতের অসুস্থতার মধ্যে হযরত আয়েশা’র হুজরা শরীফকেই অবস্থানের জন্য মর্যাদা দিয়েছেন।
    ঙ. হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র অনন্ত ও স্থায়ী আরামস্থল হওয়ার মর্যাদাও হযরত আয়েশা’র হুজরা শরীফ অর্জন করেছে।
    চ. হযরত আয়েশা’র পবিত্রতা বর্ণনায় সম্পূর্ণ সূরা নূর নাযিল করা হয়েছে।
    ছ. সকল উম্মত তায়াম্মুমের অনুমতি পেয়েছে হযরত আয়েশা’র ওসীলায়।
    জ. তাঁরই বরকতে উম্মত ‘ক্বানূন-ই ক্বযফ’ (মিথ্যা দোষারোপ আইন) পেয়েছে।
    ঝ. হযরত আয়েশার ব্যাপারে হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন, ‘আমাকে আয়েশা’র বিষয়ে কষ্ট দিওনা।’
    ঞ. এরশাদ করেন: আয়েশার ‘ফযিলত’ (মর্যাদা) সকল রমণীদের উপর এমন, যেমনি সরীদ-এর সকল খাবারের উপর ‘ফযিলত’ (মর্যাদা) হাসিল হয়েছে।
    ট. উম্মতের এ মহান ফক্বীহ্ ও মুহাদ্দিস ২২১০টি হাদিস শরীফ বর্ণনা করেছেন।
    তিনি ১৭ রমযানুল মুবারক ৫৮ হিজরীতে ওফাত পান। জান্নাতুল বাকী’তে তাঁর কবর শরীফ রয়েছে।
০৪. ঐতিহাসিক বদর যুদ্ধ:(১৭ রমযানুল মুবারক ২ হিজরী)
বদর যুদ্ধ ১৭ রমযানুল মুবারক ২ হিজরীতে মুসলমানগণ ও মক্কার কাফেরদের মধ্যে সংঘটিত হয়। ইসলামী যোদ্ধাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাজেদার-ই মদীনা হুযূর নবী-ই আক্রম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, অপরদিকে কাফের যোদ্ধাদের নেতৃত্ব ছিল আবূ জাহল-এর নিকট। এ যুদ্ধকে ‘গাযওয়া-ই বদরুল কোবরা’ ও ‘ইয়াওমুল ফুরক্বান’ নামেও অভিহিত করা হয়। বদর একটি গ্রামের নাম, যা মদীনা-ই ত্বায়্যিবাহ থেকে কয়েক মাইল দূরে অবস্থিত। সেখানে পানির বেশ কয়েকটি কুপ ছিল এবং সিরিয়া থেকে আগমনকারী কাফেলাগুলো এখানে এসে যাত্রা বিরতি করত। উল্লেখ্য যে, যখন নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম মক্কা থেকে হিজরত করে গেছেন, তখন থেকেই মক্কার কুরাইশরা মদীনা-ই ত্বায়্যিবায় হামলা করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হয়েছিল। মক্কার কুরাইশরা মদীনার পথ দিয়ে সিরিয়ার দিকে বাণিজ্যিক সফরে যেত। একদা তাদের নিকট এ সংবাদ পৌঁছল যে, মুসলমানগণ মক্কার কুরাইশদের সিরিয়া থেকে আগমনকারী কাফেলার উপর হামলা করার জন্য আসছে, এতেই মক্কার কুরাইশরা মুসলমানগণের অস্তিত্ব বিলীন করার জন্য নিজেদের অপবিত্র ইচ্ছাগুলো সহকারে অহংকারের নেশায় মত্ত হয়ে মদীনা-ই ত্বায়্যিবাহ’র প্রতি যাত্রা করল এবং বদর নামক স্থানে পৌঁছল, সেখানে ইসলামী যোদ্ধাদের সাথে যুদ্ধ হল। আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত শয়তানী শক্তিগুলোকে নস্যাৎ করে দিলেন। আর ইসলামের অনুসারীদেরকে মহাগৌরবের বিজয় ও সাফল্য দান করলেন। ইসলামী যোদ্ধা ৩১৩ জন ছিলেন, হাতিয়ার, খাদ্যরসদ, বাহন অত্যন্ত কম ছিল; অথচ বিপরীত পক্ষের কাফেররা মাথা থেকে পা পর্যন্ত হাতিয়ার দ্বারা সুপ্রস্তুত ছিল; তাদের বাহনও ছিল বেশি, অগণিত উট ও খাদ্যরসদে ভর্তি ছিল। এতদ্সত্তেও মক্কার কাফেররা এত ছোট ইসলামী যোদ্ধাবাহিনীর আক্রমণ প্রতিহত করতে পারে নি এবং পরিশেষে তাদেরকে পরাজয় বরণ করে পালিয়ে যেতে হয়েছিল।
ইসলামী যোদ্ধাগণকে আল্লাহ তা‘আলার পক্ষ থেকে হাজার হাজার ফেরেশতাকুল সাহায্য করেছিলেন। মক্কার কাফেরদের সত্তরের অধিক লোক এ যুদ্ধে জাহান্নামে নিপতিত হয়েছে আর প্রায় সত্তর জন লোক কয়েদী হয়েছিল। অপরদিকে ১৪ জন সাহাবা-ই কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু শাহাদাতের শরাব পান করেছেন। শোহাদা-ই বদরের মধ্য থেকে তের জন তো বদরের ময়দানেই দাফন হয়েছে; কিন্তু হযরত ওবায়দাহ ইবনে হারিস যেহেতু বদর থেকে ফেরার পথে ‘সাফরা’ নামক স্থানে ওফাত পেয়েছেন, এ জন্য তাঁর কবর শরীফ ‘মনযিল-ই সাফরা’তে অবস্থিত।
আসহাব-ই বদর ও শোহাদা-ই বদরের ফযিলত এ কথার দ্বারাই প্রতীয়মান হয় যে, হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁদেরকে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। হযরত আনাস ইবনে মালিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, হযরত হারিসা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু একজন নওজোয়ান ব্যক্তি ছিলেন। বদর যুদ্ধে তিনি শাহাদত বরণ করার পর তাঁর মা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট এসে বললেন,
يَا رَسُولَ اللهِ، قَدْ عَرَفْتَ مَنْزِلَةَ حَارِثَةَ مِنِّي، فَإِنْ يَكُنْ فِي الجَنَّةِ أَصْبِرْ وَأَحْتَسِبْ، وَإِنْ تَكُ الأُخْرَى تَرَى مَا أَصْنَعُ، فَقَالَ: ্রوَيْحَكِ، أَوَهَبِلْتِ، أَوَجَنَّةٌ وَاحِدَةٌ هِيَ، إِنَّهَا جِنَانٌ كَثِيرَةٌ، وَإِنَّهُ فِي جَنَّةِ الفِرْدَوْسِ
‘ইয়া রাসূলাল্লাহ! হারিসা আমার কত আদরের আপনি তো তা অবশ্যই জানেন। সে যদি জান্নাতী হয়, তাহলে আমি ধৈর্য ধারণ করব এবং আল্লাহর নিকট সাওয়াবের আশা করব। আর অন্যথায়, আপনি তো দেখতেই পাচ্ছেন, আমি (তার জন্য) যা করছি। তখন তিনি (হুযূর করীম) এরশাদ করলেন, তোমার কি হল, তুমি কি জ্ঞানশূন্য হয়ে গেলে? বেহেশ্ত কি একটি? বেহেশ্ত অনেক, সে তো জান্নাতুল ফিরদাউসে অবস্থান করছে।’
হযরত হাত্বিব ইবনে আবূ বালতা’ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু একজন বদরী সাহাবী ছিলেন। মক্কা বিজয়ের সময় তিনি ইসলামী যোদ্ধাগণের আগমনের কথা মক্কার কুরাইশদের অবহিত করতে চেয়েছিলেন; কিন্তু হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এ বিষয়ে অবগত হয়ে যান এবং কাফেরা রওয়ানার খবর মক্কার কুরাইশদের নিকট পৌঁছতে পারে নি। সাহাবা-ই কিরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুম তাঁর বিরুদ্ধে কঠিন ফয়সালা দেয়ার জন্য পরামর্শ দিলেন; কিন্তু হুযূর নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তাঁর ব্যাপারে এরশাদ করেন:
إِنَّهُ قَدْ شَهِدَ بَدْرًا، وَمَا يُدْرِيكَ لَعَلَّ اللهَ أَنْ يَكُونَ قَدِ اطَّلَعَ عَلَى أَهْلِ بَدْرٍ فَقَالَ: اعْمَلُوا مَا شِئْتُمْ فَقَدْ غَفَرْتُ لَكُمْ “
‘সে বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। সম্ভবত তোমার হয়ত জানা নেই, আল্লাহ্ তা‘আলা বদর যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের ব্যাপারে অবহিত আছেন। তাই তাঁদের উদ্দেশ্য করে এরশাদ করেছেন, তোমরা যা ইচ্ছা আমল কর। আমি তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছি।’
বদর যুদ্ধে মু’মিনগণের জন্য বহু সবক ও শিক্ষা রয়েছে। যদি বদর যুদ্ধের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য মু’মিনগণের বুঝে এসে যায়, তাহলে আল্লাহ তা‘আলার সাহায্য ও মদদ আজও অবতীর্ণ হতে পারে।
ড.ইকবাল (রহমাতুল্লাহি আলায়হি) বলেন,
فضائے بدر پیدا کر ، فرشتے تیری نصرت کو
اتر سکتے ہیں گردوں سے قطار اندر قطار اب بھی
০৫. ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়: (২০ রমযানুল মুবারক ৮ হিজরী)
নুবূয়ত ঘোষণার পর থেকে ৮ম হিজরী পর্যন্ত ২১ বছরের নবভী যুগ নিরাপত্তা, শান্তি, ভ্রাতৃত্ব ও মহব্বতের প্রতি আহ্বানকারীগণ এবং দ্বীন-ই রহমতের জন্য ভীষণ ধৈর্য্য পরীক্ষা ও কঠিন যুগ ছিল। মু’মিনগণ অত্যন্ত দুঃখভারাক্রান্ত হৃদয়ে মক্কা ত্যাগ করেছেন এবং হেরম-ই কা’বা থেকে বিচ্ছেদ বেদনা সহ্য করেছেন। মদীনাতুল মুনাওওরাহ হিজরত করার পরও তাঁদের অন্তরে স্বীয় জন্মভূমি ও বায়ত-ই ‘আতীক্ব (কা’বা)’র প্রতি গভীর ভালবাসা বিদ্যমান ছিল। তাঁরা নিজের প্রিয় জন্মভূমির মহব্বতে অস্থির ছিলেন। কিন্তু এখন অবস্থাদির পরিবর্তন হতে চলেছে, তাওহীদের মশাল সমুন্নতকারীগণ , যাদেরকে মদীনা হিজরত করতে বাধ্য করা হয়েছিল, তাঁরা স্বীয় ললাটসমূহে সাজদার নূরী ঝলকসহকারে দশ হাজার জনের বিরাট বহর নিয়ে স্বীয় পথপ্রদর্শক ও মুনিব দু’জগতের আক্বা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র নেতৃত্বে মক্কার মধ্যে এমন অতুলনীয় শান ও মর্যাদা নিয়ে প্রবেশ করছেন যে, পুরো পরিবেশ জুড়ে আল্লাহ তা‘আলার বড়ত্বের বাণী ‘তাকবীর’ ও ‘তালবিয়া’ দ্বারা প্রকম্পিত হচ্ছে। তাওহীদের শক্তিতে উজ্জীবিত মুজাহিদগণ হযরত ইবরাহীম ‘খলীলুল্লাহ’ (আল্লাহর ঘনিষ্ঠ বন্ধু) আলায়হিস সালাম’র নির্মাণকৃত কা’বাকে ওই সকল মুর্তি-প্রতিমার নাপাকী থেকে পবিত্র করেছেন, যেগুলোকে সারি সারি করে কা’বার পবিত্রতা নষ্ট করার জন্য সাজিয়ে রাখা হয়েছিল। আজ প্রত্যেক অহংকারী ও অবাধ্য ব্যক্তির অহমিকা ধুলায় মিশ্রিত হয়েছে। মু’মিনগণের রক্তপিপাসুরা গর্দান ঝুঁকিয়ে নবী-ই রহমত, রউফ, রহীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র দরবারে করুণা ভিখারী বেশে দন্ডায়মান হয়ে গেছে। মহাবিশ্বের বিপ্লবগুলোর মধ্য থেকে এ মহামর্যাদাপূর্ণ ও মানব ইতিহাসের বিরল বিপ্লবের নির্মাতা হযরত সায়্যিদুনা মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম স্বীয় দয়াময় রবের প্রশংসা-বন্দনায় রত হলেন, বিজয় ও সাফল্যের পতাকা উড্ডীন করে বায়তুল্লাহর নিকটে তশরীফ আনলেন।
এ সময়ে কা’বা শরীফে ৩৬০ টি মূর্তি স্থাপন করে রাখা হয়েছিল। তাওহীদপন্থিগণের ইমাম, সত্য পথপ্রদর্শক হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র পবিত্র হাত মুবারকে লাঠি শরীফ ছিল। পবিত্র মুখে উচ্চারিত হচ্ছিল,
جَاءَ الْحَقُّ وَزَهَقَ الْبَاطِلُ إِنَّ الْبَاطِلَ كَانَ زَهُوقًا
‘সত্য এসেছে, মিথ্যা বিলুপ্ত হয়েছে। নিশ্চয় মিথ্যা তো বিলুপ্ত হবারই ছিলো।’
লাঠি শরীফ দ্বারা যখনই কোন মূর্তির দিকে ইশারা করতেন, সাথে সাথে সেটি মুখ থুবড়ে পড়ে যেত। এমন দৃশ্য কোন চোখ কখনো দেখেনি, না কিয়ামত পর্যন্ত দেখবে। রক্তপিপাসুদের বলে দেয়া হলো, আজ তোমাদের নিকট থেকে কোন বদলা নেয়া হবে না। প্রাণের শত্রুর ব্যাপারেও রহমতপূর্ণ ঘোষণা করা হলো:
مَنْ دَخَلَ دَارَ أَبِي سُفْيَانَ فَهُوَ آمِنٌ.
‘যে ব্যক্তি আবূ সুফিয়ানের গৃহে আশ্রয় নিল, সে নিরাপদ।’ এমনকি যে স্বীয় গৃহের দ্বার বন্ধ করে নিয়েছে, সেও নিরাপদ। সকল মক্কাবাসী সাধারণ ক্ষমা পেয়ে দলে দলে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিতে লাগল। কিন্তু চারজন ব্যক্তি ক্ষমা পায়নি। যারা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে কষ্ট দিয়েছে, নবীর মানহানি করেছে, ঈমানের সাথে শত্রুতা করেছে, তাদের কোন ক্ষমা নেই। তারা কা’বার গিলাফেও আশ্রয় নিলে, তাদের হত্যার হুকুম জারি করা হয়েছে।
সহীহ বোখারীতে এসেছে,
جَاءَ رَجُلٌ فَقَالَ: إِنَّ ابْنَ خَطَلٍ مُتَعَلِّقٌ بِأَسْتَارِ الكَعْبَةِ فَقَالَ ্রاقْتُلُوهُ
‘এক ব্যক্তি এসে তাঁকে (হুযূর করীম) বললেন, ইবনে খাত্বাল কা‘বার গিলাফ ধরে আছে। তিনি (হুযূর করীম) এরশাদ করলেন, তাকে তোমরা হত্যা কর।’
এটি ছিল ওই মহাগৌরবের ও ঐতিহাসিক বিজয়, যেটাকে ক্বোরআন মাজীদে ‘ফাতহুম মুবীন’ (স্পষ্ট বিজয়) আখ্যা দেয়া হয়েছে। এ পবিত্র সময়টিও মাহে রমযানুল মুবারকের অংশ হয়েছে।
০৬. শাহাদাত-ই হযরত আলী মুরতাদ্বা (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু): (২১ রমযানুল মুবারক ৪০ হিজরী)
মাওলায়ে কায়িনাত হযরত সায়িদুনা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ইবনে আবি তালিব একজন মহামর্যাদাবান সাহাবী-ই রসূল ছিলেন। সম্পর্কে তিনি হুযূর নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র চাচাত ভাই হন। তিনি নবী মোস্তফার উপর সর্বপ্রথম ঈমান আনয়নকারী সাহাবীগণের মধ্যে পরিগণিত হন। তিনি ‘আহলে বায়ত’-এরও অন্তর্ভূক্ত। তাঁর বীরত্ব, সাহস অবর্ণনীয়; তাঁর প্রজ্ঞা ও বিচক্ষণতা অতুলনীয়। তাঁর ‘রুহানিয়ত’ (আধ্যাত্মিকতা), ‘যুহ্দ’ (দুনিয়াবিমুখতা), আলোকজ্জ্বল নক্ষত্রের ন্যায়; তিনি ইল্ম ও ‘ইরফান-এর প্র¯্রবন ও উৎসমূল। তাক্বওয়া ও আত্মসংযম তাঁর স্বভাবেরই অংশ ছিল। মাওলায়ে কায়িনাত অগণিত বিরল ও অতুলনীয় সৌন্দর্য ও মহৎ গুণাবলির অধিকারী ছিলেন। তাঁর প্রতিটি সৌন্দর্য অসংখ্য বিকাশস্থলে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রকাশ পেয়েছিল। তাঁর ফাযাইল, মানাক্বিব ও গুণাবলি এ সংক্ষিপ্ত পরিসরে সীমিত করা অসম্ভব, তবুও পাঠকের ইল্মী আগ্রহ বৃদ্ধির লক্ষ্যে এবং সায়্যিদুনা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর সাথে রুহানী সম্পর্ক সুদৃঢ় করার জন্য তাঁর সুমহান বীরত্বের কিছু নমুনা পেশ করছি।
 বদর যুদ্ধে তিনি শবীহ ইবনে রবী‘আহ এবং ‘উতবাহ ইবনে রবী‘আহকে জাহান্নামে প্রেরণ করেছিলেন। তাঁর তরবারী ইসলামের শত্রুদের খুঁজে খুঁজে জাহান্নামে মিলিত করেছিল।
 একই বীরত্ব প্রদর্শন তিনি ৫ হিজরীতে আহযাবের যুদ্ধে দেখিয়েছেন। আমর ইবনে আবদ্ উদ্দু পুরো আরবের বিখ্যাত পলোয়ন ছিল। তার বয়স নব্বই বছর ছিল এবং পুরো আরবে তার মোকাবেলা করার কারোরই শক্তি ছিল না। আহযাবের যুদ্ধে সে খন্দকের নিকট এসে দ্বন্দ্বযুদ্ধের আহ্বান করলো এবং হুংকার দিয়ে বলে উঠলো, কে আছে আবদ্ উদ্দু’র সাথে মোকাবিলা করতে পারবে? হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু দ্বন্দ্বযুদ্ধের জন্য এগিয়ে গেলেন। সে তাঁকে (হযরত আলী) দেখে হেসে দিল এবং বললো, তুমি এসেছো আমার মোকাবিলা করতে। তোমার নাম কী? সে ঠাট্টা-বিদ্রুপ করে বললো: যখন কেউ আমার সাথে মোকাবিল করতে আসে, তখন আমি তার তিনটি ইচ্ছার মধ্যে একটি অবশ্যই পূরণ করি। বলো, তোমার ইচ্ছাগুলো কী? হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এরশাদ করলেন: আমার প্রথম ইচ্ছা হচ্ছে, তুমি মু’মিন হয়ে যাও; সে বললো: প্রশ্নই উঠে না। তিনি (হযরত আলী) বললেন: আমার দ্বিতীয় ইচ্ছা হচ্ছে, তুমি যুদ্ধের ময়দান থেকে ফিরে যাও; সে হাসল এবং বললো, এটা কাপুরুষের কাজ। তিনি (হযরত আলী) বললেন, অতঃপর আমার তৃতীয় ইচ্ছা হচ্ছে, এসো মোকাবিলা করো, যাতে আমি তোমাকে হত্যা করি। সে তাঁর (হযরত আলী) কথায় বিস্মিত হলো এবং ক্রোধান্বিত হয়ে ঘোড়া থেকে অবতরণ করলো এবং কিছুক্ষণ সময় তীব্র মোকাবিলা হয়েছে; পরিশেষে হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু)’র তরবারী তাকে কেটে দিল।
 খায়বারের যুদ্ধে তিনি অসাধারণ বীরত্বের দৃষ্টান্ত রেখেছেন, হুযূর করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন,
قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: ” لَأُعْطِيَنَّ الرَّايَةَ، أَوْ لَيَأْخُذَنَّ الرَّايَةَ، غَدًا رَجُلًا يُحِبُّهُ اللهُ وَرَسُولُهُ، أَوْ قَالَ: يُحِبُّ اللهَ وَرَسُولَهُ، يَفْتَحُ اللهُ عَلَيْهِ “
‘আমি আগামীকাল এমন এক ব্যক্তিকে পতাকা দিব কিংবা এমন এক ব্যক্তি পতাকা গ্রহণ করবেন, যাঁকে আল্লাহ ও তাঁর রসূল মহব্বত করেন অথবা যে আল্লাহ ও তাঁর রসূলকে মহব্বত করেন। তাঁর হাতে আল্লাহ্ তা‘আলা (খায়বার) বিজয় দান করবেন। পরবর্তী দিন হুযূর নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত আলীকে আহ্বান করলেন, কিন্তু তিনি চোখের অসুখে আক্রান্ত ছিলেন। হুযূর করীম স্বীয় থুথু মুবারক তাঁর চোখে লাগিয়ে দিলেন, তাৎক্ষনিকই তিনি সুস্থ হয়ে গেলেন। হুযূর করীম তাঁর হাতে পতাকাটি দিলেন। আল্লাহ তা‘আলা হযরত আলীর হাতেই খায়বার বিজয় দান করলেন।’
(বোখারী, আস্ সহীহ, খন্ড-০৫, পৃ. ১৮, হাদিস নং-৩৭০২)
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র উপর রমযানুল মুবারকে সিরিয়া থেকে আগত আবদুর রহমান ইবনে মুলযিম নামের এক ব্যক্তি কুফার মসজিদে নামাযরত অবস্থায় বিষ মিশ্রিত তলোয়ার দ্বারা আক্রমন করেছিল, ফলে বিষের প্রভাব পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। পরিশেষে ২১ রমযানুল মুবারক ফজরের সময় তিনি শাহাদাতের শরাব পান করেছেন। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে আহলে বায়তে আত্বহার-এর মহব্বত, সম্মান ও আদব দান করুন।

লেখক: পরিচালক-আনজুমান রিসার্চ সেন্টার, ষোলশহর, চট্টগ্রাম।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •