শবে কদর ও শবে বরাতের নফল নামাজ একাকী বা জমাত সহকারে পড়া যাবে কিনা?

0
হাফেজ মুহাম্মদ মিজানুর রহমান-
সাতকানিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: পবিত্র লাইলাতুল কদর ও পবিত্র লাইলাতুল বরাত তথা শবে কদর ও শবে বরাতের ইবাদত-বন্দেগী ও নফল নামাজ একাকী বা জমাত সহকারে পড়া সংক্রান্ত ইসলামী শরিয়তের ফতোয়া/ফায়সালা কামনা করছি। যেহেতু বাতিল ফিরক্বা তথা ওহাবী-নজদী, খারেজী ভ্রান্ত মতাদর্শী কোন কোন মওলভী ও জ্ঞানপাপী বিভিন্ন টিভি চ্যানেল-মিডিয়া, পেপার-পত্রিকায়, অনলাইনে, ফেইসবুকে এবং বক্তব্যে বলতে দেখা যায় যে, শবে কদর ও বরাত রাতে জমাত সহকারে নফল নামাজ পড়া গোঁড়ামী ও ভিত্তিহীন।
উত্তর: ইসলামের দৃষ্টিতে যে কয়েকটি বরকতমন্ডিত রাত আছে লাইলাতুল কদর ও লাইলাতুল বরাত অন্যতম। এ বরকতমন্ডিত রাতসমূহ ইবাদত-বন্দেগীতে অতিবাহিত করা অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ ও অসীম সাওয়াবের। এ সব রাতসমূহে ইবাদত-বন্দেগী করা প্রিয়নবী, সাহাবায়ে কেরাম, তাবেয়ীন, তবে তাবেয়ীন এবং আউলিয়ায়ে কামেলীনের সুন্নাত।
উল্লেখ্য যে, লাইলাতুল কদর ও লাইলাতুল বরাতের মত গুরুত্বপূর্ণ ও বরকতমন্ডিত রাতসমূহের বিশেষ নফল নামাজ এশার নামাযের জামাতের পর মসজিদে ইমাম/খতিব ও মুসল্লীগণ ইচ্ছা করলে জামাত সহকারেও আদায় করতে পারে আবার একাকিও আদায় করা যায়। এতে কোন অসুবিধা নেই। এটাকে কেন্দ্র করে অহেতুক ঝগড়া-বিবাধ ও তর্কে লিপ্ত হওয়া সমীচীন নয়। হক্কানী আউলিয়ায়ে কেরাম ও ওলামায়ে এজামের মধ্যে গাউসে পাক পীরানে পীর দস্তগীর শায়খ সৈয়্যদ আব্দুল কাদের জিলানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ গুনিয়াতুত্ তালেীবন, প্রখ্যাত মুফাস্সির আল্লামা ইসমাঈল হুক্কী হানাফী ‘তাফসীরে রহুল বয়ানে সূরা ক্বদরের তাফসীরে, ইমামুদ্ দুনিয়া ফিল হাদিস, আমিরুল মুমেনিন ফিল হাদিস হযরত ইমাম বুখারী রহমাতুল্লাহি আলায়হি তাঁর সহীহ্ বুখারীর ৫ম পারার ‘বাবু সালাতিন্ নাওয়াফিল জামাআতান’ অধ্যায়ে এবং হযরত ইমাম মুসলিম তাঁর ‘সহীহ্ মুসলমী শরীফ’-এ বিশেষ নফলসমূহ আযান-ইকামত ছাড়া জামাত সহকারে আদায় করা জায়েয বলে ফায়সালা প্রদান করেছেন। বিশেষতঃ হেরেমাইন শরীফাইন তথা পবিত্র মক্কা শরীফ ও মদিনা মনোয়ারা, বায়তুল মুকাদ্দাস শরীফ, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিসর, লেবানন, বৈরুত, ইরান ও ইরাকসহ বিশ্বের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বড়-ছোট প্রায় মসজিদে রমজানের শেষ দশকের শেষ রাত্রে যুগযুগ ধরে সেহেরীর আগ পর্যন্ত বিশেষ নফল নামায ‘সালাতু কিয়ামুল লাইল’ নামে জমাআত সহকারে আদায় করা হয়। যারা মাহে রমজানের শেষ ভাগে জিয়ারত ও ওমরা আদায়ের জন্য মক্কা শরীফ ও মদিনা মনোয়ারায় হাজির হয়েছেন, তাঁরা অনেকেই উক্ত বিশেষ নফল নামায মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে জমাত সহকারে আদায় করেছেন। সুতরাং এ বিষয়ে ফিতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করা কোন প্রকৃত ঈমানদারের আদর্শ হতে পারে না। আল্লাহ্ তাবারাকা ওয়া তা‘আলা সবাইকে ফিতনা-ফাসাদ হতে হেফাজত করুন। আমিন।
[তাফসীরে রুহুল বয়ান, সূরা ক্বদরের তাফসীর, কৃত. ইমাম ইসমাইল হক্কী হানাফী রহ. দিওয়ানে আজিজ, ফতোয়ায়ে আজিজিয়া, কৃত. ইমামে আহলে সুন্নাত আল্লামা গাজী সৈয়দ আজিজুল হক শেরে বাংলা রহ. ও আনজুমান ট্রাস্ট কর্তৃক প্রকাশিত আমার রচিত যুগজিজ্ঞাসা ইত্যাদি]
শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •