কঠোর পরিশ্রম করে টাকা আয় করে তারা রমজানের রোজা ভঙ্গ করতে পারবে কিনা?

মুহাম্মদ মিজানুর রহমান-
নূরানী মুয়াল্লিম-বেতাগী রহমানিয়া
জামেউল উলুম মাদরাসা,
রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।

প্রশ্ন: যারা দরিদ্র, রিক্সা চালায় বা কঠোর পরিশ্রম করে টাকা আয় করে তারা রমজানের রোজা ভঙ্গ করতে পারবে কিনা, জানালে উপকৃত হব।

উত্তর: রোযা আল্লাহর পক্ষ থেকে একটি দৈহিক ফরজ বা অবশ্য পালনীয় ইবাদত। যা ইসলামের অন্যতম স্তম্ভ। সুস্থ, প্রাপ্ত বয়স্ক, সকল ধনী-গরীব মুসলিম নর-নারীর উপর রমযান মাসে রোযা পালন করা ফরজ বা আবশ্যক। রোযা গরীব-ধনী সকলের উপর ফরজ করা প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন-

یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا كُتِبَ عَلَیْكُمُ الصِّیَامُ كَمَا كُتِبَ عَلَى الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَۙ(۱۸۳

অর্থাৎ হে ঈমানদারগণ তোমাদের ওপর (রমজানের এক মাস) রোযাকে ফরজ/আবশ্যক করা হয়েছে, যেমনিভাবে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ফরজ করা হয়েছিল। যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো। [সূরা বাক্বারা, আয়াত-১৮৩] old.anjumantrust.org
উক্ত আয়াতে করীমা হতে রোযা রাখার গুরুত্ব ও তাৎপর্য সহজেই অনুমেয়। যেহেতু রোযা ফরজ ইবাদত তাই যে কোন সহজ কারণে ভঙ্গ করা যাবেনা এবং ইচ্ছাকৃত ভঙ্গ করলে কাযা ও কাফ্ফারা উভয় আদায় করতে হবে। তবে কোন দিন-মজুর, খেটে খাওয়া, রিকশা চালক ও মজুর যদি নেহায়ত দুর্বলতার কারণে এবং ক্ষুধা ও পিপাসা এতই তীব্র ও প্রকট আকার ধারণ করেছে যে, রোযা ভঙ্গ না করলে মৃত্যুর আশংকা বা মানসিক ভারসাম্য বিনষ্ট হওয়ার গভীর সংশয় সৃষ্টি হয় তখন বিশেষ প্রয়োজনে রোযা ভঙ্গ করতে পারবে। তাছাড়া, মুসাফির, গর্ভবতী মহিলা, সন্তানকে দুগ্ধ পানকারী মহিলা, পীড়া বার্ধক্য বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ব্যক্তি, রোযা রাখলে শারীরিক ও মানসিক কোন প্রকার ক্ষয়-ক্ষতির আশংকা হলে এবং জিহাদে অংশ গ্রহণকারীর জন্য যৌক্তিক ও শরয়ী ওজরের কারণে রমজানের ফরজ রোযা না রাখার সুযোগ বা রূখসত ইসলামী শরীয়ত প্রদান করেছে। তবে মাহে রমজান পরবর্তী সুযোগ ও সুবিধা মোতাবেক তা কাযা আদায় করে দিতে হবে। আর যদি কোন কারণে অসুস্থ ব্যক্তির সুস্থতা ও রোযা রাখার সামর্থ্য ফিরে আসার সম্ভাবনা না থাকে, সেক্ষেত্রে তিনি অথবা তার অলি/ওয়ারিশ ফিদয়া আদায় করবে। ফিদয়া হল রমজানের একটি ফরয রোযার বিনিময়ে এক ফিতরা, অর্থাৎ দুই কে.জি ৫০ গ্রাম পরিমাণ গম/গমের আটা/সম পরিমাণ মূল্য গরীব/মিসকিনকে ফিদয়ার নিয়তে প্রদান করবেন। [ফতোয়ায়ে আলমগীরি, রদ্দুল মোহতার, খাযাইনুল ইরফান ও যুগজিজ্ঞাসা ইত্যাদি]

[মাসিক তরজুমান, রমজান সংখ্যা-১৪৪২ হিজরি]