নামাযের মধ্যে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে এবং পরে তাকবীরে তাহরীমার মত হাত উঠানো যাবে কিনা?

0
মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম-
সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ
চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন মসজিদে এমন কিছু মুসল্লীকে দেখা যায়, যারা নামাযের মধ্যে রুকুতে যাওয়ার পূর্বে এবং পরে তাকবীরে তাহরীমার মত হাত উঠায়। এ রকম এক মুসল্লীকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম নাকি এরকম নামাজ পড়তেন, সহীহ্ বুখারী শরীফে আছে। আমার প্রশ্ন হল আমরা ছোট বেলা থেকে নামায পড়ে আসছি রুকুর পূর্বে ও পরে তাকবীর ছাড়া, এখন কাদের নামায শুদ্ধ? জানালে খুবই উপকৃত হব।
 উত্তর: নামাযে রুকুতে যাওয়ার আগে ও পরে তাকবীরে তাহরীমাতে হাত উঠানোর ন্যায় হাত উঠানো মাকরূহ এবং নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম, সাহাবায়ে কেরাম, বিশেষত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নাত ও আমলের খেলাফ। যেমন তিরমিযি, আবু দাঊদ ও নাসায়ী শরীফে উল্লেখ আছে। ইবনে আবি শায়বা হযরত আলকমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনাহু থেকে বর্ণনা করেছেন-
قال قال لنا ابن مسعود الا اصلى بكم صلواة
رسول الله صلى الله عليه وسلم فصلى ولم يرفع
يديه الامرة واحدة مع تكبير الافتتاح
অর্থাৎ একদা হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু আমাদেরকে বললেন আমি কি তোমাদের সামনে নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নামায আদায় করে দেখাব না। (অর্থাৎ নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম যে পদ্ধতিতে নামায আদায় করতেন আমি কি সে পদ্ধতিতে নামায পড়ব না) অতঃপর তিনি নামায পড়লেন। এতে তাকবীরে তাহরীমায় হাত উঠানো ছাড়া অন্য কোন ক্ষেত্রে হাত উঠাননি। হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মসউদ উক্ত নামায সাহাবায়ে কেরামের সামনে আদায় করেছিলেন, তখন কোন সাহাবা তা অস্বীকার করেন নি। বরং সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছিলেন। যদি রুকুর আগেও পরে হাত উঠানো সুন্নাত হত তখন সাহাবায়ে কেরাম অবশ্যই আপত্তি ও অভিযোগ করতেন। কেননা তাঁরা সবাই নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নামায দেখেছিলেন এবং তাঁর পেছনে নামায আদায় করেছিলেন।
যে সমস্ত হাদিস দ্বারা রুকুর আগে ও পরে নবীজির হাত উঠানোর বিষয় প্রতীয়মান তা মুহাদ্দেসীন কেরামের বর্ণনা মোতাবেক মনসুখ তথা রহিতকৃত। যেমন ওমদাতুলক্বারী শরহে বোখারী গ্রন্থে উল্লেখ আছে বিখ্যাত সাহাবী হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে যোবায়ের থেকে বর্ণিত-
انه راى رجلا يرفع يديه فى الصلواة عند الركوع
عند رفع رأسه من الركوع فقال له لا تفعل فانه شئ
فعله رسول الله صلى الله عليه وسلم ثم تركه
অর্থাৎ অবশ্য তিনি (হযরত আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়ের) একজন পুরুষকে রুকুতে যাওয়ার ও উঠার মুহূর্তে হাত উঠাতে দেখলেন তখন তিনি বললেন এ রকম করিও না। কেননা এটা ওই কাজ যা নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম প্রথমে করতেন তারপর তা পরিহার করেছিলেন। উক্ত আলোচনা দ্বারা বুঝা গেল রুকুতে যাওয়ার আগে ও পরে হাত উঠানোর বিষয়টা মনসুখ তথা রহিত হয়ে গেছে। সুতরাং কোন সাহাবা থেকে বা নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণিত কোন হাদিসে হাত উঠানোর বর্ণনা উল্লেখ থাকলে বুঝতে হবে তা পূর্ববর্তী আমল। পরবর্তী পর্যায়ে তা রহিত হয়ে গেছে। এ বিষয়ে হযরত মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি জা-আল হক কিতাবে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। বর্তমানে যারা সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থান হতে এসব শুধু অন্যজন থেকে দেখে দেখে এ সব আমল করছে তারা বেশীর ভাগ ইলমে দ্বীন সম্পর্কে অজ্ঞ। সুতরাং তাদের এসব আমল দেখে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ রইল
[ওমদাতুল ক্বারী শরহে ছহি বোখারী, কৃত. ইমাম বরুদ্দিন আইনী রহ. ইত্যদি]
শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •