খারেজী ও লামাযহাবীদের মহাগুরু এজিদের স্বরূপ উন্মোচন

0
খারেজী ও লামাযহাবীদের মহাগুরু এজিদের স্বরূপ উন্মোচন
মাওলানা আহমদুল্লাহ ফোরকান খান আলকাদেরী
প্রতি বছর মুহাররমের দশ তারিখ তথা কারবালার দিবস এলে মুমিনের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়। সে সাথে উজ্জীবিত হয় আহলে বায়তে আত্বহারের নজীরবিহীন কুরবানী ও আত্মত্যাগের শিক্ষায়। অন্যদিকে এ পবিত্র সত্ত্বাগুলোর উপর মুনাফিক, নিষ্ঠুর, পাপিষ্ঠ এজিদ বাহিনীর বর্বরতম আচরণের কথা স্মরণ করে ব্যথিত হয় সকল ঈমানদার।
তবে শত আফসোস কিছু নামধারী মুসলমানের জন্য। যারা কারবালার ঘটনাকে নিছক রাজনৈতিক সংঘর্ষ ও গন্ডগোল হিসেবে উপস্থাপন করে। তারা একদিকে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু ও শোহাদায়ে কারবালার শাহাদাতকে অবজ্ঞা ও তুচ্ছ জ্ঞান করে। অপরদিকে ইতিহাসের সবচেয়ে নিষ্ঠুর ও নাপাক খুনী এজিদের পাপকে আড়াল করে তাকে নির্দোষ প্রমাণ করার চেষ্টা করে।
আমরা এ লেখায় কুরআন হাদীস ও ইসলামের ইতিহাসের নির্ভরযোগ্য মৌলিক উৎসগুলোর ভিত্তিতে এজিদের কুকীর্তিগুলোর বিচার করবো। দেখবো পৃথিবীর প্রায় সকল ইমাম, মুজতাহিদ, মুহাদ্দিস কি কারণে নাপাক এজিদের সমালোচনা, নিন্দা ও লা’নত করেছেন। লানত করাকে বৈধ বলেছেন।
কুরআন কারীমে কাদেরকে অভিসম্পাত করা হয়েছে
আল্লাহ তায়ালা বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يُؤْذُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَعَنَهُمُ اللَّهُ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَأَعَدَّ لَهُمْ عَذَابًا مُّهِينًا [الأحزاب : ৫৭[
অনুবাদঃ “নিশ্চয় যারা কষ্ট দেয় আল্লাহ্ ও রসূলকে, তাদের উপর আল্লাহ্র অভিসম্পাত দুনিয়া ও আখিরাতে এবং আল্লাহ্ তাদের জন্য লাঞ্ছনার শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছেন। (সূরা আহযাব,আয়াতঃ ৫৭)
নবীজির আহলে বায়ত নিঃসন্দেহে আল্লাহ ও তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রিয়পাত্র। তাদের উপর জুলম ও নি‘র্যাতনের মাধ্যমে আল্লাহ ও তাঁর হাবীব অবশ্যই কষ্ট পান। যা কুরআন সুন্নাহর অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। তাই কারবালা, কারবালার পূর্বেকার এবং তার পরবর্তী আইয়ামুল হাররার সকল হত্যাকান্ড ও অপরাধের নির্দেশদাতা এজিদের মাল’ঊন তথা অভিশপ্ত হওয়ার ব্যাপারে কোন আলেম ও ইমামের মধ্যে মতানৈক্য নেই ।
হাদীসে পাকের আলোকে অভিশপ্ত কারা
নিম্নে দুটি হাদীস শরীফ উল্লেখ করা হচ্ছে, যেসব হাদীসে কিছু লোককে নবীজি অভিশপ্ত বলেছেন বা অভিশাপ দিয়েছেন।
উম্মুল মু’মিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহা বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন-
سِتَّةٌ لَعَنْتُهُمْ لَعَنَهُمُ اللَّهُ وَكُلُّ نَبِيٍّ كَانَ الزَّائِدُ فِي كِتَابِ اللَّهِ وَالْمُكَذِّبُ بِقَدَرِ اللَّهِ وَالْمُتَسَلِّطُ بِالْجَبَرُوتِ لِيُعِزَّ بِذَلِكَ مَنْ أَذَلَّ اللَّهُ وَيُذِلَّ مَنْ أَعَزَّ اللَّهُ وَالْمُسْتَحِلُّ لِحَرَمِ اللَّهِ وَالْمُسْتَحِلُّ مِنْ عِتْرَتِي مَا حَرَّمَ اللَّهُ وَالتَّارِكُ لِسُنَّتِي .
অনুবাদঃ ‘‘ছয় শ্রেণীর লোককে আমি লা’নত তথা অভিসম্পাত করছি। আল্লাহ তায়ালা এবং সকল নবী আলাইহিমুস সালাম এদেরকে অভিসম্পাত করেছেন। তারা হলঃ আল্লাহ তায়ালার কিতাবের বিকৃতিসাধনকারী, আল্লাহ তায়ালার নির্ধারিত তাকদীরের প্রতি অবিশ্বাসী, আল্লাহ যাকে অপমানিত করেছেন তাকে সম্মানিত করার এবং যাকে ইজ্জত দিয়েছেন তাকে অপমান করার জন্য ক্ষমতা প্রয়োগকারী, আল্লাহ তায়ালার হারামে (হারাম শরীফে) রক্তপাতকারী, আমার বংশধরের রক্তপাতকারী- আল্লাহ তায়ালা যা হারাম করেছেন এবং আমার সুন্নাত পরিত্যাগকারী।’’
(আল জামি লিত তিরমিযি, আবওয়াবুল ক্বদর, হাদীস নং ২১৫৪)
উক্ত হাদীসে উল্লেখিত নিন্দিত স্বভাবের প্রায় সবকটি এজিদের মধ্যে বিদ্যমান থাকায় সে দুনিয়া ও আখিরাতে অভিশপ্ত।
অপর হাদীসে এসেছে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিতঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন,
لَعَنَ اللَّهُ الْوَاشِمَاتِ، وَالْمُسْتَوْشِمَاتِ، وَالْمُتَنَمِّصَاتِ وَالْمُتَفَلِّجَاتِ لِلْحُسْنِ، الْمُغَيِّرَاتِ خَلْقَ اللَّهِ تَعَالَى، مَالِي لاَ أَلْعَنُ مَنْ لَعَنَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ؟ وَهْوَ فِي كِتَابِ اللَّهِ ‏{‏وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ‏}‏‏.‏
অনুবাদঃ আল্লাহ্র লা’নত বর্ষিত হোক সে সব নারীদের উপর যারা শরীরে উলকি অঙ্কণ করে এবং যারা অঙ্কণ করায়, আর সে সব নারীদের উপর যারা চুল, ভ্রু তুলে ফেলে (ভ্রুপ্লাক করে) এবং সে সব নারীদের উপর যারা সৌন্দর্যের জন্যে সম্মুখের দাঁত কেটে চিকন করে দাঁতের মধ্যে ফাঁক তৈরি করে, যা আল্লাহ্র সৃষ্টির মধ্যে পরিবর্তন আনে। রাবী বলেনঃ আমি কেন তার উপর অভিশাপ করব না, যাকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অভিশাপ করেছেন? আর আল্লাহর কিতাবে আছেঃ “রসূল তোমাদেরকে যা দেয় তা গ্রহণ কর।”
(সূরা হাশর ,আয়াতঃ ৭), (সহীহ বুখারী, কিতাবুল লিবাস, হাদীস নং ৫৯৩১)
এভাবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উপরোক্ত অপরাধগুলো সহ যে সব অপরাধের কারণে অভিশম্পাত করেছেন তা হচ্ছে, মদ্যপান, সুদ খাওয়া, মা বাবাকে গালি দেওয়া ও সমকামীতা ইত্যাদী। কলেবর বৃদ্ধির আশংকায় হাদীসের ইবারত উল্লেখ করা হচ্ছে না।
এজিদের নিন্দায় ইমাম আবুল ফারজ ইবনুল জাওযী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি স্বরচিত রিসালায় এধরণের দশটি হাদীস এনেছেন। হাদীস শরীফগুলো উল্লেখ করার পূর্বে তিনি বলেন,
যেসব দোষের কারণে হাদীস শরীফে অভিশম্পাত করা হয়েছে তাদের সমুদয় অপরাধের কমপক্ষে দশগুণ বেশী অপরাধ করেছে পাপীষ্ঠ এজিদ। তাই সে মুসলিম সমাজে চিরকাল নিন্দিত ঘৃণিত ও অভিশপ্ত।
(আর রদ্দু আলাল মুতা’আচ্ছিবিল আনীদ আল মানিই মিন যাম্মি ইয়াযীদ, পৃষ্ঠাঃ ৪২ , ৪৩, ৪৪, প্রকাশকঃ দারুল কুতুবিল ইলমিয়্যাহ, বৈরূত লেবানন)
জালিম এজিদ সম্পর্কে নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যদ্বানী
এক.
হযরত আবূ হুরায়রা (রাঃ) বলেন,
سَمِعْتُ الصَّادِقَ الْمَصْدُوقَ يَقُولُ: ((هَلَكَةُ أُمَّتِي عَلَى يَدَيْ غِلْمَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ)). فَقَالَ مَرْوَانُ لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَيْهِمْ غِلْمَةً. فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ لَوْ شِئْتُ أَنْ أَقُولَ بَنِي فُلاَنٍ وَبَنِي فُلاَنٍ لَفَعَلْتُ.
অনুবাদঃ ‘‘আমি সত্যবাদী ও সত্যবাদী হিসাবে স্বীকৃত রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি আমার উম্মতের ধ্বংস কুরাইশের কিছু বালকের হাতে হবে। তখন মারওয়ান বলল, এ সব বালকের প্রতি আল্লাহ্র ‘লা’নত’ বর্ষিত হোক। আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি যদি বলার ইচ্ছা করি যে তারা অমুক অমুক গোত্রের লোক তাহলে বলতে পারবো। ’’
(সহীহ বুখারী, কিতাবুল ফিতান, হাদীস নং ৭০৫৮)
উক্ত হাদীসের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে হাজার আসক্বালানী রহঃ স্বীয় ‘ফাতহুল বারী’ এবং আল্লামা বাদরুদ্দীন আইনী রহঃ ‘ওমদাতুল ক্বারী’-তে প্রায় অভিন্ন শব্দে লিখেন-
وَأَنَّ أَوَّلَهُمْ يَزِيدُ كَمَا دَلَّ عَلَيْهِ قَوْلُ أَبِي هُرَيْرَةَ رَأْسُ السِّتِّينَ وَإِمَارَةُ الصِّبْيَانِ فَإِنَّ يَزِيدَ كَانَ غَالِبًا يَنْتَزِعُ الشُّيُوخَ مِنْ إِمَارَةِ الْبُلْدَانِ الْكِبَارِ وَيُوَلِّيهَا الْأَصَاغِرَ مِنْ أَقَارِبِهِ .
অনুবাদঃ ‘‘নিশ্চয়ই (নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেসব কুরাইশ বংশীয় বালকের হাতে উম্মতের ধ্বংসের কথা বলেছেন) তাদের প্রথম ব্যক্তি হচ্ছে এজিদ। নবীজির সাহাবী হযরত আবূ হুরায়রা রাঃ কর্তৃক ষাট হিজরী ও বালকের শাসন থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা তাই প্রমাণ করে। কারণ এজিদ জোরপূর্বক রাষ্ট্রের বড় বড় প্রশাসনিক পদগুলো থেকে বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যক্তিদের সরিয়ে তার আত্মীয় স্বজনের কম বয়সী লোকদের নিয়োগ প্রদান করে।’’
(ফাতহুল বারী, কৃতঃ ইমাম ইবনে হাজার আসক্বালানী রহঃ, ১৩শ খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ১৩)
দুই.
হযরত আবূ উবাইদা আমির ইবনুল জাররাহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, নবীয়ে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
لا يزالُ أمرُ أمتي قائمًا بالقسطِ حتى يَثلِمَه رجلٌ من بني أُميَّةَ يقالُ له يزيدُ .
অনুবাদঃ ‘‘আমার উম্মতের শাসনব্যবস্থা ন্যায়ের উপর প্রতিষ্ঠিত থাকবে। সর্বপ্রথম তা নষ্ট করবে বনী উমাইয়ার এক ব্যক্তি। তার নাম হবে এজিদ ।”
(মুসনাদে আবূ ইয়া’লার সূত্রে সিয়ারু আলামিন নুবালা, ৪র্থ খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ৩৯ । প্রকাশনায়ঃ মুআচ্ছাছাতুর রিসালাহ ,বৈরূত, লেবানন)
তিন.
হযরত আবূ যার রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إنَّ أوَّلَ من يبدِّلُ سنَّتي رجلٌ من بَني أميَّةَ
অনুবাদঃ ” নিশ্চয়ই আমার সুন্নাতকে সর্বপ্রথম পরিবর্তন করবে বনী উমাইয়ার এক লোক।”
(আল জামিউস সাগীর,কৃতঃ ইমাম সুয়ূতী রহঃ, হাদীস নং ২৮৪১, পৃষ্ঠাঃ ৩১৪। প্রকাশকঃ আল মাকতাবাতুত তাওফীক্বিয়্যাহ, কায়রো, মিশর। দালাইলুন নুবুওয়াত, ইমাম বায়হাক্বী রহঃ, ৬ষ্ঠ খন্ড, পৃষ্ঠাঃ৪১০।
প্রকাশকঃ দারুল হাদীস, কায়রো, মিশর)
উপরোল্লেখিত হাদীস বর্ণনা করে ইমাম বায়হাক্বী স্বীয় কিতাব দালাইলুন নুবুওয়াতে লিখেন,
سميه يزيد بن معاوية يشبه أن يكون هو
অনুবাদঃ ” হাদীসের বর্ণনার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সে ব্যক্তি হচ্ছে হযরত আমীর মুয়াবিয়া রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুর ছেলে এজিদ ।” (প্রাগুক্ত)
এজিদের অপরাধগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ
জা’ফর বিন মুহাম্মদ (রাঃ) বলেন,
وجدنا بالحسين حين قتل ثلاثة وثلاثين طعنة وأربعة وثلاثين ضربة
অনুবাদঃ ” (একষট্টি হিজরীর মুহাররমের দশ তারিখে ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুকে যখন এজিদ বাহিনী শহীদ করেছিল) তখন ইমাম হুসাইন রাঃ এর শরীরে তেত্রিশটি তীর বল্লমের ক্ষত ও চৌত্রিশটি তরবারীর আঘাত দেখা গিয়েছিল।” (আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ১৬১)
মুহাম্মদ বিন হানাফিয়াহ রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
قتل مع الحسين سبعة عشر رجلا كلهم من أولاد فاطمة
অনুবাদঃ ” ইমাম হুসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু এর সাথে হযরত ফাতিমা যাহরা রাঃ এর আওলাদের (পুত্র নাতি সহ) সতেরো জন শহীদ হয়েছেন।
(সূত্রঃ আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ১৬১)
হযরত হাসান বসরী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন,
قتل مع الحسين ستة عشر رجلا كلهم من أهل بيته ، ما على وجه الأرض يومئذ لهم شبه. وقال غيره: قتل معه من ولده وإخوته وأهل بيته ثلاثة وعشرون رجلا.
অনুবাদঃ “ইমাম হুসাইন রাঃ এর সাথে তাঁর পরিবারের এমন ষোলজন সদস্যকে শহীদ করা হয়েছে – পৃথিবী পৃষ্ঠে যাদের কোন তুলনা ছিলনা। অন্যজন বলেন, কারবালার প্রান্তরে ইমামের সন্তান, ভাই ও আহলে বায়তের তেইশজন সদস্য শাহাদত বরণ করেছেন।”
(সূত্রঃ আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ১৬১)
ইবনে কাসীর বর্ণনা করেন,
مجموعها اثنان وسبعون رأسا. وذالك أنه ما قتل قتيل إلا احترزوا رأسه وحملوه إلى ابن زياد، ثم بعث بها ابن زياد إلى يزيد بن معاوية إلى الشام.
অনুবাদঃ ” কারবালার ময়দানে ইমাম হুসাইন রাঃ এর পক্ষে শাহাদাত বরণকারীদের মোট সংখ্যা ছিল বাহাত্তর জন। যখনই কাউকে শহীদ করা হতো সঙ্গে সঙ্গে তাঁর শির মুবারক শরীর থেকে আলাদা করা হতো। এরপর ঐ শিরগুলো প্রথমে কুফায় ইবনে যিয়াদের কাছে পাঠানো হলো। সেখান থেকে ইবনে যিয়াদ পবিত্র শিরগুলো সিরিয়ায় এজিদের কাছে পাঠিয়ে দিল। ”
(সূত্রঃ আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ১৬২)
ইবনে কাসীর বর্ণনা করেন,
فأوفده( رأس الحسين رضي الله عنه) إلى يزيد بن معاوية فوضع رأسه بين يديه، وعنده أبو برزة الأسلمي، فجعل يزيد ينكت بالقضيب على فيه ويقول: {يفلقن هاما من رجال أعزة + علينا وهم كانوا أعق وأظلما}. فقال له أبو برزة: ارفع قضيبك، فوالله لربما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم واضعا فيه على فيه يلثمه.
অনুবাদঃ ” যখন ইমাম হুসাইন রাঃ এর শির মুবারক এজিদের সামনে রাখা হলো তখন সেখানে আবূ বারযা আসলামী ছিলেন। এজিদ তার হাতের লাঠি দিয়ে ইমামের মুখে আঘাত করতে করতে আবৃত্তি করলো,
‘ আমাদের এ তলোয়ারগুলো এমন লোকদের শিরোচ্ছেদ করেছে, যারা ছিল আমাদের চাইতে বেশী সম্মানিত। আর তারা ছিল অধিক অবাধ্য ও জালিম( নাঊযুবিল্লাহ)।’
হযরত আবূ বারযাহ বলেন, তুমি এ লাঠি সরাও। আল্লাহর কসম, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইমাম হুসাইনের মুখে মুখ রেখে আদর করতে দেখেছি।” ( সূত্রঃ আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৮ম খন্ড, পৃৃষ্ঠাঃ ১৬৮)
কারবালার মর্মান্তিক ঘটনার পরও থেমে ছিলনা এজিদের জুলম ও হত্যাযজ্ঞ
৬৩ হিজরীর জিলহজ্ব মাসের সাতাশ তারিখে এজিদ বাহিনী মদীনা মুনাওয়ারায় আক্রমণ করে। তিনদিন পর্যন্ত নজীরবিহীন ধ্বংসযজ্ঞ ও হত্যাযজ্ঞ চালানোর পর মক্কা মুকাররমায় হামলা করে। এজিদের জুলুমশাহীর বিরুদ্ধে সোচ্চার ও আহলে বায়ত আত্বহারের প্রেমিক নিরীহ নিরস্ত্র মুসলমানের উপর হামলা চালায় ইতিহাসের নিকৃষ্টতম ঘাতক এজিদ। এ ঘটনাকে ইসলামের ইতিহাসে “হাররা” এবং হামলার দিনগুলোকে ” আইয়ামুল হাররা” বলা হয়।
ইমাম যুহরী বলেন,
سبعمائة من وجوه الناس من المهاجرين والأنصار. ووجوه الموالى وممن لا أعرف من حر وعبد عشرة ألاف.
অনুবাদঃ ” ঐ ঘটনায় পরিচিতমুখ অর্থাৎ আনসার ও মুহাজিরদের মধ্য থেকে সাত শত জনকে হত্যা করা হয়েছিল। অপরিচিত বা নাম না জানা স্বাধীন ও গোলাম সর্বমোট দশ হাজার লোককে হত্যা করা হয়।”
(আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ, ৮ম খন্ড, পৃষ্ঠাঃ ১৮৮)
রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের ভবিষ্যদ্বানী ও এজিদের কর্মকান্ডের সার্বিক পর্যালোচনা থেকে প্রতীয়মান হয় এজিদ নিঃসন্দেহে জালিম, অভিশপ্ত, মুনাফিক চরিত্রের ও ঈমানদারের কাছে চির নিন্দিত ও ঘৃণিত এক ব্যক্তির নাম।
এতকিছুর পরও এজিদের সাফাই গাওয়া, তাকে নির্দোষ প্রমাণের চেষ্টা এবং আমীরুল মুমিনীন উপাধীদাতাদের সুতোর টান কোথায় তা সকল সচেতন মুসলিমের কাছে সুস্পষ্ট।
আল্লাহ তায়ালা আহলে বায়তে আত্বহার (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) এর ভালবাসায় সকল ঈমানদারের হৃদয়কে সিক্ত রাখুন এবং এজিদপ্রেমী আহলে হাদীস, খারেজী সম্প্রদায়ের চক্রান্ত থেকে মুসলমানদের ঈমান আক্বীদা রক্ষা করুন। আমীন বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালীন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলা আলিহী ওয়া আসহাবিহী আজমাঈন।

লেখক: আরবি প্রভাষক, রাউজান দারুল ইসলাম কামিল মাদরাসা, রাউজান, চট্টগ্রাম।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •