এয়াযীদ সমাচার
সৈয়দ মোহাম্মদ জালাল উদ্দিন আল আযহারী
حَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ يَحْيَى بْنِ سَعِيدِ بْنِ عَمْرِو بْنِ سَعِيدٍ قَالَ أَخْبَرَنِي جَدِّي قَالَ كُنْتُ جَالِسًا مَعَ أَبِي هُرَيْرَةَ فِي مَسْجِدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالْمَدِينَةِ وَمَعَنَا مَرْوَانُ قَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ سَمِعْتُ الصَّادِقَ الْمَصْدُوقَ يَقُولُ هَلَكَةُ أُمَّتِي عَلَى يَدَيْ غِلْمَةٍ مِنْ قُرَيْشٍ فَقَالَ مَرْوَانُ لَعْنَةُ اللهِ عَلَيْهِمْ غِلْمَةً فَقَالَ أَبُو هُرَيْرَةَ لَوْ شِئْتُ أَنْ أَقُولَ بَنِي فُلَانٍ وَبَنِي فُلَانٍ لَفَعَلْتُ، فَكُنْتُ أَخْرُجُ مَعَ جَدِّي إِلَى بَنِي مَرْوَانَ حِينَ مُلِّكُوا بِالشَّأْمِ فَإِذَا رَآهُمْ غِلْمَانًا أَحْدَاثًا قَالَ لَنَا عَسَى هَؤُلَاءِ أَنْ يَكُونُوا مِنْهُمْ قُلْنَا أَنْتَ أَعْلَمُ
أخرجه البخاري في كتاب الفتن- باب قول النبي صلى الله عليه وسلم هلاك أمتي على يدي أغليمة سفهاءগ্ধ (৭০৫৮)،
ومسلم في كتاب الفتن وأشراط الساعة- باب لا تقوم الساعة حتى يمر الرجل بقبر الرجل … (২৯১৭)
হযরত আমর বিন ইয়াহিয়া বিন সাঈদ বিন আমর বিন সা’ঈদ তাঁর দাদা সায়ীদ হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, আমি মদীনা শরীফে মসজিদে নববীতে হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহর সাথে বসা ছিলাম, তখন মারওয়ানও আমাদের সাথে ছিল। হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহ বললেন, আমি সত্যবাদী এবং সত্যায়িত নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, তিনি এরশাদ করেন, আমার উম্মতের বিপর্যয় ও বিনাশ নেমে আসবে কুরাঈশ বংশীয় কিছু নির্বোধ বালকের হাতে। তখন মারওয়ান বলল, ঐসব বালকদের উপর আল্লাহর লা’নত। হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বললেন, আমি যদি চাই তাহলে বলে দিতে পারব যে, তারা অমুক অমুক গোত্রের অমুক অমুক। বর্ণনাকারী বলছেন মারওয়ান বংশীয়রা যখন শাম দেশে রাজত্ব করছিল তখন আমি আমার দাদার সাথে যখন বের হতাম তখন দেখতাম শাসন কাজে নিযুক্তরা অধিকাংশই কমবয়সি। তিনি বললেন, হতে পারে তারাই ওই দলের অন্তর্ভুক্ত। আমি বললাম, আপনি ভাল জানেন। [সহীহ আল বুখারী, কিতাবুল ফিতন হাদীস নং-৭০৫৮/৬৬৪৯, ২১০৪৬। মুসনাদে আহমদ-৮৪০৪]
এ হাদিস শরীফ প্রসঙ্গে ইমাম বদরুদ্দীন আইনি রহমতুল্লাহি আলাইহি এবং ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন, যাদের হাতে এই উম্মতের বিপর্যয় নেমে এসেছে তাদের মধ্যে সর্বপ্রথম ছিল ইয়াজিদ।
রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে এ বিষয়ে আগে থেকে জানিয়ে দিয়েছিলেন, এজন্য তিনি বলেন,
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ قَالَ حَفِظْتُ مِنْ رَسُولِ اللهِ صلى الله عليه وسلم وِعَاءَيْنِ، فَأَمَّا أَحَدُهُمَا فَبَثَثْتُهُ، وَأَمَّا الآخَرُ فَلَوْ بَثَثْتُهُ قُطِعَ هَذَا الْبُلْعُومُ.
আমি রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছ থেকে জ্ঞানের দু’টি আধার (ভান্ডার)অর্জন করেছি, তৎমধ্যে আমি একটি সর্বশ্রেণীর মুসলমানদের জন্য প্রচার- প্রসার ও বিতরণ করে দিয়েছি। আর অপরটি যদি আমি প্রচার করি তাহলে আমার এ কন্ঠনালী কেটে দেয়া হবে। (বুখারী-১২০)
কোন্ বিষয়টি হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু গোপন রেখেছেন সে বিষয়ে বিভিন্ন অভিমত পাওয়া যায়,
وَقِيلَ إِنَّهُ عِلْمٌ يَتَعَلَّقُ بِالْمُنَافِقِينَ بِأَعْيَانِهِمْ أَوْ بِوِلَادَةِ الْجَوْرِ مِنْ بَنِي أُمَيَّةَ أَوْ بِفِتَنٍ أُخْرَى فِي زَمَنِهِ،
কারো কারো মতে, এই বিষয়টি হল, সুনির্দিষ্ট কিছু মুনাফিকদের বর্ণনা, উমাইয়া বংশীয় কিছু জালিম শাসকদের উত্থান এবং সেই সময়কার নানা ধরনের ফিতনা-ফাসাদের উদ্ভব সম্পর্কীয়।
وَقَالَ الْأَبْهَرِيُّ حَمَلَ الْعُلَمَاءُ الْوِعَاءَ الَّذِي لَمْ يَبُثَّهُ عَلَى الْأَحَادِيثِ الَّتِي فِيهَا يَتَبَيَّنُ أَسَامِي أُمَرَاءِ الْجَوْرِ وَأَحْوَالُهُمْ وَذَمُّهُمْ، وَكَانَ أَبُو هُرَيْرَةَ يُكَنِّي عَنْ بَعْضِهِ وَلَا يُصَرِّحُ بِهِ خَوْفًا عَلَى نَفْسِهِ مِنْهُمْ كَقَوْلِهِ: أَعُوذُ بِاللَّهِ مِنْ رَأْسِ السِّتِّينَ، وَإِمَارَةِ الصِّبْيَانِ، يُشِيرُ إِلَى خِلَافَةِ يَزِيدَ بْنِ مُعَاوِيَةَ لِأَنَّهَا كَانَتْ سَنَةَ سِتِّينَ مِنَ الْهِجْرَةِ، وَاسْتَجَابَ اللَّهُ دُعَاءَ أَبِي هُرَيْرَةَ فَمَاتَ قَبْلَهَا بِسَنَةٍ
আবহারি বলেন, হযরত আবু হুরায়রা যে বিষয়টি গোপন রেখেছেন সেই বিষয়টিকে ওলামায়ে কেরাম কিছু জালিম শাসক, তাদের অবস্থা ও তাদের কর্মকান্ড সংক্রান্ত ছিল বলে মত প্রকাশ করেছেন। তাই হযরত আবু হোরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এই বিষয়গুলোর কিছু অংশ ইশারা-ইঙ্গিতে বর্ণনা করেছেন এবং জীবন নাশের আশঙ্কায় সুস্পষ্ট করে বলেননি, তাই তিনি আল্লাহতালার দরবারে বারবার এ দোয়া করতেন,
اَللّٰهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ رَأْسِ السِّتِّينَ وَإِمْرَةِ الصِّبْيَانِ
হে আল্লাহ আমি ৬০তম বছর এবং কমবয়সি লোকজনের শাসন ক্ষমতা দেখা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় বা পানাহ চাই।
এই দোয়ার উদ্দেশ্য হল ইয়াযীদের ক্ষমতায় আরোহনের সময়কালকে ইঙ্গিত করা, কেননা সে ৬০ হিজরীতে ক্ষমতায় আসীন হয়। আল্লাহ তা‘আলা হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর দোয়া কবুল করেছেন, তিনি ৫৯ হিজরীতে ইন্তেকাল করেছেন।
ذَكَرَ الحَافِظُ أَنَّ يَزِيدَ بْنَ مُعَاوِيَةَ كَانَ يَنْزِعُ مِنَ الوِلَايَاتِ مَجْمُوعَةً مِنَ الكِبَارِ الَّذِينَ يَكُونُونَ وُلَاةً عَلَى عَدَدٍ مِنَ البُلْدَانِ وَيَضَعُ بَدَلَهُمْ مَجْمُوعَةً مِنَ الشَّبِيْبَةِ الصِّغَارِ
হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহমাতুল্লাহি আলাহি বলেন, ইয়াযীদ তার শাসনামলে বিভিন্ন প্রদেশে দায়িত্বরত প্রবীণ ও সিনিয়র আমিরগণকে পদচ্যুত করে তদস্থলে কিছু কম বয়সি নির্বোধকে ক্ষমতাসীন করে।
মানবতার ইতিহাসে সর্বাধিক ঘৃণ্য, লোমহর্ষক ও হৃদয়বিদারক ঘটনার নাম কারবালা। এই হত্যাকা-ের মূলহোতা হল পাপীষ্ঠ ইয়াযীদ। যা ঐতিহাসিক তথ্য- উপাত্ত এবং নির্ভরযোগ্য বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু দুঃখের সাথে বলতে হয়, সাম্প্রতিককালে কিছু হতভাগা মৌলভী এজিদকে কারবালার ঘটনা থেকে সম্পূর্ণরূপে দায়মুক্ত করার অপপ্রয়াস চালাচ্ছে, তারা দাবী করছে, হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হত্যাকা-ের সাথে এজিদের কোনো সম্পৃক্ততা ছিলনা। ইবনে যিয়াদ, আমর বিন সাদ এবং শিমরা’রাই ইমাম হোসাইনকে শহীদ করেছে, ইয়াজিদ এ হত্যার নির্দেশ দেয়নি।
তাই আমরা নিন্মে প্রমাণ উপস্থাপন করার চেষ্টা করব যে এজিদের নির্দেশেই ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে শহীদ করা হয়েছে এবং এ কাজে ইয়াজিদ পরিপূর্ণ সন্তুষ্ট ও রাজি ছিল।
প্রথমত: ইয়াজিদ ক্ষমতায় আরোহণের পরপরই মদিনা শরীফের গভর্নর ওয়ালিদ ইবনে ওতবাকে নির্দেশ দিয়েছিল:
أما بعد فخذ حسيناً وعبد الله بن عمر وابن الزبير بالبيعة أخذاً ليس فيه رخصة حتى يبايعوا، والسلام.
হুসাইন, আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর এবং আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইরকে এমন ভাবে পাকড়াও করো তারা যেন বায়াত না হওয়া পর্যন্ত মুক্তি না পায়। (ইবনু আসির: আল কামিল-৪/১৪)
মূলত এই চিঠিতেই ইয়াজিদ তার গভর্নরকে নির্দেশ দিয়েছিল যদি তাঁরা বায়াত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান তাহলে তাঁদেরকে কোন প্রকার ছাড় না দেয়ার এবং প্রয়োজনে তাদেরকে হত্যা করার নির্দেশও সেখানে দেয়া ছিল।
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূত্বী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
فكتب يزيد إلى واليه بالعراق عبيد الله بن زياد بقتاله
অতঃপর ইয়াযীদ ইরাকের গভর্নর উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের নিকট হযরত ইমাম হুসাইন এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য লিখিত ফরমান পাঠায়।” (তারীখুল খুলাফা ১৬৫ পৃষ্ঠা)
দ্বিতীয়তঃ ইমাম হোসাইন এর মাথা মোবারক কারবালার ময়দানে দাফন না করে বর্শাবিদ্ধ করে কারবালা থেকে দামেশকে নিয়ে গিয়ে ইয়াজিদকে উপহার দেয়া প্রমাণ করে এ হত্যাকা-ে এজিদের নির্দেশ ও পরিপূর্ণ সন্তুষ্টি ছিল।
তৃতীয়তঃ ইমাম হোসাইন এর পবিত্র মস্তকে ইয়াজিদের ছড়ি দিয়ে আঘাত করা প্রমাণ করে আহলে বাইতকে হত্যা ও অপমান করাই ইয়াজিদের মূল উদ্দেশ্য ছিল।
ইয়াজিদের কাছে ‘যখন ইমামের কর্তিত শির মুবারক আনা হয় তখন ইয়াজিদ তার হাতে থাকা বেতের ছড়িটি দিয়ে ওই পবিত্র শিরে খোঁচা মারতে থাকে। (হাসান বসরির বর্ণনা, ইবনে কাসিরের কিতাব-বিদায়া ও নিহায়া। (খ- -৭, পৃষ্ঠা-১২২)
ইবনে কাসির অন্য এক সূত্রে উল্লেখ করেছেন: “ইয়াজিদের হাতে একটি বেতের ছড়ি ছিল। সে তা দিয়ে হযরত হুসাইন’র দাঁত মুবারকের ওপর প্রহার করে দাগ বসিয়ে দেয়। এরপর ইয়াজিদ বলে:
এর এবং আমাদের দৃষ্টান্ত হল যেমনটি হুসাইন ইবনুল হারাম মুররি বলেছে: আমাদের কাছে শক্তিমান বহুজনের মস্তক চৌচির করে ফেলা হয় এমতাবস্থায় যে, তারা ‘বড় নাফরমান’ ও ‘চরম জালিম’।
অন্য বর্ণনা অনুযায়ী ইয়াজিদ ইমাম হুসাইন’র কর্তিত শিরের দু’টি চোখে ও তাঁর নাসিকায় বেত্রাঘাত করেছিল। আর এ দৃশ্য দেখে সাহাবি হযরত আবু বারযা আসলামী (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ইয়াজিদকে বলেন:
তুমি কি তোমার ছড়ি দিয়ে হুসাইনের দাঁতের সারিতে আঘাত করে দাগ বসিয়ে দিলে? সাবধান! তোমার ছড়িটি তাঁর দাঁতের সারিতে দাগ বসিয়েছে এমন স্থানে যেখানে মুখ রেখে চুষতে দেখেছি আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে। সাবধান রোজ হাশরে তথা বিচার দিবসে তোমার শাফায়াতকারী বা সঙ্গী হবে ইবনে জিয়াদ আর হুসাইনের শাফায়াতকারী হবেন খোদ মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ কথা বলে তিনি ইয়াজিদের দরবার থেকে বের হয়ে যান।
(তাবারি এবং বিদায়া ও নিহায়া। খ- যথাক্রমে ৭ ও ৫ এবং
পৃ-১৯২;২৬৮ ও ৫১৬। )
অভিশপ্ত ইয়াজিদ ইমাম হুসাইনকে শহীদ করার ঘটনার পর বলেছিল: আমার পূর্বপুরুষরা যদি বেঁচে থাকতেন তাহলে তারা দেখতেন যে, কিভাবে আমি মুহাম্মাদের পরিবার ও (তাঁদের গোত্র) বনি হাশিমের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি।
لـمَّا بدت تلك الحمولُ وأشرقت
تلك الرؤوسُ على رُبَا جَيْرُونِ
نعب الغرابُ فقلتُ قل أو لا تقل
فقد اقتضيتُ من الرسولِ ديوني
অভিশপ্ত ইয়াজিদ এক কবিতা আবৃত্তি করে বলেছিল: আমি মুহাম্মদের কাছ থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি বদর যুদ্ধের বদলা হিসেবে যা সে করেছিল ওই যুদ্ধে আমাদের পূর্ব পুরুষদের বিরুদ্ধে।
অন্য একটি বর্ণনায় এও প্রমাণিত হয় যে, পাপীষ্ঠ ইয়াজিদ ইমাম হোসাইন এবং আহলে বাইতকে হত্যার মধ্য দিয়ে বদর যুদ্ধে নিহত তার পূর্বপুরুষদের প্রতিশোধ গ্রহণ করেছিল। যা নি¤œবর্তী বর্ণনা থেকে সুস্পষ্ট হয়।
لـيت أشـياخِي ببدرٍ شَهِدُوا جَزَع الخَزْرج من وَقْع الأسَلْ
فـأهـلّوا واسـتهلُّوا فـرحاً ثمّ قـالوا لي هنيّاً لا تسلْ
حـين حـكَّت بـفناءٍ بركها واستحرَّ القتلُ في عبدِ الأسلْ
قد قتلنا الضِّعفَ من أشرافِكم وعـدلنا مَـيْلَ بـدرٍ فاعتدل
واخر الأبيات
:ولست من جندب ان لم انتقم …
من بنى احمد وأشرقت
تلك الرؤوسُ على رُبَا جَيْرُونِ
نعب الغرابُ فقلتُ قل أو لا تقل فقد اقتضيتُ من الرشَهِدُوا جَزَع الخَزْرج من وَقْع الأسَلْ
فـأهـلّوا واسـتهلُّوا فـرحاً ثمّ قـالوا لي هنيّاً لا تسلْ
حـين حـكَّت بـفناءٍ بركها واستحرَّ القتلُ في عبدِ الأسلْ
قد قتلنا الضِّعفَ من أشرافِكم وعـدلنا مَـيْلَ بـدرٍ فاعتدل
واخر الأبيات
ولست من جندب ان لم انتقم … من بنى احمد ما كان فعل
আর যে সকল বর্ণনায় ইয়াজিদের কান্না, আফসোস এবং ইবনে যিয়াদকে ভৎর্সনা করার কথা উল্লেখ রয়েছে যদি তা সত্যি হয় তাহলে এটি ছিল এজিদের নাটক ও অভিনয়। কারণ সে আঁচ করতে পেরেছিল, এ ঘটনায় ইয়াজিদের সম্পৃক্ততা প্রমাণিত হলে দামেস্কবাসী ও অন্যান্য প্রদেশের মুসলমানরা ইয়াজিদের বিরুদ্ধে আন্দোলন ও বিদ্রোহ করতে পারে তাই সে গণরোষ থেকে বাঁচার জন্যই এ অভিনয় করেছিল।আর যদি ইবনে যিয়াদ স্বপ্রণোদিত হয়ে ইমাম হোসাইনকে শহীদ করে থাকে তাহলে ইয়াজিদ তাকে কোন প্রকার শাস্তি দেয় নি কেন? ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে হত্যার বদলায় কেসাস কেন নেয়নি? কমপক্ষে তাকে ক্ষমতাচ্যুত করাতো বাঞ্ছনীয় ছিল, কিন্তু তাও করেনি। বরং তাকে পুরস্কৃত করেছে এবং পুরস্কার স্বরূপ পরবর্তী বছর মদিনা শরীফে হামলার নেতৃত্ব দেবার জন্য ইবনে যিয়াদকে ইয়াজিদ নির্বাচন করেছিল এবং সে অপারগতা জানিয়ে ছিল এবং বলেছিল ইমাম হোসাইনকে শহীদ করার কারণে পৃথিবীব্যাপী মুসলমানদের আমি ঘৃণার পাত্র হলাম তাই মদিনাবাসীর উপর হামলা করে এই ঘৃণাকে আরোও বৃদ্ধি করতে চাইনা।
তাই উপরোক্ত বর্ণনা দ্বারা স্পষ্টভাবে প্রমাণিত যে কারবালায় ইমাম হোসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর হত্যাকান্ডের জন্য ইয়াজিদিই মূল দায়ী ও অপরাধী।
ইয়াজিদের বিষয়ে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ওলামায়ে কেরামের অভিমত
সাম্প্রতিককালে কিছু জাহেল, নালায়েক, হতভাগা বক্তার বক্তব্য মুসলিম জাতিকে দ্বিধাদ্বন্দ্ব ও বিভ্রান্তির মধ্যে নিমজ্জিত করছে। তাদের কেউ কেউ ইয়াজিদকে রহমতুল্লাহি আলাইহি, আমিরুল মুমিনিন এবং হযরত ইয়াজিদ বলে সম্বোধন করার চেষ্টা করছে। অথচ ইয়াজিদকে “আমিরুল মুমিনিন” বলা যাবে কিনা এ বিষয়ে হযরত ওমর ইবনু আব্দুল আজিজ রহমাতুল্লাহ আলাইহি’র শাসনামলেই ফয়সালা হয়ে গেছে। বর্ণিত আছে,
قَالَ نَوْفَلٌ بْنِ أَبِي الْفُرَاتِ كُنْتُ عِنْدَ عُمَرَ بْنِ عَبْدِ الْعَزِيزِ فَذَكَرَ رَجُلٌ يَزِيدَ فَقَالَ : قَالَ أَمِيرُ الْمُؤْمِنِينَ يَزِيدُ بْنُ مُعَاوِيَةَ فَقَالَ : تَقُول أَمِيرَ الْمُؤْمِنِينَ ؟ وأَمَرَ بِهِ فَضَرَبَ عِشْرِين سَوْطًا
“হযরত নাওফেল ইবনে আবুল ফুরাত রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন, একদা আমি খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি’র নিকট বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি ইয়াযীকে আমীরুল মু’মিনীন ইয়াযীদ ইবনে মুয়াবিয়া বললে খলীফা হযরত উমর ইবনে আব্দুল আযীয রহমতুল্লাহি আলাইহি উক্ত ব্যক্তিকে বললেন, এই সর্বনিকৃষ্ট ব্যক্তিকে আমীরুল মু’মিনীন বলছো? এই বলে তিনি এই অপরাধের জন্য ওই ব্যক্তিকে বিশটি বেত্রাঘাত করার নির্দেশ দিলেন। অতঃপর তাকে বিশটি বেত্রাঘাত করা হলো।” (তারীখুল খুলাফা ১৬৬)
জনৈক ব্যক্তিকে হযরত ওমর ইবন আব্দুল আজিজ রহমাতুল্লাহি আলাইহির সম্মুখে ইয়াজিদকে আমিরুল মুমিনিন বলার অপরাধে ২০টি দুর্রা বা কশাঘাত করার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছিল।
আর ৬১ হিজরীর পর থেকে বর্তমান শতাব্দি পর্যন্ত লিখিত নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবে এবং নির্ভরযোগ্য ইসলামী মনীষীর মুখে ইয়াজিদকে ‘হযরত’, ‘রাহমাতুল্লাহি আলাইহি’ বলার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না, এমন কি কেউ ইয়াজিদকে ভালো মানুষ বলেছে তার প্রমাণও পাওয়া যায় না। বরং সর্বস্তরের ওলামায়েকেরাম ইয়াজিদকে একজন ফাসেক, ফাজের, জালিম, লম্পট, চরিত্রহীন, মদ্যপায়ী, নামাজ ত্যাগকারীর, বানর নিয়ে খেলাকারী এবং শরীয়তের নির্দেশ উপেক্ষা কারী হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ইমাম ইবনু কাসীর বলেন,
وَقَدْ رُوِيَ أَنَّ يَزِيدَ كَانَ قَدِ اشْتَهَرَ بِالْمَعَازِفِ وَشُرْبِ الخمر والغنا وَالصَّيْدِ وَاتِّخَاذِ الْغِلْمَانِ وَالْقِيَانِ وَالْكِلَابِ وَالنِّطَاحِ بَيْنَ الْكِبَاشِ وَالدِّبَابِ وَالْقُرُودِ، وَمَا مِنْ يَوْمٍ إِلَّا يُصْبِحُ فِيهِ مَخْمُورًا، وَكَانَ يَشُدُّ الْقِرْدَ عَلَى فَرَسٍ مُسَرَّجَةٍ بِحِبَالٍ وَيَسُوقُ بِهِ، وَيُلْبِسُ الْقِرْدَ قَلَانِسَ الذَّهَبِ، وَكَذَلِكَ الْغِلْمَانُ، وَكَانَ يُسَابِقُ بَيْنَ الْخَيْلِ، وَكَانَ إِذَا مَاتَ الْقِرْدُ حَزِنَ عَلَيْهِ. وقيل: إِنَّ سَبَبَ مَوْتِهِ أَنَّهُ حَمَلَ قِرْدَةً وَجَعَلَ يُنَقِّزُهَا فَعَضَّتْهُ. وَذَكَرُوا عَنْهُ غَيْرَ ذَلِكَ وَاللهُ أَعْلَمُ بِصِحَّةِ ذَلِكَ.
বর্ণিত আছে যে সে গান-বাদ্য, মদ্যপান ও শিকার ইত্যাদি কাজে প্রসিদ্ধ ছিল । সে কিশোর-কিশোরী ও নর্তকী এবং কুকুর, বানর ইত্যাদির মধ্যে প্রতিযোগিতা লাগিয়ে দিত। প্রতিদিন সকালে মদ্যপ ও মাতাল অবস্থায় ঘুম থেকে জাগ্রত হতো, ঘোড়ার উপর বানরকে দড়ি দিয়ে বেঁধে এদিক-ওদিক ঘুরাত, নব যৌবনপ্রাপ্ত ছেলে ও বাঁদরগুলিকে সোনার টুপি পরাত। ঘোড় দৌড়ের প্রতিযোগিতা দিত। …
)ابن كثير – البدايه والنهايه – ثم دخلت سنة أربع وستين – ترجمة يزيد بن معاوية الجزء : ( ১১ ) – رقم الصفحة : ( ৬৫৯ )
ইবনে জাওযী তাঁর ﺍﻟﻮﻓﺎﺀ ﺑﺄﺣﻮﺍﻝ ﺍﻟﻤﺼﻄﻔﻰ ‘ওয়াফা আল-ওয়াফা’ কিতাবে বলেন:
ﻣﺎ ﺫﻛﺮﻩ ﺍﻹﻣﺎﻡ ﺍﺑﻦ ﺍﻟﺠﻮﺯﻱ ﻗﺎﻝ : ﻟﻤﺎ ﺩﺧﻠﺖ ﺳﻨﺔ ﺍﺛﻨﻴﻦ ﻭﺳﺘﻴﻦ ﻭﻟّﻰ ﻳﺰﻳﺪ ﻋﺜﻤﺎﻥ ﺑﻦ ﻣﺤﻤﺪ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﺳﻔﻴﺎﻥ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ، ﻓﺒﻌﺚ ﺇﻟﻰ ﻳﺰﻳﺪ ﻭﻓﺪﺍ ﻣﻦ ﺍﻟﻤﺪﻳﻨﺔ، ﻓﻠﻤﺎ ﺭﺟﻊ ﺍﻟﻮﻓﺪ ﺃﻇﻬﺮﻭﺍ ﺷﺘﻢ ﻳﺰﻳﺪ، ﻭﻗﺎﻟﻮﺍ : ﻗﺪﻣﻨﺎ ﻣﻦ ﻋﻨﺪ ﺭﺟﻞ ﻟﻴﺲ ﻟﻪ ﺩﻳﻦ، ﻳﺸﺮﺏ ﺍﻟﺨﻤﺮ، ﻭﻳﻌﺰﻑ ﺑﺎﻟﻄﻨﺎﺑﻴﺮ، ﻭﻳﻠﻌﺐ ﺑﺎﻟﻜﻼﺏ؛ ﻭﺇﻧﺎ ﻧﺸﻬﺪﻛﻢ ﺃﻧﺎ ﻗﺪ ﺧﻠﻌﻨﺎﻩ .
-এয়াযীদ তার চাচাতো ভাই উসমান বিন মুহাম্মদ বিন আবি সুফিয়ানকে মদীনার শাসক পদে নিয়োগ করে। উসমান উপহার সামগ্রীসহ এক প্রতিনিধি দল প্রেরণ করে এয়াযীদের কাছে তারই আনুগত্যের শপথ নেয়ার উদ্দেশ্যে। কিন্তু প্রতিনিধি দলের প্রত্যাবর্তনশেষে এর সদস্যরা বলেন, ‘আমরা এমন এক লোকের সাথে সাক্ষাৎ করে এসেছি যার কোনো ধর্ম নেই; সে মদ্যপান করে, বাদ্যযন্ত্র বাজায়, গায়িকা (ভ্রষ্টা নারী) ও কুকুর সাথে রাখে। আমরা তার প্রতি আনুগত্যের শপথ প্রত্যাহার করে নেয়ার কথা ঘোষণা করছি।’ (ইবনে জাওযী : ওফাউল ওফা, ১:১০৩।)
‘তারীখ আল-কামিল’ গ্রন্থের ৩য় খ-ের ৪৫০ পৃষ্ঠায় মুনযির ইবনে যাবীর থেকে বর্ণনা করেন:
إِنَّهُ قَدْ أَجَازَنِي بِمِائَةِ أَلْفٍ وَلَا يَمْنَعُنِي مَا صَنَعَ بِي أَنْ أُخْبِرَكُمْ خَبَرَهُ ، وَاللهِ إِنَّهُ لَيَشْرَبُ الْخَمْرَ .
-‘‘এটি সত্য যে এয়াযীদ আমাকে এক লক্ষ দিরহাম পুরস্কারস্বরূপ দিয়েছিল, কিন্তু এটি তার প্রকৃত অবস্থা বর্ণনা করা হতে আমাকে রুখবে না। আল্লাহর কসম, সে একজন মদ্যপ ও মাতাল।”
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হানজালা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন,
قَالَ: يَا قَوْمُ اتَّقُوا اللهَ وَحْدَهُ لا شريك له. فو الله مَا خَرَجْنَا عَلَى يَزِيدَ حَتَّى خِفْنَا أَنْ نُرْمَى بِالْحِجَارَةِ مِنَ السَّمَاءِ. إِنَّ رَجُلا يَنْكِحُ الأُمَّهَاتِ وَالْبَنَاتَ وَالأَخَوَاتِ وَيَشْرَبُ الْخَمْرَ وَيَدَعُ الصَّلاةَ وَاللهِ لَوْ لَمْ يَكُنْ مَعِي أَحَدٌ مِنَ النَّاسِ لأَبْلَيْتُ لِلَّهِ فِيهِ بَلاءً حَسَنًا.
)الطبقات الكبرى : ابن سعد جلد : ৫ صفحه : ৪৯(ابن عساكر – تاريخ دمشق – حرف العين – ৩২৭০ – عبد الله بن حنظلة بن أبي عامر المعروف بالراهب … الجزء : ( ২৭ ) – رقم الصفحة : ( ৪২৯ )
আমরা ইয়াজিদের বিরুদ্ধে এইজন্যই বিদ্রোহ ঘোষণা করেছি তার এই অপকর্মগুলোতে যদি আমরা নীরবতা পালন করতাম তাহলে আমাদের উপর আসমান থেকে পাথর নিক্ষেপ করা হতো। কারণ সে মদ্যপায়ী, নামাজ ত্যাগকারীর, বানর নিয়ে খেলাকারী এবং শরীয়তে যেসকল নারীদেরকে বিবাহ করা হারাম ঘোষণা করা হয়েছে তাদেরকে বিবাহের অনুমতি প্রদান কারী ছিল।
فَإِنَّهُ ظَهَرَ فَسَق يَزِيدُ عِنْدَ الْكَافَّةِ مِنْ أَهْلِ عَصْرِهِ بَعَثَت شِيعَةِ أَهْلِ الْبَيْتِ بِالْكُوفَة لِلْحُسَيْن أَنْ يَأْتِيَهُمُ
এজিদের ফাসেকী ও লাম্পট্য তৎকালীন সমস্ত অধিবাসীদের নিকট প্রকাশ পেলে কুফার নবী-পরিবারের অনুসারীগণ হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে আসার জন্য আমন্ত্রণ জানাল।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে যুবাইর রাদ্বিয়াল্লাহ আনহু বলেন,
لما بلغ يزيد بن معاوية أن أهل مكة أرادوا ابن الزبير على البيعة فأبى ، أرسل النعمان بن بشير الأنصاري وهمام بن قبيصة النميري إلى ابن الزبير يدعوانه إلى البيعة ليزيد ، على أن يجعل له ولاية الحجاز وما شاء وما أحب لأهل بيته من الولاية ، فقدما على ابن الزبير ، فعرضا عليه ما أمرهما به يزيد ، فقال ابن الزبير : أتأمراني ببيعة رجل يشرب الخمر ويدع الصلاة ويتبع الصيد ، فقال : همام بن قبيصة : أنت أولى بما قلت منه ، فلطمه رجل من قريش ، فرجعا إلى يزيد ، فغضب وحلف لا يقبل بيعته الا وفي يده جامعة.
)العصفري – تاريخ خليفة بن خياط – ثم قال : والله لا أبايع يزيد ولا أدخل له في طاعة الجزء : ( ১ ) – رقم الصفحة : ( ২৫২ )
এবার আসুন, ইয়াজিদ কি কাফের বলা যাবে কিনা এবং তার প্রতি লা’নত বা অভিসম্পাত করা যাবে কিনা সে সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের অভিমত:
প্রথমত: ইয়াজিদকে কাফের বলার ক্ষেত্রে ওলামা কেরামের দ্বিমত রয়েছেঃ কেউ কেউ কাফের বলার স্বপক্ষে রায় প্রদান করেছেন আবার কেউ কেউ কাফের বলা থেকে বিরত থাকার পক্ষে রায় দিয়েছেন।
কিন্তু ইয়াজিদকে লা’নত করা যাবে কিনা এই বিষয়ে ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রহমাতুল্লাহি আলায়হি সহ অনেকেই লা’নত করার পক্ষে রায় প্রদান করেছেন।
ইয়াযীদ কাফের হবার স্বপক্ষের দাবী
বিখ্যাত মুফাসসির “তাফসীরে রুহুল মায়ানীর” প্রনেতো আল্লামা আলুসি (রহমাতুল্লাহি আলাইহি’র) এর মন্তব্য :
وأنا أقول : الذي يغلب على ظنّي أنّ الخبيث لمْ يكن مصدِّقاً برسالة النبيّ صلّى الله عليه وآله ، وأنّ مجموع ما فعل مع أهل حرم الله تعالى وأهل حرم نبيّه صلّى الله عليه وآله وعترته الطيّبين الطاهرين في الحياة وبعد الممات ، وما صدر منه من المخازي ليس بأضعف دلالة على عدم تصديقه من إلقاء ورقة من المصحف الشريف في قذر ، ولا أظنّ أنّ أمره كان خافياً على أجلَّة المسلمين إذ ذاك ، ولكن كانوا مغلوبين مقهورين لمْ يسعهم إلاّ الصبر ليقضي الله أمراً كان مفعولاً .
অর্থ: আমি বলছি, আমার এটাই অধিক ধারনা যে, আমার বিশ্বাস, খবীসটি হুজুর পাককে রসূল বলে বিশ্বাস করতো না। সে আল্লাহ’র হেরেম শরীফে অবস্থানকারীদের সাথে, হুজুর পাক-র হেরেম শরীফ (মদীনা শরীফ) এঅবস্থানকারীদের সাথে এবং উনার পূত-পবিত্র বংশধরদের সাথে উনার জীবদ্দশায় এবং উনাদের বেছাল শরীফের পরে যে আচরণ করেছে, এছাড়া তার দ্বারা যে সমস্ত অনাচার প্রকাশ পেয়েছে তা তার ঈমান না থাকার ব্যাপারটি স্পষ্ট করে…।” (তাফসীরে রূহুল মা’য়ানী ২৫ তম খন্ড ৭৩ পৃষ্ঠা।)
ইমাম ত্বারসূসী বলেন,
يزيد بن معاوية بن أبي سفيان ، ولد سنة خمس ، أو ست ، أو سبع وعشرين للهجرة بويع في حياة أبيه على ولاية العهد ، ثم بالملك سنة ستين بعد وفاة والده معاوية ، قتل الإمام الحسين (ر) ، وآذى آل بيت النبوة ، واستباح مدينة الرسول ثلاثة أيام ، وشرب الخمر ، وارتكب الفواحش ، واشتهر بالمعازف والغناء والصيد واتخاذ الغلمان والقيان ، والكلاب والنطاح بين الكباش والدباب والقردة ، وما يوم إلا ويصبح فيه مخمورا ، وكان يشد القرد على فرس مسرجة بالحبال ويلبسه قلانس الذهب ويسوق به ، وإذا مات القرد حزن عليه ، فسقه الإمام ابن كثير ، وكفره كثير غيره ، مات سنة ৬৪ للهجرة.
.. . ইবনু কাসীর ইয়াযীদকে ফাসেক বলেন, আবার অনেকে তাকে কাফের বলেন।
) الطرسوسي – تحفة الترك فيما يجب أن يعمل في الملك الفصل الثاني عشر – هوامش التعليق على القسم الدراسي الجزء : ( ১ ) – رقم الصفحة : ( ৭৩ )
…. المنكرات التي اقترفها يزيد من قتل الحسين وحمله بنات رسول الله (ص) سبايا ، وقرعه ثنايا الحسين بالعود ، وإخافته أهل المدينة ، وهدم الكعبة ، تدل على القسوة والغلظة ، والنصب ، وسوء الرأي ، والحقد والبغضاء والنفاق والخروج عن الإيمان ، فالفاسق ملعون ، ومن نهى عن شتم الملعون فملعون.
) الجاحظ – الرسالة الحادية عشر في بني أمية – رقم الصفحة : ( ৩৯৮ )
তাফসীরে মাযহারী নামক কিতাবে চতুর্থ খ- ২০০ পৃষ্ঠা সূরা ইব্রাহীম এর ২৮ নং আয়াত কাজী সানাউল্লাহ পানিপথি রাহমাতুল্লাহ আলাইহি বলেন
قُلْتُ أَمَّا بَنُو أُمَيَّةَ فمتعوا بِالْكُفْر حَتّى أَسْلَمَ أَبُو سُفْيَانَ وَمُعَاوِيَة وَعَمْرُو بْنُ الْعَاصِ وَغَيْرُهُمْ ثُمَّ كَفَّرَ يَزِيد وَمَنْ مَعَهُ بِمَا أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وانتصبوا الْعَدَاوَات آلِ مُحَمَّدٍ وَ قُتِلُوا حُسَيْنًا ظملا وَكَفَر يَزِيد بِدَيْن مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
… তারপর ইয়াজিদ ও তার সাথীরা আল্লাহর নেয়ামতের কুফরী করল আল্লাহর প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর বংশধরের সাথে শত্রুতা এবং হযরত ইমাম হুসাইনকে জুলুম করে হত্যা করল। অতঃপর ইয়াজিদ প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর ধর্মের সাথে কুফরী করল।
ইবনুল ইমাদ হাম্বালী রাহিমাহুল্লাহ ও আল্লামা ইয়াফেয়ী রাহিমাহুল্লাহ বলেন–
وأمّا حُكْمُ مَنْ قَتَلَ الْحُسَيْنُ ، أَوْ أَمَرَ بِقَتْلِهِ ، ممّن استحلّ ذَلِكَ فَهُوَ كَافِرٌ
যে হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করেছে অথবা তার নির্দেশ দিয়েছে অথবা তাঁকে হত্যা করা বৈধ মনে করেছে তার হুকুম হল সে কাফের। (শাযারাতুয যাহাবিঃ১/৬৮)
ইয়াযীদের প্রতি যারা লা’নত দেয়ার পক্ষে মত প্রকাশ করেছেন তাদের দলীল
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহিমাহুল্লাহ-এর অভিমত
ইমাম আহমাদকে তার ছেলে আব্দুল্লাহ জিজ্ঞাসা করেছিলেন ইয়াজিদের উপর লা’নত দেয়া যাবে কি না? উত্তরে তিনি বলেছিলেন, কেন তাকে লা’নত দেয়া যাবেনা যাকে স্বয়ং আল্লাহ কুরআনে কারীমে লা’নত দিয়েছেন। আব্দুল্লাহ বললেন, আমি তো কুরআন শরীফ অধ্যয়ন করেছি, কিন্তু ইয়াজিদের লা’নতের বিষয়টি পাইনি। তখন ইমাম আহমাদ রাহিমাহুল্লাহ বললেন, আল্লাহ তা’য়ালা পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন,,
ﻓَﻬَﻞْ ﻋَﺴَﻴْﺘُﻢْ ﺇِﻥْ ﺗَﻮَﻟَّﻴْﺘُﻢْ ﺃَﻥْ ﺗُﻔْﺴِﺪُﻭﺍ ﻓِﻲ ﺍﻟْﺄَﺭْﺽِ ﻭَﺗُﻘَﻄِّﻌُﻮﺍ ﺃَﺭْﺣَﺎﻣَﻜُﻢْ ﺃُﻭﻟَٰﺌِﻚَ ﺍﻟَّﺬِﻳﻦَ ﻟَﻌَﻨَﻬُﻢُ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻓَﺄَﺻَﻤَّﻬُﻢْ ﻭَﺃَﻋْﻤَﻰٰ ﺃَﺑْﺼَﺎﺭَﻫُﻢْ
ক্ষমতা লাভ করলে, সম্ভবতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আতœীয়তা বন্ধন ছিন্ন করবে।এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন, অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টিশক্তিহীন করেন। (সূরা মুহাম্মাদঃ ২২-২৩)
এরপর ছেলেকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এযিদ যা করেছে তা থেকে অধিক ফাসাদ ও আত্মীয়তার বন্ধন বিনষ্ট করা আর কী হতে পারে? (রুহুল মা’আনী, ২৬ তম খন্ড, পৃ নাম্বারঃ ৭২-৭৩)
শাওকানী বলেন,
ولقد أفرط بعض أهل العلم كالكرامية ومن وافقهم في الجمود على أحاديث الباب ، حتى حكموا بأن الحسين السبط وأرضاه باغ على الخمير السكير الهاتك لحرم الشريعة المطهرة يزيد بن معاوية لعنهم الله ، فيالله العجب من مقالات تقشعر منها الجلود ويتصدع من سماعها كل جلمود.
.. .মদ্যপ, শরীয়তের হুকুম অমান্যকারী ইয়াযীদের প্রতি আল্লাহর লা’নত।
)الشوكاني – نيل الأوطار شرح منتقى الأخبار – كتاب الحدود باب الصبر على جور الأئمة وترك قتالهم والكف عن اقامة السيف الجزء : ( ৭ ) – رقم الصفحة : ( ২০৮ )
سئل الكيا الهراسي الفقيه الشافعي عن يزيد بن معاوية : هل هو من الصحابة أم لا وهل يجوز لعنه أم لا ، فأجاب : أنه لم يكن من الصحابة لأنه ولد في أيام عثمان ، وأما قول السلف ففيه لكل واحد من أبي حنيفة ومالك وأحمد قولان : تصريح وتلويح ، ولنا قول واحد : التصريح دون التلويح ، وكيف لا يكون كذلك وهو المتصيد بالفهد واللاعب بالنرد ومدمن الخمر ، ومن شعره في الخمر ، قوله :
أقول لصحب ضمت الكأس شملهم * وداعي صبابات الهوى يترنم خذوا بنصيب من نعيم ولذة *
فكلّ وإن طال المدى يتصرم وكتب فصلا طويلا أضربنا عن ذكره ، ثم قلب الورقة وكتب : ولو مددت ببياض لأطلقت العنان ، وبسطت الكلام في مخازي هذا الرجل.
)الدميري – حياة الحيوان الكبرى – باب الفاء – الفهد – فائدة الجزء : ( ২ ) – رقم الصفحة : ( ৩০৬ )
ঘালাবী বলেন,
من أخاف أهل المدينة ظلما أخافه الله عز وجل وعليه لعنة الله والملائكة والناس ، لا يقبل الله منه يوم القيامة صرفا ولا عدلا ، أي وبهذا الحديث تمسك من جوز اللعن على يزيد ، لما تقدم عنه في إباحة المدينة في وقعة الحرة .
…যে মদীনাবাসীদের ভীতি প্রদর্শন করে তার প্রতি আল্লাহ তাআলা, ফেরেশÍাকুল এবং সকল মানবজাতির লা’নত।
)الحلبي – السيرة الحلبية – باب الهجرة إلى المدينة الجزء : ( ২ ) – رقم الصفحة : ( ১২০ )
ইমাম সুয়ুতিও অভিশাপ দিয়েছেন ইয়াজিদকে
فكتب يزيد إلى واليه بالعراق عبيد الله بن زياد بقتاله ، فوجه إليهم جيشا أربعة آلاف عليهم عمر بن سعد بن أبي وقاص ، فخذله أهل الكوفة كما هو شأنهم مع أبيه من قبله ، فلما رهقه السلاح عرض عليه الاستسلام والرجوع والمضي إلى يزيد فيضع يده في يده ، فأبوا إلا قتله ، فقتل وجيء برأسه في طست حتى وضع بين يدي ابن زياد ، لعن الله قاتله وابن زياد معه ويزيد أيضا.
তিনি ‘তারিখুল খোলাফা’ কিতাবে লিখেছেন, …তাঁকে শহীদ করা হয়েছে এবং মস্তক প্লেটে করে নেয়া হয়েছে ইবনে জিয়াদের কাছে। আল্লাহর লানত বা অভিশাপ বর্ষিত হোক যে তাঁকে হত্যা করেছে এবং অভিশাপ বর্ষিত হোক ইবনে জিয়াদেও উপর ও ইয়াজিদের ওপরও।
)السيوطي – تاريخ الخلفاء – عهد بن أمية – يزيد بن معاوية أبو خالد الأموي الجزء : ( ১ ) – رقم الصفحة : ( ১৫৭ )
আল্লামা তাফতাযানী রাহিমাহুল্লাহ বলেন,
وَالْحَقُّ أَنَّ رِضَا يَزِيد بِقَتْلِ الْحُسَيْنِ ، واستبشاره بِذَلِك ، وَإِهَانَتِه أَهْلُ بَيْتٍ الرَّسُول مِمَّا تَوَاتَر مَعْنَاه ، لَعْنَةُ اللَّهِ عَلَيْهِ ، وَعَلَى أَنْصَارَه وَأَعْوَانِه
সঠিক কথা হচ্ছে , ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহুকে শহীদ করার ব্যাপারে ইয়াজিদের সম্মতি ও খুশী থাকা এবং আহলে বায়তেকে আপমানিত করা মুতাওয়াতিরভাবে প্রমানিত। তাই তার উপর আল্লাহর লা’নত পড়ুক। লা’নত পড়ুক তাদের উপর যারা তাকে এ ব্যাপারে সাহায্য করেছে।
العلامة التفتازاني – شرح العقائد النسفية – رقم الصفحة : ( ১৮১ )
ইমাম আহমদকে তাঁর ছেলে আব্দুল্লাহ বলেন, কেউ কেই বলছে তারা নাকি ইয়াযীদকে ভালবাসে, তিনি বললেন, হে বৎস! কোন ইমানদার কি ইয়াযীদকে ভালবাসতে পারে? তখন ছেলে বললেন, বাবা তাহলে তুমি ইয়াযীদকে লা’নত করনা কেন? বললেন, তুমি কি তোমার বাবাকে কখনও কাউকে লা’নত করতে দেখেছ?
قَالَ صَالِحُ بْنُ أَحْمَدَ بْنِ حَنْبَلٍ: “قُلْت لِأَبِي: إنَّ قَوْمًا يَقُولُونَ: إنَّهُمْ يُحِبُّونَ يَزِيدَ. قَالَ: يَا بُنَيَّ، وَهَلْ يُحِبُّ يَزِيدَ أَحَدٌ يُؤْمِنُ بِاَللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ؟ فَقُلْت: يَا أَبَتِ، فَلِمَاذَا لَا تلعنه؟ قَالَ: يَا بُنَيَّ، وَمَتَى رَأَيْت أَبَاك يَلْعَنُ أَحَدًا؟
এ থেকে প্রমাণিত তিনি লা’নত করতে নিষেধ করেননি।
وَرُوِيَ عَنْهُ قِيلَ لَهُ: أَتَكْتُبُ الْحَدِيثَ عَنْ يَزِيدَ بْنِ مُعَاوِيَةَ؟ فَقَالَ: لَا، وَلَا كَرَامَةَ، أَوَلَيْسَ هُوَ الَّذِي فَعَلَ بِأَهْلِ الْمَدِينَةِ مَا فَعَلَ؟
তাঁর কাছে জানতে চাইলেন, ইয়াযীদ থেকে কি হাদীস বর্ণনা করা যাবে? বললেন, অবশ্যই না। তার কোনই সম্মান নেই।
ইমাম যাহাবি
وكان ناصبيا فظا ، غليظا ، جلفا . يتناول المسكر ، ويفعل المنكر افتتح دولته بمقتل الشهيد الحسين ، واختتمها بواقعة الحرة ، فمقته الناس . ولم يبارك في عمره . وخرج عليه غير واحد بعد الحسين . كأهل المدينة قاموا لله وكمرداس بن أدية الحنظلي البصري ونافع بن الأزرق وطواف بن معلى السدوسي وابن الزبير بمكة .
ইয়াজিদ ছিল ঘৃণ্য নাসিবি তথা মহানবীরপরিবারের পবিত্র সদস্যগণ তথা আহলে বাইত-বিদ্বেষী। সে মদ পান করত ও পাপাচারে লিপ্ত ছিল। ইমাম হুসাইনকে শহীদ করার মাধ্যমে সে তার রাজত্ব শুরু করে এবং মক্কা ও মদীনায় মহাবিপর্যয় ঘটানোর মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘঠে। তাই লোকেরা তাকে ঘৃণা করত ও তার জীবনে কোনো বরকত ছিল না। ইমাম হুসাইন’র শাহাদতের ঘটনার পর মদীনার অনেকেই আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার জন্যই ইয়াজিদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে তুলে নেন। (আসসিয়ার আল আলাম আন নাবুলা, খ–৪, পৃ-৩৭-৩৮)
ইমাম যাহাবী আরও লিখেন,
وَعَنْ زِيَادٍ الحَارِثِيِّ, قَالَ: سَقَانِي يَزِيْدُ شَرَاباً مَا ذُقْتُ مِثْلَهُ, فَقُلْتُ: يَا أَمِيْرَ المُؤْمِنِيْنَ, لَمْ أُسَلْسِلْ مِثْلَ هَذَا قَالَ هَذَا رُمَّانُ حُلْوَانَ بِعَسَلِ أَصْبَهَانَ, بِسُكَّرِ الأَهْوَازِ, بِزَبِيْبِ الطَّائِفِ, بِمَاءِ بَرَدَى.
“যিয়াদ হারসী বর্ণনা করে: ‘এয়াযীদ আমাকে পানীয় পান করতে দেয়। আমি ইতিপূর্বে কখনোই এ রকম পানীয় পান করি নি; তাই তাকে জিজ্ঞেস করি কোথা থেকে সে এর উপাদান সংগ্রহ করেছে। এয়াযীদ জবাবে বলে, এটি মিষ্টি ডালিম, ইসপাহানের মধু, হাওয়াযের চিনি, তায়েফের আঙ্গুর ও বুরদাহ-এর পানি দ্বারা প্রস্তুতকৃত।’
وَعَنْ مُحَمَّدِ بنِ أَحْمَدَ بنِ مِسْمَعٍ, قَالَ: سَكِرَ يَزِيْدُ, فَقَامَ يَرْقُصُ, فَسَقَطَ عَلَى رَأْسِهِ, فَانْشَقَّ وَبَدَا دِمَاغُهُ.
আহমদ ইবনে মাসামা বর্ণনা করেন: ‘একবার এয়াযীদ মদ্যপান করে নাচা আরম্ভ করে; হঠাৎ সে পড়ে যায় এবং তার নাক দিয়ে রক্ত বেরুতে আরম্ভ করে’।” [১৫. সিয়ার আল-আ’লম আন্ নুবালাহ : ৪:৩৭ ।
লেখক: সহকারী অধ্যাপক, সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশ। খতীব-মুসাফির খানা জামে মসজিদ, নন্দন কানন, চট্টগ্রাম।