সম্পাদকীয়

0

মাহে রবিউল আউয়াল বিশ্ব মুসলিমের দ্বারে সমাগত। এ মাসে এ ধরার বুকে তাশরিফ আনেন বিশ্বমানবতার মুক্তির দিশারি রাহমাতুল্লিল আলামীন, গুনাহগার উম্মতের কান্ডারী হুজুর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। তৎকালীন আরবের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্ভ্রান্ত পুতপবিত্র বংশধারার মাধ্যমে তিনি শুভজন্ম লাভ করেন। পূর্ববর্তী সকল নবীর উপর অবতীর্ণ কিতাবে তাঁর আগমনবার্তা ঘোষিত হয়েছিলো। এ মহান নবীর শুভাগমন মাসে মুসলিম উম্মাহ্ আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে নবীপ্রেমে সিক্ত হতে নবীপাকের জীবনাদর্শ নিজ জীবনে বাস্তবায়নের প্রত্যয়ে প্রতি পাড়ায় মহল্লায় পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে। আবহমান কাল থেকে আমাদের দেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপন হয়ে আসছে। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি-২০২১ তারিখে বাংলাদেশ গেজেটে প্রকাশিত বাংলাদেশের মহামান্য রাষ্ট্রপ্রতি এক প্রজ্ঞাপনে যে পাঁচটি জাতীয় দিবসে সরকারি-বেসরকারি ভবন, অফিস এবং বিদেশের বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোতে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের নির্দেশ এসেছে এর মধ্যে সর্বপ্রথম হলো ঈদে মিলাদুন্নবী দিবস। এ জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারকে আন্তরিক ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছি। তাছাড়া বাংলাদেশ সরকারের আওতাধীন পরিচালিত সরকারি প্রতিষ্ঠান ইসলামিক ফাউন্ডেশন প্রতি বছর জাতীয়ভাবে আয়োজন করে থাকে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালা।
এ দেশে পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে সবচেয়ে জনপ্রিয় আয়োজন হচ্ছে জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী। জশনে জুলুস হলো বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা এতে অংশগ্রহণকারী আশেকে রসূলগণ ক্বোরআন তিলাওয়াত, হামদ, না’ত, জিকির ও দরুদ সালাম-এর মাধ্যমে বিশ্ব মুসলিম ঐক্য সংহতি ও ঈমানী জযবার বহিঃপ্রকাশ ঘটিয়ে থাকেন, এতে অংশগ্রহণকারী রসূলপ্রেমিকগণ ঈমানী চেতনায় শানিত হয়ে রসূল প্রেমে উজ্জ্বীবিত হয়ে নবচেতনায় জাগ্রত হয়ে থাকেন। এ জুলুসে ইসলাম বিদ্বেষী রাসূলে পাকের শান-মানে আঘাতকারী গোষ্ঠির বিরুদ্ধে প্রচন্ড প্রতিবাদ ঘোষিত হয়। নবী অবমাননাকারী মুনাফিকদের ভিতে-কম্পন সৃষ্টি করে দেয়। এ মহান জুলুসের প্রবর্ত্তক হলেন রাসূলে করিম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের ৩৯তম বংশধর ক্ষণজন্মা আধ্যাত্মিক পুরুষ গাউসে জামান আল্লামা হাফেজ কারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রহমাতুল্লাহি আলায়হি। তাঁর প্রবর্তিত এ জুলুস আজ সর্বত্র জনপ্রিয় ও সর্বমহলে গ্রহণযোগ্য হয়েছে। এ উপ মহাদেশের সর্ববৃহৎ আধ্যাত্মিক দ্বীনি সংগঠন আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট এ জশনে জুলুস আয়োজন করে থাকেন। পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে বরাবরের মতো মাসিক তরজুমান-এ আহলে সুন্নাত দেশের প্রথিতযশা আলিম- ওলামা ইসলামি চিন্তাবিদ, লেখক-গবেষকদের মূল্যবান লেখার সমন্বয়ে একটি উঁচুমানের বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করেছে। এতে বিভিন্ন শিরোনামে ২২ টি প্রবন্ধ স্থান পেয়েছে। লেখাগুলোতে ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনের প্রয়োজনীয়তা, তাৎপর্য, মিলাদুন্নবী পালনের পদ্ধতি, হুজুর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সম্মানিত মাতা-পিতার বংশধারার সম্পর্কে আলোকপাত, তাঁর ইলমে গায়ব সম্পর্কে মূল্যবান প্রবন্ধ রয়েছে। বিশেষতঃ হুযূর-ই করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র জীবনাদর্শ তুলে ধরা হয়েছে। সম্মানিত পাঠক সমাজকে রাসূলপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে তাঁর আদর্শ অনুসরণ করে নিজ জীবনকে ধন্য করার ক্ষেত্রে ব্যাপক সাহায্য করবে বলে আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস।
বর্তমান গোটা বিশ্বের মানুষ ধর্মবিমুখ বস্তুবাদী দর্শনের কবলে পড়ে যুদ্ধ, সংঘাত-সন্ত্রাস ও অশান্তির অনলে পুড়ছে, দুর্বলের উপর সবলের অত্যাচার, চারদিকে খুন, ধর্ষণ, বেহায়াপনা, ব্যভিচারের মহোৎসব চলছে, যুব সমাজ আজ বিপথগামী নৈতিক অবক্ষয়ের শেষ সীমায় অবতীর্ণ। ক্ষমতা, সম্পদ ও ভোগ বিলাসে মত্ত হয়ে নিজের সর্বনাশকে দ্রুতায়িত করছে, এহেন করুণ সময়ে একমাত্র সর্বোত্তম আদর্শের মূর্তপ্রতীক হুজুর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আরায়হি ওয়াসাল্লামার-এর আদর্শ অনুসরণই দিতে পারে নিশ্চিত সর্বোত্তম সুরক্ষা। কতই সুন্দর জীবন দর্শন নবীজি আমাদের জন্য রেখে গিয়েছেন, তিনি বলেছেন, যে খাদ্য নিজেরা খাবে চাকরদেরকেও তা খাওয়াবে, যে বস্ত্র নিজেরা পরবে চাকরদেরও তা পরতে দেবে। তিনি ছিলেন সুবিচার ও ন্যায় পরায়ণতার জীবন্ত প্রতীক। তিনি সারাজীবন অন্যায়, অবিচার অনাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন সুবিচার ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য। তিনি জালিমের বিরুদ্ধে মজলুমের পক্ষাবলম্বন করতেন, সবলকে প্রশ্রয় দিয়ে দুর্বলকে খাটো করার ঘোর বিরোধী ছিলেন। এমন সুন্দর আদর্শগুলো আজ আমরা যাঁরা তাঁর উম্মত বলে দাবি করছি তারা ভুলে গিয়ে তার সম্পূর্ণ উল্টো পথে চলছি। তাই কবি নজরুলের ভাষায় বলতে হয়-
ভূলিয়া গিয়াছি তব আদর্শ তোমার দেখানো পথ
ক্ষমা করো ওগো নূরনবী হযরত।
রাসূলে পাকের অনুপম আদর্শাবলী ভুলে যাওয়ার কারণে আজ মুসলমানরা অধপতিত ও লাঞ্ছিত। এবারের পবিত্র মিলাদুন্নবীতে মুসলিম উম্মাহ্ নবীজির পূতঃপবিত্র আদর্শ নিজ জীবনে বাস্তবায়নের শপথ গ্রহণ করুক, এ কামনা করছি।
লেখক-পাঠক শুভানুধ্যায়ী-বিজ্ঞাপনদাতা সকলের প্রতি পবিত্র ঈদে মিলাদুন্নবী উপলক্ষে জানাই আন্তরিক মোবারকবাদ।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •