নবী নন্দিনী হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র জীবনাদর্শ
অধ্যক্ষ মাওলানা মুহাম্মদ বদিউল আলম রিজভি
عَنْ عَائشة رضى الله عَنْهَا اَنَّهَا قَالَتْ مَا رَايْتُ اَحَدًا كَانَ اشبه كلامًا وَحَدِيْثًا منْ فَاطِمَةَ بِرَسُوْلِ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَكَانَتْ اِذَا دَخَلَتْ عَلَيْهِ رَحَّبَ بِهَا وَقَامَ اليها فَاخَذَ بِيَدِهَا نقبّلهَا وَجَلَسَهَا فِىْ مَجْلِسِهِ -(رواه الترمذى)
অনুবাদ: উম্মুল মুমেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি (হযরত) ফাতেমার চেয়ে অন্য কাউকে কথাবার্তা ও আলোচনায় রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র সাদৃশ্য দেখিনি। যখন তিনি নবীজির কাছে আসতেন নবীজি দাঁড়িয়ে তাঁকে স্বাগত জানাতেন। স্নেহ মমতায় তাঁর হাতে চুমু দিতেন এবং নিজের আসনে তাঁকে বসতে দিতেন। [তিরমিযী, আল মুস্তাদরাক হাকেম: খণ্ড- ৩য়, পৃষ্ঠা- ১৫৪]
প্রাসঙ্গিক আলোচনা
বর্ণিত হাদীস শরীফে আহলে বায়তে রাসূলের অন্যতম সদস্য পৃথিবীর নারী সমাজের অনুকরণীয় আদর্শ, নবী নন্দিনী খাতুনে জান্নাত, নবীজির আদরের দুলালী হযরত ফাতেমাতুয্যাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার মর্যাদা আলোকপাত হয়েছে। ইসলামে তাঁর মর্যাদা প্রসঙ্গে হাদীস শরীফের আলোকে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা উপস্থাপনার প্রয়াস পাচ্ছি।
হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার জন্ম
নবী পরিবারের উজ্জ্বল নক্ষত্র হযরত সৈয়্যদা ফাতেমাতয্যাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার জন্ম সন সম্পর্কে বিভিন্ন মত রয়েছে। এক বর্ণনা মতে রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামের একচল্লিশ বৎসর বয়সে তিনি জন্মগ্রহণ করেন।
আল্লামা ইবনে জওযী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র মতে নবীজির নবূয়ত প্রকাশের পাঁচ বৎসর পূর্বে ৬০৫ খ্রিস্টাব্দে বায়তুল্লাহ্ শরীফ সংস্কারের সময় তিনি জন্মগ্রহণ করেন। হযরত জয়নব, হযরত রুকাইয়া এবং উম্মে কুলসুম’র পর রাসূলুল্লাহ্র সবচেয়ে কনিষ্ঠ কন্যা হযরত ফাতেমাতুয্যাহরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা। তাঁর মাতার নাম হযরত উম্মুল মুমেনীন খাদীজাতুল কুবরা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা।
ফতেমার নাম করণ
তাঁর নাম ফাতেমা, উপাধি সৈয়্যাদা, যাহ্রা, বতুল, তৈয়্যবা, তাহেরা, সিদ্দিকা, মুবারকা। আরবি ‘ফাতম’ শব্দ থেকে ফাতেমা এর অর্থ রক্ষা করা, মুক্ত রাখা। তাঁর নাম করণ প্রসঙ্গে হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-
হযরত জাবের রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি আমার মেয়ের নাম এ জন্যই ফাতেমা রেখেছি যে, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁকে (ফাতেমা) এবং তাঁর ভালবাসা প্রদর্শনকারীকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করেছেন।
[মুসনাদুল ফেরদাউস: খণ্ড ১ম, পৃষ্ঠা ৩৪২, হাদীস- ১৩৪০]
হাদীস শরীফে হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- اِنَّ فاطمة اَخْصَنَتْ فرجَهَا فحرَّم اللهُ ذرّيتها على النار- (المستدرك للحاكم)
অর্থ: নিশ্চয়ই ফাতেমা পূতঃপবিত্র, আল্লাহ্ তা‘আলা তাঁর বংধরগণের উপর জাহান্নাম হারাম করে দিয়েছেন। [মুস্তাদরেকে হাকেম: খণ্ড-৩, পৃষ্ঠা- ১৫২]
পবিত্র ক্বোরআনের আলোকে হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র মর্যাদা
আহলে বায়তের মধ্যমণি নবীজির কলিজার টুকরা, হযরত ফাতেমাতুয্ যাহ্রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা ছিলেন সৃষ্টিগতভাবেই পূতঃপবিত্র রমণী। আহলে বায়তের মর্যাদা বর্ণনায় আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন- ويطهركم تطهيرا – আল্লাহ্ তা‘আলা তোমাদেরকে সম্পূর্ণরূপে পবিত্র করতে চান। [সূরা আল্ আহযাব: পারা-২২, আয়াত-৩৩]
এ বিষয়ে কারো দ্বিমত নেই যে, পৃথিবীতে সব নারীই ঋতুস্রাবকালীন মাসিক কিছু সময় অপবিত্র থাকেন ব্যতিক্রম শুধু খাতুনে জান্নাত, ফাতেমাতুয্যাহ্রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা। ঋতুস্রাব মাসিক ছাড়াই তিনি তাঁর নূরানী সন্তান, জান্নাতী যুবকদের সর্দার হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা সহ সব সন্তান-সন্ততিদের জন্ম দিয়েছেন। ‘‘তিনি ঋতুস্রাব মুক্ত ছিলেন, এ কারণে তাঁর নামায কাযা হতো না। তাঁর পবিত্র সত্তা ছিল পূতঃপবিত্র। এ কারণেই তিনি তৈয়্যবা, তাহেরা, যকীয়া ইত্যাদি উপাধি অভিধায় ভূষিত। এভাবে সাদিকা (সত্য পরায়না) জীবনে কখনো তিনি মিথ্যাচার করেননি।
হযরত ফাতেমা জান্নাতী যুবতীদের সর্দার
উম্মুল মু’মেনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র ওফাতের শেষদিনগুলোতে হযরত ফাতেমাতুয্ যাহ্রার কানে কানে কিছু গোপন কথা ব্যক্ত করেছেন। যা শুনার পর হযরত ফাতেমা ক্রন্দন করেছেন, কিছুক্ষণ পর তিনি (ফাতেমা) মুসকি হাসি দিলেন। ক্রন্দনের কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি জবাব দিলেন, নবীজি কিছু দিনের মধ্যে ওফাত বরণ করবেন। মুসকি হাসির কারণ জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- (হে ফাতেমা) তুমি কি এতে সন্তুষ্ট নও যে, তুমি হবে জান্নাতী নারীদের সরদার বা তুমি হবে সব মু’মীন নারীদের সরদার।
[সহীহ বুখারী: খণ্ড- ১ম, পৃষ্ঠা- ৫১২, মুসলিম: খণ্ড-২, পৃষ্ঠা-৫৯১]
বিশ্বের চারজন মহিয়সী রমণী, সবার শ্রেষ্ঠ হযরত ফাতেমা
প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
اربع نسوة سادات عالمهنّ مريم بنت امران واسية بنت مزاهم وخديجة بنت خويلد وفاطمة بنت محمد صلى الله عليه وسلم- (كنزالعمال)
চারজন নারী সমগ্র জাতির মধ্যে বিশ্ব শ্রেষ্ঠ। হযরত মরিয়ম বিনতে ইমরান, হযরত আছিয়া বিনতে মুযাহিম (ফির আউনের নেক্কার স্ত্রী), হযরত খাদীজা বিনতে খুওয়ালিদ, হযরত ফাতেমা বিনতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। তাঁদের মধ্যে সবচেয়ে শ্রেষ্ঠ হযরত ফাতেমাতুয্ যাহ্রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা। [র্দুরুল মনসূর: খন্ড-২য়, পৃষ্ঠা- ২৩, কানযুল উম্মাল: খন্ড-৬, পৃষ্ঠা-২২৭]
হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার শ্রেষ্ঠ মর্যাদা প্রসঙ্গে আল্লামা ড. ইকবাল রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র অভিমত: বিশ্বের সমগ্র নারী জাতির আদর্শ হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার শ্রেষ্ঠত্ব বিশেষ তিনি কারণে প্রসিদ্ধ। যথা:
১. তিনি রাহমাতুল্লিল আলামীন, সমগ্র নবী রাসূলদের সরদার হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র কলিজার টকুরা নয়নের মনি, আদরের কন্যা।
২. তিনি তাজেদারে বেলায়ত মাওলায়ে কায়েনাত, শেরে খোদা মুশকিল কোশা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র প্রিয় সহধর্মিনী।
৩. তিনি বেহেস্তী যুবকদের সরদার শোহাদায়ে কেরামের ইমাম হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিযাল্লাহু তা‘আলা আনহুমার মহিয়সী মাতা। [আনোয়ারুল বয়ান: খন্ড-১ম]
হযরত ফাতেমার সন্তুষ্টিতে আল্লাহর সন্তুষ্টি
হযরত মিসওয়ার বিন মাখরামা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত-
انَّ سول الله صلى الله عليه وسلم قال فاطمة بضعة منِّى فمن اَبْغَضَهَا فقد ابغضنى- (رواه البخارى)
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ফাতেমা আমার কলিজার টুকরা, যে তাকে অসন্তুষ্ট করল, সে আমাকে অসন্তুষ্ট করল।
[সহীহ বুখারী: খন্ড- ২য়, পৃষ্ঠা-৫৩২, সহীহ মুসলিম:খন্ড-২য়, পৃষ্ঠা- ২৯০]
হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা সম্পর্কে আরো এরশাদ হয়েছে-
وكَانَ النبى صلى الله عليه وسلم اذا ادخل عليها قامت مجلسها فقبلته واجلسته فى محلها- (رواه الترمذى)
যখনি নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতেমার কাছে যেতেন হযরত ফাতেমা নবীজির প্রতি পরম শ্রদ্ধা ও সম্মানে দাঁড়িয়ে যেতেন, নবীজিকে চুম্বন করতেন, এবং নিজের জায়গায় বসাতেন। [তিরমিযী, মুসতাদরাক হাকেম: খন্ড-৩য়, পৃষ্ঠা- ১৫৪]
উপরোক্ত হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, বড়রা ছোটদের প্রতি স্নেহ-মমতায় দাঁড়িয়ে যাওয়া, তাদের হাতে চুমু দেওয়া জায়েজ ও সুন্নাত। এভাবে ছোটরা বড়দের প্রতি সম্মান প্রদর্শনার্থে দাঁড়িয়ে যাওয়া অলী বুজুর্গ, পীর-মুর্শিদ, মাতা-পিতার হাতে চুম্বন করা সওয়াব ও সুন্নাত। ইসলামের নামে নবীজির সম্মানে দাঁড়ানো কিয়াম করাকে যারা শির্ক বিদআতের ফাতওয়া দেয় এটা নিতান্ত অজ্ঞতার পরিচায়ক। [আনোয়ারুল বয়ান: খন্ড-১ম, পৃষ্ঠা-১৩৬]
হযরত ফাতেমার ইবাদত বন্দেগী
খাতুনে জান্নাত ফাতেমার জীবনাদর্শ ছিলো নবীজির বাস্তব প্রতিচ্ছবি। নামায-রোযা, ক্বোরআন তিলাওয়াত, তাসবীহ তাহলীল ইবাদত বন্দেগীতে তিনি ছিলেন অনন্য অসাধারণ গুনাবলী ও আদর্শের বাস্তব নমুনা।
শেরে খোদা মাওলা আলী রাদ্বিযাল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেছেন, হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা খাবার রান্না করা অবস্থায় ক্বোরআনুল করীমের তিলাওয়াত করতেন।
হযরত সালমান ফারসী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এরশাদ করেন, একদা প্রিয় নবীজির নির্দেশে হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার ঘরে গিয়ে দেখলাম, হযরত ইমাম হাসান ও হযরত ইমাম হোসাইন রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা দু’জনই নিদ্রারত, খাতুনে জান্নাত তাঁদেরকে পাখা করছেন, আর জবান মুবারক দিয়ে পবিত্র ক্বোরআন মজীদ তিলাওয়াত করছেন। [কিমিয়ায়ে সাদাত, ইমাম গাজ্জালী রাহমাতুল্লাহি আলাযহি]
হযরত ইমাম হাসান রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, আম্মাজানকে দেখেছি- তিনি সারারাত নামাযে নিয়োজিত থাকতেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম মমতাময়ী আম্মাজান! আপনি নিজের জন্য কোনো দু’আ করেছেন না? জবাব দিলেন প্রিয় বৎস! প্রথমে প্রতিবেশী তারপর পরিবার (অর্থাৎ মাতার আব্বাজানের উম্মতের জন্য যেন ক্ষমা নসীব হয়। এটাই ছিল হযরত ফাতেমার দু’আ। [মদারেজুন নবূয়ত: খন্ড-২য়, পৃষ্ঠা-৭৯০]
হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র শাদী মুবারক
হযরত মাওলা আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু’র সাথে খাতুনে জান্নাতের দাম্পত্য জীবনে আবদ্ধ হওয়া আল্লাহ্র নির্দেশেই হয়েছিল। হাদীস শরীফে এরশাদ হয়েছে-
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে মাসউদ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আল্লাহ্ তা‘আলা আমাকে আদেশ করেছেন, আমি ফাতেমার বিবাহ্ যেন আলীর সাথে দিই। [তাবরানী: হাদীস নম্বর – ১০৩০৫]
হযরত ইমাম ইউসুফ বিন ইসমাঈল নিবহানী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র বর্ণনা মতে দ্বিতীয় হিজরীতে মহররম মাসে অন্য বর্ণনায় জিলহ্জ্ব মাসে অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার বয়স ১৫ বৎসর, ছয় মাস। হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুর বয়স ২১ বৎসর, ৫ মাস। নবীজি হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহাকে বললেন, ওহে আমার প্রিয় কন্যা! আমি আমার বংশের সবচেয়ে উত্তম ব্যক্তির সাথে তোমার বিবাহ্ দিয়েছি। [জুরকানী]
হযরত মাওলা আলী হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহার সাথে বিবাহ্ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়ার পর তাঁর জীবদ্দশায় অন্য কাউকে শাদী করেননি। নবীজি এ বিয়েতে ১টি খাট, ২টি তোষক, ১টি চাদর, বালিশ, পানির মশক, লোটা উপহার স্বরূপ দিয়েছিলেন। বিয়ের মোহরানা ছিল পাঁচশত দিরহাম।
[মুসলিম শরীফ, আনোয়ারুল হাদীস: পৃষ্ঠা- ৩৩২, কৃত-মুফতি জালাল উদ্দীন আহমদ আমজাদী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি]
হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুমা থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হযরত ফাতেমাকে বলেছিলেন, আমার পরিবারের মধ্যে তুমিই সর্বপ্রথম আমার সাথে মিলিত হবে। [ফাদ্বায়িলুস্ সাহ্বা: হাদীস- ১৩৪০]
নবীজির ওফাতের পর হযরত ফাতেমা সবচেয়ে বেশী শোকাহত ও ব্যথিত হয়েছিলেন। হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেন, তিনি অধিকাংশ সময় ক্রন্দনে অতিবাহিত করতেন। রাসূলুল্লাহ্র ওফাতের পর কখনো তার মুখে হাসি দেখা যায়নি। নবীজির ওফাতের ৬ মাস পর ৩ রমযানুল মুবারক ১১ হিজরিতে মঙ্গলবার রাতে তিনি ইন্তিকাল করেন।
হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু জানাযা পড়িয়েছেন তাঁর ওসীয়ত অনুযায়ী রাতেই তাঁকে জান্নাতুল বাক্বীতে দাফন করা হয়। [মাদারেজুন নবুয়ত: খন্ড- ২য়, পৃষ্ঠা- ৭৯০]
আল্লাহ্ তা‘আলা নারী জাতিকে খাতুনে জান্নাত হযরত ফাতেমা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা’র আদর্শ নসীব করুন। আ-মী-ন।
লেখক: অধ্যক্ষ- মাদ্রাসা-এ তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া ফাযিল (ডিগ্রী), হালিশহর, বন্দর, চট্টগ্রাম।