চট্টগ্রামে লাখো মানুষের জশনে জুলুসে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি জোরদারের আহ্বান

0

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত, করোনাকালে, এ পরম সত্যটির উজ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ- পীর সাবির শাহ্ (মা.জি.আ)

গত ২০ অক্টোবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম উপলক্ষে চট্টগ্রামে আন্জুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট আয়োজিত ঐতিহ্যবাহী ‘জশনে জুলুসে ‘ লাখো লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল। এ উপলক্ষে বন্দর নগরী ছিল এক উৎসবের শহর। জশ্নে জুলুসে নেতৃত্ব দেন দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট শরীফের সাজ্জাদানশীন হযরতুল আল্লামা পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী। সকাল ৮.৩০ মিনিটে নগরীর ষোলশহরস্থ আলমগীর খানক্বাহ-এ কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া থেকে এ জুলুস বের হয়। জুলুসটি বিবিরহাট, মুরাদপুর, ষোলশহর, ২নম্বর গেট হয়ে পুনরায় মুরাদপুর, বিবিরহাট হয়ে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলীয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন জুলুস ময়দানে ফিরে মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

মাহফিলে পীরে বাঙ্গাল সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ’র সভাপতিত্বে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর তাৎপর্য আলোচনায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিস্টার মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, বিশেষ অতিথি ছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, পিএইচপি ফ্যামেলির চেয়ারম্যান সুফি মুহাম্মদ মিজানুর রহমান।

স্বাগত বক্তব্য রাখেন আন্জুমান এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট-এর সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মুহাম্মদ মহসিন, শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন ট্রাস্টের সেক্রেটারি জেনারেল মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। এতে বক্তব্য রাখেন আন্জুমান ট্রাস্ট’র এডিশনাল জেনারেল সেক্রেটারি আলহাজ্ব মুহাম্মদ সামশুদ্দিন, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি আলহাজ্ব মুহাম্মদ সিরাজুল হক, এসিস্ট্যান্ট জেনারেল সেক্রেটারি আলহাজ্ব এস.এম. গিয়াস উদ্দিন সাকের, প্রেস এন্ড পাবলিকেশন্স সেক্রেটারি অধ্যাপক কাজী সামশুর রহমান, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব পেয়ার মোহাম্মদ কমিশনার, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার পরিচালনা পরিষদের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ দিদারুল ইসলাম, অধ্যক্ষ আল্লামা মুফতি মুহাম্মদ অছিয়র রহমান রহমান প্রমুখ।

হুজুর কেবলা পীর আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ তাঁর বক্তব্যে বলেন, তিনি বলেন, আমাদের রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম সমগ্র সৃষ্টির মূল। তাঁর কারণেই বাকি সব সৃষ্টি। তাঁর সৃষ্টি এবং শুভাগমনের কারণে আল্লাহ্ পাকের শান আযমতের প্রকাশ ঘটেছে। তিনি সমগ্র সৃষ্টির জন্য রহমত বা কল্যাণ হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। তিনি শুধু মুসলমানদের জন্য নন, বরং হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিষ্টানসহ সমগ্র সৃষ্টির জন্য শান্তি ও কল্যাণ হিসেবে এসেছেন। তিনি আরো বলেন, কোভিড-১৯ সময়ে মৃত হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানদের দাফন সৎকার সহায়তায় নিজেদের উৎসর্গ করার মাধ্যমে হুজুর কেবলা আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ (রহ)’র প্রতিষ্ঠিত মানবতার সংগঠন গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র সৈনিকরা প্রমাণ করেছে প্রকৃত সূফী মুসলিমরা ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে মানবতার কল্যাণে নিবেদিত। বাংলাদেশ দিন দিন উন্নতি করছে, এবং ভবিষ্যতে আরো উন্নতি করবে ইনশাআল্লাহ।

মাহফিলে প্রধান অতিথি, শিক্ষা উপমন্ত্রী ব্যারিষ্টার মুহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল এমপি বলেন, ১২ রবিউল আউয়াল পৃথিবীর বুকে আল্লাহর রহমত হিসেবে আবির্ভূত হন আমানের প্রিয় নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম। তিনি সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য সর্বোত্তম আদর্শের শিক্ষাদাতা হিসেবে আবির্ভূত হয়ে তাঁর সুন্দরতম আদর্শের মাধ্যমে পৃথিবীতে শান্তি-সৌহার্দ্য, সাম্য-মানবতা প্রতিষ্ঠা করেন।

আন্জুমান ট্রাস্ট’র সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব মুহাম্মদ মহসিন জশনে জুলুছে সার্বিক সহযোগিতা করার জন্য প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রণালয়, স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশন, চউক, ওয়াসাসহ সকল দফতরের প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। ট্রাস্ট’র সেক্রেটারি জেনারেল আলহাজ্ব মুহাম্মদ আনোয়ার হোসেন তাঁর শুভেচ্ছা বক্তব্যে জুলুছে আগত লাখো আশেকে রাসুলের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রভাষক হাফেজ মুহাম্মদ আনিসুজ্জামান, যুগ্ন-মহাসচিব আলহাজ্ব এড. মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার-এর সঞ্চালনায় মাহফিলে তকরীর পেশ করেন- জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার প্রধান ফক্বীহ্ মুফতি কাজী মুহাম্মদ আব্দুল ওয়াজেদ, মুহাদ্দিস হাফেজ আশরাফুজ্জামান আল-কাদেরী, আন্জুমান রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক মাওলানা মুহাম্মদ আব্দুল মান্নান, ঢাকা মোহাম্মদপুর কাদেরিয়া তৈয়্যবীয়া মাদ্রাসার অধ্যক্ষ কাজী মুহাম্মদ আব্দুল আলিম রেজভী, উপাধ্যক্ষ আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক, হালিশহরস্থ মাদ্রাসা-এ-তৈয়্যবিয়া ইসলামিয়া সুন্নিয়া (ফাযিল)’র অধ্যক্ষ মুহাম্মদ বদিউল আলম রেজভী, চন্দ্রঘোনাস্থ মাদ্রাসা-এ-তৈয়্যবিয়া অদুদিয়া সুন্নিয়া(ফাযিল)’র অধ্যক্ষ মুহাম্মদ আবু তৈয়্যব চৌধুরী।

এতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন আনজুমান সদস্য মুহাম্মদ সাহাজাদ ইবনে দিদার, মুহাম্মদ আনোয়ারুল হক, মুহাম্মদ তৈয়বুর রহমান, মুহাম্মদ আবদুল হামিদ, মুহাম্মদ আমির হোসেন সোহেল, তসকীর আহমেদ, মুহাম্মদ কমরুদ্দিন সবুর, মুহাম্মদ আবদুল হাই মাসুম, মুহাম্মদ হাসানুর রশীদ রিপন, কেন্দ্রীয় গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ’র কর্মকর্তাবৃন্দ, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম’র মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল্লাহ, মুহাম্মদ মনোয়ার হোসেন মুন্নাসহ অন্যান্য কর্মকর্তা-সদস্যবৃন্দ, চট্টগ্রাম উত্তর-দক্ষিণ জেলার সেক্রেটারী এডভোকেট মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী ও মাস্টার মুহাম্মদ হাবিবুল্লাহসহ বিভিন্নসÍরের কর্মকর্তা-সদস্যবৃন্দ, জামেয়ার শিক্ষক-ছাত্রবৃন্দ, হাজার হাজার পীরভাই ও আশেকানবৃন্দ প্রমুখ।

পরিশেষে, মীলাদ-ক্বিয়াম ও জোহরের নামাজ আদায়ের পর, বাংলাদেশের উন্নতি ও সমৃদ্ধি এবং বিশ্ব মুসলিমদের ঐক্য ও সংহতি, নিরাপত্তা ও কল্যাণ কামনা করে মুনাজাত করেন দরবারে আলিয়া কাদেরিয়া সিরিকোট-এর সাজ্জাদানশীন হযরতুল আল্লামা পীর সৈয়্যদ মুহাম্মদ সাবির শাহ্ মাদ্দাজিল্লুহুল আলী।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •