হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম’র মহত্ব

0

মাওলানা মুহাম্মদ জিল্লুর রহমান হাবিবী

আল্লাহ্ পাক সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা আমাদের উপর বড় এহসান করেছেন; কারণ তিনি আমাদেরকে তাঁর ওই প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর উম্মত করেছেন, যাঁকে কুল-কায়িনাতের মধ্যে সর্বশ্রেষ্ঠ ও অতুলনীয় মর্যাদার অধিকারী করে প্রেরণ করেছেন। মানব, দানব, ফেরেশতা এমনকি নবী রাসূলগণের উপরে যাঁর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্ব। এক কথায় সকল সৃষ্টির আগে যিনি সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী তিনিই হলেন আমাদের নবী। প্রকৃতপক্ষে তিনি কতটুকু মহত্বের অধিকারি তা একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলাই জানেন। এ বিষয়ে একজন শায়ের বলেন-
خدا كى عظمتىں كيا هيں محمد مصطفے جانے
مقام مصطفے كيا هے محمد كے خدا جانے
অর্থ: আল্লাহ্ তা‘আলার প্রকৃত মর্যাদা কি তা শুধু নবী-ই আকরাম জানেন আর হযরত মুহাম্মদ মোস্তফার মক্বাম কি, তা একমাত্র মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর খোদা-ই জানেন।
তিনি হচ্ছেন- সমগ্র সৃষ্টির রূহ তথা মূল। তিনি না হলে আল্লাহ্ তা‘আলা কোন কিছুই সৃষ্টি করতেন না। আল্লাহ্ পাক হাদীসে কুদসীতে এরশাদ ফরমান-
لَوْلَاكَ لَمَا خَلَقْتُ الْاَفْلَاكَ-
অর্থ: হে মাহবূব! আপনি না হলে আমি আসমানগুলো সৃষ্টি করতাম না।

ক্বোরআন শরীফের আলোকে হুযূর-ই আকরামের মহত্ব
تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَى بَعْضٍ مِّنْهُم مَّن كَلَّمَ اللَّهُ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ-
তরজমা: এরাঁ রসুল, আমি তাঁদের মধ্যে এককে অপরের উপর শ্রেষ্ঠ করেছি। তাঁদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ্ কথা বলেছেন এবং কেউ এমনও আছেন, যাঁকে সবার উপর মর্যাদাসমূহ উন্নীত করেছেন।
[সূরা বাক্বারা: আয়াত-২৫৩, কান্যুল ঈমান] এখানে সর্বাধিক মর্যাদার অধিকারী দ্বারা হুযূর-ই পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম। [খাযাইনুল ইরফান] আল্লাহ্ তা‘আলা অন্য আয়াতে এভাবে ইরশাদ করেন-
وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُم مِّن كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُّصَدِّقٌ لِّمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنصُرُنَّهُ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَى ذَلِكُمْ إِصْرِي قَالُواْ أَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُواْ وَأَنَاْ مَعَكُم مِّنَ الشَّاهِدِينَ-
তরজমা: এবং স্মরণ করুন! যখন আল্লাহ্ নবীগণের নিকট থেকে অঙ্গিকার নিয়েছিলেন, ‘আমি তোমাদেরকে যে কিতাব ও হিকমত প্রদান করবো অতঃপর তাশরীফ আনবেন তোমাদের নিকট রসূল, তিনি তোমাদের কিতাবগুলোর সত্যায়ন করবেন, তখন তোমরা নিশ্চয় তাঁকে সাহায্য করবে।’ ইরশাদ করলেন, তোমরা কি স্বীকার করলে এবং এ সম্পর্কে আমার গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করলে? সবাই আরয করলো, ‘আমরা স্বীকার করলাম। ইরশাদ করলেন, ‘তবে তোমরা একে অপরের উপর সাক্ষী হয়ে যাও এবং আমি নিজেই তোমাদের সাথে সাক্ষীদের মধ্যে রইলাম।’ [সূরা আলে ইমরান: আয়াত-৮১, কান্যুল ঈমান] এ আয়াতেও নবী-ই আকরামের মহত্ব সুস্পষ্ট হয়। রাব্বুল আলামীন ক্বোরআন মজীদে আরো সুন্দরভাবে এরশাদ ফরমান-
– وَمَا أَرْسَلْنَاكَ إِلاَّ رَحْمَةً لِّلْعَالَمِينَ
তরজমা: হে আমার হাবীব! আমি আপনাকে সমস্ত জগতের রহমত (কল্যাণ) করে প্রেরণ করেছি।
[সূরা আম্বিয়া: আয়াত-১০৭] হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আসমান, যমীন, লওহ, কলম, আরশ-কুরসী, চন্দ্র-সূর্য, গাছ-পালা, তরু-লতা, মানব-দানব, জ্বিন-ফেরেশতা, কীট-পতঙ্গ, পশু-পাখি এক কথায় কোন কিছুই নবী-ই আকরামের রহমত থেকে বঞ্চিত নয়। আল্লাহ্ পাক নিজেকে ঘোষণা করেছেন, ‘রব্বুল আলামীন অর্থাৎ সমগ্র জগতের প্রতিপালক, আর আপন মাহবুবের ব্যাপারে ঘোষণা করেছেন, ‘রাহমাতুল্লিল আলামীন’ অর্থাৎ সমস্ত জগতের জন্য রহমত বা কল্যাণ। মোটকথা- যেখানে আল্লাহ্ তা‘আলার রাবূবিয়াত বিরাজমান, সেখানে দয়াল নবীর রহমতও বিরাজমান। বুঝা গেলো যে, আল্লাহ্ পাক তাঁর প্রিয় হাবীব সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে অনন্য মর্যাদা দান করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা কালামে কদীমে আরো ইরশাদ করেন-
وَلَوْ أَنَّهُمْ إِذ ظَّلَمُواْ أَنفُسَهُمْ جَاؤُوكَ فَاسْتَغْفَرُواْ اللَّهَ وَاسْتَغْفَرَ لَهُمُ الرَّسُولُ لَوَجَدُواْ اللَّهَ تَوَّابًا رَّحِيمًا-
তরজমা: এবং যখন তারা (উম্মতগণ) নিজের নফসের উপর যুলুম করে (পাপ কাজ করে) এবং হে হাবীব! তারা আপনার দরবারে এসে যায় আর আল্লাহর নিকট নিজ গুনাহের ক্ষমা চায় আর রাসূলও যদি তাদের জন্য সুপারিশ করেন, তবেই তারা আল্লাহকে মহা তাওবা কবূলকারী, পরম দয়াময় পাবে। [সূরা নিসা: আয়াত-৬৪] এ আয়াত শরীফেও আল্লাহ্ তা‘আলা পাপীদের পাপ মার্জনার সুবব্যস্থার কথা উল্লেখ করে বলেন, যদি পাপী বান্দারা পাপ করার পর নবী আকরামের মাধ্যম নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে এবং হুজুর আলায়হিস্ সালামও তাদের জন্য সুপারিশ করেন, তাহলেই দয়াময় আল্লাহ্ তাদের গুনাহ ক্ষমা করেন। এ’তেও হুযূর-ই আকরামের মহত্ব, মহা মর্যাদা প্রকাশ পায়।
মহান আল্লাহ্ ক্বোরআনে পাকের অন্যত্র ঘোষণা করেন-
-لَا تَجۡعَلُوۡا دُعَآءَ الرَّسُوۡلِ بَیۡنَکُمۡ کَدُعَآءِ بَعۡضِکُمۡ بَعۡضًا
তরজমা: তোমরা একে অপরকে যেভাবে আহ্বান কর, সেভাবে আমার রাসূল (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম)কে আহ্বান কর না। [সূরা আন্ নূর: আয়াত-৬৩] উক্ত আয়াতে আল্লাহ্ তা‘আলা বিশ্ববাসীকে সতর্ক করে দিয়েছেন যে, আমার হাবীবকে তোমাদের মত মনে করিও না। এমনকি আহ্বান করার ক্ষেত্রেও পূর্ণ শালীনতা বজায় রাখতে হবে। প্রতিটি কর্মকান্ডে নবীজির মহত্ব ও আদবের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। স্বয়ং আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন ক্বোরআন মজীদে অন্যান্য নবী-রাসূল এর নাম ধরে ডেকেছেন। যেমন ইয়া ঈসা, ইয়া মূসা, ইয়া নূহ, ইয়া ইব্রাহীম ইত্যাদি। কিন্তু রাহমাতুল্লিল আলামীনকে সম্বোধন করেছেন ইয়াসিন, ত্বো-হা, ইয়া আইয়ুহাল মোদ্দাস্সির, ইয়া আইয়ুহাল মুজ্জাম্মিল, ইয়া আইয়ুহান নবীয়্যু বলে।
উপরোক্ত আয়াতে করীমা নাযিল হওয়ায় সাহাবায়ে কেরাম নবীজিকে ইয়া রাসূলাল্লাহ্, ইয়া নবীয়াল্লাহ্, ইয়া হাবীবাল্লাহ্ বলে সম্বোধন করতেন। কখনো বিন¤্র চিত্তে বলতেন- হে আল্লাহ্র প্রিয় হাবীব! আমার পিতা-মাতা আপনার কদমে কুরবান। এতেও বুঝা যায় যে, আল্লাহ্ পাক রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে বে-মেছাল শান-মান ও মর্যাদা দিয়ে এ ধরাধামে প্রেরণ করেছেন।

হাদীস শরীফের আলোকে নবী-ই আকরামের মহত্ব
عَنْ اَنَسٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسَلَّم وَاَنَا اَكْرَمُ وَلَدِ ادَمَ عَلٰى رَبِّىْ وَلَا فَخْرَ-
অনুবাদ: হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান- আদম সন্তানদের মধ্যে আল্লাহ্র দৃষ্টিতে সবচেয়ে সম্মানিত ও মর্যাদাবান হলাম আমি, এতে অহংকার নেই (বরং শোকর)।
[তিরমিযী শরীফ] عَنْ اِبْنِ عَبَّاس رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ قَالَ رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ وَاَنَا اَكْرَمُ الْاَوَّلِيْنَ وَالْاخَرِيْنَ وَلَافَخْرَ-
অনুবাদ: হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে আরাবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান- আমি অগ্রবর্তী ও পরবর্তীদের মধ্যে সর্বাধিক সম্মানিত ও মর্যাদাবান। কোন অহংকার নয় (বরং শোকর)।
[তিরমিযী শরীফ] عَنْ عَائِشَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهَا قَالَتْ قَالَ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اَتَانِىْ جِبْرِيْلُ عَلَيْهِ السَّلَامُ فَقَالَ قَلَبْتُ مَشَارِقَ الْاَرْضِ وَمَغَارِبَهَا فَلَمْ اَرَ رَجُلًا اَفْضَلُ مِنْ مُحَمَّدٍ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ وَلَمْ اَرَ بَنِىْ أَبِ الْفَصْلِ مِنْ بِنِىْ هَاشِمٍ-
অনুবাদ: হযরত আয়েশা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান- হযরত জিব্রাঈল আলায়হিস্ সালাম একদা আমার নিকট এসে আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ্! আমি পৃথিবীর প্রাচ্য-প্রতীচ্যের অঞ্চল-প্রত্যন্ত অঞ্চল বিচরণ করেছি, কিন্তু ‘মুহাম্মদ’ নামের আপনি একজনকে ছাড়া সর্বাধিক ফযিলতপূর্ণ মর্যাদাবান কাউকে দেখিনি আর দেখিনি কোন গোত্র; যা বনী হাশেম থেকে শ্রেষ্ঠ। [তিরমিযী, তাবরানী, আবু নাঈম শরীফ] عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ قَالَ قِيْلَ يَارَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ اُدْعُ عَلٰى الْمُشْرِكِيْنَ قَالَ اِنِّىْ لَمْ اُبْعَثْ لَعَّانًا وَاِنَّمَا بُعِثْتُ رَحْمَةً-
অনুবাদ: হযরত আবূ হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, একদা (সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু এর পক্ষ হতে) আরয করা হল, হে আল্লাহর রসূল! মুশরিকদের জন্য অভিশাপ করুন, নবীজি ফরমালেন, আমাকে লা’নতকারী হিসেবে পাঠানো হয়নি, আমাকে ‘রহমত’ হিসেবে পাঠানো হয়েছে।
[সহীহ মুসলিম শরীফ] عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ قَالَ نَهٰى رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ عَنِ الْوِصَالِ فِىْ الْصوْمِ فَقَالَ لَهُ رَجُلٌ اِنَّكَ وَاصِلُ يَارَسُوْلَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ وَاَيُّكُمْ مِثْلِىْ اِنِّىْ اَبِيْتُ يُطْعِمْنِىْ رَبِّىْ وَيَسْقِيْنِىْ-
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ‘সওম-ই ভেসাল’ অর্থাৎ রাত্রি বেলায় পানাহার না করে লাগাতার রোযা রাখতে নিষেধ করেছেন, একদা এক ব্যক্তি আরয করলেন, ‘‘হুযূর! আপনি যে ‘সওম-ই ভেসাল’ রাখেন? এর উত্তরে নবীজি ফরমান, তোমাদের মধ্যে আমার মত কে আছ? (অর্থাৎ কেউ নেই) কেননা, আমি রাত্রি যাপন করি অথচ আমার রব আমাকে পানাহার করান। [সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ] عَنْ اَبِىْ هُرَيْرَةَ رَضِىَ اللهُ تَعَالى عَنْهُ اَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى اللهُ عليه وسَلَّمَ قَالَ فُضِّلَتُ عَلى الْاَنْبِيَاءِ بِسِتٍّ اَعْطَيْتُ جَوَامِعَ الْكَلِمِ وَنُصِرْتُ بِالرُّعْبِ وَأَحِلَّتْ لِىَ الْغَنَائِمُ وَجُعِلَتُ لِىَ الْاَرْضُ مَسْجِدًا وَطُهُوْرًَا وَاُرْسِلْتُ اِلى الْخَلْقِ كَافَّةً وَخُتِمَ بِىَ النُّبِيُّوْنَ-
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নিশ্চয়ই রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান, ছয়টি বিষয়ে আমাকে অন্যসব নবীর উপর মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ১. আমাকে ‘জাওয়ামিউল কালিম’ দেয়া হয়েছে, ২. রো’ব (ভীতিগ্রস্ত বা আতঙ্ক) দ্বারা আমাকে সাহায্য করা হয়েছে, ৩. গনীমতের মাল আমার জন্য বৈধ করা হয়েছে, ৪. সমগ্র জমিনকে আমার জন্য মসজিদ এবং পবিত্রতার উপাদান দেয়া হয়েছে, ৫. সমগ্র সৃষ্টির জন্য আমাকে নবীরূপে প্রেরণ করা হয়েছে, ৬. এবং আমাকে দিয়ে নবী প্রেরণের ধারা সমাপ্তি করা হয়েছে। [সহীহ মুসলিম শরীফ] عَنْ جَابِرٍ رضى الله تَعَالى عَنْهُ اَنَّ النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وسلم قَالَ سَمُّوْا بِاِسْمِىْ وَلَا تَكْتَنُوْا بِكُنْيَتِىْ فَاِنِّىْ اِمَّا جُعِلْتُ قَاسِمًا اَقْسَمُ بَيْنَكُمْ-
অনুবাদ: হযরত জাবির রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত, নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ ফরমান, আমার নামে নাম রাখো; তবে আমার উপনামে উপনাম রেখো না। কেননা আমাকে বন্টনকারী বানানো হয়েছে, আমি তোমাদের মধ্যে বন্টন করে থাকি।
[সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফ] عَنْ جَابِرٍ رَضِىَ اللهُ تَعَالٰى عَنْهُ اَنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ سَمُّوْا بِاِسْمِىْ وَلَاتُكْتُنُوْا بِكُنْيَتِىْ فَاِنِّىْ اِمَّا جُعِلْتُ قَاَسِمًا اَقْسَمُ بَيْنَكُمْ-
এভাবে সরকারে দো‘আলম নূরে মুজাস্সাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আজমত ও মর্যাদা সম্পর্কে ক্বোরআন পাকের অনেক আয়াত এবং অনেক হাদীস শরীফের বর্ণনা বিদ্যমান। এ নিবন্ধে তা থেকে সামান্য উপস্থাপন করা হলো। বুঝার এবং মানার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। পক্ষান্তরে যাদের অন্তরের উপর আল্লাহ্ পাক গোমরাহীর মোহর চেপে দিয়েছেন, তাদের সম্পূর্ণ ক্বোরআন হাদীস পেশ করলেও কোন কাজ হবে না।
পরিশেষে, আল্লামা শরফুদ্দীন বুসিরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি’র ভাষায় বলতে হয়, আল্লাহ্ পাক দয়াল নবীকে যে সম্মান মর্যাদা দান করেছেন; তা অন্য কোন নবী রাসূলকেও দান করেননি। এ ভূমন্ডল-নব মন্ডলে যেখানে আল্লাহ্ তা‘আলার রাবূবিয়াত বিরাজমান, সেখানে নবী-ই আকরামের নুবূয়্যত ও রিসালাতও বিদ্যমান। আল্লাহ্ তা‘আলা সকলকে নবী-ই আকরামের অতুলনীয় মর্যাদার কথা স্বীকার করার তাওফীক্ব দান করুন। আ-মী-ন।

লেখক: লিচুবাগান তাহেরিয়া কেন্দ্রীয় শাহী জামে মসজিদ, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •