হুযূর-ই আকরামের দো‘আর বরকতে দুর্ভিক্ষ দূরীভূত হয়ে গিয়েছিলো

0

মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান

হুযূর-ই আকরামের দো‘আর বরকতে দুর্ভিক্ষ দূরীভূত হয়ে গিয়েছিলো
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু থেকে বর্ণিত, একবার হুযূর-ই আক্রাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর পবিত্র জীবদ্দশায় কঠিন দুর্ভিক্ষ দেখা দিয়েছিলো। অনাবৃষ্টি ও খরায় সব কিছু শুকিয়ে একাকার হয়ে গিয়েছিলো। হুযূর-ই আক্রাম জুমার দিনে খোৎবা দেওয়ার জন্য দ-ায়মান হলেন। তখন এক গ্রাম্য লোক দাঁড়ালো। আর উচ্চস্বরে আরয করলো-يَارَسُوْلَ اللهِ هَلَكَ الْمَالُ وَجَاعَ الْعِيَالُ فَادْعُ اللهَ تَعَالى
(হে আল্লাহর রসূল! আমাদের ধন-সম্পদ ধ্বংস হয়ে গেছে, আমাদের সন্তানরা ক্ষুধায় মরতে বসেছে। আল্লাহর দরবারে আমাদের জন্য দো‘আ করুন!
فَرَفَعَ يَدَيْهِ وَمَا نَرى فى السَّماءِ سَحَابًا وَلاَ قَزْعَةً فَوَالَّذِىْ نَفْسِىْ بِيَدِه مَا وَضَعَهَمَا حَتّى صَارَ السَّحَابُ اَمْثَالَ الْجِبَالِ ثُمَّ لَمْ يَنْزِلْ عَنْ مِنْبَرِه حَتّى رُئِيَتِ الْمَطْرُ يَتَحَادَرُ عَلى لِحْيَتِه فَمُطْرِنَا يَوْمَنَا ذلِكَ مِنْ الْغَدِ وَمِنْ بَعْدِ الْغَدِ حَتّى اِلَى الْجُمْعَةِ الْاُخْرى
অতঃপর হুযূর-ই আক্রাম আপন দু’ নূরানী হাত আসমানের দিকে তুললেন। তখন কোন মেঘ ও মেঘখ- আমরা দেখিনি। অতঃপর ওই মহান সত্তার শপথ, যাঁর কুদরতের হাতে আমার প্রাণ, হুযূর-ই আক্রাম তখনও হাত নামাননি, ওদিকে পাহাড়ের মতো মেঘে আকাশ ছাইয়ে গেলো। আর তখনও হুযূর-ই আন্ওয়ার মিম্বর শরীফ থেকে নামেননি, এদিকে মুষলধারে বৃষ্টি হতে লাগলো, আর হুযূর-ই আক্রামের দাড়ি মুবাকের উপর পানির ফোঁটা গড়িয়ে পড়তে লাগলো। এ বৃষ্টি এ জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত অনবরত বর্ষণরত ছিলো।
পরবর্তী জুমায় এক ব্যক্তি দাঁড়ালো আর উচ্চস্বরে আরয করলো,
يَا رَسُوْلَ اللهِ هَدَمَ الْبِنَاءُ وَغَرَقَ الْمَالُ فَادْعُ اللهَ تَعَالى لَنَا فَرَفَعَ يَدَيْهِ
হে আল্লাহর রসূল! আমাদের ঘরবাড়ী ধ্বসে পড়েছে, ধন-সম্পদ ডুবে গেছে। আমাদের জন্য দো‘আ করুন! অতঃপর হুযূ-ই আক্বদাস আপন পবিত্র হস্তযুগল উঠালেন। আর বললেন- اَللهُمَّ حَوَالَيْنَا لَاعَلَيْنَا (হে আল্লাহ! আমাদের চর্তুপাশে বৃষ্টির বর্ষণ হোক, আমাদের উপর না)। তারপর হুযূর-ই আক্রাম যেদিকে ইঙ্গিত করছিলেন। মেঘও খ- বিখ- হয়ে ওদিকে উড়ে যাচ্ছিলো। এমনকি মদীনা মুনাওয়ারাহ্ টিলার মতো শুষ্ক ছিলো। আর মদীনা মুনাওয়ারার পাশর্^বর্তী এলাকাগুলোতে পানি থৈ থৈ করছিলো। এ অবস্থা এক মাস যাবৎ চলছিলো।
আল্লামা বূ-সীরী আলায়হির রাহমাহ্ ওদিকে ইঙ্গিত করে লিখেছেন-
وَاَحْيَتِ السَّنَةَ الشَّهْبَاءَ دَعْوَتُه حَتّى حَكَتْ غُرَّةً فِى الْاَعْصُرِ الدُّهُم
অর্থ: হুযূর-ই আক্রামের দো‘আ তৃণহীন, শুষ্ক ও দুর্ভিক্ষগ্রস্ত মৌসুমকে সবুজ-সজীব করে দিয়েছিলো, এমনকি ভবিষ্যতেও বিগত সময়গুলোতে এ সাল আলোকিত ও চমকিত পরিলক্ষিত হয়েছে।
আর এ অনবরত বারি বর্ষণ سيل বা হঠাৎ প্লাবণ ছিলোনা। কারণ হুযূর-ই আকরাম তাঁর এক দো‘আয় প্লাবন থেকে পানাহ্ চেয়েছেন। আর বলেছেন- اَللهُمَّ اِنِّىْ اَعُوْذُبِكَ مِنَ السَّيْلِ وَالْبَعِيْرِ الْصُؤلِ (হে আল্লাহ্! আমি তোমার আশ্রয় চাচ্ছি হঠাৎ প্লাবন ও হামলাকারী উট থেকে। عرم প্রবল বৃষ্টিকেও বলা হয়। عرم একটি স্থানের নামও; যা সাবা রাজ্যেই অবস্থিত। এখানে সাবা জাতির উপর মহা প্লাবন আযাব হিসেবে এসেছিলো। বস্তুতঃ হুযূর-ই আক্রামের দো‘আর ফলে যে বর্ষণ হয়েছিলো তা মদীনাবাসীদের জন্য রহমত ছিলো।

আল্লাহ্ তা‘আলা হুযূর-ই আকরামের হিফাযতকারী
ইমাম বূসীরী আলায়হির রাহমাহ্ বলেছেন-
وِقَايَةُ اللهِ اَغْنَتُ عَنْ مُضَاعَفَةٍ ـ مِنَ الدُّرُوْعِ وَعَنْ عَالٍ مِنَ الْاُطُم
অর্থ: আল্লাহর হিফাযত (রক্ষণাবেক্ষণ) হুযুর-ই আক্রামকে (অন্য কারো হিফাযতের) অমুখাপেক্ষী করে দিয়েছে। এমনকি তাঁর হিফাযতের জন্য দ্বিভাঁজ বর্ম ও উঁচু উঁচু কিল্লারও প্রয়োজন ছিলোনা।
হযরত আয়েশা সিদ্দীক্বা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা বর্ণনা করেছেন, সাহাবা-ই কেরাম হুযূর-ই আক্রামের হিফাযতের জন্য রাত দিন পাহারা দিতেন। যখন আয়াত শরীফ- وَاللهُ يَعْصِمُكَ مِنَ النَّاسِ (এবং আল্লাহ্ আপনাকে মানুষ থেকে রক্ষা করবেন। সুরা মা-ইদাহ্: আয়াত-৬৭: কানযুল ঈমান) নাযিল হলো, তখন হুযূর সাইয়্যেদ আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম পবিত্র গম্বুজ থেকে শির মুবারক বের করলেন আর এরশাদ করলেন, ‘‘হে লোকেরা! তোমরা নিজ নিজ ঘরে গিয়ে আরাম করো, মহান রবই আমার রক্ষাবেক্ষণের দায়িত্ব নিয়েছেন।
অনুরূপ, রসূল-ই আক্রামের হিজরতের ঘটনাও এ খোদায়ী হিফাযত এবং অন্য কারো হিফাযতের অমুখাপেক্ষিতার স্পষ্ট প্রমাণ বহন করে। এর অবস্থা এ যে, কোরাঈশ গোত্রীয়রা জানতে পারলো যে, মুসলমান ও মুসলমানদের সাহায্যকারীর সংখ্যা বেড়ে অনেক হয়ে গেছে, তখন তারা যাদের প্রতি সন্দেহ করছিলো তাদের উপর নির্যাতন আরম্ভ করে দিলো। হুযূর-ই আক্রাম তাই সাহাবা-ই কেরামকে হিজরতের নির্দেশ দিলেন এবং নিজে আল্লাহর নির্দেশের জন্য অপেক্ষমান ছিলেন তখন হুযূর-ই আক্রামের সাথে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব ও হযরত আলীই রয়ে গেছেন। আর মুশরিকরা দেখলো যে, অনতিবিলম্বে তাঁরাও হিজরত করে চলে যাবেন এবং হামলা করে তাঁরা তাদেরকে ধ্বংস করে ফেলবেন, তখন তারা ‘দারুন্ নাদ্ওয়া’য় পরামর্শ সভা ডাকলো। অভিশপ্ত শয়তানও শায়খ-ই নজদীর আকৃতিতে ওই সভায় তাদের সাথে যোগদান করলো। তাতে সিদ্ধান্ত হলো যে, প্রত্যেক গোত্র থেকে একেকজন যুবক তলোয়ার নিয়ে রাত ভর হুযূর-ই আক্রামের ঘর মুবারক অবরোধ করে রাখবে এবং ভোরে এক সাথে আক্রমন করে তাঁকে শহীদ করে ফেলবে। এদিকে জিব্রাঈল আমীন আল্লাহর নির্দেশে এসে হুযূর-ই আক্রামকে তা জানিয়ে দিলেন এবং হিজরতের খোদায়ী নির্দেশ শুনিয়ে দিলেন।
হুযূর-ই আক্রাম হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুল করীমকে বললেন, ‘‘তুমি আমার চাদর মুড়ি দিয়ে আমার বিছানায় ঘুমাও! তোমার কোনরূপ কষ্ট হবে না। আমি যাচ্ছি। তুমি তখনই আসবে যখন লোকজনের সব আমানত বুঝিয়ে দেবে। আমি চাচ্ছি না যে, আমার চলে যাবার পর কাফিরগণ আমার সমালোচনা করুক যে, ‘আমাদের আমানতগুলো বুঝিয়ে না দিয়ে চলে গেছেন।’’ কাফিরগণ ধর্মীয়ভাবে হুযূর-ই আক্রামের বিরোধী বরং শত্রু হলেও তারা তাঁকে মহা আমানতদার হিসেবে বিশ^াস করতো এবং তাদের মূল্যবান অর্থ সম্পদ তাঁর নিকট আমানত (গচ্ছিত) রাখতো। এ আমানতগুলো সেগুলোর মালিকের নিকট ফেরৎ দেওয়ার জন্যই হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহুকে রেখে গিয়েছিলেন।
এবার হুযূর-ই আক্রাম আপন পবিত্র গৃহ থেকে একাকী বের হলেন। শত্রুরা যারা ঘরের দরজায় অবরোধ করেছিলো, তাদের জন্য এক মুষ্ঠি মাটি তুলে নিলেন। আর সেটার উপর-
یٰسٓۚ(۱) وَ الْقُرْاٰنِ الْحَكِیْمِۙ(۲) اِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِیْنَۙ(۳) عَلٰى صِرَاطٍ مُّسْتَقِیْمٍؕ(۴) تَنْزِیْلَ الْعَزِیْزِ الرَّحِیْمِۙ(۵) لِتُنْذِرَ قَوْمًا مَّاۤ اُنْذِرَ اٰبَآؤُهُمْ فَهُمْ غٰفِلُوْنَ(۶) لَقَدْ حَقَّ الْقَوْلُ عَلٰۤى اَكْثَرِهِمْ فَهُمْ لَا یُؤْمِنُوْنَ(۷) اِنَّا جَعَلْنَا فِیْۤ اَعْنَاقِهِمْ اَغْلٰلًا فَهِیَ اِلَى الْاَذْقَانِ فَهُمْ مُّقْمَحُوْنَ(۸) وَ جَعَلْنَا مِنْۢ بَیْنِ اَیْدِیْهِمْ سَدًّا وَّ مِنْ خَلْفِهِمْ سَدًّا فَاَغْشَیْنٰهُمْ فَهُمْ لَا یُبْصِرُوْنَ(۹)
পর্যন্ত পড়লেন আর শত্রুদের মাথার দিকে নিক্ষেপ করলেন। এবার তাদের সামনে দিয়ে হুযূর-ই আক্রাম চলে গেলেন। সবাই অন্ধ হয়ে গেলো, হুযূর-ই আক্রামকে দেখতে পেলো না।
এরপর এক ব্যক্তি সেখানে এসে বললো, ‘‘তোমরা কার জন্য অপেক্ষা করে দাঁড়িয়ে আছো?’’ তারা হুযূর-ই আকরামের নাম মুবারক বললো, লোকটি বললো, ‘‘তোমরা ব্যর্থ হয়ে গেছো। যার অপেক্ষায় তোমরা আছো তিনি তোমাদের চোখে মাটি নিক্ষেপ করে চলে গেছেন। তিনি তোমাদের সম্মুখ দিয়েই গেছেন।’’
তারা তৎক্ষণাৎ হুযূর-ই আক্রামের ঘরের দরজায় এসে ভিতরে উঁকি মেরে দেখলো। তারা দেখলো, হুযূর-ই আক্রাম আপন বিছানায় চাদর মুড়ি দিয়ে শু’য়ে আছেন। ওই খবরকে তারা সত্য বলে মনে করলো না। ভোর হওয়া পর্যন্ত তারা এ ধারণায় ছিলো যে, যিনি শুয়ে আছেন, তিনি হুযূর-ই আকরামই। শেষ পর্যন্ত ভোর হলো। দেখলো ওই বিছানা শরীফ থেকে হযরত আলীই উঠেছেন। তখন সবাই মাথায় আফসোসের হাত মারতে লাগলো। তারা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে জিজ্ঞাসা করলো, হুযূর কোথায়? তিনি বললেন, ‘‘আমি জানিনা। তোমরা তাঁকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করেছো। তিনি চলে গেছেন।’’ তারা হযরত আলীর নিকট হুযূর-ই আক্বদাস সম্পর্কে জানার ক্ষেত্রে হতাশ হয়ে গেলো। তারা হযরত আলী রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহুকে রেখে দ্রুত বেরিয়ে পড়লো। তিনি সেখানে আমানতগুলো বুঝিয়ে দেওয়ার জন্য অবস্থান করলেন। পরবর্তীতে তিনিও তা সম্পন্ন করে হিজরত করে মদীনা মুনাওয়ারায় চলে গেলেন।
হুযূর-ই আক্রাম হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্বকে সাথে নিয়ে হিজরত আরম্ভ করলেন। প্রথমে গারে সওরের দিকে যাত্রা আরম্ভ করলেন। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব তাঁর পুত্র হযরত আবদুল্লাহ্কে মক্কার অবস্থাদি জানার জন্য ঘরে রেখে যান। আর হুকুম দিলেন যেন সারা দিনের সংগৃহিত খবর সন্ধ্যায় তাঁদের নিকট পৌঁছিয়ে দেন। তাঁর আযাদকৃত গোলাম ‘আমির ইবনে ফোহায়রাকে নির্দেশ দিলেন যেন সারা দিন ছাগলগুলো চরিয়ে সন্ধ্যায় সেগুলো তাঁদের নিকট (গুহায়) নিয়ে আসে। হযরত আসমাকে গূহায় খবার পৌঁছানোর দায়িত্ব দিলেন। আবদুল্লাহ্ ইবনে ওরায়ক্বিত্ব মুশরিক ছিলো। তাকে তিন দিন যাবৎ গূহার পাশে অবস্থান করানোর পর মদীনা মুনাওয়ারার পথ দেখানোর জন্য নিয়োগ করলেন।
তিনদিন গূহায় অবস্থান করার পর কাফিরদের খোঁজাখুঁজি ঝিমিয়ে পড়লে দু’টি উট গূহার মুখে আনা হলো। একটির পিঠে হুযূর-ই আক্রাম এবং তাঁর পেছনে হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব আরোহণ করলেন, অপরটির পিঠে নিয়োজিত আবদুল্লাহ্ ও আমির ইবনে ফুহায়রাহ্ আরোহণ করলো। সারারাত ও পরদিন মধ্যাহ্ণ পর্যন্ত একটানা সফর করলেন। এদিকে ক্বোরাঈশরা ঘোষণা করলো হুযূর-ই আক্রামকে কেউ তাদের নিকট পৌঁছাতে পারলে তাকে একশত উট পুরস্কার দেওয়া হবে।
পুরস্কারের লোভে সুরাক্বাহ্ ইবনে মালিক হুযূর-ই আক্রামের খোঁজে বের হলো এবং হুযূরকে এক পাথুরে ভূমিতে পেলো। হযরত আবূ বকর সিদ্দীক্ব তাকে দেখে আরয করলেন, ‘‘হুযূর! আমাদের তালাশকারী এসে পড়েছে।’’ হুযূর এরশাদ করলেন, ‘‘কোন চিন্তা করোনা। আমাদের সাথে আমাদের রব আছেন!’’ সুরাক্বাহ্ চাচ্ছিলো শীঘ্র গিয়ে মুশরিকদেরকে খবরটি পৌঁছিয়ে দেবে। কিন্তু তার ঘোড়ার অর্দ্ধ শরীর মাটিতে ধ্বসে গেলো। আর যমীন থেকে ধোঁয়া উঠতে লাগলো। সে উচ্চস্বরে আরয করলো, ‘‘হুযূর! আমাকে বাঁচান! আমি ওয়াদা করছি যে, যে-ই হুযূরকে তালাশ করার জন্য আসবে, তাকে ফেরৎ পাঠাবো।’’ মোটকথা, হুযূর-ই আক্রামের নির্দেশে ঘোড়াটি যমীন থেকে বেরিয়ে আসলো; কিন্তু পুরস্কারের লোভ সুরাক্বাহকে ওয়াদা ভঙ্গের জন্য বাধ্য করছিলো। মনে এ মন্দ সংকল্প করতেই যমীন তার ঘোড়াকে আগের চেয়ে বেশী গ্রাস করলো। এবার সে উচ্চস্বরে আরয করলো, ‘‘আমার নিশ্চিত বিশ^াস হয়েছে যে, আপনার বিরোধিতার কারণে যমীন আমার ঘোড়াকে গ্রাস করছে। আমাকে মুক্তি দিন! আমি এরপর বিশ^স্ততার সাথে ফিরে যাবো এবং আপনাকে তালাশকারী যাকেই পাই, তাকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।’’
সুরাক্বাহ্ মুক্তি পেলো। আর করজোড় আরয করলো, ‘‘হুযূর! আমার তরবারিটা নিয়ে নিন! অমুক জায়গায় আমার উটগুলো চরছে। সেগুলো থেকে আপনার যত ইচ্ছা নিয়ে নিন!’’ হুযূর-ই আক্রাম এরশাদ করলেন, ‘‘তোমার উটের আমার প্রয়োজন নেই।’’ বিদায় নিয়ে সুরাক্বাহ্ যখন চলে যেতে লাগলো, তখন হুযূর-ই আকরাম এরশাদ করলেন, ‘‘সুরাক্বাহ্! ওই সময় তুমি কি অবস্থায় থাকবে, যখন তোমার হস্ত যুগলে কিসরার কঙ্কন থাকবে?’’ সুরাক্বাহ্ অবাক চিত্তে আরয করতে লাগলো, ‘‘কিসরা ইবনে হরমুযের কঙ্কনই কি আমার হাতে শোভা পাবে?’’ তখন হুযূর বললেন, ‘‘হাঁ।’’
সুতরাং যখন পারস্য রাজ্য জয় হলো এবং কিস্রার কঙ্কন গণীমত হিসেবে পাওয়া গেলো, তখন হযরত ওমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু ওই কঙ্কন সুরাক্বাহ্র হাত দু’টিতে পরিয়ে দিলেন। (শিবলী কৃত ‘সীরাতুন্নবী’তে সূরাক্বাহ্ ইবনে মালিকের স্থলে ‘সুরাক্বাহ্ ইবনে জু’শুম লিখা হয়েছে।)
মোটকথা, অতঃপর হুযূর-ই আক্রাম নিরাপদে মদীনা মুনাওয়ারায় তাশরীফ নিয়ে যান। এ ঘটনাও হুযূর-ই আক্রামের প্রতি আল্লাহ্ তা‘আলার নিরাপত্তা দানের প্রমাণ পাওয়া যায়।

মহাপরিচালক-আনজুমান রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •