ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম নির্দশন সালাম

0

মাওলানা মুহাম্মদ আনিসুর রহমান রিজভী

ইসলামী সংস্কৃতির অন্যতম নিদর্শন হলো সালাম। পরস্পর দেখা-সাক্ষাতে আমরা একে অন্যকে সালাম প্রদান করে থাকি। ইসলামী শরীয়তে পারস্পরিক সম্পর্ক ও ভ্রাতৃত্ববোধকে সুদৃঢ় করার জন্য সালামকে সুন্নাত হিসেবে প্রবর্তন করা হয়েছে। সালাম শব্দের অর্থ শান্তি, দোয়া ও কল্যাণ কামনা করা। ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের এই সংস্কৃতি প্রথম প্রচলিত হয় হযরত আদম আলাইহিস সালামের সৃষ্টির সময় থেকে। নিম্মে বিষয়টির আলোকে বিস্তারিত আলোকপাত করার প্রয়াস পাচ্ছি।

সালাম শব্দের অর্থ ও সালামের পরিচয়
সালাম শব্দের অর্থ
১. দোষ-ত্রুটি থেকে মুক্ত থাকা।
২.শান্তি ও নিরাপত্তা বিধান করা।
৩. শান্তি কামনা করা।
৪. স্বাগতম ও অভিবাদন জানানো।
আল্লামা রাগেব ইস্পাহানি (র.) বলেন, সালাম শব্দটি আল্লাহ তা’আলার একটি নাম। কেননা আল্লাহ তাআলা যাবতীয় দোষ ত্রুটি থেকে মুক্ত।

ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়
মুসলমানদের পরস্পর সাক্ষাতে আস্সালামু আলাইকুম বলে দোয়া কামনা,নিরাপত্তা দান ও কুশল বিনিময় করাকে সালাম বলা হয়।
অন্যভাবে বলা যায়, সালাম হলো একজন মুসলমান অন্য মুসলমানের পরস্পর সাক্ষাতের সময় নির্দিষ্ট শব্দের মাধ্যমে একে অন্যের কল্যাণ কামনা করা।
পৃথিবীতে ইসলাম ছাড়া অন্য যত ধর্ম রয়েছে এসব ধর্মের মধ্যে সালামের মত আর কোন সুন্দর অভিবাদন নেই। যুগে যুগে সকল নবী রাসূল এবং তাদের সন্তানদের মধ্যে অভিবাদন হিসেবে সালামের প্রচলন ছিল। সালামের মাধ্যমে মানুষ আদব বা শিষ্টাচার শিক্ষা লাভ করেন।
] সালামের প্রচলন
সর্বপ্রথম সালামের প্রচলন শুরু হয় হযরত আদম আলাইহিস সালাম এর সৃষ্টি হতে। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন আমাদের আদি পিতা হযরত আদম আলাইহিস সালামকে সৃষ্টি করে বেহেশতের মধ্যে রাখলেন। বেহেশতের মধ্যে ফেরেশতাদের একটি দল; যারা বসাবস্থায় ছিলেন, আল্লাহ পাক হযরত আদম আলাইহিস সালামকে ওই ফেরেশতাদের দলকে দেখিয়ে দিয়ে বললেন, যাও! তাদের কাছে গিয়ে আস্সালামু আলাইকুম, বলো, এবং তারা এই সালামের উত্তরে যা বলবে সেটা হবে আপনি এবং আপনার সন্তানদের মধ্যে অভিবাদনের রীতি বা পদ্ধতি। তখন হযরত আদম আলাইহিস সেখানে গেলেন এবং বললেন আস্সালামু আলাইকুম। অতঃপর ফেরেশতারা তার সালামের উত্তরে বললেন আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহি। তখন তিনি (আদম আলাইহিস সালাম) আল্লাহকে বললেন, তারা আমার সালামের জবাবে ওয়ারাহমাতুল্লাহ শব্দটি বাড়িয়ে বললেন। তখন আল্লাহ বললেন, সালামের এই পদ্ধতিটি আপনি এবং আপনার সন্তানদের মধ্যে অভিবাদনের পদ্ধতি হিসেবে ব্যবহার হবে। তখন থেকেই সালামের প্রচলন শুরু হয়, কেয়ামত অবধি ইসলামের মধ্যে সালামের এই পদ্ধতির প্রচলন বলবৎ থাকবে, ইনশাআল্লাহ।

সালাম জান্নাতি লোকদের অভিবাদন হবে
সালাম দ্বারা জান্নাতি লোকদের অভিবাদন জানানো হবে। জান্নাতে যারা প্রবেশ করবেন,তাদের প্রত্যেককে আল্লাহর পক্ষ থেকে জানানো হবে সালাম। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন জান্নাতি লোকদেরকে সালামের মাধ্যমে শুভেচ্ছা ও অভ্যর্থনা জানাবেন এবং মানুষদেরকে সাদরে গ্রহণ করবেন। যেমন: কুরআনুল কারীমে এসেছে,
وادخل الذين امنوا وعملوا الصالحات جنات تجري من تحتها الانهار خالدين فيها باذن ربهم تحيتهم فيها سلام
অনুবাদ: যারা ঈমান এনেছে এবং ভালো কাজ করেছে তাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, যার তলদেশে নদী সমূহ প্রবাহিত রয়েছে, তারা তাদের প্রতিপালকের অনুমতি সাপেক্ষে সেখানে চিরকাল অবস্থান করবেন, এবং সেখানে তাদের অভিবাদন হবে সালাম। [পারা: ১৩, সুরা: ইবরাহিম,আয়াত:২৩] অন্যত্র আল্লাাহ তা’য়ালা বলেন,
تحيتهم يوم يلقونه سلام
অনুবাদ: তাদের অভিবাদন হবে সালাম, যেদিন তারা তাঁর (আল্লাহর) সাথে সাক্ষাত করবেন।
[পারা: ২৭, সূরা: আহযাব,আয়াত:৪৪]

কারো ঘরে প্রবেশের পূর্বে সালামের মাধ্যমে অনুমতি প্রার্থনা
কারো ঘরে প্রবেশের পূর্বে সালামের মাধ্যমে অনুমতি প্রার্থনা করার জন্য স্বয়ং আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কুরআনুল কারীমে ইরশাদ করেছেন এবং এটা নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাত এবং তিনি সাহাবায়ে কেরামকে কারো ঘরে প্রবেশ করার পূর্বে সালামের মাধ্যমে অনুমতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন, আর সালাম দেওয়ার পর ও অনুমতি পাওয়া না গেলে ফিরে আসতে বলেছেন।
যেমন: কুরআনুল কারীমে আল্লাহ তা’য়ালা বলেন,
يا ايها الذين امنوا لا تدخلوا بيوتا غير بيوتكم حتى تستانسوا و تسلموا على أهلها ذلكم خير لكم لعلكم تذكرون.
অনুবাদ: হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের ঘরে প্রবেশ করবে না, যতক্ষণ না অনুমতি প্রার্থনা করো এবং পরিবারের প্রতি সালাম প্রদান করো। এটা তোমাদের জন্যে উত্তম, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করতে পারো।
[পারা: ১৮, সূরা: নূর, আয়াত: ২৭]

সালামের প্রচার-প্রসারের নির্দেশ
অসংখ্য হাদীসে সালামের প্রচলনের ইঙ্গিত ও নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের প্রচার-প্রসারের নির্দেশ প্রদান করেন।
যেমন: নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন;
এক.
عن ابي هريره رضي الله عنه قال ان رجلا سال رسول الله صلى الله عليه وسلم اي الاسلام خير قال تطعم الطعام ولا تقرا السلام على من عرفت ومن لم تعرف(متفق عليه(
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলেন, ইসলামের মধ্যে সর্বোত্তম আমল কোনটি? তখন তিনি বললেন, অপরকে খাবার খাওয়ানো এবং পরিচিত অপরিচিত ব্যক্তিকে সালাম প্রদান করাই সর্বোত্তম কাজ।
[হাদীসটি ইমাম বুখারী ও মুসলিম (র.) বর্ণনা করেছেন, মিশকাত শরীফ, কিতাবুল আদব- বাবুস সালাম।] দুই.
عن ابي هريره رضي الله تعالى عنه عن النبي صلى الله عليه وسلم قال اذا لقي احدكم اخاه فليسلم عليه فان حالت بينهما شجرة او جدار او حجر ثم لقيه فليسلم عليه (رواه ابو داود)
অনুবাদ: হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু, হযরত নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন, যখন তোমাদের কেউ কোন মুসলমান ভাইয়ের সাথে সাক্ষাৎ করে, তখন সে যেন তাকে সালাম দেয়। যদি তাদের উভয়ের মাঝে কোন বৃক্ষের অথবা পাথরের অথবা দেওয়ালের অন্তরায় সৃষ্টি হয়, অতঃপর তার সাথে আবার সাক্ষাৎ হয়, তবে সে যেন পুনরায় সালাম দেয়। [হাদীসটি ইমাম আবু দাউদ (র.) বর্ণনা করেছেন] অন্য হাদীস শরীফে বলা হয়েছে, افشوا السلام بينكم
অর্থ:তোমরা নিজেদের মধ্যে সালামের প্রসার ঘটাও।
[হাদীসটি ইমাম মুসলিম (র.) বর্ণনা করেছেন।
অপর হাদীসে নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন; السلام قبل الكلام

কথা শুরু করার পূর্বে সালাম দেওয়া
উপর্যুক্ত হাদীস শরীফ গুলো থেকে সালামের গুরুত্ব ও প্রচার প্রসারের বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে যায়, নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সালামের গুরুত্ব দিতে গিয়ে পরিচিত-অপরিচিত সকল মুসলিম ভাইদেরকে সালাম প্রদানের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।

সালামের ফজিলত
সালাম দেওয়া সকল ওলামায়ে কেরামদের ঐক্যমতে সুন্নাত এবং জবাব দেওয়া ওয়াজিব। সালাম আদান প্রদানে মানুষের জন্য অশেষ সওয়াব হয়েছে এবং এর মাধ্যমে বান্দার গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। দলবদ্ধ বা সমষ্টিগত ব্যক্তিদেরকে কেউ সালাম দিলে তাদের মধ্য হতে কোন একজন ব্যক্তি ওই সালামের উত্তর দিলে, তাহলে সকলের পক্ষ থেকে ওয়াজিব আদায় হয়ে যাবে। আর যদি কেউ জবাব না দেয়, তাহলে সবাই গুনাহগার হবে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে একদা এক ব্যক্তি এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম। নবীজি বললেন, ওয়া আলাইকুমুস সালাম। লোকটি বসে পড়ল। নবীজি বললেন, তার জন্য দশটি নেকী। এরপর আরেক ব্যক্তি এসে বললেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহ, তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিয়ে বললেন, তার জন্য বিশটি নেকি। সালাম প্রদানকারী লোকটি বসে পড়ল। অতঃপর তৃতীয় ব্যক্তি এসে নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বললেন, আসসালামু আলাইকুম ওয়ারাহমাতুল্লাহি ওয়াবারাকাতুহু। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সালামের জবাব দিয়ে বললেন, তার জন্য ত্রিশটি নেকি। অতঃপর লোকটি বসে পড়ল। নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, প্রথম ব্যক্তির জন্য দশটি নেকি। দ্বিতীয় ব্যক্তির জন্য বিশটি নেকি এবং তৃতীয় জন্য ত্রিশ নেকি। তিনি আরো বলেন, এভাবে যে ব্যক্তি একটি করে শব্দ বৃদ্ধি করবে, তার জন্য দশটি করে নেকি বৃদ্ধি পাবে।
[ইমাম তিরমিজি ও আবু দাউদ (র.) হাদীসটি বর্ণনা করেছেন, মিশকাত শরীফ, কিতাবুল আদাব-বাবুস সালাম]

সালাম দেওয়ার আদব
সালাম প্রদানের সুন্দর পদ্ধতি রয়েছে, সেইসব পদ্ধতি অনুসরণ করে আমাদেরকে সালাম প্রদান করতে হবে।
১. বয়সে ছোট ব্যক্তি বড়দেরকে সালাম দেবেন। ২.দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে সালাম দেবেন।
৩. আরোহণকারী ব্যক্তি দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিকে সালাম দেবেন। ৪. অল্পসংখ্যক ব্যক্তি অধিক সংখ্যক ব্যক্তিকে সালাম দেবেন। ৫.পায়ে হেঁটে গমনকারী ব্যক্তি বসে থাকা ব্যক্তিকে সালাম দেবে।

অমুসলিমদের সালাম দেওয়ার বিধান
ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে অমুসলিমদের সালাম দেওয়া হারাম। কোন অবস্থাতেই তাদেরকে সালাম দেওয়া যাবে না। কেননা সালাম অর্থ শান্তি কামনা করা। একজন মুসলমানের শান্তি কামনা করা অন্য মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য। তাই একজন মুসলমান অন্য মুসলমানের শান্তি কামনা করবে, বিধর্মীর জন্য নয়। তাই একজন মুসলমান অন্য মুসলমানকে সালাম দিবেন। অনেক জায়গায় দেখা যায়, মুসলিম এবং বিধর্মী একসাথে এক জায়গায় অবস্থান করছে, তখন যদি অন্য কেউ এসে যদি সালাম দিতে চায়, তাহলে তাকে বলতে হবে, আসসালামু আলাইকুম আলা মানিত্তাবায়িল হুদা। তখন তার জবাবে শুধু বলা হবে ওয়ালাইকুম। আর বিধর্মীদের সালামের জবাবে শুধু ওয়ালাইকুম বলবে।

ছোটদের সালামের তা’লীম দেওয়ার বিধান
ছোট বাচ্চা তথা শিশু এবং বালকদেরকে সালাম দেওয়া নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম – এর সুন্নাত। নবীজি সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন রাস্তা দিয়ে গমন করার সময় খেলাধুলারত বাচ্চা তথা শিশু এবং বালকদেরকে দেখতেন তখন সাথে সাথে সালাম দিতেন। আর এই সালাম দেওয়ার অর্থ হলো বাচ্চা তথা শিশু এবং বালকদেরকে সালামের শিক্ষা দেওয়া। আমরাও আমাদের ছেলেসন্তানদের সালামের শিক্ষা দেব। যার মাধ্যমে তারা আদব-কায়দা তথা শিষ্টাচার, ভদ্রতা এবং বড়দের প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা ইত্যাদি শিখতে পারে।

যেসব অবস্থায় সালাম দেওয়া মাকরুহ
নিম্মোক্ত সময়ে সালাম দেওয়া মাকরুহ। যেমন:
১. কুরআনুল কারীম তেলাওয়াত করার সময়।
২. প্র¯্রাব-পায়খানা করার সময়।
৩. খাবার গ্রহণের সময়।
৪. নামাজ পড়ার সময়।
৫. মুয়াজ্জিন আযান দেওয়ার সময়।
৬. নিদ্রাবস্থায় কেউ বিশ্রাম নিচ্ছে সে অবস্থায় সালাম দেয়া মাকরুহ।
৭. কোন মুহাক্কীক আলিম দ্বীনি বিষয়ে আলোচনার সময়।
৮. নামাজরত অবস্থায়।
৯.জিকির-আযকারে লিপ্ত ব্যক্তিকে সালাম দেওয়া মাকরুহ।
১০. দোয়া করার সময় ইত্যাদি।
১১. মুহাদ্দিস হাদিস পাঠদানরত অবস্থায়।
১২. খতিব খুতবা দানকালে।
১৩. খুতবা শ্রবণকারীদের।
১৪. ফিকহ শাস্ত্রীয় কিতাব পরস্পরে পর্যালোচনার সময়।
১৫. বিচার অনুষ্ঠান চলাকালে।
১৬. ইকামত অবস্থায়।
১৭. পাঠদানরত অবস্থায় শিক্ষককে।
১৮. শতরঞ্জ (এক ধরনের দাবা) খেলায় লিপ্ত ব্যক্তিকে।
১৯. খেলাধুলারত যেকোন ব্যক্তিকে।
২০. লজ্জাস্থান অনাবৃত অবস্থায় থাকা ব্যক্তিকে।
[তিরমিজি ও আবু দাউদ শরীফ,তাফসিরে মাজহারি ও জালালাইন]

সালামের উপকারিতা সমূহ
সালামের অনেক উপকারিতা রয়েছে। যেমন:
১. সালাম মুসলমানদের নিদর্শন; যখন এক মুসলমান, অন্য মুসলমানকে দেখে তখন কথা-বার্তা শুরু করার পূর্বে সালাম আদান প্রদান করবে।
২. নিশ্চয় আল্লাহ তা’আলার নিকট সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম, যিনি সর্বপ্রথম সালাম দেয়।
৩. সালাম দিলে অহংকার দূর হয়।
৪. সালাম দিলে পরস্পর ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়।
৫. ছোটরা বড়দের সালাম প্রদানের মাধ্যমে বড়দের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়।
৬. বড়রা সালামের মাধ্যমে ছোটদের প্রতি স্নেহশীল ও আন্তরিক হয়।
৭. সালামের মাধ্যমে কৃপণতা দূর হয়, মানুষের প্রতি ভালোবাসা সৃষ্টি হয়।
৮. সালামের মাধ্যমে একে অপরের কল্যাণ কামনা করা হয়।
৯. সালামের মাধ্যমে মুসলমানরা অশেষ সাওয়াব লাভের সৌভাগ্য অর্জন করে।
১০. সালামের মাধ্যমে নবীর সুন্নাত অনুসরণ করা হয়
১১. সালামের মাধ্যমে আদম (আ.) এর সুন্নাত জাগ্রত হয়
১২. সালাম ইসলামের নিদর্শনসমূহের মধ্যে অন্যতম।
১৩. সালাম এক মুসলমানের উপর অন্য মুসলমানের হক তথা অধিকার।
১৪. সালাম জান্নাত লাভের অন্যতম মাধ্যম।
১৫. সালাম মুসলিম জাতির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
১৬. সালামের মাধ্যমে বরকত হাসিল হয়।
১৭. সালামের মাধ্যমে নিরাপত্তা লাভ করা যায়।
১৮. সালাম মানুষের জন্য সদকা হয়।
১৯. সর্বোপরি সালামের মাধ্যমে নবীদের সুন্নতের উপর আমল হয়।
পরিশেষে বলতে পারি, ইসলামে সালামের বিধান ও প্রচলন সেই আদি যুগ থেকে। সালামের মাধ্যমে এক মুসলমান অন্য মুসলমানের প্রতি সম্মান-প্রদর্শন, কল্যাণ কামনা ও ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের প্রকাশ ঘটায়। তাই, আমরা পরস্পর সাক্ষাতে একে অপরকে সালাম দিব এবং আমাদের সন্তানদেরকেও সালামের তা’লীম দিব, যেন তারা বড়দের প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা প্রদর্শন করে আদব-কায়দা শিখতে পারে। আল্লাহ পাক, আমাদেরকে তৌফিক দান করুন, আমিন; বেহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।

লেখক: সহকারী মাওলানা, চরণদ্বীপ রজভীয়া ইসলামিয়া ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা, বোয়লখালী, চট্টগ্রাম।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •