নবী করীমের দরবারে কেউ চাইতে এসে ‘না’ শুনেনি

0

শানে রিসালত 
মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল মান্নান

নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর দরবারে কেউ চাইতে এসে ‘না’ শুনেনি
আ’লা হযরত রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বলেছেন-
واه كيا جود كرم هے شه بطحا تيرا
نهيں” سنتا هى نهيں ما نگنے والا تيرا”
অর্থ: ওই শাহে বাত্বহা! আপনার ‘জুদ ও করম’ (বদান্যতা) কতই চমৎকার! কতই ব্যাপক! আপনার দরবারে কেউ কিছু চাইতে গিয়ে কখনো ‘না’ (দেবনা/পাবে না) ইত্যাদি শুনেনি। আরবীতে ‘জুদ’ (جود) ও করম (كرم) শব্দ দু’টি প্রায়ই কাছাকাছি অর্থের (অর্থাৎ বদান্যতা)। তবে পার্থক্য এযে, اَلْجُوْدُ مَا كَانَ بِغَيْرِ سَوَالٍ وَالْكَرَمَ لِسَوَالٍ অর্থ: ‘জুদ’ (جود) হচ্ছে যা যাচনা (চাওয়া) ব্যতিরেকে দান করা হয়, আর ‘করম’ (كرم) হচ্ছে যা চাইলে পাওয়া যায়। হুযূর-ই আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মধ্যে এ দু’টি গুণের প্রতিটি পূর্ণাঙ্গভাবে ছিলো।
আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন- وَاَمَّا السَّائِلَ فَلَا تَنْهَرُ-
অর্থাৎ হে মাহবূব! আপনার দরবারে যাচনাকারীকে বঞ্চিত অবস্থায় ফিরিয়ে দেবেন না। [সূরা আদ্ব দ্বোহা: আয়াত-১০]

বোখারী শরীফে আছে, সাইয়্যেদা আয়েশা সিদ্দীক্বাহ্ রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহা বলেন-
اِنَّ النَّبِىَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ اَجْوَدَ النَّاسِ وَكَانَ اَجْوَدَ مِنِ الرِّيْحِ الْمُرْسَلَةِ وَمَا رَدَّ سَائِلَ قَطُّ وَمَا سُئِلَ مَنْ شَيْئٍ فَقَالَ لَا-
অর্থাৎ নবী-ই পাক শাহে লাউলাক সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম সমস্ত মানুষের চেয়ে বেশী দানশীল ছিলেন। তাঁর দান তেজস্বী বায়ু প্রবাহ্ অপেক্ষা বেশী চলমান ছিলো। তিনি কখনো কোন যাচনাকারীকে ‘না’ বলেননি। যখনই তাঁর নিকট কিছু চাওয়া হয়েছে, তখন তাকে ‘না’ বলেননি। মোটকথা যে যা চেয়েছে সে তা পেয়েছে। তাঁর দরজা মুবারক থেকে কেউ বঞ্চিত হয়ে ফিরে যায়নি। কেউ চাওয়ার সময় তা পবিত্র দরবারে মওজুদ থাকলে তা দান করতেন, আর নিকটে না থাকলে কর্জ নিয়ে তাকে দিতেন অথবা পরবর্তীতে দেওয়ার ওয়াদা দিতেন।

এ ধরনের বিভিন্ন ঘটনা
এক. একবার এক ভিক্ষুক হুযূর-ই আকরামের পবিত্র দরবারে আসলো। তিনি বললেন, ‘‘আমার নিকট কিছুই নেই; তবে তুমি আমার নামে কর্জ নাও। যখন আমার নিকট কিছু আসবে, তখন আমি তা পরিশোধ করে দেবো।’’ হযরত ওমর ফারূক্ব আরয করলেন, ‘‘হে আল্লাহ্র রসূল! আল্লাহ্ আপনার উপর ওই কাজ বর্তান নি, যা আপনার ক্ষমতায় নেই।’’ হযরত ওমর ফারূক্বের এ কথা হুযূর আলায়হিস্ সালাতু ওয়াস্ সালাম-এর পছন্দ হয়নি। তখন আনসারের এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি দান করুন! আরশের মালিকের দিক থেকে কমতির আশঙ্কা করবেন না।’’
এটা শুনে তিনি মুচকি হাসলেন এবং তাঁর চেহারা মুবারকে সজীবতা দেখা গেলো। তিনি বললেন, ‘‘এটারই নির্দেশ আমাকে দেওয়া হয়েছে।’’

দুই. হযরত আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু
হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেছেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট বাহরাঈন থেকে মাল-সামগ্রী আসলো। প্রচূর মাল-সামগ্রী তাঁর নিকট আনা হলো। তিনি বললেন, ‘‘এগুলো মসজিদে রেখে দাও।’’ যখন তিনি নামায সমাপ্ত করলেন, তখন ওই মাল-সামগ্রীর নিকট বসে গেলেন এবং বন্টন করতে লাগলেন। তাঁর চাচা তাঁর নিকট আসলেন। আর আরয করতে লাগলেন, ‘‘হে আল্লাহ্র রসূল! আমাকে এ মাল-সামগ্রী থেকে দিন! কেননা, বদরের যুদ্ধের সময় আমি মুক্তিপণ (ফিদিয়া) দিয়ে নিজেকে এবং আক্বীল ইবনে আবূ তালিবকে মুক্ত করেছিলাম।’’ তিনি এরশাদ করলেন, ‘‘নিয়ে নিন!’’ হযরত আব্বাস উভয় হাতে নিজের (অতিরিক্ত) কাপড়গুলোতে ভর্তি করে তা তুলতে চাইলেন। কিন্তু তুলতে পারলেন না।
আরয করলেন, ‘‘হে আল্লাহ্র রসূল! আপনি কাউকে বলে দিন যেন তা তুলে আমার উপর রেখে দেয়।’’ তিনি বললেন, ‘‘আমি কাউকে এ বোঝা তুলে দিতে বলছি না।’’ হযরত আব্বাস বললেন, ‘‘তাহলে আপনি নিজে তুলে আমার উপর রেখে দিন।’’ হুযূর-ই আকরাম তাতেও রাজি হলেন না। তখন হযরত আব্বাস যা নিয়েছেন, তা থেকে কিছু রেখে দিলেন তারপর তা কাঁধে তুলে রওনা হয়ে গেলেন। হুযূর-ই আক্বদাস তাঁকে দেখতে থাকেন যতক্ষণ না চোখের অন্তরাল হয়ে গেলেন এবং আশ্চর্যান্বিত হলেন। মোট কথা, হুযূর-ই আকরাম সেখান থেকে যখন উঠলেন, তখন সেখানে কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি। ইবনে আবী শায়বাহ্য় হযরত ইবনে হিলালের ‘মুরসাল’ সূত্রে বর্ণিত আছে যে, ওই মাল-সামগ্রীর মূল্য এক লক্ষ্য দিরহাম ছিলো। আলা ইবনে হাদ্বরামী তা বাহরাইনের ‘খারাজ’ (ট্যাক্স) হিসেবে পাঠিয়েছিলেন। এটা প্রথম মাল-সামগ্রী ছিলো, যা হুযূর-ই আকরামের নিকট আনা হয়েছিলো।

তিন. হুনায়নের যুদ্ধের গনীমতের মাল বন্টন
এ’তে হুযূর-ই আকরামের দানশীলতা অনুমানের বাইরে ছিলো। তিনি তাতে গ্রাম্য লোকদের অনেককে মাথাপিছু একশ’ করে উট দিয়েছিলেন। অবশ্যই ওই দিন বেশীর ভাগ দান ‘মুআল্লাফাতুল ক্বুলূব’ এর জন্য (ইসলামের দিকে আকৃষ্ট করার জন্য) ছিলো। হযরত আনাস রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করেছেন, সাফ্ওয়ান ইবনে উমাইয়া নামের এক ব্যক্তি হুযূর-ই আকরামের নিকট ছাগলের জন্য প্রার্থনা করলো। তখন দু’পর্বতের মধ্যবর্তী ময়দান ছাগল দ্বারা ভর্তি ছিলো। হুযূর-ই আকরাম সব ছাগল তাকে (সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া) দান করেছিলেন। সে তার সম্প্রদায়ের নিকট গিয়ে বললো, ‘‘হে আমার সম্প্রদায়ের লোকেরা! তোমরা ইসলাম গ্রহণ করো। আল্লাহ্র-ই শপথ! (হযরত) মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম) এমনভাবে দান করেন যে, তিনি দারিদ্রকে ভয় করেন না।’’
চার. হযরত সা‘ঈদ ইবনে মুসাইয়্যাব বর্ণনা করছেন, সাফওয়ান ইবনে উমাইয়া বলেছেন, রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম হুনায়নের যুদ্ধের দিনে আমাকে মাল দান করছিলেন। অথচ তিনি আমার দৃষ্টিতে সমগ্র সৃষ্টির মধ্যে সর্বপেক্ষা বেশী অপছন্দনীয় ছিলেন। তারপর তিনি আমাকে দান করতে রইলেন এ পর্যন্ত যে, তিনি আমার দৃষ্টিতে সৃষ্টির মধ্যে সর্বাপেক্ষা বেশী প্রিয় হয়ে গেছেন।
পাঁচ. চাদর মুবারক: হযরত সাহ্ল ইবনে সা’দ বর্ণনা করেছেন, এক মহিলা একটি চাদর নিয়ে আসলো। সে আরয করলো, ‘‘হে আল্লাহর রসূল! এটা আমি নিজ হাতে বুনেছি। এখন এজন্য নিয়ে এসেছি যেন আপনি তা পরেন।’’ চাদরটি হুযূর-ই আকরামের প্রয়োজন ছিলো। তাই তিনি চাদরটি নিয়ে নিলেন। তারপর তিনি চাদরটি লুঙ্গির মতো পরে আমাদের দিকে আসলেন। সাহাবা-ই কেরামের মধ্যে একজন তা দেখে বললেন, ‘‘কতোই উত্তম চাদর এটা! চাদরটি আমাকে পরতে দিন।’’ হুযূর-ই আকরাম বললেন, ‘‘হাঁ।’’ কিছুক্ষণ পর তিনি মজলিস থেকে উঠে চলে গেলেন তারপর ফিরে আসলেন। আর চাদরটি ভাঁজ করে ওই সাহাবীর নিকট পাঠিয়ে দিলেন। অন্য সাহাবীগণ তাঁকে বললেন, ‘‘তুমি ভাল কাজ করেনি! হুযূর আকরামের নিকট চাদরটি চেয়ে বসেছো! অথচ তুমি জানো যে, তিনি কোন প্রার্থীর প্রার্থনা পূরণ না করে ছাড়েন না।’’ ওই সাহাবী বললেন, ‘‘আল্লাহ্রহই শপথ! আমি শুধু এজন্য চাদরটি চেয়েছি যেন যেদিন আমি মারা যাবো, সেদিন এ চাদর আমার কাফন হয়।’’ হযরত সা’দ বললেন, ‘‘ওই চাদর বাস্তবেই তাঁর কাফন হয়েছিলো।’’
ছয়. কাফির অতিথি: হযরত আবূ হোরায়রা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু বর্ণনা করছেন, এক কাফির রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর মেহমান হলো। তাঁর নির্দেশে একটি ছাগীর দুধ দোহন করা হলো। সে (অতিথিটি) ওই দধু পান করে নিলো। দ্বিতীয় ছাগীর দুধ দোহন করা হলো। সে সেটার দুধও পান করে ফেললো। তারপর আরেক ছাগীর দুধ দোহন করা হলো। সেটার দুধও মেহমানটি পান করে নিলো। এভাবে সে সাতটি ছাগীর দুধ পান করে নিলো।
ভোরে ঘুম থেকে ওঠে সে ইসলাম গ্রহণ করলো। তারপর রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম তার জন্য একটি ছাগীর দুধ দোহন করার জন্য নির্দেশ দিলেন। মেহমানটি ওই দুধ পান করে নিলো। তারপর দ্বিতীয় ছাগীর দুধ দোহন করা হলো। কিন্তু লোকটি সেটার সম্পূর্ণ দুধ পান করতে পারেনি। তারপর রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করলেন, ‘‘মু’মিন এক অন্ত্রে পান করে থাকে, আর কাফির সাত অন্ত্রে পান করে।’’
সাত. এ কেমন দানশীলতা! হযরত বেলাল মুআয্যিন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর খাজাঞ্চি (বায়তুল মালের তত্ত্বাবধায়ক) ছিলেন। একদিন আবদুল্লাহ্ হাউযানী তাঁকে রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম কোষাগারের অবস্থা জানতে চাইলো। তিনি বললেন, ‘‘রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট কিছু জমা থাকতো না। হুযূর-ই আকরামের নুবূয়ত ঘোষণা থেকে তাঁর ওফাত শরীফ পর্যন্ত এ কাজ আমার হাতে ন্যাস্ত ছিলো। যখন কোন বস্ত্রহীন ও ক্ষুধার্ত মুসলমান তাঁর নিকট আসতেন, তখন তিনি আমাকে নির্দেশ দিতেন। আমি কারো নিকট থেকে কর্জ নিতাম। আর চাদর কিনে এনে ওই বস্ত্রহীনকে পরিয়ে দিতাম এবং খাদ্য খরিদ করে এনে ওই ক্ষুধার্তকে খাইয়ে দিতাম।
একদিন এক মুশারিককে পেলাম। সে বলতে লাগলো, ‘‘হে বেলাল! আমার যথেষ্ট সম্পদ আছে। আমি ব্যতীত অন্য কারো থেকে কর্জ নিওনা।’’ আমি তা-ই করলাম। একদিন আমি ওযূ করে আযান দিচ্ছিলাম। তখন কি দেখলাম! ওই মুশরিক ব্যবসায়ীদের একটি দলের সাথে আছে। সে আমাকে দেখে বললো, ‘‘ওহে হাবশী!’’ আমি বললাম, ‘‘আমি হাযির।’’ তারপর সে অতি কর্কশ কন্ঠে বললো, ‘‘কিছু জানা আছি কি? কর্জ পরিশোধের আর কতদিন অবশিষ্ট আছে?’’ আমি বললাম, ‘‘হাঁ, প্রতিশ্রুত দিন ঘনিয়ে এসেছে।’’ সে বললো, ‘‘শুধু চারদিন বাকী আছে। যদি এ সময়সমীমার মধ্যে তুমি আমার কর্জ পরিশোধ করতে না পারো, তবে তোমাকে গোলাম বানিয়ে ছাগল চরাতে দেবো, যেভাবে তুমি ইতোপূর্বে চরাতে।’’
তার কথা শুনে আমি চিন্তিত হয়ে পড়লাম। রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এশার নামায পড়ে আপন দৌলত খানায় তাশরীফ নিয়ে গেলেন। আমি সেখানে হাযির হয়ে আরয করলাম, ‘‘হে আল্লাহ্র রসূল! আমার মাতাপিতা আপনার জন্য উৎসর্গীকৃত! অমুক মুশরিক, যার নিকট থেকে আমি কর্জ নিতাম, সে আমাকে এমনটি বলে গেছে। এদিকে আপনার কোষাগারে কর্জ পরিশোধের জন্য তো কিছুই নেই। আমার নিকটও কিছুই নেই। সে তো আমাকে অপমানিত করবে। আপনি অনুমতি দিলে আমি পালিয়ে গিয়ে মুসলমানদের কোন বস্তিতে চলে যাবো। যখন কর্জ পরিশোধের জন্য আল্লাহ্ তা’আলা কিছু মাল-সামগ্রী দান করবে, তখন ফিরে আসবো।’’
মোটকথা, আমি ঘরে চলে আসলাম, আর ঢাল-তলোয়ার ও থলে আর জুতো মাথার নিকট রেখে দিলাম। সোবহে কাযিব হতেই আমি যাত্রা শুরু করলাম। কিছু দূর যেতে না যেতেই কি দেখতে পাচ্ছি! এক ব্যক্তি দৌঁড়ে আসছে আর বলছে- হে বেলাল! রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম আপনাকে স্মরণ করছেন।’’ আমি ফিরে পৌঁছে দেখতে পেলাম- চারটি বোঝাইকৃত উট সেখানে বসে আছে।
আমি অনুমতি নিয়ে হুযূর-ই আকরামের পবিত্র দরবারে হাযির হলাম। তিনি বললেন, ‘‘মুবারক হও! (ধন্য হও!) আল্লাহ্ তা‘আলা কর্জ পরিশোধ করার মতো মাল-সামগ্রীর ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। তুমি তো বাইরে চারটি উট বসা অবস্থায় দেখছো।’’ আমি আরয করলাম, ‘‘হাঁ! ইয়া রসূলুল্লাহ্!’’ তিনি এরশাদ করলেন, ‘‘এ উটগুলো ফাদাকের শাসক পাঠিয়েছে। এ শষ্য ও কাপড়, যেগুলো উটগুলোর পিঠে বোঝাইকৃত আছে। সবই তোমার দায়িত্বে রাখো। সেগুলো বিক্রয় করে কর্জ পরিশোধ করে দাও!’’ আমি হুকুম মুবারক পালন করলাম। তারপর আমি মসজিদ শরীফে আসলাম। আর ঘটনা আরয করলাম। তিনি কর্জ পরিশোধ করার অবস্থা জানতে চাইলেন। আমি আরয করলাম, ‘‘কর্জ পুরোটাই পরিশোধ হয়ে গেছে। কর্জের কিছু অবশিষ্ট নেই।’’ হুযূর এরশাদ করলেন, ‘‘তা থেকে কিছু মাল তো অবশিষ্ট রয়ে গেছে।’’ আমি আরয করলাম, ‘‘হাঁ, কিছুটা অবিশিষ্ট আছে।’’ হুযূর-ই আকরাম এরশাদ করলেন, ‘‘আমাকে সেটাও থেকে দায়মুক্ত করে দাও! যতক্ষণ পর্যন্ত এটুকু প্রাপকের নিকট না পৌঁছে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমি ঘরে যাবো না!’’ তিনি এশার নামায সমাপ্ত করলেন। তারপর আমাকে ডেকে অবিশিষ্ট অর্থের কথা জানতে চাইলেন। আমি আরয করলাম, ‘‘তা আমার নিকট এখনো আছে। কোন সাহায্যপ্রার্থী পাওয়া যায়নি।’’ রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ওই রাত মসজিদেই রয়ে গেলেন।
পরদিন এশার নামাযের পর তিনি আমাকে আবার ডেকে পাঠালেন। আমি আরয করলাম, ‘‘ইয়া রাসূলুল্লাহ্ খোদা তা‘আলা আপনাকে দায়মুক্ত করে দিয়েছেন।’’ এটা শুনে তিনি তাকবীর বললেন এবং আল্লাহ্ তা‘আলার শোকর আদায় করলেন। কারণ, তিনি এ আশংকায় ছিলেন যে, ওই অবিশিষ্ট অর্থ তাঁর নিকট থাকাবস্থায় তাঁর ওফাত শরীফ হয়ে যায় কি না? তারপর তিনি আপন দৌলত খানায় তাশরীফ নিয়ে গেলেন।
এভাবে হুযূর-ই আকরামের দানশীলতার অনেক ঘটনা আছে, কলবের বৃদ্ধি এড়ানোর জন্য এখানে উল্লেখ করা গেলো না।

লেখক: মহাপরিচালক আনজুমান রিসার্চ সেন্টার, চট্টগ্রাম।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •