মুহাম্মদ মাহবুবুল আলম
মহান রাব্বুল আলামিনের শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি মানুষ। সৃষ্টি জগতকে আল্লাহ তাআলা মানুষের অনুগত করে দিয়েছেন। আর এ মানবজাতির হিদায়াতের জন্য যুগে যুগে প্রেরণ করেছেন নবী-রসূল। সৃষ্টির উপর রয়েছে মানবজাতির আধিপত্য। তাই স্বভাবতই মনে প্রশ্ন জাগে, সেই মানবের আবার অধিকার কী? তারপরও আজ দেশ-বিদেশে মানবাধিকার বিষয়টি বহুল আলোচিত ও ব্যবহৃত। পৃথিবীর সর্বত্রই মানবাধিকার ও তা লঙ্গনের কথা বলা হচ্ছে। পরাশক্তিগুলো নিজ দেশে মানবাধিকার লঙ্গন সত্বেও নিছক রাজনৈতিক স্বার্থসিদ্ধীর জন্য অন্যান্য দেশে মানবাধিকার লঙ্গনের অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক আগ্রাসনের ক্ষেত্র তৈরী করছে। বিশ্ব সভ্যতার ইতিহাসে কালজয়ী চিরন্তন আদর্শ হিসেবে একমাত্র ইসলামই সব যুগে মানব সমাজে মানুষের মৌলিক অধিকার তথা মানবাধিকার দেওয়ার সুনিশ্চিত ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছে। অসীম জ্ঞানময় নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী আল্লাহ প্রদত্ত জীবন বিধানই মানবাধিকারের নিশ্চয়তার গ্যারান্টি; সব শ্রেণির মানুষের সামাজিক অধিকার সংরক্ষনের নিখুঁত ও নির্ভুল জীবনাদর্শের নাম ইসলাম। আজকের বিশ্ব মানবাধিকার ভোগের সু-নির্দিষ্ট ব্যবস্থা একমাত্র ইসলামী জীবনবিধান বাস্তবায়নের মধ্যেই নিহিত। ইসলামই প্রকৃতপক্ষে হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম থেকে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এর আবির্ভাবের পূর্ব পর্যন্ত এবং রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর আবির্ভাব থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মানবমন্ডলীর সামষ্টিক অধিকারগুলোর সুস্পষ্ট বিধান ও মূলনীতি দিয়েছে। কিন্তু দুনিয়াবাসীর নিকট সর্বপ্রথম মানবাধিকারের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা ঘোষণা করেন হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম। ইসলাম ধর্ম প্রচারের প্রাথমিক অবস্থায় নবদীক্ষিত মুসলমানদের জীবনে যে অমানবিক অত্যাচার, নিপীড়ন চলছিল ; এতে মানবাধিকার চরমভাবে লঙ্ঘিত হয়েছিল। আরবের কাফির-মুশরিকদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে মানবতার মূর্ত প্রতীক নবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মদিনায় হিজরত করেন। এত অত্যাচার সত্বেও ঐতিহাসিক মক্কা বিজয়ের পর সবাইকে ক্ষমা করে দেন। এভাবে আল্লাহর প্রিয় হাবিব সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মানবার্ধিকার প্রতিষ্ঠায় উজ্জ¦ল দৃষ্টান্ত জগতবাসীর সামনে উপস্থাপন করে রেখেছেন। মানবাধিকার সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি কী, তা তুলে ধরার পূর্বে মানবাধিকার বিষয়ে সম্যক ধারণা নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করি।
মানবাধিকার ধারণার সুত্রপাত
আধুনিক পাশ্চাত্য সভ্যতার প্রথম মানবাধিকারের ধারণার জন্ম খ্রিষ্টীয় অষ্টাদশ শতাব্দীর মাঝামাঝি। এরই পরিপেক্ষিতে ১৭৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ফ্রান্সে প্রথম ঘোষিত হয় Declaration of the people’s Right এবং ১৭৯১ খ্রিষ্টাব্দে মার্কিন সংবিধানে সংযোজিত হয় The Bill of Rights. এরপর থেকেই প্রাশ্চাত্য দুনিয়ায় মানবাধিকারের ধারণাটি বিকশিত হতে থাকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর বিশ্ববাসী এ বিষয়ে আরো সচেতন হয়ে উঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ ৩০টি ধারা সংবলিত সর্বজনীন মানবাধিকার সনদ ঘোষণা করে। এই ঘোষণার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয় বটে; কিন্তু কোন রাষ্ট্রের উপর এই সনদ বাধ্যতামূলক করা হয়নি।
মানবাধিকার কী?
মানবাধিকার বিষয়টি বিশ্বজুড়ে বর্তমান সময়ের সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ ও বহুল আলোচিত একটি বিষয় । বিশ্ব রাজনীতিতে অত্যন্ত তাৎপর্যের সঙ্গে আলোচিত Fundamental Rights, Basic Human Rights, Birth Rights of Man জনপ্রিয় এ শব্দগুচ্ছ প্রকৃতপক্ষে মানবাধিকারের অর্থেই ব্যবহৃত হয়। মানবাধিকার বলতে সেই অধিকারকে বুঝায়, যা নিয়ে মানুষ জন্মায়, যা তাকে বিশিষ্টতা দেয় এবং যা হরণ করলে সে আর মানুষ থাকেনা। মানুষ জন্মসূত্রেই চিন্তাশক্তি, উদ্ভাবনী ক্ষমতা এবং কথা বলার যোগ্যতা নিয়ে আসে; কোন রাষ্ট্র, সরকার বা সার্বভৌম শক্তি তাকে এসব প্রদান করে না (সূত্র: গাজী শামসুর রহমান, মানবাধিকার ভাষ্য, পৃ-১১)
অধকিার হলো সইে বাহ্যকি অবস্থা, যা মানুষরে মানসকি পরতিুষ্টি বধিান কর।-T.H.Green
প্রফসের হ্যারল্ড লাস্কি (H. Laski) বলনে, ‘Right are those conditions of social life, without which one man can seek in general to be himself at his best’. (অধকিার হলো সমাজ জীবনরে সে সব সুযোগ-সুবধিা, যগেুলো ছাড়া কোনো মানুষ সাধারণভাবে নজিরে পরপর্িূণ বা র্সবোত্তম বকিাশে সক্ষম হয় না)।
কেউ কেউ বলেন, ‘মানুষ কতকগুলো স্বতঃসিদ্ধ অধিকার নিয়ে জন্ম গ্রহণ করে, যা দেশ, কাল, বর্ণ, ভাষা এবং জাতিধমর্- নির্বিশেষে প্রতিটি মানুষের ক্ষেত্রে সমানভাবে প্রযোজ্য। এই অধিকারগুলোকে একত্রে বলা হয় মৌল অধিকার বা মানবাধিকার’।
মানবাধিকার ও মৌলিক অধিকারের মধ্যে সম্পর্ক
সাধারণত মৌলিক অধিকার গড়ে উঠে মানুষের মৌলিক চাহিদাগুলোকে কেন্দ্র করে। কিন্তু অধুনা মানবাধিকারের মধ্যে মানুষের মৌলিক চাহিদাকে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় গুরুত্ব দিতে গিয়ে কিছু কিছু অধিকারকে আইন দ্বারা স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোকে মৌলিক অধিকার (Fundamental Rights) নামে অভিহিত করা হয়। আর এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, অনেক মৌলিক চাহিদা আছে, যা আইন দ্বারা স্বীকৃত না হওয়ার কারণে কোন কোন দেশে মৌলিক অধিকাররূপে স্বীকৃতি পায়নি। তাই স্থান ও দেশভেদে মৌলিক অধিকারের ধারণা ভিন্ন হয়। যেমন-জীবনধারণের অধিকার, সম্পদের নিরাপত্তার অধিকার, ব্যক্তিস্বাধীনতার অধিকার, ধর্মীয় স্বাধীনতার অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতার অধিকার, আইনের দৃষ্টিতে নারী-পুরুষের সমতার অধিকার ইত্যাদি। এ ক্ষেত্রে সারা বিশ্বের আনাচকানাচে মানবতাবাদী আন্দোলনগুলোর ফসলস্বরূপ প্রাপ্ত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার চুক্তিগুলো লিপিবদ্ধ করায় মৌলিক অধিকারগুলো আরো স্পষ্টভাবে চিহ্নিত করা সহজ হয়েছে।
মানবাধিকার সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি
ফিতরাত তথা স্বভাবধর্ম ইসলাম মানবজীবনের জন্য উপযোগী আদর্শ পেশ করেছে। মূলত: ইসলামে মানবাধিকার জীবনের সব দিক ও বিভাগে সমভাবে ব্যাপৃত। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবামূলক মৌলিক চাহিদাকেও ইসলাম মানবাধিকারে অন্তর্ভুক্ত করেছে। জীবনরক্ষার পাশাপাশি ব্যক্তির ব্যক্তিগত, সামাজিক ও রাজনৈতিক তথা সব ক্ষেত্রে উপরোক্ত মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি দিয়েছে। এ ছাড়া মা-বাবা, ছেলে-মেয়ে, ভাই-বোন, স্বামী-স্ত্রী, প্রতিবেশী, শ্রমিক, মজুর ইত্যাদি ক্ষেত্রেও বিভিন্ন অধিকার বর্ণনা করেছে। সেসব মূলত শরীয়তেরই অংশস্বরূপ। সর্বজনীন মানবাধিকারের মাইলফলক মহানবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর বিদায় হজ্বের ভাষণে তা স্পষ্ট। তিনি ঘোষণা করেছিলেন, ‘‘হে মানবগণ। নিশ্চয়ই তোমাদের প্রভু এক। তোমাদের পিতা হযরত আদম আলায়হিস্ সালাম এক। সাবধান! ‘অনারবের’ ওপর ‘আরবের’ কিংবা ‘আরবের’ ওপর ‘অনারবের’ কালো মানুষের ওপর সাদা/লাল কিংবা সাদা/লাল মানুষের ওপর কালো মানুষের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই। ইসলাম সবার জন্য সমান অধিকারের কথা বলেছে। মূলত: ইসলামী জীবনাদর্শ যেমন পরিপূর্ণ, তেমনি ইসলামী মানবাধিকারের ধারণাও ব্যপক ও পরিপূর্ণ।
ইসলাম প্রদত্ত বিভিন্ন মানবাধিকার
ক. জীবন ধারণের অধিকার: ইসলাম মানব জীবনের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছে। মহান ¯্রষ্টা প্রাণ দানের মাধ্যমে মানব জীবনকে যেমনি সম্মানিত করেছেন তেমনি জীবন হরণকে করেছেন নিষিদ্ধ। শরীয়তে কেবলমাত্র বিচারকের রায়ের মাধ্যমে কারো জীবন সংহার স্বীকৃত। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে- ‘আল্লাহ যে প্রাণ হত্যা নিষিদ্ধ করেছেন যথার্থ কারণ ব্যতিরেকে তাকে হত্যা করো না’। (বনী ইসরাইল-৩৩)
আল্লাহ তাআলা আরো বলেছেন-‘নরহত্যা অথবা পৃথিবীতে ধ্বংসাতœক কার্যকলাপের অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তি ব্যতিরেকে কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন পৃথিবীর সমগ্র মানবগোষ্ঠীকে হত্যা করলো’। (সূরা মায়েদা-৩২)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন- ‘যে ব্যক্তি কোন যিম্মীকে হত্যা করবে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত নিষিদ্ধ করে দেবেন’। (নাসাঈ শরীফ)
খ. সম্পদ ও সম্ভ্রম রক্ষার অধিকার
ইসলাম অথনৈতিক কর্মকান্ডে উৎসাহ দেয় এবং বৈধ উপায়ে উপার্জিত সম্পদের নিরাপত্তা বিধান করে। বৈধ উপার্জনের অধিকার, তার মালিকানা রক্ষা, হস্তান্তর, দান এবং তা ভোগ করার অধিকার ইসলাম দিয়েছে। অন্যায়ভাবে তা রোধ ও তসরুফ করাকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ঘোষাণা করা হয়েছে- ‘তোমরা পরস্পরের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না’। (সূরা বাকারা-১২৮)
অন্যদিকে প্রত্যেক নাগরিকের ইজ্জত-আবরু রক্ষার গ্যারান্টি দেওয়া ইসলামী রাষ্ট্রের অন্যতম গুরুত্ত্বপূর্ণ দায়িত্ব। মানুষের মর্যাদাহানি, হেয় প্রতিপন্ন করার জন্য নিন্দা, কুৎসা রটানো, বিদ্রুপ ও উপহাস করা, নাম ও উপাধি বিকৃত করাকে নিষিদ্ধ করে পবিত্র কোরআনে ঘোষণা এসেছে-‘তোমাদের কোন সম্প্রদায় অপর সম্প্রদায়কে হেয় প্রতিপন্ন করার উদ্দেশ্যে যেন বিদ্রুপ বা ঠাট্রা না করে’। (সূরা হুজরাত-১১)
এ প্রসঙ্গে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বিদায় হজ্বের ঐতিহাসিক ভাষণে বলেন-‘তোমাদের রক্ত (জীবন), তোমাদের সম্পদ এবং তোমাদের ইজ্জত-সম্মান তোমাদের উপর পবিত্র, যেমন পবিত্র তোমাদের আজকের এই দিন, তোমাদের এই শহর ও তোমাদের এই মাস’। (সহীহ বোখারী, ২য় খন্ড, পৃ-৬৩২)
গ. ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার
ইসলামের দৃষ্টিতে প্রত্যেক মানুষই জন্মগতভাবে স্বাধীন এবং এ স্বাধীনতা আল্লাহ কর্তৃক প্রদেয় নিশ্চয়তা। যে কোন ধরণের জোর জবরদস্তি ইসলামী রাষ্ট্রে সম্ভব নয়। ইসলামী নীতি অনুযায়ী কোন উপযুক্ত আদালতে আইনানুযায়ী দোষী সাব্যস্ত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে কারাদন্ড দেয়া যাবে না। আইনের সুস্পষ্ট বিধান ছাড়া কাউকে অন্যায়ভাবে গ্রেপ্তার, আটক বা বলপ্রয়োগ করা যাবেনা এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনে সমান সুযোগ থাকবে। বিচার কার্যক্রমে এ ন্যায়নীতি অনুসরণের ব্যপারে কোরআনের সুস্পষ্ট নির্দেশ-‘তোমরা যখন মানুষের মধ্যে বিচারকার্য করবে তখন ন্যায়পরায়নতার সাথে তা করবে’। (সূরা নিসা-৫৮)
এ প্রসঙ্গে ইমাম মালেক রহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেন-সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেপ্তার বা দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না এবং অভিযুক্ত ব্যক্তির আত্মপক্ষ সমর্থনে সুযোগ থাকবে।
(ড.ম.ই পাটোয়ারী ও মোঃ আখতারুজ্জামান, মানবাধিকার ও আইনগত সহায়তাদানের মূলনীতি, পৃ:০৫)
ঘ. নারীর অধিকার
নারীদের অধিকারের ব্যাপারে ইসলামই সর্বপ্রথম বাস্তব ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সম্পত্তির উত্তরাধিকার, বিবাহ ও সম্মান প্রভৃতি ক্ষেত্রে তাদের যথাযথ অধিকার সুনিশ্চিত করা হয়েছে। স্ত্রীর প্রতি আচরণ বিষয়ে পুরুষের উদ্দেশ্যে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-‘তোমরা তোমাদের সামর্থানুযায়ী যেরূপ গৃহে বাস কর, তাদেরকেও বসবাসের জন্য সেরূপ গৃহ দাও। তাদেরকে কষ্ট দিয়ে সংকটাপন্ন করো না’। (সূরা তালাক-০৬)
অন্যত্র বলা হয়েছে-‘নারীদের তেমনি ন্যায় সংগত অধিকার আছে যেমন আছে তাদের উপর পুরুষদের। কিন্তু নারীদের উপর পুরুষদের মর্যাদা আছে’। (সূরা বাক্বারা-২২৮)
ইসলাম মায়ের পদতলে সন্তানের জান্নাত ঘোষণায় নারীর মর্যাদাকে সমুন্নত করেছে। শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে নারীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত হওয়ার অধিকারেরও স্বীকৃতি দিয়েছে ইসলাম। আল্লাহ তাআলা এ ব্যাপারে বলেছেন-‘তোমরা তা কামনা করো না যা দ্বারা আল্লাহ তোমাদের কাউকে কারো উপর মর্যাদা প্রদান করেছেন, পুরুষদের জন্য রয়েছে ঐ অংশ যা তাদের অর্জন, আর নারীদের জন্যেও ঐ অংশ যা তাদের অর্জন’। (সূরা নিসা-৩২)
ঙ. সংখ্যা লঘুদের অধিকার
ইসলামী রাষ্ট্রে অমুসলিমদের ন্যায় সংগত অধিকার অক্ষুন্ন রাখা হয়েছে। ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের জীবন ও সম্পত্তি, ইজ্জত-সম্মান, চাকুরী ইত্যাদির নিরাপত্তার অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষা গ্রহণের অধিকার রয়েছে। মদিনা সনদে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মদিনায় বসবাসের অধিকার দিয়েছিল। এমনকি তাদের একটি অংশ বিশ্বাসঘাতকতা করা সত্তেও বাকী অংশের প্রতি অন্যায় আচরণ করা হয়নি। অমুসলিমদের ধর্মীয় উপাস্যদের নিন্দাবাদ ও গালমন্দকে কোরআন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে এভাবে-‘আল্লাহ ছাড়া অন্যান্য দেব-দেবীর উপাসনা যারা করে তাদের উপাস্যদের তোমরা গালাগাল দিয়ো না’।
(সূরা আনআম-১০৮)
রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-‘অমুসলিমদের জীবন আমাদের জীবনের এবং তাদের সম্পদ আমাদের সম্পদের মতোই’। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম আরো বলেছেন-‘সাবধান! যদি কেউ কোন মু’আহিদ (চুক্তিবদ্ধ অমুসলিম নাগরিক) এর প্রতি জুলুম করে বা তাকে তার অধিকার থেকে কম দেয় কিংবা সাধ্যাতিরিক্ত কোন কাজ তার উপর চাপিয়ে দেয় অথবা তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার থেকে কোন মালামাল নিয়ে যায়, তাহলে কিয়ামতের দিন আমি তার বিরুদ্ধে থাকবো’। (আবু দাউদ, সূত্র: মিশকাত পৃ:৩৫৪)
এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ইসলাম সংখ্যালঘুদের অধিকার সমুন্নত করেছে। তাইতো আল্লামা ইকবাল বলনে,
নবী মোস্তফার (দঃ) আনীত দ্বীন
সইে তো জেিন্দগীর প্রাণসত্তা,
এর ব্যাখ্যা প্রাণশক্ততি-ে
উজ্জীবতি থাকারই বলষ্ঠি উচ্ছলতা।’
প্রবন্ধের ক্ষুদ্র কলেবরে ইসলামে সর্বজনীন মানবাধিকারের ধারণার সবিস্তার আলোচনা উপস্থাপন সম্ভব নয়। মূলত: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম নেতৃত্বে প্রতিষ্ঠিত মদিনা রিপাবলিকে ৬২২ খ্রিষ্টাব্দে প্রণীত ইসলামী রাষ্ট্রের লিখিত সংবিধান Charter of Madina – এ জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলের অধিকার ও মর্যাদার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ইসলাম ঘোষিত সর্বজনীন, শাশ্বত ও চিরন্তন মানবাধিকারের নীতিসমূহ সর্বকালের ও সর্বযুগের বিপন্ন মানবতার মুক্তির আসল দিক-নির্দেশক। অন্যদিকে ইসলাম শুধুমাত্র মৌলিক মানবাধিকার সনদের ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত হয়নি বরং ইসলামের সোনালী ইতিহাসে তার সফল বাস্তবায়নও করেছে। তাই প্রতি বছর জাতসিংঘ ঘোষতি ১০ই ডসিম্বের আর্ন্তজাতকি মানবাধকিার দবিসে শোষণ-বঞ্চনার পরর্বিতে বশ্বিময় সকল মানুষরে অধকিার পুনঃপ্রতষ্ঠিতি হোক এই প্রত্যাশা সকলরে। তাই তো কবি বলনে,
‘মুসলমি তুমি হৃদয় রুদ্ধ করোনা দশেে
হয়োনা লুপ্ত নশ্বর এই বশ্বি শষে।
– আল্লামা ইকবাল
লেখক: প্রভাষক, ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগ, নোয়খালী সরকারী কলেজ, নোয়াখালী।