প্রশ্নোত্তর : অধ্যক্ষ মুফ্তী সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়র রহমান
মুহাম্মদ তাজুল ইসলাম, বি-বাড়িয়া।
প্রশ্ন: কেউ কেউ ওয়াজ-নসিহত মিলাদ-মাহফিল, ক্বোরআন তেলাওয়াত ও জমাআতে মাইক ব্যবহার করাকে হারাম ও শিরকে আকবর বলে ফতোয়া দিয়ে সরলপ্রাণ মুসলমানকে বিভ্রান্ত করছে-তারা বলে, যারা মাইক ব্যবহার করে তারা নাকি মুশরিক এবং তাদের নামায হবে না। এ সম্পর্কে কুরআন ও হাদিসের আলোকে সঠিক জবাব প্রদানের অনুরোধ রইল।
উত্তর: মাইক বা লাউড স্পিকার বক্তার বক্তব্য ও আওয়াজকে বৃদ্ধি করার ও দূরে পৌছানোর যন্ত্র। লাউড স্পিকার ও মাইকযোগে ওয়াজ-নসিহত, মিলাদ-মাহফিল, ক্বোরআন তেলাওয়াত ও বড় জমাআতে নামায আদায় করা তথা ইবাদত বন্দেগী শরীয়তসম্মত ও জায়েয। বর্তমান বিজ্ঞানময় বিশ্বে প্রচলিত ইবাদত-বন্দেগী, ক্বোরআন তেলাওয়াত ও নামাযের বড় জমাতে মাইকের প্রচলন সর্বত্র সমাদৃত যা নিয়ে নতুনভাবে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কোন প্রকার সুযোগ নেই। প্রযুক্তির উৎকর্ষতার বর্তমান এ সময়ে তা এড়িয়ে চলা কোনভাবে সম্ভবপর নয়। এ সকল বিজ্ঞানের আবিস্কার মানুষকে এনে দিয়েছে সহজতা। এগুলোর ব্যবহার ভাল কাজে মঙ্গলময় ও মন্দকাজে গুনাহ্। এটাই অধিকাংশ ফকিহগণের অভিমত। সাউন্ড বক্স বা মাইক যা শুধুমাত্র বক্তার বক্তব্য বা আওয়াজকে উঁচু বা বড় করার উদ্দেশ্যে আবিস্কার করা হয়েছে তা মূলতঃ আল্লাহ্ তা‘আলার বড় নেয়ামত ও দয়া। আল্লাহ্ তা‘আলা কর্তৃক প্রদত্ত জ্ঞানের বহিঃপ্রকাশ হলো বিজ্ঞানের আবিস্কারসমূহ যেমন বিদুৎ ফ্যান, টেলিফোন, টেলেক্স, ফ্যাক্স, ইমেইল, মোবাইল ফোন, অনলাইন ইত্যাদি। এসব কিছুই ভাল কাজে ও সৎ উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা বান্দার জন্য নেয়ামত ও মঙ্গলময়। ক্বোরআনুল করীমে আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন- هو الذى خلق لكم مافى الارض جميعًا অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা এমন সত্তা যিনি তোমাদের উপকারের জন্য যমীনের সবকিছু সৃষ্টি করেছেন- (সূরা বাক্বারা-২৯)। আসমান যমীনের অধিপতি একমাত্র আল্লাহ্ তা‘আলা। কুরআনুল হাকীমে তিনি আরো এরশাদ করেন- وسخرلكم ما فى السموات ومافى الارض جميعًا অর্থাৎ আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সবকিছুকে মহান আল্লাহ্ তোমাদের জন্য বশীভূত করে দিয়েছেন। (সূরা জাসিয়া, আয়াত-১৩) উল্লেখিত উভয় আয়াতে কারীমা হতে স্পষ্ট প্রতিয়মান যে, আসমান ও যমীনে যা কিছু আছে সব মহান রাব্বুল আলামীন তাঁর বান্দার কল্যাণে সৃজন করেছেন। নেক উদ্দেশ্যে ভাল কাজে এগুলোর ব্যবহার ভাল ও উত্তম। প্রিয়নবী হুযুর পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
بشروا ولاتنفروا يسّروا ولاتعسروا
ـ [صحيح مسلم ـ جلد ـ ২, صفحه ৮২]
অর্থাৎ তোমরা আল্লাহর বান্দাগণকে সুসংবাদ প্রদান কর, তাদেরকে বিতাড়িত করোনা, আর তাদের জন্য সহজপন্থা অবলম্বন কর, কষ্টে নিক্ষেপ করোনা। (সহীহ্ মুসলিম শরীফ-২য় খন্ড, পৃ. ৮২)।
মহান আল্লাহ্ তা‘আলা বান্দার সহজতা চান এবং কোন প্রকার সঙ্কীর্ণতা চান না।
পবিত্র কুরআনের এরশাদ- وما جعل عليكم فى الدين من حرجٍ অর্থাৎ আল্লাহ্ তা‘আলা দ্বীনের মধ্যে তোমাদের উপর কোন প্রকার কষ্ট ও সংকীর্ণতা রাখেননি। [সূরা-হজ্ব, আয়াত-৭৮]
অতএব, যতক্ষণ পর্যন্ত কোন বস্তুর ব্যবহারে শরয়ী নিষেধাজ্ঞা পাওয়া যাবে না বা ইসলামী শরীয়তের পরিপন্থী কাজে ব্যবহার করা হবে না ততক্ষণ পর্যন্ত তা হালাল এবং জায়েয হিসেবে বিবেচিত হবে। নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন- الحلال ما احل الله فى كتابه والحرام ما حرّم الله فى كتابه وما سكت عنه فهو مما عفا عنه [ابوداود شريف] অর্থাৎ হালাল ওই সকল বস্তু যা আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় কিতাবে (কুরআন মজিদে) হালাল (ঘোষণা) করেছেন এবং হারাম ওই (সকল) বস্তু যা মহান আল্লাহ্ তা‘আলা স্বীয় কিতাবে (কুরআন মজিদে) হারাম করেছেন এবং যে সব বিষয়ে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র কিতাবে প্রকাশ্যভাবে স্পষ্ট উল্লেখ করেন নাই তা ক্ষমাযোগ্য। তাছাড়া ইসলামী শরিয়তের অন্যতম উসূল বা ধারা হলো-اصل الاشياء الاباحة অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তুর মূল হলো বৈধ হওয়া। অতএব, যতক্ষণ পর্যন্ত কোন বস্তু কোরআন সুন্নাহ্ দ্বারা নিষেধ বা হারাম হওয়া প্রমাণিত হবে না ততক্ষণ তা বৈধ। যেহেতু ইবাদত-বন্দেগী, নামাযের বড় জমাতে, জুমা ও ঈদের নামাযে মাইক ও লাউড স্পিকারের ব্যবহার সম্পর্কে কুরআন শরীফে ও হাদীসে পাকে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই বরং ভাল ও মহৎ কাজে ভাল উদ্দেশ্য বা বান্দার উপকারে এটার ব্যবহার ভাল হওয়াকে বিশ্বের অধিকাংশ মুফতিগণের সমর্থন রয়েছে। তাই উপরোক্ত হাদীস শরীফের বর্ণনা মোতাবেক ইবাদত-বন্দেগীতে মাইকের ব্যবহার ভাল ও উত্তম হিসেবে স্বীকৃত। যেমন হাদীসে মরফূ বা হাদীসে মওকূফে এসেছে- ما راه المسلمون حسنا فهوعند الله حسن (الحديث(
অর্থাৎ মুসলমানগণ যা উত্তম ও ভাল হিসেবে দেখেন তা আল্লাহ্ তা‘আলার কাছেও ভাল ও প্রিয়। তাই এ হাদীসের আলোকে স্পষ্ট হয়ে যায় মাইক বা লাউড স্পিকারের মাধ্যমে কোরআনুল কারীমের তিলাওয়াত, আযান, ওয়ায-নসীহত, জিকির-আযকার করা বৈধ ও জায়েয এবং ইসলামী শরীয়তসম্মত। তদ্রুপ পঞ্জেগানা নামায ও জুমা-ঈদের বড় জামাতে মাইকের ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই। যেমন হেরেমাইন শরীফাইনসহ গোটা বিশ্বে নামাযের বড় জমাতে মাইক ব্যবহার করা হচ্ছে। সুতরাং বড় জামাতে মাইকের ব্যবহারকে কবিরা গুনাহ্, শিরকে আকবর বা হারাম ইত্যাদি বলে ফতোয়াবাজী করা গোমরাহী, সীমালঙ্ঘন, কপটতা, পাগলামী, মূর্খতা ও অজ্ঞতারই নামান্তার। ফেরকায়ে মাইকীয়া তথা ইবাদতে নামাযের বড় জমাতে মাইক ব্যবহারের বিরোধীরা তাদের ভ্রান্ত ধারণামতে যে সকল দলীল কুরআনুল করীম হতে পেশ করে থাকে, তা বাস্তবিকপক্ষে তাদের পাগলামী, জ্ঞান শূন্যতা ও অজ্ঞতারই বহিঃপ্রকাশ। যার সাথে মাইক ব্যবহারের সাথে নূন্যতম সম্পর্কও নাই। পবিত্র কুরআনে যেহেতু মাইক সম্পর্কিত সুস্পষ্ট কোন বর্ণনা বা আয়াতই উল্লেখ নেই। তদুপরি ওই সকল আয়াত থেকে ইবাদত বন্দেগীতে মাইকের ব্যবহারকে শিরক বা হারাম বলাটা কোরআন ও ইসলামী শীয়তের অপব্যাখ্যার শামিল। আর যারা পবিত্র কুরআনের মনগড়া অপব্যাখ্যা করে তাদের ঠিকানা জাহান্নাম। তবে নামাযের জামাত ছোট হলে এবং মাইকের ব্যবহারের বিশেষ প্রয়োজন না হলে তখন নামাযের ছোট জামাতে মাইকের ব্যবহার হতে বিরত থাকবে। এটাই হকপন্থী ওলামায়ে কেরামের ফয়সালা। আর জামাত বড় হলে অর্থাৎ মুসল্লিদের ইমামের অনুসরণে অসুবিধা ও ব্যাঘাত সৃষ্টি হলে তখন আযান ও ওয়াজ নসীহতের মত নামাযের বড় জামাতেও বিশেষ প্রয়োজনে মাইকের ব্যবহারে কোন অসুবিধা নেই বরং জায়েয। তবে সাথে মুকাব্বির নিয়োজিত থাকা উচিত। যাতে সুন্নাতও জারী থাকে এবং নামাযরত অবস্থায় বিদ্যুৎ চলে গেলে কিংবা মাইক বা লাউড স্পীকারে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দিলে নামায আদায়ে মুসল্লিদের ইমামের অনুসরণে সমস্যা বা ব্যাঘাত না ঘটে।
তদুপরি জামাতের বিশাল ও বড় জমাতে যেমন হজ্ব ও ওমরার মৌসূমে (রমজানুল মুবারকে) পবিত্র মসজিদুল হারাম ও মসজিদে নববীতে এবং জশনে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামারই বিশাল জামাতে শত শত মুকাব্বির নিয়োগ করলেও ইমাম সাহেবের অনুসরণ লাখো লাখো মুক্তাদীর জন্য দুস্কর হয়ে যায়। এমনকি হজ্বের সময় ও ঈদের জমাতে যখন মক্কা শরীফ ও মদিনা মনোয়ারায় মুসল্লির সংখ্যা অনেক বেড়ে যায় তখন চতুর্দিকে যে পর্যন্ত মাইকের আওয়াজ পৌঁছে মুসল্লিগণ ইমামের অনুসরণে ভালভাবে নামাযের জমাত আদায় করতে পারে আর যেখানে মাইকের আওয়াজ পৌঁছে না সেখানে অনেক মুকাব্বির হওয়ার পরেও রুকু-সাজদায় অনেক ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়, যা হাজীদের ও জশনে জুলুসে আগত মুসল্লিদের অজানা নয়।
হাদীস শরীফে রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেনلاضررولاضرار – অর্থাৎ কেউ নিজেও ক্ষতির শিকার হবে না এবং অন্য কারোর ক্ষতি করবে না। ইসলামী শরীয়তের অন্যতম ধারা হল- الفرريزال অর্থাৎ ক্ষতি বা অসুবিধা দূরিভূত করতে হবে। এটাই ইসলামী ফিকহের মৌলিক বিষয়। তাই নামাযের বড় ও বিশাল জমাতে ইমামের অনুসরণে রুকু-সাজদায় মুক্তাদিগণের যে অসুবিধা ও ব্যাঘাত সৃষ্টি হয় তা মাইক বা লাউড স্পীকারের মাধ্যমে দূরিভূত করা ইসলামী শরিয়তের পরিপন্থী নয় বরং ইসলামী শরিয়ত সম্মত। উপরোক্ত বিষয়ে এটাই ইসলামী শরিয়তের ফতোয়া ও ফয়সালা।
[কিতাবুল আশবাহ্ ওয়ান্নাযায়ের ফন্নে আউয়াল কৃত. ইমাম ইবনে নুজাইম মিসরী হানাফী রহ. ইত্যাদি]
বি.দ্র. এ ফতোয়া/ফয়সালার সাথে যাঁরা ঐক্যমত পোষণ করেছেন তাদের মধ্যে গাজ্জালিয়ে যামান উস্তাজুল ওলামা অধ্যক্ষ আল্লামা মোসলেহ উদ্দিন রহ., খতিবে মিল্লাত উস্তাযুল ওলামা অধ্যক্ষ আল্লামা জালাল উদ্দীন আলকাদেরী রহ., শেরে মিল্লাত শাইখুল হাদীস আল্লামা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী রহ., আনজুমান রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক আল্লামা আবদুল মান্নান, চট্টগ্রাম জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়ার প্রধান মুহাদ্দিস আল্লামা হাফেয সোলাইমান আনসারী ও প্রধান ফকিহ্ আল্লামা কাজী আবদুল ওয়াজেদ প্রমুখ অন্যতম। সুতরাং এ বিষয়ের প্রতি মহল বিশেষের বিভ্রান্তি ও পাগলামীর শিকার না হওয়ার জন্য মুসলিম মিল্লাতের বিশেষভাবে নিবেদন রইল। এ বিষয়ে পূর্বে বহুবার তরজুমানে আহলে সুন্নাত- প্রশ্নোত্তর বিভাগে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
আলহাজ্ব মুহাম্মদ আব্দুর রহিম
ভাটিয়ারী, সীতাকু-,চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: শাজরা শরীফে আছে ‘মা‘আফ করদে আয় খোদায়ে দোজাহাঁ মেরে গুনাহ্’ এখানে দো-জাহাঁনে আমাদের গুনাহ্ কি? দুনিয়াতে গুনাহের কাজ করছি কিন্তু উভয় জাহানে গুনাহ কি? এর সঠিক মর্মার্থ জানতে চাই।
উত্তর: ‘শাজরা শরীফ’ পাঠ করলে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম হতে শুরু করে মাশায়েখ হযরাতের নামের ওসীলা নিয়ে দোআ মুনাজাত করা তথা প্রকৃত আউলিয়ায়ে কেরামের নাম মুবারকের ওসীলায় দোয়া করলে ইনশাআল্লাহ্ দোয়া কবুল হয় এ আশা পোষণ করা যায়। প্রশ্নোল্লেখিত কবিতা/শাজরা শরীফের লাইন দু’টির সঠিক মর্মার্থ তুলে ধরা হলো- লাইন দু’টি এভাবে উদ্ধৃত রয়েছে। ‘‘মা‘আফ করদে আয় খোদায়ে দোজাহাঁ মেরে গুনাহ্’ সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ কুতুবুল আউলিয়াকে ওয়াস্তে’ যার সরল অর্থ-হে উভয় জাহানের আল্লাহ্! আমার গুনাহ্ ক্ষমা করে দাও, কুতুবুল আউলিয়া (অলিগণের কুতুব তথা মধ্যমণি) হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ্ (সিরিকোটি) আলায়হির রহমাহ্র ওসীলায়। সুতরাং উক্ত বাক্যের অংশ ‘খোদায়ে দু’জাহাঁ অর্থাৎ দু’জাহান তথা ইহকাল ও পরকালের মালিক আল্লাহ্। আশাকরি বিষয়টি নিয়ে ধোয়াশা ও বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।
মুহাম্মদ কুতুব উদ্দীন সাদা (রোকন)
পাইরোল (সাদা পাড়া), পটিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: ভাগ্য কখন লিপিবদ্ধ হয়, নেক আমল দ্বারা কি নির্ধারিত ভাগ্য পরিবর্তন হওয়া সম্ভব?
উত্তর: যে ৭টি মৌলিক বিষয়ে ঈমান আনয়ন করা আবশ্যক তন্মধ্যে একটি তাকদীরের উপর ঈমান রাখা ইসলামের মূল আক্বিদাসমূহের অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর উপর ঈমান আনা যেমন ফরয তেমনি তাকদীর তথা ভাল-মন্দ আল্লাহর হুকুমে সংগঠিত হয় তার উপর ঈমান আনাও ফরয। তকদীরের সবকিছু মহান আল্লাহর পক্ষ হতে সুনির্দিষ্ট ও লিপিবদ্ধ রয়েছে। যেমন- আল্লাহ্ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন- وكل شئٍ اخصينه كتابًا অর্থাৎ সব কিছু আমি (আল্লাহ্) লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করেছি। (সূরা নাবা, আয়া-২৯)
অপর আয়াতে মহান রব্বুল আলামীন ইরশাদ করেছেন- وخلق كل شئ فقدره تقديرًا অর্থাৎ তিনি প্রত্যেক বস্তু সৃষ্টি করে সঠিকভাবে তা নির্ধারণ করে রেখেছেন। (সূরা ফুরকান, আয়াত-২)
وكل شئ احصينه فى كتاب مبين অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তু আমি সুস্পষ্ট কিতাবে গণনা করে নির্ধারণ করে রেখেছি। (সূরা ইয়াসিন)
তাকদীরের ব্যাপারে আহলে সুন্নাতের আকীদা হলো- তাকদীরের সকল বিষয় মহান আল্লাহ্ তা‘আলা সৃষ্টিকুলের সৃষ্টির পূর্বেই স্থির করেছেন। মহান আল্লাহর এ স্থিরীকরণ বা নির্ধারণকে তাক্বদীর বলা হয়। (তালীকুস্ সবীহ্, ১ম খন্ড, ৬৮)
তাকদীর সম্পর্কে পবিত্র হাদীসে উল্লেখ রয়েছে- عن عبد الله بن عمرو قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم كتب الله مقادير الخلائق قبل ان يخلق السموات والارض بخمسين الف سنة قال وكان عرشه على الماء [رواه مسلم] অর্থাৎ প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে আমর রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- আসমান ও জমিন সৃষ্টির ৫০ (পঞ্চাশ) হাজার বছর পূর্বে মহান আল্লাহ্ সমগ্র সৃষ্টির তাক্বদীর সমূহকে স্থির করে রেখেছেন, আর তখন আল্লাহর আরশ ছিল পানির ওপর।
(সহীহ্ মুসলিম শরীফ ও মিশকাত শরীফ)
হাদীস পাকে আরো উল্লেখ রয়েছে- প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- اذا قضى الله لعبد ان يموت بارض جعل له اليها حايجةً – অর্থাৎ যে কোন বান্দার মৃত্যুর স্থান যেই জমিনে আল্লাহ্ নির্ধারণ করে রেখেছেন (ঐ বান্দা তথায় অবস্থান না করলেও) ঐ স্থানে আল্লাহ্ তা‘আলা তার যাওয়ার আবশ্যকতা সৃষ্টি করে দেন। (মুসনদে আহমদ ও জামে তরিমযি)
উপরোক্ত বর্ণনা হতে সুস্পষ্ট প্রমাণিত যে, তাকদীর যা আল্লাহ্ তা‘আলা নির্ধারণ করেছেন তা পরিবর্তন হয় না। তার নাম কাজায়ে মুবরম। যেমন- আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন- فاذا جاء اجلهم لا يستأخرون ساعة ولا يستقدمون অর্থাৎ যখন তাদের প্রতিশ্রুতি (মৃত্যু) এসে যাবে, তখন এক মুহূর্ত ও দেরী হবে না এবং আগেও হবেনা। (সূরা আরাফ-, আয়াত-৩৪)
আর যে তাকদীর বা যা কিছু আল্লাহ তাআলা কোন কিছুর সাথে মুয়াল্লাক বা সংযুক্ত করেছেন তাকে ‘কাজায়ে মুয়াল্লাক বলা হয়। এটা বিভিন্ন অসিলায় পরিবর্তন হতে পারে। যেমন পবিত্র কুরআন মজিদে উল্লেখ রয়েছে- يمحو الله مايشاء ويشبت وعنده ام الكتاب অর্থাৎ আল্লাহ্ যা চান নিশ্চিহ্ণ করেন এবং যা চান প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তাঁর নিকট রয়েছে মূল কিতাব। এ কারণে নবী-অলি-গাউস, কুতুব, আবদাল, শহীদ ও প্রকৃত ঈমানদারের দোয়া ও সুনজরে অনেক বান্দার তাকদির পরিবর্তন হয়েছে যা কোরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। তবে কানযুল উম্মালে বর্ণিত হাদিসের দ্বারা আরো বুঝা যায় যে, নেক্কার বান্দাগণের দোয়ায় মহান আল্লাহর ইচ্ছায় তাকদিরে মবরমও পরিবর্তন হয়ে যায়। সুনানে ইবনে মাজা শরীফে বর্ণিত আছে- রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- لايزيد فى العمر الا البرّ ولايرد القدر الا الدعاء অর্থাৎ বান্দার হায়াত নেককর্মের মাধ্যমে বৃদ্ধি হয় আর নেককার বান্দাদের দোয়ায় তাকদির পরিবর্তন হয়ে যায়।
অবশ্য তাকদিরের ভাল-মন্দের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা প্রত্যেক মুসলমানদের উপর ফরয, সাথে সাথে তাকদির সম্পর্কে বেশী ও অযথা প্রশ্ন করাও নিষিদ্ধ। এটা অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়।
প্রশ্ন: ইসলামের দৃষ্টিতে একজন প্রকৃত মু’মিনের মর্যাদা জানানোর জন্য অনুরোধ রইল।
উত্তর: প্রকৃত মু’মিন নর-নারী আল্লাহর প্রিয়পাত্র। যারা ঈমান গ্রহণের পর দুনিয়াতে আল্লাহকে ভয় করে, তাঁর বিধান মেনে চলে; তারাই পরকালের স্থায়ী জীবনে সুউচ্চ মর্যাদার অধিকারী। মু’মিনের পরিচয় তুলে ধরে পবিত্র কুরআন মাজিদে একটি স্বতন্ত্র ‘সূরাতুল মু’মিনুন’ নামক সূরা আল্লাহ্ তা‘আলা নাযিল করেছেন। ঈমানের শর্তসমূহ পরিপূর্ণভাবে বাস্তবায়নের মাধ্যমে মু’মিন ব্যক্তি তার মর্যাদায় অধিষ্ঠিত হন। মু’মিনগণ প্রতিটি কাজে আল্লাহর সাহায্য প্রাপ্ত হন। আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন- وكان حقًّا علينا نصر المؤمنين -অর্থাৎ প্রকৃত মুমিনদের সাহায্য করা আমার (আল্লাহর) দায়িত্ব।
(সূরা রূম-,আয়াত-৪৭)
আল্লাহ্ তা‘আলা অপর আয়াতে মুমিনকে বন্ধু হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন- ان اولى الناس بابراهيم للذين اتبعوه
وهذا النبى والذين امنوا والله ولى المؤمنين
অর্থাৎ নিশ্চয় সমস্ত লোকের মধ্যে হযরত ইব্রাহীমের অধিকতর হকদার তারাই, যারা তাঁর অনুসারী হয়েছে এবং এ প্রিয় শ্রেষ্ঠ নবী ও ঈমানদারগণ! আর ঈমানদারদের বন্ধু/অভিভাবক হচ্ছেন আল্লাহ্।
(আলে ইমরান-৬৮নং আয়াত)
পবিত্র কুরআনের অপর আয়াতে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন- انّ الله مع المؤمنين অর্থাৎ- নিশ্চয় আল্লাহ্ মু’মিনদের সাথে আছেন।
(সূরা আনফাল, আয়াত-১৯)
পবিত্র হাদীসে পাকে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম মু’মিন বান্দার মহান মর্যাদার কথা উল্লেখ করে ইরশাদ করেন- قال رسول الله صلى الله عليه وسلم انا اولى بكل مؤمن من نفسه (رواه ابو داود) অর্থাৎ রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি প্রত্যেক মু’মিনের জন্য তার নিজ প্রাণের চেয়েও অধিক নিকটবর্তী। (আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং-২৯০০)
নিঃসন্দেহে পরকাল হলো মুমিনের জন্য অত্যন্ত আনন্দের ও সুখের এবং দুনিয়া হলো জেলখানা। এ প্রসঙ্গে প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- الدنيا سجن المؤمن وجنة للكافر অর্থাৎ দুনিয়া মুমিনের জন্য কয়েদখানা এবং কাফেরের জন্য জান্নাত। (সুনানে ইবনে মাযাহ্, হাদীস নং- ৪১১৩)
প্রকৃত ঈমানদারের ইনতিকালের পর তাঁর রূহ বহনের জন্য ফেরেশতারা প্রতিযোগিতা করেন এবং রহমতও প্রেরণ করেন। যেমন প্রিয়নবী রাসূলে করীম সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-اذا خرج روحه صلى عليه كل ملك بين الماء والارض وكل ملك فى السماء وفتحت له ابواب السماء ليس من اهل باب الا وهم يدعون الله ان يعرج بروحه من قبلهم অর্থাৎ যখন তার (মুমিনের) রূহ বের হয়ে যায়, জমিনের ও আকাশের সব মালায়িকাহ্ বা ফেরেশতারা তাঁর (মুমিনের) ওপর রহমত প্রেরণ করে থাকেন। তাঁর জন্য আসমানের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়। প্রত্যেক আসমানের দরজার ফেরেশতা আল্লাহ্ তা‘আলার কাছে এ মুমিনের রুহ তাঁর পাশ দিয়ে আসমানের দিকে নিয়ে যাওয়ার আবেদন ও প্রার্থনা জানায় (যাতে সেই ফেরেশতা মুমিনের রূহের সাথে চলার মর্যাদা লাভ করতে পারেন)
(মিশকাত শরীফ, হাদীস নং-১৬৩০, মুসনদে আহমদ-১৮, ৫৩৪, জামে আস সগীর-১৬৭৬, হাদিস ইত্যাদি)
সর্বোপরি পবিত্র কুরআনে করীমে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা তাকওয়া অর্জনকারী মু’মিন মুত্তাকীদের জন্য মাগফিরাত ও ক্ষমার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেছেন- ياايها الذين امنوا ان تتقوا الله يجعل لكم فرقانًا ويكفِّرعنكم سيئاتكم ويغفرلكم والله ذوالفضل العظيم অর্থাৎ হে মু’মিনগণ! তোমরা যদি আল্লাহকে ভয় করতে থাক, তবে তিনি তোমাদের মধ্যে ফায়সালা করে দেবেন, তোমাদের পাপসমূহ মোচন করবেন এবং তোমাদের ক্ষমা করবেন। বস্তুত আল্লাহ্ বড়ই অনুগ্রহশীল। (সূরা আলফাল)
অপর একটি হাদীসে পাকে উল্লেখ রয়েছে-عن ابى الدرداء عن النبى صلى الله عليه وسلم قال ان اثقل شئ يوضع فى ميزان المؤمن يوم القيامة خلق حسن وان الله يبغض الفاحش … (رواه ترمذى) অর্থাৎ প্রখ্যাত সাহাবী হযরত আবু দরদা রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু হতে বর্ণিত, প্রিয়নবী রাসূল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, কিয়ামতের দিন মু’মিনের পাল্লায় সর্বাপেক্ষা ভারী যে জিনিসটি রাখা হবে, তাহল উত্তম চরিত্র। আর আল্লাহ্ তা‘আলা অশ্লীল ব্যক্তি ও দুশ্চরিত্রগণকে ঘৃণা করেন। (তিরমিযী শরীফ, মিশকাত শরীফ, হাদিস নং-৫০৮১)
উপরোক্ত আলোচনা হতে একজন সত্যিকার প্রকৃত মুমিনের সম্মান-মর্যাদা কত বিশাল তা ফুটে উঠেছে। একজন মুমিনের জন্য দুনিয়া ও আখিরাত উভয় জাহান কল্যাণময়। এজন্যই প্রিয়নবী রাসূলে মাকবুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, একজন মু’মিন ব্যক্তির জানমাল আল্লাহর কাছে কা’বা শরীফের চেয়েও অধিক মর্যাদাবান। এ জন্য আমরা মু’মিনদের ব্যাপারে সর্বদা ভাল ধারণা পোষণ করি।
(ইবনে মাজাহ্ শরীফ, ২য় খন্ড, ১৮৩০)
পরম করুণাময় আল্লাহ্ তা‘আলা এরশাদ করেন- قد افلح المؤمنون অর্থাৎ- প্রকৃত মুমিন (ইহ-পরকালে) সফল কাম। (সূরা মুমেনুন, আয়াত-১)
আল্লাহ্ তা‘আলা সবাইকে প্রকৃত মুমিন হিসেবে জীবন যাপন করার এবং ইহকাল-পরকালে মর্যাদার অধিকারী হওয়ার তাওফিক দান করুন! ‘সূরা ওয়াত্তীন’ এ এরশাদ হয়েছে-الا الذين امنوا وعملوا الصالحات فلهم اجر غير ممنون অর্থাৎ কিন্তু যারা ঈমানদার ও নেক আমল করেছে, তাঁদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহান পুরস্কার।
এভাবে ঈমানদার বান্দার শান-মান ও মর্যাদা বিষয়ে কোরআন-হাদীসে অনেক বর্ণনা এসেছে। বিস্তারিত আলোচনা করলে কলেবর অনেক লম্বা হয়ে যাবে। যা আলোচনা করা হয়েছে জ্ঞানী ও বিবেকবানের জন্য যথেষ্ট। আল্লাহ্ তা সবার বুঝার শক্তি দান করুন।
মণিরা আরজু
গোবিন্দারখীল, পটিয়া, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: কাদিয়ানী কারা? এদের চেনার উপায় কি? এদের সঙ্গে আমরা (সুন্নীদের) সম্পর্ক রাখা যাবে কিনা? আত্মীয়তা করা যাবে কিনা?
উত্তর: পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের গুরুদাসপুরের অন্তর্গত কাদিয়ান নিবাসী মীর্জা গোলাম আহমদ কাদিয়ানী (জন্ম: ১৮৩৫ইং, মৃত্যু: ১৯০৮ইং) ভন্ডনবী, নুবুয়তের মিথ্যা দাবীদার, প্রতারক ও মুনাফিক কর্তৃক প্রবর্তিত মতবাদকে কাদিয়ানী মতবাদ বলা হয়। যারা সে মতবাদ ধারণ করে তারাই হলো কাদিয়ানী। আর এ মতবাদের ব্যাপারে মুসলিম বিশ্বের সমস্ত মুহাক্বক্বিক্ব দীনদার আলেম-ওলামা, ফক্বীহগণ ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে ফতোয়া প্রদান করেছেন যে, কাদিয়ানী মতবাদ হলো কুফরী মতবাদ। কাদিয়ানীদের কুফরী আক্বীদাসমূহের মধ্যে মারাত্মক বদ আক্বিদা হলো, তারা আমাদের প্রিয়নবী শফিউল মুযনিবীন, রাহমাতুল্লিল আলামীন, খাতেমুন নাবীয়্যীন হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লামকে শেষ নবী হওয়া স্বীকার করে না। অথচ পবিত্র কুরআন মজীদে এ ব্যাপারে রাব্বুল আলামীন চূড়ান্ত ফায়সালা প্রদান করে ইরশাদ করেছেন- مَا كَانَ مُحَمَّدٌ اَبَا اَحَدٍ مِّنْ رِجَالِكُمْ وَلَكِنْ رَّسُوْلَ اللهِ وَخَاتَمَ النَّبِيِّيْنَ (سورة الاحزاب) অর্থাৎ হযরত মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম তোমাদের পুরুষদের কারো পিতা নন; বরং তিনি হলেন আল্লাহর প্রিয় রসূল ও সর্বশেষ নবী।’’ (সূরা আহযাব, ৪০নং আয়াত)
যেহেতু প্রিয় নবীর সকল পুত্র সন্তান অল্পবয়সেই ইনতেকাল করেছেন, তাই আল্লাহ্ তা‘আলা বলেছেন, তোমাদের পুুরুষদের কারো আমার নবী পিতা নন। কোন সুন্নী মুসলমান কাদিয়ানীদের কুফরী/মতবাদ পোষণকারী ব্যক্তির সাথে সম্পর্ক রাখতে পারে না। তাদের সাথে চলা-ফেরা, আত্মীয়তা ইত্যাদি করা যাবে না। সুতরাং কাদিয়ানীদের কুফরী মতবাদের ব্যাপারে মানুষকে তথা সরল সোজা মুসলমানদের সচেতন হতে হবে এবং নিজের ঈমান-আক্বিদাকে এদের প্রতারণা হতে হেফাজত রাখতে হবে।
প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তির কাপড় গোসল ও দাফনের পর ব্যবহৃত জিনিষ, যথা-সাবান, কাপুর, আতর এবং কাফনের অতিরিক্ত কাপড় ঘরের সদস্যরা ব্যবহার করতে পারবে কিনা?
উত্তর: মৃত ব্যক্তির ব্যবহৃত জিনিষ-পত্র, কাপড়-চোপড়, পরিবারের সদস্যগণ ব্যবহার করতে পারবে। এতে কোন অসুবিধা নাই। তবে পরিবারের জীবিত সদস্যরা ইচ্ছা করলে মৃত ব্যক্তির কবরে সওয়াব পৌঁছানোর জন্য এলাকার গরিব-অসহায়দেরকে মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তাঁর ব্যবহৃত কাপড়-চোপড় ইত্যাদি দান, সদকা করতে পারবে। এতে কোন প্রকার অসুবিধা নেই।
এস.এম. সিরাজুল ইসলাম নেকী
লালখান বাজার, খুলশী, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: মৃত ব্যক্তিকে ঘর থেকে বের করার সময় ১০ কদম করে ৪০ কদম নেওয়ার কারণ, খাটিয়া বহন করে কবরের দিকে নেওয়ার নিয়ম কি? কবরে খেজুর পাতাযুক্ত ঢাল ব্যবহার ও কবরে তিনদিন পর্যন্ত পানি ছিটানোর কারণ কী? এ সম্পর্কে শরীয়তের আলোকে বিস্তারিত জানালে উপকৃত হবো।
উত্তর: পঞ্জেগানা নামাযসহ জানাযার নামাজের নিয়ত মুখে উচ্চারণ করা উত্তম ও জায়েয-তবে মনে মনে নিয়ত স্মরণ করাও জায়েয। কুল বা বরই পাতা দিয়ে মৃত ব্যক্তির গোসলের পানি সিদ্ধ করা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার সুন্নাত। এটা হাদীসে পাক দ্বারা প্রমাণিত। হানাফী মাযহাব মতে মৃত ব্যক্তির খাটিয়া ৪ জনে বহন করে পর্যায়ক্রমে ৪০ কদম হাটা মুস্তাহাব এবং সম্মানিত সাহাবী ও তাবেঈগণের সুন্নাত। যেমন-سن فى حمل الجنازة اربعة من الرجال كذا فى شرح النقاية للشيخ ابى المكارم اذا حملوه على سرير اخذوه بقوائمه الاربع به وردت السنة كذا فى الجوهرة النيرة ثم ان فى حمل الجنازة سنتين نفس السنة وكمالها اما نفس السنة ان تأخذ بقدائهما الاربع على طريق التعاقب بان تحمل من كل جانب عشر خطوات وهذا يتحقق فى حق الجمع واما كمال السنة فلا يتحقق الا فى واحد وهو ان يبدأ الحامل ويحمل يمين مقدم الجنازة كذا فى التتارخانية والتبيين অর্থাৎ জানাযার খাট ৪ জন ব্যক্তি বহন করা সুন্নাত। যা শায়খ আবীল মাকারীম এর ‘শরহে নেকায়া’ নামক ফিকহ গ্রন্থে উল্লেখ আছে। যখন জানাযার খাট উঠাবে তখন তার ৪টি পায়া ধরে উঠানো সুন্নাত। এটা আল মুখতাচারুল কুদুরীর ব্যাখ্যা গ্রন্থ জাওহারাতুন্ নাইয়ারা গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। এটার ১টি হচ্ছে মূল সুন্নাত ও অপরটি হচ্ছে কামালে সুন্নাত। মূল সুন্নাত হচ্ছে ‘খাটিয়ার চার পায়া এভাবে পালা করে ধরে বহন করবে। প্রত্যেক দিক হতে ১০ কদম চলবে। এ সুন্নাত সকল ব্যক্তি আদায় করতে পারবে। আর কামাল সুন্নাত হলো খাট বহনকারী প্রথম ব্যক্তি মাথার দিকের ডান পায়া ধরবে এবং ডান কাঁধের উপর রাখবে। তারপর পায়ের দিকে ডান পায়া ডান কাঁধের উপর রাখবে। তারপর মাথার দিকের বাম পায়া বাম কাঁধের উপর রাখবে। তারপর পায়ের দিকের বাম পায়া বাম কাধের উপর রাখবে। এ সুন্নাত একজনই আদায় করতে পারে। এমনটি তাতারখানিয়া ও তাবেঈন কিতাবে উল্লেখ রয়েছে।
(ফতোয়ায়ে আলমগিরী, ১ম খন্ড, পৃ. ১৭৮)
জানাযার খাটিয়া বহন করার ব্যাপারে উল্লেখ আছে- عن واثلة بن الاسقع قال قال رسول الله صلى الله عليه وسلم من حمل بجوانب السرير الاربع غفرله اربعون كبيرة (ابن عساكر) অর্থাৎ হযরত ওয়াছিলা ইবনে আসকা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এরশাদ করেছেন যে সকল লোক জানাযার খাটিয়া বহন করবে, তার ৪০টি কবিরা গুনাহ্ মাফ করা হবে।
(তারীখে দামেস্ক, কৃত. ইমাম ইবনে আসাকির রহ.)
কাফনের ক্ষেত্রে মহিলার জন্য ৫টি কাপড় এবং পুরুষের জন্য ৩টি কাপড় দেয়া সুন্নাত। মৃত ব্যক্তিকে কবরে নামানোর সময়- بسم الله وعلى ملة رسول الله ‘বিসমিল্লাহি ওয়া আলা মিল্লাতি রাসূলিল্লাহ্ দোয়াটি পড়বে। দাফনের সময় চেহেরা কিবলামুখী করে দেয়া উত্তম। আর দাফনের পর জিয়ারত ও কবর তালক্বীন করা সুন্নাত। কবরের উপর কাঁচা খেজুরের ঢাল দেয়াও সুন্নাত। যা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লামার নূরানী আমল হতে প্রমাণিত।
হযরত জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রহ. ‘শরহুচ সুদুরে’ জিয়ারত ও তালকিনসহ উপরোক্ত বিষয়াদি সম্পর্কে হাদীসে পাকের আলোকে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন যা তরজুমানের বিভিন্ন সংখ্যায় প্রশ্নোত্তর বিভাগে ও আমার রচিত যুগ-জিজ্ঞাসায়ও আলোচনা করা হয়েছে। এসব বিষয়ে আপত্তি ও প্রশ্ন করে সাধারণ মুসলমানকে বিভ্রান্ত করা অজ্ঞতা ও মুর্খতার নামান্তর।
মুহাম্মদ আকিব, ফিরিঙ্গবাজার, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: কোন মুসলমান তার চিকিৎসার জন্য অন্যান্য মুসলমান থেকে সাহায্য পাওয়া সত্ত্বেও প্রতিবেশি অমুসলিম থেকে অর্থ সাহায্য (ঋণ/ধার নয়) চাইতে পারবে কিনা? এরূপ করলে আখিরাতে ওই অমুসলিমকে প্রতিদান দিতে হবে কিনা? অমুসলিম থেকে (ঋণ/ধার) সাহায্য (অফেরৎযোগ্য) চাওয়া যাবে কিনা?
উত্তর: আন্তরিক বন্ধুত্ব ব্যতীত অমুসলিমদের সাথে ব্যবসা/বাণিজ্য, লেন-দেন ইত্যাদি ইসলামে নাজায়েয নয় বরং বৈধ। মুসলিম হিসেবে অপর মুসলিম ভাইয়ের কাছ থেকে সাহায্য নেয়া উত্তম। তবে একান্ত অপারগতায় ও বিশেষ প্রয়োজনে পরিচিত অমুসলিম, বিধর্মী হতে টাকা কর্জ ও ধার নেয়াতে কোন অসুবিধা নেই। কোন ব্যক্তির হক তাকে বা তার ইন্তেকালের পর তার আওলাদকে ফিরিয়ে না দিলে পরকালে তার প্রতিদান উক্ত ব্যক্তিকে তার নেক আমলসমূহ হতে নিয়ে নেওয়া হবে। যা হাদীস শরীফ দ্বারা প্রমাণিত। একজন মুসলিম হিসেবে অমুসলিমের কাছে প্রশ্নে উল্লেখিত এরূপ সাহায্য না চাওয়াই শ্রেয়। তবে অপরাপর মুসলিমদেরও উচিত কোন মুসলিম বিপদগ্রস্ত ও অভাবী হলে তার সাহায্যার্থে এগিয়ে আসা। এটা একান্ত কর্তব্য ও দায়িত্ব।
প্রশ্ন: শহর এলাকায় কোন কোন কলোনীতে মুসলিম/অমুসলিম পাশাপাশি কক্ষ নিয়ে বসবাস করতে হয়। পাশাপাশি থাকার কারণে তাদের সাথে উঠা-বসা, মায়া মমতার বন্ধন তৈরি হয়। সুতরাং নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কোন বিধর্মী হতে চাওয়া, লেন-দেন করা ইত্যাদি যাবে কিনা? এ ব্যাপারে শরীয়তের ফায়সালা জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: হিন্দু-বৌদ্ধসহ যে কোন কাফির-মুশরিকদের সাথে পার্থিব প্রয়োজনীয় লেনদেন, ব্যবসা-বাণিজ্য, কর্জ-ধার ইত্যাদি ছাড়া আন্তরিক বন্ধুত্ব স্থাপন করা, তাদের সাথে সদা-সর্বদা উঠা-বসা, চলাফেরা, খাওয়া-দাওয়া, দৈনন্দিন জীবনের সুখ-দুঃখ বিনিময় করা, তাদের সাথে কোন মুসলমানদের আনন্দ, মজাক ও খেলাধুলায় মেতে উঠা ইত্যাদি একজন সত্যিকার প্রকৃত মুসলমানের জন্য নাজায়েয বা অবৈধ। এতে ঈমান নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
মহান আল্লাহ্ তা‘আলা কুরআন মজীদে এ প্রসঙ্গে এরশাদ করেন- وَ اِمَّا یُنْسِیَنَّكَ الشَّیْطٰنُ فَلَا تَقْعُدْ بَعْدَ الذِّكْرٰى مَعَ الْقَوْمِ الظّٰلِمِیْنَ অর্থাৎ শয়তান যদি তোমাকে ভুলিয়ে দেয় সুতরাং স্মরণ হওয়া মাত্রই জালিমদের (কাফিরদের) সাথে বসো না।
(সূরা আনআম, আয়াত-৬৮)
পবিত্র কুরআন মজীদে অপর আয়াতে আল্লাহ্ পাক এরশাদ করেন-فَمَنْ اَظْلَمُ مِمَّنْ كَذَبَ عَلَى اللّٰهِ وَ كَذَّبَ بِالصِّدْقِ اِذْ جَآءَهٗؕ-اَلَیْسَ فِیْ جَهَنَّمَ مَثْوًى لِّلْكٰفِرِیْنَ অর্থাৎ তার চেয়ে বড় জালিম কে আছে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যারোপ করেছে এবং তার কাছে সত্য আসার পর সত্যকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, দোযখ কি কাফিরদের ঠিকানা নয়? নিশ্চয়। (সূরা জুমার, আয়াত-৩২)
সুতরাং বুঝা গেল যে, মুশরিক ও কাফিরগণ হল বড় জালিম, আর যেখানে জালিমদের সাথে ওঠাবসা করতে নিষেধ করা হয়েছে, সেখানে তাদের সাথে দোস্তী-বন্ধুত্ব করা তো আরো মারাত্মক অপরাধ।
তাছাড়া হুযূর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- من جامع المشرك وسكن معه فيه مثله অর্থাৎ যে ব্যক্তি মুশরিকের সাথে মিলিত হবে এবং তার সাথে সহাবস্থান করে সেও মুশরিকের অনুরূপ।
(সুনানে আবু দাউদ শরীফ, হাদীস নং- ২৪৫০, কিতাবুল জিহাদ)
হুযূর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- لانصاحب الا مؤمنا ولا ياكل طعامك الا ثقىٌ অর্থাৎ ঈমানদার ছাড়া অন্য কারো সাথে বন্ধুত্ব করোনা, আর তোমার খাদ্য নেক্কার ছাড়া অন্য কেউ যেন আহার না করে বা অন্য কাউকে খেতে দিওনা। (মুসনাদে আহমদ, তিরমিজি ও রিয়াজুস্ সালেহীন, ৩৬৬)
অভিজ্ঞতা সাক্ষ্য দেয় যে, বিধর্মীদের সঙ্গে এক সাথে প্রায় পানাহার করা ও তাদেরকে ভালবাসা বন্ধুত্ব সৃষ্টি করে আর কাফিরদের সাথে বন্ধুত্ব হত্যাকারী বিষতুল্য। মহান আল্লাহ্ তা‘আলা পবিত্র কুরআনের এরশাদ করেন-ومن يتولهم منكم فانه منهم অর্থাৎ তোমাদের মধ্যে যে তাদের (কাফিরদের) সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদের মধ্যে গণ্য হবে। (সূরা মায়েদা, আয়াত-৫১)
হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন- المرء مع من احب অর্থাৎ মানুষ দুনিয়াতে যার সাথে বন্ধুত্ব করবে, তার সাথে তার হাশর হবে।
(সহীহ্ বুখারী শরীফ ও মুসলিম শরীফ, ৬১৬৯ ও ২৬৪০ হাদীস)
সুতরাং হিন্দু-বৌদ্ধ, ইহুদী-খ্রিস্টানসহ সকল বিধর্মী কাফির-মুশরিকদের সাথে সখ্যতা-বন্ধুত্ব করা নাজায়েজ ও গুনাহ্। হ্যাঁ, পার্থিব লেন-দেন, ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থে তাদের সাথে প্রকাশ্যে সদ্ভাব বজায় রাখা জায়েয বা বৈধ। হিন্দু-বৌদ্ধসহ সকল কাফির-মুশরিকদের জবাইকৃত পশুর মাংস খাওয়া নাজায়েয বরং হারাম। এ ছাড়া অন্যান্য হালাল ও পবিত্র বস্তু ফল-ফ্রুট ও চা-নাস্তা তাদের ঘর, দোকান বা অফিসে খাওয়া বা গ্রহণ করা প্রয়োজন বশতঃ জায়েয ও বৈধ। তবে সাধ্য অনুযায়ী বিধর্মীদের ঘরে খাওয়া-দাওয়া ও ওঠা-বসা ইত্যাদি থেকে বিরত থাকাই উত্তমপন্থা ও নিরাপদ।
কাফির-মুশরিক ও বিধর্মীদের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপন না করা প্রসঙ্গে পবিত্র কালামে মজীদে মহান আল্লাহ্ তা‘আলা আরো এরশাদ করেন- لَا یَتَّخِذِ الْمُؤْمِنُوْنَ الْكٰفِرِیْنَ اَوْلِیَآءَ مِنْ دُوْنِ الْمُؤْمِنِیْنَۚ-وَمَنْ یَّفْعَلْ ذٰلِكَ فَلَیْسَ مِنَ اللّٰهِ فِیْ شَیْءٍ اِلَّاۤ اَنْ تَتَّقُوْا مِنْهُمْ تُقٰىةًؕ-وَ یُحَذِّرُكُمُ اللّٰهُ نَفْسَهٗؕ-وَ اِلَى اللّٰهِ الْمَصِیْرُ অর্থাৎ মুমিন কাফিরদেরকে (বাহ্যিক লেনদেন ছাড়া অন্য কোন বিষয়ে) বন্ধু বানাতে পারে না মুমিনকে বাদ দিয়ে। অতঃপর যে (কোন মুমিন) এ রকম করবে অর্থাৎ মুমিনকে বাদ দিয়ে কাফিরদেরকে বন্ধু বানাবে আল্লাহর সাথে তাঁর কোন সম্পর্ক থাকবে না।
(সুরা আলে ইমরান, আয়াত-২৮)
অতএব, বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া হিন্দু, বৌদ্ধ তথা যে কোন কাফির-মুশরিক ও বিধর্মীদের সাথে আন্তরিকতাপূর্ণ বন্ধুত্ব স্থাপন করা যাবে না বরং তাদের বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া ও আহার গ্রহণ করা সম্পর্কে সজাগ ও সতর্ক দৃষ্টি রাখা অত্যন্ত জরুরি। এটাই কুরআন সুন্নাহ্ তথা ইসলামী শরীয়তের ফয়সালা।
(সহীহ্ বুখারী শরীফ, জামে তিরমিজি,
সুনানে আবু দাউদ, মুসনদে আহমদ ও যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি)
দু’টির বেশি প্রশ্ন গৃহীত হবেনা একটি কাগজের পূর্ণপৃষ্ঠায় প্রশ্ন লিখে নিচে প্রশ্নকারীর নাম, ঠিকানা লিখতে হবে প্রশ্নের উত্তর প্রকাশের জন্য উত্তরদাতার সাথে ব্যক্তিগত যোগাযোগ বাঞ্ছনীয় নয়। প্রশ্ন পাঠানোর ঠিকানা: প্রশ্নোত্তর বিভাগ, মাসিক তরজুমান, ৩২১, দিদার মার্কেট (৩য় তলা), দেওয়ান বাজার, চট্টগ্রাম-৪০০০।