মুহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাসুম
প্রত্যেক মানুষই মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। মৃত্যুর পরে আল্লাহর সামনে সবাইকে উপস্থিত হতে হবে। সেই মহান উপস্থিতির দিনকেই বলা হয় কিয়ামত দিবস। কিয়ামতের ময়দানের সেই কঠিন মুহূর্তের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মানবমন্ডলীকে লাল শ্বেত মিশ্রিত এমন এক সমতল ভূমিতে একত্র করা হবে, যেন তা পরিচ্ছন্ন আটার রুটির মতো। ওই জমিনে কারো (বাড়ি-ঘরের বা অন্য কিছুর) চিহ্ন থাকবে না। ঐ দিবসের ভয়াবহতা সম্পর্কে আল্লাহ্ তায়ালা ইরশাদ করেন-
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اتَّقُوْا رَبَّكُمْۚ-اِنَّ زَلْزَلَةَ السَّاعَةِ شَیْءٌ عَظِیْمٌ(১( یَوْمَ تَرَوْنَهَا تَذْهَلُ كُلُّ مُرْضِعَةٍ عَمَّاۤ اَرْضَعَتْ وَ تَضَعُ كُلُّ ذَاتِ حَمْلٍ حَمْلَهَا وَ تَرَى النَّاسَ سُكٰرٰى وَ مَا هُمْ بِسُكٰرٰى وَ لٰكِنَّ عَذَابَ اللّٰهِ شَدِیْدٌ(২(
অর্থাৎ, হে মানবজাতি! তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় কর। নিশ্চয়ই কেয়ামতের ভয়াবহতা এক প্রচন্ড বিষয়। সেদিন এমন অবস্থা হবে যে, কোন দুধ দেয়া মা, যার কাছে দুধের সন্তান আছে সে তার দুধের সন্তানের কথা ভুলে যাবে। গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাত হয়ে যাবে। মানুষকে মনে হবে হুশ হারা, অথচ তারা বেহুশ নয়। সেদিন সূর্য মানুষের মাথার ওপরে আসবে। আর পায়ের নিচের মাটি হবে জ্বলন্ত তামার। গরমের তীব্রতায় মানুষের মাথার মগজ টগবগ করবে, যেমন চুলায় হাঁড়ির পানি টগবগ করে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, বিচার দিবসে সূর্যকে মানুষের কাছে আনা হবে, সমস্ত মানুষ থাকবে পেরেশান, তা হবে তাদের থেকে এক ফরসাখ (তিন মাইল) দূরে। ব্যক্তির আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে অবস্থান করবে। কারো ঘাম হবে টাখনু সমান, কারো হাঁটু সমান, কারো কোমর সমান, কারো মুখ সমান। এই কঠিন এবং ভয়াবহ অবস্থায় মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় কয়েক প্রকারের বান্দাকে নিজের আরশের ছায়ায় আশ্রয় দেবেন। জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডের মাঝে রহমতের শীতল চাদর বিছিয়ে দেবেন। দাউ দাউ করা দাবানলের গ্রাস থেকে প্রিয় বান্দাদের রক্ষা করবেন। ইরশাদ হচ্ছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ سَبْعَةٌ يُظِلُّهُمْ اللهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِي ظِلِّهِ يَوْمَ لَا ظِلَّ إِلَّا ظِلُّهُ إِمَامٌ عَادِلٌ وَشَابٌّ نَشَأَ فِي عِبَادَةِ اللهِ وَرَجُلٌ ذَكَرَ اللهَ فِي خَلَاءٍ فَفَاضَتْ عَيْنَاهُ وَرَجُلٌ قَلْبُهُ مُعَلَّقٌ فِي الْمَسْجِدِ وَرَجُلَانِ تَحَابَّا فِي اللهِ وَرَجُلٌ دَعَتْهُ امْرَأَةٌ ذَاتُ مَنْصِبٍ وَجَمَالٍ إِلَى نَفْسِهَا قَالَ إِنِّي أَخَافُ اللهَ وَرَجُلٌ تَصَدَّقَ بِصَدَقَةٍ فَأَخْفَاهَا حَتَّى لَا تَعْلَمَ شِمَالُهُ مَا صَنَعَتْ يَمِينُهُ
অর্থাৎ, ‘আল্লাহ সাত শ্রেণির মানুষকে হাশরের দিন তার আরশের ছায়ায় স্থান দেবেন। যে দিন তাঁর ছায়া ছাড়া অন্য কোনো ছায়া থাকবে না। তারা হলেন : ১. ন্যায়পরায়ণ বাদশাহ, ২. ওই যুবক, যে নিজের যৌবনকে আল্লাহর ইবাদতে অতিবাহিত করেছে, ৩. আর যে নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে, আর দুই চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হয়, ৪. ওই ব্যক্তি, যার অন্তর সর্বদা মসজিদের সঙ্গে যুক্ত থাকে, ৫. আর ওই দুই ব্যক্তি, যারা পরস্পরকে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য ভালোবাসে, ৬. ওই ব্যক্তি, যাকে কোনো সম্ভ্রান্ত ও সুন্দরী নারী কুপ্রবৃত্তি চরিতার্থ করার জন্য আহ্বান করে, আর তখন সে বলে, আমি আল্লাহকে ভয় করি এবং ৭. ওই ব্যক্তি, যে দান করে সঙ্গোপনে, এমনকি তার বাম হাতও জানে না, তার ডান হাত কী দান করে।’
ন্যায়পরায়ণ শাসক : ওই মুসলিম শাসক ও বিচারক, যাদের কাঁধে মুসলমানদের কল্যাণের দায়িত্ব ভার অর্পণ করা হয়েছে। যে শরয়ি পদ্ধতিতে নির্বাচিত এবং শরিয়তের বিধান অনুযায়ী জনগণকে পরিচালিত করেন। মানবরচিত বা প্রবৃত্তি-উদ্ভূত কোনো আইন নয়, বরং রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া ইনসাফপূর্ণ আইন বাস্তবায়ন করেন। ন্যায়পরায়ণতা বলতে প্রত্যেককে তার প্রাপ্য অধিকার প্রদানের ক্ষেত্রে আল্লাহ্ তায়ালার বিধান অনুসরণ করাকে বুঝানো হয়েছে।
অন্যত্র ইরশাদ করেন, إِنَّ اللهَ يَأْمُرُ بِالْعَدْلِ অর্থাৎ- নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা ন্যয়পরায়নতার আদেশ করেন। ন্যায়ের বিপরীত হলো অত্যাচার বা অনাচার। মহান আল্লাহ এই শ্রেণির লোকদের ভীষণ ভালোবাসেন। ইরশাদ হচ্ছে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সুবিচারকারীদের ভালোবাসেন। আর যখন তোমরা মানুষের মাঝে বিচার করবে ন্যায়পরায়ণতার সাথে করবে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন,
إن المقسطين عند الله على منابر من نورعن يمين الرحمن عز وجل، وكلتا يديه يمين، الذين يعدلون في حكمهم وأهليهم وما ولوا
অর্থাৎ সুবিচারকগণ আল্লাহর ডান পাশে নূরের মিম্বর সমূহে অবস্থান করবে, তার উভয় হাতই ডান; যারা তাদের শাসন, পরিবার ও দায়িত্ব আদায়ের ক্ষেত্রে ন্যয় প্রতিষ্ঠা করবে।
দীনদার যুবক
বৃদ্ধ বয়সে তো প্রায় প্রতিটি মানুষই ইসলামের দিকে ধাবিত হয়, কিন্তু তখন হয়তো দ্বীনের কঠিন আমল যেমন দ¦ীন বিজয়ের কাজ, জিহাদ ও হিজরত করা সম্ভব হয় না, তাই এখানে বিশেষভাবে ওই যুবকদের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যারা তাদের যৌবনকালকে, তারুণ্যের উদ্যমতাকে কাজে লাগিয়েছে দ¦ীনের জন্য। যৌবন মহান আল্লাহর অনেক বড় নিয়ামত। এই নিয়ামতকে যারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করে, তারাই সফল হয়। সাধারণত যৌবনকালে কুপ্রবৃত্তি নানা ভাবে মানুষের চিন্তা চেতনায় হানা দেয়, প্রলুব্ধ করে নানা অপকর্র্মে। আর এ যৌবনে ইবাদতে নিমগ্ন হওয়া অন্য যে কোন সময়ে ইবাদতে লিপ্ত হওয়ার চেয়ে শ্রেয় ও অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাই এ যৌবনকে যারা আল্লাহর রাস্তায় ব্যয় করবে, তারা কঠিন কিয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় পাবে।
যার হৃদয় মসজিদে পড়ে থাকে
আজকের সমাজে অধিকাংশ মানুষ তো মসজিদের সাথে কোনো সম্পর্কই রাখে না। সপ্তাহান্তে একদিন মসজিদে গেলেও কখন খুতবা শেষ হবে, কখন বাসায় ফিরবে এই চিন্তাই শুধু মাথায় ঘুরপাক খায়। অথচ যারা মসজিদের সাথে লেগে থাকবে, একবার নামাজ শেষে কখন আজান হবে আর মসজিদে যাবে সেই চেতনা মনে জাগ্রত রাখবে, মসজিদের রক্ষণাবেক্ষণ করবে, মসজিদের প্রয়োজনগুলো পূরণের চেষ্টা করবে, আল্লাহ তাদেরকে হাশরের কঠিন দিনে আরশের ছায়ায় আশ্রয় দিবেন। ইমাম নববী রহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, মসজিদের সঙ্গে অন্তরের সম্পৃক্ততা দ্বারা উদ্দেশ্য, মসজিদের প্রতি অগাধ ভালোবাসা। পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ গুরুত্বসহকারে মসজিদে পড়া। সার্বক্ষণিক মসজিদে বসে থাকা নয়। পানির মধ্যে মাছ যেমন প্রশান্তি পায় মু’মিন তেমনি মসজিদে প্রশান্তি পায়। আর খাঁচার মধ্যে পাখি যেমন ছটফট করে মুনাফিক তেমনি মসজিদের মধ্যে ছটফট করে। হযরত আবুদ্ দারদা রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু তার ছেলেকে লক্ষ্য করে বলেন, হে প্রিয় বৎস! মসজিদই হবে তোমার ঘর। নিশ্চয়ই আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামাকে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মসজিদ সমূহ হচ্ছে মুত্তাকীদের (আল্লাহভীরূদের) ঘর স্বরুপ। আর মসজিদ যার ঘর হবে আল্লাহ তায়ালা তার জন্য প্রশান্তি, করুণা ও পুলসিরাত পার হয়ে জান্নাতে যাওয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করবেন। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি পবিত্র অবস্থায় ফরজ নামাজ আদায়ের উদ্দেশ্যে (মসজিদের পানে) বের হল, তার প্রতিদান ইহরাম পরিধানকারী হজ্জ আদায়কারীর মত, যে ব্যক্তি একমাত্র সালাতুদ দোহা আদায়ের উদ্দেশ্যে বের হল, অন্য কোন কারণে নয়, তার প্রতিদান ওমরা পালনকারীর মত। আর দু’নামাজের মধ্যখানে যদি কোন অনর্থক কথা বা কাজ না করা হয় তাহলে এর প্রতিদান ইল্লিয়ীনে লিপিবদ্ধ করা হবে।
আল্লাহর জন্য সম্পর্ক স্থাপনকারী
আল্লাহর ভালোবাসার ভিত্তিতেই যারা একে অপরকে ভালোবেসেছে কিংবা ঘৃণা করেছে তারই জন্য। আল্লাহর ভালোবাসাই তাদের উভয়ের মাঝে গড়ে দিয়েছে সখ্যতা ও বন্ধুত্ব, পার্থিব কোন প্রতিবন্ধকতা এ ব্যাপারে তাদের মাঝে আড়াল তৈরি করতে পারেনি। মৃত্যু পর্যন্ত তাদের উভয়ের মাঝে বন্ধনের একমাত্র সূত্র হল আল্লাহর ভালোবাসা। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ বলবেন, সেসব মানুষ কোথায়, যারা আমার সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে পরস্পর পরস্পরকে ভালোবাসত। আজ আমি তাদের আমার আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেব। আজকের দিনটা এমনই যে আজ আমার ছায়া ছাড়া কোথাও কোনো ছায়া নেই। ইরশাদ হচ্ছে,الْأَخِلَّاءُ يَوْمَئِذٍ بَعْضُهُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ إِلَّا الْمُتَّقِينَ
অর্থাৎ মোত্তাকি ব্যতীত সে দিন বন্ধুরা হবে পরস্পর পরস্পরের শত্র“। নূরনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আরো ইরশাদ করেন, أوثق عرى الإيمان الحب في الله والبغض في الله. অর্থাৎ ঈমানের মজবুত বন্ধন হচ্ছে আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, এবং তার জন্য ঘৃণা করা।
রূপসী নারী ডাকা সত্ত্বেও ব্যভিচার থেকে যে দূরে থাকে
আজকের সমাজ একদিকে বিয়েকে কঠিন করে ফেলেছে, অন্যদিকে ব্যভিচারকে সহজ করে দিয়েছে। নানা পর্ণসাইটসহ অসংখ্য উপকরণ দিয়ে যুবসমাজকে নষ্ট করে দেয়া হচ্ছে। এহেন পরিস্থিতিতে যারা সমাজের এ সমস্ত জাহিলিয়াত থেকে নিজেদেরকে নিষ্কলুষ রাখবে, ঈমান ও তাকওয়ার পথ অবলম্বন করবে, আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে তাঁর আরশের ছায়ার নিচে স্থান দিবেন। সে ব্যক্তি, যাকে কোনো উচ্চ বংশীয় রূপসী নারী আহ্বান জানায়, কিন্তু সে এ বলে প্রত্যাখ্যান করে যে ‘আমি আল্লাহকে ভয় করি’। সে সব মুত্তাকিকে মহান আল্লাহ কিয়ামতের দিন তাঁর আরশের ছায়াতলে আশ্রয় দেবেন। আল্লাহর নবী হযরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম মিসরের আযীয পতœী যুলায়খার আহ্বানে সাড়া না দিয়ে জেলখানাকে উত্তম বাসস্থান হিসেবে গ্রহণ করেছেন যা পবিত্র কুরআনের সূরা ইউসুফে বিধৃত হয়েছে। কবি বলেন
وإذا خلوت بريبة في ظلمة و النفس داعية إلي الطغيانفاستقم من نظر الإله و قل لها إن الذي خلق الظلام يراني
অর্থাৎ নির্জন অন্ধকারে যখন একান্ত হবে সংশয়ে (রমনীর সাথে) আর তোমার প্রবৃত্তি আহ্বান জানাবে অন্যায়ের প্রতি তখন তুমি আল্লাহর দৃষ্টির সম্মুখে লজ্জাশীল হয়ে তাকে বল, এ অন্ধকারের যিনি স্রষ্টা, তিনি তো আমাকে দেখছেন।
গোপনে দানকারী
সুরা মুনাফিকুনের ১০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আমি তোমাদের যে রিজিক দিয়েছি তা থেকে খরচ করো মৃত্যু আসার আগেই। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন হতে হবে দান-খয়রাতের মূল লক্ষ্য। আজকাল মানুষ তো এক টাকা দান করলে ১০ টাকার প্রচার করে। ত্রাণের চেয়ে বেশি সময় যায় ফটোসেশনেই। মানুষ চায় লোকে তাকে দানশীল বলুক, তার নাম মাইকে ঘোষণা হোক। কখনো দানের কারণে মনে অহংকার আসতে পারে, লোক দেখানোর প্রবণতা জন্মাতে পারে মনে। এমন অবস্থা এড়াতে গোপনে দানকারী আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। ইরশাদ হচ্ছে-
إِنْ تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ وَإِنْ تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَكُمْ وَيُكَفِّرُ عَنْكُمْ مِنْ سَيِّئَاتِكُمْ وَاللهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
অর্থাৎ তোমরা যদি সদকা প্রকাশ কর, তবে তা উত্তম। আর যদি তা গোপন করে দরিদ্রদের মাঝে তা বিতরণ করে দাও, তবে তাও তোমাদের জন্য কল্যাণকর। তা তোমাদের পাপ মুছে দিবে; তোমরা যা কর, সে ব্যাপারে আল্লাহ জ্ঞাত। [সূরা বাকারা,আয়াত:২৭১]
বস্তুত অবস্থা ভেদে প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সদকার মাঝে উত্তম অনুত্তম নির্ধারণ করা হয়। যদি তা প্রকাশ্যে পালন করার ব্যাপারে কোন কল্যাণ থাকে, তবে তাই উত্তম। অন্যথায়, ফরজ ও নফল উভয় ক্ষেত্রে গোপনে পালন করা উত্তম।
গোপনে আল্লাহর স্মরণে ক্রন্দন
আজকে আমরা যা একটু-আধটু ইবাদত করি, সেটাও অনেক ক্ষেত্রেই রিয়া বা লোকদেখানো আমলে পরিণত হয়। কত কিছুর জন্যই আমরা অশ্রু ঝরাই। প্রিয়জনের বিয়োগ ব্যথায়, জীবনের চরম কোনো মুহূর্তে। কিন্তু একটু নির্জনে, রাতের অন্ধকারে, যখন কেউ দেখার নেই আল্লাহ ছাড়া, তখন কি আমরা চোখের পানি ঝরাতে পারি? যারা আল্লাহর ভয়ে, নিজ পাপসমূহ স্মরণ করে আল্লাহর দরবারে অঝোরে কাঁদে, আল্লাহ তাদেরকে তাঁর আরশের ছায়ায় স্থান দিবেন। হাদিস শরীফে এসেছে, দুই ধরনের চোখকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ করতে পারবে না। ক. ওই চোখ যা আল্লাহর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন দেয়। খ. ওই চোখ যা আল্লাহর পথে পাহারাদারিতে রাত জাগে। [সহিহ্ বুখারী]
উপরোল্লেখিত সাতটি কাজ শুধু পরকালের ভয়াবহতার সময় উপকারি এমন নয়, বরং দুনিয়াতেও এর আমলকারীর জন্য রয়েছে অফুরন্ত নেয়ামত, সম্মান ও শান্তি। আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে দুনিয়ার শান্তি, সম্মান ও মর্যাদা লাভের পাশাপাশি কেয়ামতের দিন আল্লাহর আরশের রহমতের ছায়া লাভে এ দায়িত্ব ও আমলগুলো যথাযথভাবে পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
লিখক: আরবী প্রভাষক, রাণীরহাট আল আমিন হামেদিয়া ফাযিল (ডিগ্রী) মাদ্রাসা;
খতিব, রাজানগর রাণীরহাট ডিগ্রি কলেজ জামে মসজিদ, রাঙ্গুনিয়া, চট্টগ্রাম।