প্রশ্নোত্তর: নিজের মালিকানায় রেখে মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহ্ ওয়াকফ করা যাবে কিনা?

0
নিয়মিত উত্তর দিচ্ছেন: অধ্যক্ষ মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ অছিয়ার রহমান। সাবেক-অধ্যক্ষ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া, চট্টগ্রাম।
 মুহাম্মদ সোহেল রানা, মাওলানা মুহাম্মদ আলী আকবর, মাওলানা মুহাম্মদ ইব্রাহীম, মুহাম্মদ শফিউল আজম হক (মিন্টু), মুহাম্মদ রাজা মিয়া। 
সর্ব সাং- মুহাম্মদপুর ৩নং ওয়ার্ড, জোয়ারা, চন্দনাইশ, চট্টগ্রাম।
প্রশ্ন: জনৈক ব্যক্তি নিজের মালিকানায় রেখে হযরত ভুঁই খাজা (রহ.) মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহ’র জন্য মৌখিকভাবে জমি ওয়াকফ করেন (অর্থাৎ তিনি নিজ মালিকানা স্বত্ত্ব মসজিদের বরাবরে বা মসজিদ পরিচালনা কর্তৃপক্ষের বরাবরে ছেড়ে দেননি যদিও তৎকালিন মসজিদ কমিটির সাথে তিনিসহ মসজিদ ও ঈদগাহের জন্য অন্যান্য ভূমি দাতাগণের একটি লিখিত চুক্তি ছিল, মসজিদের নামে জায়গা ওয়াকফ করে দেয়ার)। অবশ্য উক্ত ঈদগাহ্ ময়দানে অন্য লোকেরও অংশ বিশেষ দানকৃত জমি রয়েছে। প্রায় ২২/২৩ বছর আগে তৎকালীন মসজিদ কমিটির তত্ত্বাবধানে উক্ত জমি ভরাট করে ঈদগাহ্ ময়দান প্রতিষ্ঠিত হয়। মসজিদ কমিটির তোয়াক্কা না করে সম্প্রতি সংস্কারের নামে তিনি উক্ত ঈদগাহ্ ময়দানে কিছু শর্ত খুঁদাই করে দেন যেগুলো নিয়ে এলাকার মানুষের মধ্যে চরম দ্বিধা ও ক্ষোভ বিরাজমান। সে শর্তগুলোর মধ্যে ২টি শর্ত নি¤œরূপ (হুবহু উল্লেখ করা হল)ঃ

১. এই মাঠে এবাদতের নামে এমন কিছুই করা যাবে না যা মদিনা মনোয়ারার মসজিদে নবভীতে অথবা মক্কা মোকাররমার কাবা শরীফে করা যায় না।

২. এই মাঠে নামাজের আগে অথবা পরে বরকতের নামে অথবা নেকীর নামে কিছুই করা যাবে না যা মোহাম্মদ রসূলূল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম করেননি অথবা খোলাফায়ে রাশেদীনের চার খলিফা (রা.) করেননি অথবা সাহাবায়ে কেরাম (রা.)গণ করেননি অথবা ইমামে আজম আবু হানিফা (র.) করেননি।’’
প্রশ্ন হচ্ছে তার এ শর্তগুলো কি শরীয়ত সম্মত? এ ব্যাপারে এলাকার জনগণের করণীয় কি? উল্লেখ্য হাতে গোনা কয়েকজন ব্যতীত এলাকার সবাই সুন্নি মুসলমান।

উত্তর: উক্ত ব্যক্তি যেহেতু হযরত ভুঁই খাজা রহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হির মসজিদ সংলগ্ন ঈদগাহের জন্য মৌখিকভাবে জমি ওয়াকফ করেছেন, তাই উক্ত জায়গা শরিয়ত মোতাবেক ওয়াকফ হয়ে গেছে। আর কোন জমি মৌখিকভাবে হোক বা লিখিতভাবে হোক ওয়াকফ করার পর ওয়াকফ দাতা কোন শর্ত যুক্ত করলে তা ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক গ্রহণযোগ্য হবে না। বরং ওয়াকফ দাতা শক্ত গুনাহ্গার হবে।

তাছাড়া উক্ত ব্যক্তি যে দু’টি শর্তারোপ করেছে তথা ‘. এই মাঠে ইবাদতের নামে এমন কিছুই করা যাবে না যা মদিনা মনোয়ারা মসজিদে নবভীতে অথবা মক্কা মুকাররমার কাবা শরীফে করা যায়না।’ এবং ২. এই মাঠে নামাজের আগে অথবা পরে বরকতের নামে অথবা নেকীর নামে কিছুই করা যাবে না যা মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম করেননি অথবা খোলাফায়ে রাশেদীনের চার খলিফা (রা.) করেননি অথবা সাহাবায়ে কেরাম করেননি অথবা ইমাম আবু হানিফা (রা.) করেননি।’’ কোনটিই শরীয়তসম্মত নয়। কারণ যে কাজ শরিয়ত কর্তৃক নিষিদ্ধ নয় তা পালনে বাধা প্রদান করা জায়েয নেই। তদুপরি যুগের পরিবর্তনে এবং সময়ের আবর্তনে শরিয়ত সমর্থিত কোন ভাল কাজ/ আমল/প্রথা/ সংস্কৃতি/ইবাদত কেউ প্রচলন করে, তা ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক নিষেধ নয় বরং সওয়াবের কাজ। যেমন- নবী করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেন-
ما راه المؤمنون حسنا فهو عند الله حسن
وفى رواية المسلمون ـ
অর্থাৎ অর্থাৎ যে কাজকে মুসলমানরা ভাল মনে করে তা আল্লাহর নিকটও ভাল বলে পরিগণিত হয়।
[মুয়াত্তা ইমাম মালেক, খ-১. পৃ. ৩৫৫] অপর হাদীসে রসূল করীম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন-
من سن فى الاسلام سنة حسنة فله
اجره واجر من عمل بها
অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইসলামের মধ্যে কোন ভাল কাজ/আমল/ প্রথা চালু করল, সে ব্যক্তি তার সওয়াব পাবে। (এমনকি) অন্য ব্যক্তি এর উপর আমল করলে তার সওয়াবও সে পাবে। [সুনানে নাসাঈ কুবরা, খন্ড-২, পৃ. ৪০] তাছাড়া হানাফি মাযহাবের প্রসিদ্ধ কিতাব ‘আল আশবাহ্ ওয়ান নাজায়ের’-এ বর্ণিত আছে-اصل الاشياء الاباحة অর্থাৎ প্রত্যেক বস্তু মূলত মুবাহ্। [আশবাহ্ ওয়ান নাজায়ের, ইবনে নুজাইম মিসরি]

সুতরাং উক্ত ব্যক্তির উল্লিখিত বক্তব্যসমূহ শরিয়ত বিরোধীও নাজায়েয এবং ঈমান বিধ্বংসী। তাকে অবশ্যই অবিলম্বে মহান আল্লাহ্ তা‘আলার দরবারে খালেস নিয়তে তাওবা করতে হবে। ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক উক্ত জায়গা ওয়াকফ হিসেবে বহাল থাকবে এবং উক্ত ব্যক্তির কোন শর্ত যা প্রশ্নে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসলামি শরিয়ত মোতাবেক গ্রহণযোগ্য হবে না বরং তা সীমালঙ্ঘন হবে।
উপরোক্ত বিষয়ে এটাই ইসলামী শরীয়তের ফতোয়া/ফয়সালা।

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •