মহিলাদের কবরস্থানে হাজির হয়ে জিয়ারত করার বিধান

0

 তানজিনা আরজু, পাইকপাড়া, পটিয়া, চট্টগ্রাম

প্রশ্ন: আমার বাবার বাড়ীর কবরস্থান আমার শ্বাশুর বাড়ী হতে প্রায় ৫০ মাইল দুরে, তাই, মা, বাবার কবর রীতিমত জেয়ারত করতে কষ্টকর। সেহেতু শ্বাশুর বাড়ী হতে এদের নামে জেয়ারত করলে সঠিক হবে কিনা? সরাসরি মহিলাদের জন্য আপনজনের কবরস্থানে হাজির হয়ে জিয়ারত করার বিধান জানিয়ে কৃতজ্ঞ করবেন।

উত্তর: কবর জিয়ারতের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে কবরবাসীকে সালাম এবং কোরআন তেলাওয়াত ও দোয়া-দরুদ পড়ে তাদের প্রতি সরাসরি কবর স্থানে গিয়ে ইসালে সাওয়াব/দোয়া করা। কবর জিয়ারত করা সুন্নাত, যা প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কেরামের বর্ণনা ও আমল দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং সুযোগ হলে আপনজন তথা ভাই-বেরাদর, মা-বাবা, মুরব্বী, ওস্তাদ, শিক্ষকের কবরস্থানে গিয়ে পুরুষগণ সরাসরি দোয়া-দরুদ পড়ে কবর জিয়ারত করবে। এটা সুন্নাত তরিকা। আর জিয়ারতের আসল উদ্দেশ্য হলো কবরবাসীর জন্য দোয়া করা, সওয়াব রসানী, তাই মহিলা তথা মা-বোনেরা দোয়া-দরুদ ও কোরআন তেলাওয়াত করে যে কোন জায়গা থেকে স্বীয় মা-বাবাসহ আপনজনের রুহে সওয়াব পৌঁছাতে পারবেন। কোন অসুবিধা নাই। তবে মা-বোন ও মহিলারা সরাসরি মা-বাবাসহ আপন জনের কবরে হাজির হয়ে কবর জিয়ারত করতে পারবে কিনা? এ নিয়ে কোন কোন ইমাম/মনিষী নেহায়ত পর্দা-পুশিদা সহকারে মহিলারা স্বীয় আপনজন মা-বাবাসহ নিটকতম আত্মীয়-স্বজনের কবরস্থানে সরাসরি গিয়ে যিয়ারত করতে পারবে আর পরবর্তী অধিকাংশ ফোকাহায়ে কেরাম বর্তমান সময়ের ফিতনা-ফ্যাসাদ হতে দূরে থাকার নিমিত্তে স্বীয় ইজ্জত-আবরুকে রক্ষা করার জন্য সরাসরি কবরস্থানে হাজির হয়ে কবর জিয়ারত করতে নিষেধ করেছেন। কারণ স্বীয় আপনজনের কবর জিয়ারত করা হল সুন্নাতে মুস্তাহাব্বা আর মা-বোনদের জন্য ফিতনা ফ্যাসাদ হতে স্বীয় ইজ্জত-আবরুকে হেফাজত করা ফরয ও অপরিহার্য বিষয়। তদুপরি হযরত ওমর ফারূকে আযম রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু স্বীয় শাসন-আমলে (খেলাফতকালে) মা-বোনদের ইজ্জত-আবরুর হিফাজতের কথা বিবেচনা করে জুমা-জামাতে মসজিদে নবভীতে মহিলাগণকে অংশ গ্রহণ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন। এটাই হানাফী মাযহাবের অধিকাংশ ইমামগণের অভিমত। অথচ সরকারে দু-আলম রাসূলে আকরাম সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম ও ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু তা‘আলা আনহু মুমিনা মা-বোনদেরকে মসজিদে নববী শরীফে জুমা জমাত, ঈদের নামাজ ও নামাজে জানাযায় অংশ গ্রহণ করতে নিষেধ করেন নাই। সুতরাং বর্তমান ফিতনা-ফ্যাসাদের জমানায় স্বীয় ইজ্জত-আবরু রক্ষার্থে জুমা-জমাত, ঈদের নামায ও জানাযা নামাযের ন্যায় মহিলারা আপন জনের কবরস্থানে সরাসরি না গিয়ে বরং বাপের বাড়ী বা শ্বশুর বাড়ী হতে সূরা-কেরাত-দোয়া-দরুদ পড়ে, আপনজনের কবরে ও রূহে পাকে সওয়াব পৌঁছাবে এবং তাঁদের মাগফিরাত ও রফয়ে দরজাতের জন্য দেয়া করবে। এটাই নিরাপদ ও এটার উপর ফতোয়া দেয়া হয়েছে। তাই ইমাম আলা হযরত শাহ্ আহমদ রজা ফাজেলে বেরলভী (রহ.) মহিলাদের জন্য সরাসরি কবরস্থানে জিয়ারতে যাওয়া মাকরূহে তাহরিমা, গুনাহ্ ও নিষিদ্ধ বলেছেন। এটাই متاخرين তথা পরবর্তি অধিকাংশ ফকিহগণের ফায়সালা।
[মেশকাতুল মাসাবিহ্, জিয়ারত অধ্যায় ও ইমাম আ’লা হযরত কর্তৃক রচিত জুমালুন্নূর ইত্যাদি]

শেয়ার
  •  
  •  
  •  
  •