মুহাম্মদ সাজ্জাদ হুসাইন, কানুনগোপাড়া, বোয়ালখালী
প্রশ্ন: কোন ব্যক্তির মৃত্যুশয্যায় যদি বলা হয়- ‘স্বীয় পীরের কথা স্মরণ করুন’, তখন কি শয়তান পীরের আকৃতিতে এসে মুরীদকে বিভ্রান্ত করতে পারে? বিভ্রান্তের আশঙ্কা থাকলে পীরের কথা না বলে শুধুমাত্র আল্লাহ ও রসূলের কথা বললে কেমন হয়? বিস্তারিত আলোচনা করলে ধন্য হব।
উত্তর: পীরে কামিল তথা আউলিয়া কেরাম দুনিয়া, আখিরাত, মৃত্যুর মুহূর্ত, কবর, হাশরসহ সর্বকালের সকল সঙ্কটের মুহূর্তে নিজের মুরীদ ও আপনজনদের আল্লাহর হুকুমে সাহায্য করে থাকেন। যেকোন সঙ্কটের মুহূর্তে স্বীয় কামিল মুর্শিদকে স্মরণ করা হলে কামিল পীর তাঁর মুরীদকে সঙ্কট থেকে উদ্ধার করে থাকেন এবং মৃত্যুকালে শয়তানের কুমন্ত্রণা ও প্ররোচনা থেকে রক্ষা করেন। শয়তান নিজের পীরের আকৃতি ধারণ করে আসলেও মৃত্যুমুহূর্তে পীরে কামিলের উপস্থিতির ফলে শয়তান বিতাড়িত হতে বাধ্য হয় এবং পীরে কামিলের দয়ায় মুরীদ ঈমানের সাথে মৃত্যুবরণে সক্ষম হন। এটা কোরআন মজীদ, হাসীসে রসূল ও আউলিয়া-ই কেরামের বাণী দ্বারা প্রমাণিত। ইমাম আরেফ বিল্লাহ আবদুল ওয়াহ্হাব শা’রানী রহমাতুল্লাহি আলায়হি স্বীয় কিতাব ‘ওরদুল মুহাম্মদিয়া’য় উল্লেখ করেছেন- كل من كان متعلقا بينى او رسول و ولى فلا بدّ ان يحضره وياخذ بيده فى الشدائد
অর্থাৎ যে কেউ কোন নবী-রসূল ও আউলিয়া-ই কেরামের সাথে মহব্বতের সম্পর্ক রাখে অবশ্যই নবী ও ওলী তাঁর সঙ্কটের মুহূর্তে তাশরীফ আনেন এবং তাঁকে সাহায্য করেন।
মীযানুল কুবরা শরীফে উল্লেখ আছে-
ان ائمة الفقهاء والصوفية كلهم يشفعون فى مقلديهم ويلاحظون احدهم عند طلوع روحه وعند سوال منكر ونكير وعند النشر والحشر والحساب والميزان و الصراط ولايغفلون عنهم فى موقف من المواقف .
অবশ্য সমস্ত ফুক্বাহা-ই কেরাম ও আউলিয়া-ই কেরাম স্বীয় ভক্ত ও অনুসারীদেরকে সুপারিশ করে থাকেন এবং তাঁরা ভক্তদেরকে ইন্তিকালের মুহূর্তে, মুনকার-নকীরের সাওয়ালের মুহূর্তে নজরে রাখেন। দুনিয়া ও আখিরাতের স্তরসমূহ থেকে যে কোন স্তরে তাঁরা ভক্তদের থেকে অমনোযোগী হন না।
‘বুস্তানুল মুহাদ্দিসীন’ কিতাবে শাহ আবদুল আযীয মুহাদ্দিস দেহলভী রহমাতুল্লাহি আলায়হি লিপিবদ্ধ করেছেন, শায়খ আবুল আব্বাস আহমদ যররুকী রহমাতুল্লাহি আলায়হি এরশাদ করেন-
انا لمريدى جامع لثتاته اذا ما مطى جور الزمان ينكبه وان كنت فى ضيق وكرب ووحشة فنادبيا زروق ات بسرعة
অর্থাৎ আমি নিজের মুরীদের চিন্তা ও দুঃখসমূহের সমন্বয়কারী। যে মুহূর্তে মুসীবত তাকে ব্যথিত করে। (ওহে আমার মুরীদ) তুমি যদি সঙ্কট-মুসিবত এবং দুর্দশায় পতিত হও তবে স্মরণ করে এয়া যররুক বলে আহ্বান কর। আমি তৎক্ষণাৎ তোমার কাছে এসে যাব।
এটা অসম্ভব কিছু নয়, বরং আল্লাহর বন্ধু ও প্রিয়জনের প্রতি আল্লাহর খাস দয়া ও আল্লাহ প্রদত্ত বিশেষ ক্ষমতার বহিঃপ্রকাশ, যা কোরআন-সুন্নাহ দ্বারা প্রমাণিত। সুতরাং ইন্তিকালের মুহূর্তে বা যেকোন সঙ্কটকালে স্বীয় পীরে কামিলকে স্মরণ করে আহ্বান করা হলে তিনি তার নিকট উপস্থিত হয়ে সাহায্য-সহযোগিতা করে থাকেন।
‘নুযহাতুল খাতেরিল ফাতির ফী মানাকিবি আবদিল ক্বাদির’ কিতাবে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী আলায়হির রহমাহ্ উল্লেখ করেছেন, হুযূর গাউসে আ’যম দস্তগীর পীরানেপীর রহমাতুল্লাহি আলায়হি এরশাদ করেছেন-
من استغاث فی کربة کشفت عنه ومن نادانی باسمی فی شدۃ فرجت عنه ومن توسّل بی الی الله فی حاجة قضيت
অর্থাৎ যে কেউ সঙ্কটকালে আমার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করবে, তার সঙ্কট দূর হয়ে যাবে এবং যে জটিলমুহূর্তে আমার নাম নিয়ে আমাকে আহ্বান করবে, তখন তার জটিলতা দূর হয়ে যাবে এবং যে কোন প্রয়োজনে আল্লাহর কাছে আমাকে ওসীলা হিসেবে পেশ করবে তার প্রয়োজন ও হাজত পূরণ হয়ে যাবে।
এরূপ অনেক বর্ণনা রয়েছে। যাদের অন্তরে মুনাফিকী এবং নবী ও ওলীর প্রতি হিংসা-বিদ্বেষ আছে, তারাই এসব বিষয়ে শিরক-বিদ‘আতের ফতোয়াবাজী করে। আল্লাহ তা‘আলা সবাইকে সঠিক মাসআলা বুঝার তাওফীক দান করুন। আমীন। [মাসিক তরজুমান, ১৪৩০ হিজরির রজব সংখ্যা]