মুহাম্মদ শাহজাদ ইবনে দিদার
আল্লাহ্ রাব্বুল আলামীন পবিত্র ক্বোরআনে ইরশাদ করেন ‘‘ওয়া কু-নু মাআস সাদেকীন’’ অর্থ: হে ঈমানদারগণ! আল্লাহ্কে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথে থাক। [সূরা তাওবা: আয়াত-১১৯]
অর্থাৎ সত্যবাদী হলো আল্লাহ্র প্রিয়বান্দা ওলী-আউলিয়াগণ’’। যাঁরা আল্লাহ্র ওলীগণের সুহবত বা সাহচর্য লাভে ধন্য হয়েছেন- তাঁরা দুনিয়া-আখিরাত উভয় জগতে কামিয়াব হয়েছেন। এমন একজন সফল ব্যক্তিত্ব যিনি আওলাদে রাসূল রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরিক্বত বানী-এ জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া কুতুবুল এরশাদ দাদাপীর হযরতুলহাজ্ব আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি-এর সান্নিধ্য লাভের মাধ্যমে তাঁর জীবনের আমূল পরিবর্তন সাধিত হয়। এ ভাগ্যবান ব্যক্তিত্ব আলহাজ্ব নূর মুহাম্মদ সাওদাগর আলকাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। এ ক্ষণজন্মা পুরুষ বার আউলিয়ার পুণ্যভুমি বীর প্রসবিনী চট্টগ্রামের বাকলিয়ার এক সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে জন্ম গ্রহণ করেন।
কুতুবুল আউলিয়া আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর একনিষ্ঠ মুরীদ এবং গাউসে জামান রাহনুমায়ে শরীয়ত ও তরীকত মুর্শিদে বরহক্ব আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি-এর খলিফা হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন আলহাজ্ব নুর মোহাম্মদ সওদাগর রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি। খিলাফত লাভের পরও নিজেকে অত্যন্ত ছোট মনে করে খেলাফতের বিষয়টিকে দুনিয়া এবং আখিরাতের জন্য একটি কঠিন পরীক্ষা বলে মনে করতেন তিনি। জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রতিটি বিষয়ে কামিয়াবীর সাথে পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিজেকে একজন ব্যক্তি থেকে প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। আওলাদে রাসূল আল্লামা হাফেজ ক্বারী সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি ও খানকায়ে কাদেরিয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়বিয়া (বলুয়ারদিঘী খানকাহ্ শরীফ) ঘিরে বহু স্মৃতি এখনো আমার মনে দাগ কাটে। আজ আমি বরকত লাভের আশায় সামান্য কিছু স্মৃতি চারণ এর প্রয়াস পাব।
হুজুর কিবলা আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি আলায়হি চট্টগ্রামে অবস্থান কালে একদা বলুয়ারদিঘীর পাড়স্থ খানকাহ্ শরীফে ফজরের নামাযে যাওয়ার জন্য আমার পিতা মরহুম মুহাম্মদ দিদারুল আলম চৌধুরী ভোর ৪টায় আমাকে ঘুম থেকে ডেকে দিয়ে বললেন, বাবা চল খানকাহ্ শরীফে হুজুর কিবলার পেছনে নামায পড়তে হবে। একদিকে শীতের মধ্যে শরীরে কম্বল জড়ানো আরামের ঘুম আরেক দিকে বাবার হুকুম, এর চেয়ে বড় বিষয় হুজুর কিবলার পেছনে নামায ও দো‘আ এ যেন অনন্য নি’মাত। বাসা থেকে অযূ সেরে খানকাহ্ শরীফে যেয়ে দেখি বৃদ্ধ, মধ্যবয়সী এবং যুবক অর্থাৎ বিভিন্ন বয়সি লোকেরা নামায পড়ছে। বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম এখনতো ফজরের আযান দেয়নি উনারা কিসের নামায পড়ছে? প্রতি উত্তরে বাবা বলেন উনারা তাহাজ্জুদের নামায পড়ছেন তুমিও আমার সাথে পড়। নামায শেষ করে ফজরের আযানের অপেক্ষায় বসে রইলাম। ডানে-বামে এবং পেছনে একটু তাকিয়ে দেখলাম মুসল্লিগিণের ক্রমাগত আগমনে কাতারগুলি ধীরে ধীরে পূরণ হতে লাগলো একটু পরে উৎশুক হয়ে দাঁড়িয়ে দেখি আশে-পাশে সামনে-পেছনে তিল ধারনের ঠাঁই নেই।
ইতোমধ্যে হঠাৎ হুজরা শরীফের দরাজা খোলার আওয়াজ শুনতেই সবাই দাঁড়িয়ে গেলেন সামনের সারি থেকে হুজুর কিবলাকে সালাম দেওয়ার আওয়াজ ঢেউয়ের মত পেছন দিক পর্যন্ত একসাথে উচ্চারিত হয়। মরহুম আইয়ুব আলী সওদাগরের বড় বড় আওয়াজে দেওয়া একামত শেষে হুজুর কিবলা নামায শুরু করেন। সেই নূরানী কেরাতের সুমধুর আওয়াজ এখনও যেন কানে বাজে। নামাযের পর উপস্থিত সকলের সম্মিলিত জিকির ও দরূদ শেষে সংক্ষিপ্ত মোনাজাতের পর দরূদে তাজ’র মাধ্যমে খতমে গাউসিয়া শরীফ, শাজরা শরীফ, মিলাদ-কিয়াম হুজুর কিবলার নূরানী তাকরীরের বাংলা তরজমা মুফতি ওবাইদুল হক নঈমী (রাহ.) উপস্থিত সকলের সামনে উপস্থাপন করলেন। যেন নুতনভাবে ঈমানের ঘোড়াকে নূরানী পানি দ্বারা সতেজ করে তুলেছে। এভাবে ফজরের নামায হতে এশা পর্যন্ত হুজুর কিবলার পেছনে চট্টগ্রামের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিভিন্ন মাদ্রাসার সালানা জলসা এবং সিলসিলার প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ অন্যতম আত্মতৃপ্তি তা ভাষায় ব্যক্ত করা কখনো সম্ভব না।
আলহাজ্ব নূর মুহাম্মদ সওদাগর আলকাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হিকে যদিও আমরা শৈশবে বেশী দিন সান্নিধ্যে থাকার সুযোগ পাইনি তবে তাঁর রেখে যাওয়া আদর্শ ছিল আমাদের জন্য তরিক্বতের পাথেয়। তৎকালীন আমলে যাঁরা আন্জুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার ক্যাবিনেট সদস্য ছিলেন তাঁরা তীর্থের কাকের মত সর্বদা অপেক্ষমান থাকতেন কখন দরবারে আলীয়া কাদেরীয়া শরীফ থেকে হযরতের পক্ষ হতে ‘মহব্বতনামা’র মাধ্যমে পীরখানার কি হুকুম আসবে, তা যথাযথ পালন করে আপন মুর্শিদ কিবলার মাধ্যমে আল্লাহ্ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর সন্তুষ্টি অর্জন পূর্বক নিজ জীবনকে ধন্য করবেন। দরবার হতে ‘মুহাব্বতনামা’ পাওয়ার সাথে সাথে কোন রকম কাল ক্ষেপন না করে তাৎক্ষণিক জরুরি ভিত্তিতে আন্জুমান এর দায়িত্বশীলগণ একত্রিত হয়ে তখনকার একজন উপযুক্ত আলেম দ্বারা অতি আদবরে সাথে চিঠি খানা পড়াতেন। উক্ত চিঠিতে হুযূর কেবলার পক্ষ হতে কোন রকম নসীহত কিংবা ইশারা রয়েছে কিনা? তা উনারা সকলে নিজেদের ব্যক্তি চরিত্রকে বিশ্লেষণপূর্বক চিঠিতে উল্লেখিত বিষয়ের ব্যাপারে গভীরভাবে চিন্তা করে নিজেদের শোধরিয়ে নেওয়ার চেষ্টায় অনুশীলনে লেগে যেতেন। অত্যন্ত আনন্দের বিষয় হচ্ছে গাউসে জামান মুর্শিদে বরহক হুযূর কিবলা (রাহ.)’র নূরানী দস্তেপাকে লিখিত দরবার হতে প্রাপ্ত মহাব্বত নামা আন্জুমান ট্রাস্ট’র বর্তমান সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট আলহাজ্ব মুহাম্মদ মহসিন সাহেবের নিকট অতি যত্নসহকারে সংরক্ষিত আছে। কুতুবুল আউলিয়া হযরত সৈয়্যদ আহমদ শাহ্ সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহ্ িতা‘আলা আলায়হি’র বিশিষ্ট মুরিদ এবং দরবার শরীফ হতে খেলাফত প্রাপ্ত যারা আশির (১৯৮০) দশকের পর পর্যন্ত হায়াত পেয়েছেন তাঁদের নিকট হতে ত্বরিক্বতের কিছু জানতে চাইলে উনারা স্নেহের চাদরে আমাদের জড়িয়ে ধরে দরবারের ও খোলাফায়ে এজাম সম্পর্কে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও অলৌকিক ঘটনা বলতেন যারা শাহেন শাহে সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি, হুজুর কিবলা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এবং দরবারের পবিত্র বংশধরদের সাথে নিবিড় রূহানী তাওয়াজ্জুহর মাধ্যমে নি’মাত প্রাপ্ত হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার (রাহ.), আলহাজ্ব ওয়াজের আলী সওদাগর,আমিনুর রহমান সওদাগর (রাহ.), সূফী আবদুল গফুর (রাহ.), আলহাজ্ব ডা: টি হোসেন (রাহ.), লালমিয়া ইঞ্জিনিয়ার (রাহ.) প্রমুখ। আপন পীরের প্রতি তাঁদের ভক্তি ও আনুগত্যের দৃষ্টান্ত এ যুগে বিরল।
নূর মুহাম্মদ সওদাগর আলকাদেরী সম্পর্কে যথসামান্য যা জেনেছি তা হচ্ছে তিনি আক্বিদার ব্যাপারে কারো সাথে আপোষ করেননি এবং বাতেলের জন্য বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত নিতে বিন্দুমাত্র চিন্তা করতেন না। তিনি অত্যন্ত বিচক্ষণ ও বহু গুণেগুণান্বিত ছিলেন। তিনি পীরের সামনে দু’জানো হয়ে অতি নম্র ও আদবের সাথে বসে থাকতেন এবং হযরাতের নূরানী জবান হতে কি নি’মাত বের হয় তার জন্য কান পেতে থাকতেন। নিজে থেকে কিছুই বলতেন না। প্রবাদ আছে ছাত্র হিসেবে উত্তম যে অজানাকে জানার জন্য শিক্ষককে প্রশ্ন করে, মুরিদ হিসেবে ঐ ব্যক্তি উত্তম যে পীরের কাছে কোন প্রশ্ন না করে চুপ থাকে।
তিনি উচু মাপের আশেক্বে রাসূল (দ.) ছিলেন। খানকাহ্ শরীফে আগত আলেম ও শায়েরদের নিয়ে তকরীর ও নাতে রাসূল (দ.) মাহফিলের এন্তেজাম করতেন। শায়েররা যখন নাত পড়তেন, তিনি নবী প্রেমে চোখের পানিতে বুক ভাসাতেন। তাঁর আমল হতে সকাল ও রাতে খানকাহ্ শরীফে খতমে গাউসিয়া শরীফ যে চালু হয়েছিল তা অদ্যাবধী জারি রয়েছে আলহামদুল্লিাহ্।
তিনি ছোটদের স্নেহভরে ডেকে মাতায় হাত বুলিয়ে দিতেন এবং খানকাহ্ শরীফে আসার জন্য উৎসাহ্ দিতেন। কারণ তিনি বুঝতে পেরেছেন যে, এমন এক সময়ে তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা থাকবেন না, সেদিন এসব শিশুরা আজকের সিলসিলার কর্ণধার হবে খেদমতের মাধ্যমে সিলসিলার হাল ধরবে। এমন ¯েœহপরায়ন অনুসরণীয় ব্যক্তিত্ব বর্তমান সমাজে বিরল।
আওলাদে রসূল হযরত সিরিকোটি রাহমাতুল্লাহি আলায়হি এদেশের মুসলিম মিল্লাতকে বাতিলের বহুমুখি ষড়যন্ত্র হতে রক্ষায় মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠায় মনোনিবেশ করেন। এ লক্ষে তিনি চট্টগ্রামে জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার ভিত্তি স্থাপন করেন। এ জামেয়া প্রতিষ্ঠায় আলহাজ্ব নুর মোহাম্মদ আলকাদেরির ভুমিকা ছিল অগ্রগণ্য। এ মাদ্রাসা সহ দ্বীনের বহুমুখি খিদমত আনজাম দেয়ার লক্ষে প্রতিষ্ঠিত আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার তিনি ছিলেন আজীবন সিনিয়র সহসভাপতি। পরম নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সাথে খিদমত করে মাদরাসা সমূহের পরিচালনায় যথেষ্ঠ অবদান রেখে তিনি আপন পীরে মুরশিদের সন্তুষ্টি লাভে ধন্য হয়েছিলেন। ব্যক্তি জীবনেও তিনি একজন সফল ও সমাজের কর্ণধার ছিলেন। ১৯৫০ থেকে ১৯৭০ পর্যন্ত চট্টগ্রাম পৌরসভার বক্সিরহাট ওয়ার্ডের কমিশনার এবং বক্সিরহাট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালনে সফলতার পরিচয় দেন। তিনি শুধু সৎ ব্যবসায়ীই ছিলেন না ব্যবসায়ীদের নেতাও ছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান সয়াবিন ও তুলা ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি, বক্সিরহাট মার্চেন্ট ডিফেন্স কমিটির সভাপতি, চট্টগ্রাম বণিক সমিতির প্রভাবশালী সদস্যসহ ব্যবসায়ী সমিতির বিভিন্ন দায়িত্ব পালনে তিনি ছিলেন একজন দক্ষ প্রশাসক। মরহুমের সামাজিক কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ তৎকালীন সিটি মেয়র মীর মুহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলুয়ারদীঘির পূর্ব ও পশ্চিম পাড়ের সড়কের নাম তাঁর নামে নামকরণ করেন।
আনজুমানে খাদেমুল হজ্ব ও বাংলাদেশ হজ্ব কমিটির অন্যতম কর্মকর্তা হিসেবে হাজীদের জন্য তার অবদান অবিস্মরণীয়। শুধু তাই নয়, তারই অবদানের স্বাক্ষর হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে, চরচাক্তাই বয়েজ স্কুল, লামা বাজার সিটি কর্পোরেশন বালিকা উচ্চবিদালয় সহ আরো অনেক প্রতিষ্ঠান। তিনি তৎকালীন মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় সদস্য ও জেলা সাধারণ সম্পাদকের মতো গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বও পালন করেছিলন। এমন কি বাংলাদেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনে তিনি দেশে যেমন যোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন ঠিক তেমনি এসব প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি হয়ে বিদেশের দ্বিপক্ষীয় বৈঠকেও যোগদান করতেন। যা তাঁর শিক্ষা দীক্ষা ও জ্ঞানের বাস্তব অনুশীলনের স্বাক্ষর বহন করছে।
শাহানশাহে সিরিকোট ঘোষণা দিয়েছেন- ‘মুঝেহ দেখনা হ্যায় তো জামেয়া কো দেখো, মুঝছে মুহাব্বত হ্যায় তো জামেয়া কো মুহাব্বত করো’ জামেয়াকে তিনি এমনভাবে ভালোবাসেন যে শেষ পর্যন্ত এর বদলা হিসেবে পেয়েছেন পীরের ভালাবাসা। তাঁর ‘‘আলকাদেরী’’ উপাধিটি সে ভালোবাসারই সনদ মাত্র। গাউসে জমান আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি বলতেন, ‘‘মাদ্রাসা সে আলিম নিকেলতে হ্যায় আউর খানকাহ্ সে ওলী নিকেলতে হ্যায়।’’ অর্থাৎ মাদ্রাসা থেকে আলেম আর খানকাহ্ থেকে ওলী বের হয়। তাই জামেয়া প্রতিষ্ঠায় সর্বোচ্চ ত্যাগী নূর মুহাম্মদ সওদাগর আলকাদেরী খানকাহ্ প্রতিষ্ঠায় মন দেন। এদেশের বিশেষত চট্টগ্রামে সিলসিলাহ্’র প্রচার-প্রসার শুরু থেকে ব্যবহৃত হয়েছে চট্টগ্রামের সংবাদপত্র শিল্পের পথিকৃৎ আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের আন্দরকিল্লাস্থ কোহিনূর প্রেসের দ্বিতীয় তলা। এরপর গাউসে জামান আল্লামা তৈয়্যব শাহ্ রাহমাতুল্লাহি তা‘আলা আলায়হি একাধারে ১৯৬৬-৬৭ থেকে ১৯৮৬-এর শেষ সফর পর্যন্ত থাকতেন আলহাজ্ব নূর মুহাম্মদ আলকাদেরীর বলুয়ারদীঘির পাড়স্থ বাসভবনের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায়। দ্বিতীয় তলায় জায়গা সংকুলান না হওয়ায় পরবর্তীতে সমগ্র তৃতীয় তলা খানকাহ্-এ কাদেরীয়া সৈয়্যদিয়া তৈয়্যবিয়া হিসেবে আজ পর্যন্ত ব্যবহৃত হয়ে আসছে।
বাংলাদেশে ইসলামি সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন জশ্নে জুলুসে ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা‘আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম-এর প্রথম আত্মপ্রকাশ এই খানকাহ্ থেকে। ১৯৭৪ সনে গাউসে জামান আল্লামা সৈয়্যদ মুহাম্মদ তৈয়্যব শাহ্’র নির্দেশে আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়ার উদ্যোগে বাংলাদেশের ইতিহাসে প্রথম জশনে জুলুসের নেতৃত্ব দেন আলহাজ্ব নূর মুহাম্মদ সওদাগর আলকাদেরী রাহমাতুল্লাহি আলায়হি। তাঁর সুযোগ্য সন্তান আলহাজ্ব মুহাম্মদ মহসিন আনজুমান-এ রহমানিয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া ট্রাস্ট’র সিনিয়র সহ-সভাপতির দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। পিতার যোগ্য উত্তর সূরী হিসেবে তিনিও আপন মুর্শিদের নেক নজরে আনজুমান-জামেয়া-গাউসিয়া কমিটির যাবতীয় কার্যাধি সুষ্ঠু পরিচালনায় তাঁর ক্যাবিনেটের সহযোগিতায় বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন। মরহুমের পরিবারের সকলেই এ সিলসিলার কার্যক্রমে সম্পৃক্ত হয়ে খেদমত করে যাচ্ছেন।
১৯৭৯ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক চন্দ্র মাসের ১৯ মহররম তিনি ওফাত বরণ করেন। তাঁর মুর্শিদে বরহকের প্রতিষ্ঠিত জান্নাত নিশান জামেয়া সংলগ্ন মাজার শরীফে তিনি শায়িত। বহুবিদ গুণের কারণে তিনি আজীবন স্মরণীয় বরণীয় হয়ে আছেন ও থাকবেন। তাঁর ৩৫তম ওফাত বার্ষিকীতে আমরা তাঁকে গভীর শ্রদ্ধা ভরে স্মরণ করছি।
লেখক: মহাসচিব, গাউসিয়া কমিটি বাংলাদেশ কেন্দ্রিয় পরিষদ।